তোমাতে বিলীন পর্ব: ১৩

0
11245

তোমাতে বিলীন
লেখিকা—আমায়া নাফশিয়াত
#পর্ব ১৩

আশিয়ান এবার গুনে গুনে ১০ টা আটপৌরে সুতির শাড়ি এবং ১০ টা বিভিন্ন কালারের স্টোন এবং সুতোর কারুকাজ করা গর্জিয়াস শাড়ি নিলো ঊদিতার জন্য।ঊদিতা অবাক হয়ে গেছে আশিয়ানের কাজ দেখে। এই লোকটার নির্ঘাত মাথা নষ্ট হয়ে গেছে। নইলে এত শাড়ি কেউ কেনে!টাকাপয়সার প্রতি কোনো মায়াদয়া নেই দেখা যায় লোকটার।ঊদিতা এবার আশিয়ানের কাছাকাছি গিয়ে নিচু স্বরে বললো;

ঊদিতা:-আমার জন্য আর কিছু কেনার দরকার নেই প্লিজ। এত এত কেনাকাটা করে কী হবে?শুধু শুধু টাকার অপচয় করছেন আপনি।এখন বাদ দিয়ে দিন।আর নিজের জন্য কিছু কিনুন।

আশিয়ান শান্ত দৃষ্টিতে ঊদিতার দিকে একপলক তাকিয়ে আবারও কেনাকাটায় মন দিয়ে বললো;

আশিয়ান:-তোমার কথা শুনে আমি অবাক না হয়ে পারছি না।শপিংয়ে এলে মেয়েরা চায় বেশি বেশি কেনাকাটা করতে।বেশিদূর যেতে হবে না, তোমারই বোন দেখো নিঃসংকোচে এত এত কেনাকাটা করছে,,আমার ভাইকে ফকির করে ফেলবে আজ,, তাও কিনতেই আছে কিনতেই আছে,,। আর এদিকে আমি তোমাকে নিজের ইচ্ছায় কিনে দিচ্ছি এতে তুমি খুশি না হয়ে উল্টো কীনা আমায় থামতে বলছো!বুঝলাম না।

ঊদিতা:-সবার সাথে আমাকে তুলনা করে কী লাভ? আমি তো ওদের স্বভাবের নই।প্রয়োজনের অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়।তাই আপনাকে আমি নিষেধ করছি।আমার জন্য আপনার সকল টাকা শেষ হয়ে যাক তা আমি চাই না।

আশিয়ান:-আমার টাকা নিয়ে তোমার চিন্তা করতে হবে না।তোমার জন্য আমার তেমন একটা টাকা যায় নি।এই সারা মার্কেট কিনে নেয়ার মতো টাকা আমার আছে। সো এসব না ভেবে চুপচাপ থাকো আর আমাকে আমার কাজ করতে দাও।

ঊদিতা আর কিছু বললো না। লোকটা সত্যিই অনেক বেশি একরোখা টাইপের। যা বলে তা করেই ছাড়বে।এখন শুধু শুধু নিজের কথা খরচ করে কোনো লাভ নেই।আশিয়ান জীবনেও শুনবে না।বরং দেখতে লাগলো লোকটা কী করে!

আশিয়ান রিসিপশন পার্টিতে পড়ার উপযোগী একটা ফুলহাতা লং গাউন কিনলো ঊদিতার জন্য।

মেইন অকেশনের জন্য ড্রেস কেনা শেষ করে বিল মিটিয়ে সেগুলোর ব্যাগ হাতে নিয়ে এখন প্রয়োজনীয় কাপড় চোপড় কিনার জন্য এই শো রুম থেকে বেরিয়ে মেয়েদের কাপড় চোপড়ের অন্য একটা দোকানে ডুকলো সে ঊদিতাকে নিয়ে।আসার আগে ওদেরকে বলে এসেছে সে অন্যদিকে যাচ্ছে কেনাকাটা করতে।ওরা এই শো রুম থেকে বেরিয়ে তাকে যাতে ফোন দিয়ে জানায় সেই কথাও বললো।

অন্য দোকানে ঢুকে এবার সে ঊদিতার জন্য ৫ টা খিমার সেট,, ৫ টা বিভিন্ন ডিজাইনার ও বেশ কয়েক রকম কালরের বোরকা নিলো।বাসায় পড়ার জন্য ১০ সেট থ্রি পিস নিলো।নিলো টপস,জিনস,কুর্তি,লেগিন্স,প্লাজু,অনেকগুলো হিজাবের ওড়না,আন্ডার গার্মেন্টস এবং মেয়েদের যাবতীয় সবকিছু।আশিয়ানের কেনাকাটা দেখে ঊদিতা হা হয়ে গেছে।আশিয়ান ঊদিতার দিকে একবার তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলো।বোঝাই যাচ্ছে সে এখন অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।

আশিয়ান ওর পার্সোনাল সেক্রেটারি মাহবুবকে ফোন দিয়ে এখানে আসতে বললো।শপিং ব্যাগ বেশি হয়ে গেছে,, ওগুলো বহনের জন্যও কাউকে দরকার।আশিয়ান এবার লেডিস শু এর স্টোরে গিয়ে সেখান থেকে জুতা কিনতে লাগলো।প্রত্যেকটা অকেশনের জন্য ম্যাচিং করে জুতো কিনলো,সাথে বাসায় পড়ার জন্য এবং বেড়াতে যাওয়ার উপযোগী প্রায় ১৫ জোড়া জুতা কিনলো সে।

এরই মধ্যে মাহবুব চলে এলো।মাহবুব আসতেই আশিয়ান তার গাড়ির চাবি দিয়ে সাথে বেছে বেছে দুভাগ করে শপিং ব্যাগ সবগুলো তার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো;

আশিয়ান:-এগুলো আমার গাড়ির পেছনের ডিকিতে রেখে এসো। আর বাকিগুলো গাড়ির ফ্রন্ট সিটে রেখে আসবে।দেখাে আবার ভুল যেন না হয়।সবকিছু সুন্দর করে রেখে ডিকি এবং ডোর লক করে এসো ঠিক আছে?

মাহবুব:-ওকে স্যার।

এই বলে মাহবুব সবগুলো শপিং ব্যাগ নিয়ে চলে গেল।আশিয়ান চশমা ঠিক করে ঊদিতার দিকে তাকিয়ে বললো;

আশিয়ান:-তোমাকে আমি এক্ষুনি সবকিছু দিচ্ছি না। এই যে এতসব কেনাকাটা করলাম সেসবের বেশিরভাগই তুমি বিয়ের পর পাবে।এখন দরকারী যেসব সেগুলো নিয়ে বাসায় যাবে।লাইক;গায়ে হলুদ,মেহেদী প্রোগ্রাম, বিয়ে এসব পোশাক আর হাতেগোনা কয়েকটা ড্রেস এখন তুমি পাচ্ছো।আমি ভাগ করে রেখেছি।বাকিগুলো বড়ভাবী আমার বেডরুমের আলমারিতে তুলে রাখবে।এবং সেগুলো বিয়ের পর ইউজ করবে।আশা করি আমার কথা বুঝতে পারছো তুমি!

ঊদিতা মাথা দুলিয়ে সায় জানিয়ে বললো;

ঊদিতা:-জ্বী আচ্ছা।আমার কোনো অসুবিধে নেই। আপনার যেমনটা ইচ্ছে তেমনটাই করতে পারেন।

আশিয়ান প্রতিত্তোরে কিছু বললো না।এমন সময় তাহমিদ আশিয়ানকে ফোন করে বললো জুয়েলারি শপে চলে আসতে।ওরা এখন ওখানেই আছে।আশিয়ান ফোন রেখে জুতার দোকানের বিল মিটিয়ে ঊদিতার হাত ধরে সেকেন্ড ফ্লোরে চলে এলো।জুয়েলারি শপে ঢুকেই সবাইকে দেখতে পেল।আশা তো তাদেরকে দেখতে পেয়ে রাগে ফেটে যাচ্ছে পুরো।ঊদিতাকে একবারের জন্যও একা পাচ্ছে না সে।কখন যে তাকে একা পাবে আর কখন যে আশিয়ানের ব্যাপারে তার কানে বিষ ঢালবে সেই চিন্তায় আশা আধামরা হয়ে যাচ্ছে।অপেক্ষা করতে মোটেই ভালো লাগে না তার।বিরক্তিকর মুহূর্ত!

জুয়েলারি কেনা শেষে এবার ছেলেদের শেরওয়ানি ও বাকি অকেশন গুলোর জন্য কাপড় চোপড় কিনতে ছেলেদের কাপড়ের শো রুমে গেল ওরা।আশিয়ানরা ছয় ভাই গায়ে হলুদ, মেহেদির প্রোগ্রামের জন্য সেইম পাঞ্জাবি পাজামা, এনগেজমেন্টের জন্য সেইম স্যুট কোট নিলো।শুধু বিয়েতে আশিয়ান ও তাসকিন ডিফারেন্ট কালারের শেরওয়ানি এবং বাকি ভাইয়েরা সেইম কালারের স্যুটকোট কিনলো।রিসিপশনের জন্য আবার কালার ডিফারেন্ট বাট সেইম ডিজাইনের শার্ট, প্যান্ট এবং ব্লেজার ও জুতো সব কেনা হলো।

আরো প্রচুর কেনাকাটা করা হয়েছে আজ।এমন কিছু বাকি নেই যা কেনা হয়নি।কখন যে রাত ৮ টা হয়ে গেছে কেউ বলতে পারবে না।ঊদিতার আজ নামাজ পড়ার কথা নেই,কারণ তার এখন নিষিদ্ধ দিন চলে তাই সে শান্তিতে কেনাকাটা করতে পারছে।

কেনাকাটা শেষে সবাই শপিংমলের পাশেই একটা রেস্টুরেন্টে খাওয়া দাওয়া করতে চলে এলো।আশিয়ান একমুহূর্তের জন্য ঊদিতাকে একা ছাড়ছে না।আর আশাও কোনো সুযোগ পাচ্ছে না। ঊদিতা আশিয়ানের কেয়ার দেখে মুগ্ধ। সে আশিয়ানকে পুরোপুরি রূপে বিশ্বাস করে ফেলেছে। লোকটা অনেক ভালো মনের মানুষ। যদিও একরোখা আর ঘাড়ত্যাড়া টাইপের।তবুও সমস্যা না,,, বাকি জীবন সুন্দর ভাবে তার সঙ্গে কাটানো যাবে।

আশিয়ান ঊদিতার পর্দার ক্ষতি হবে ভেবে সে তাকে নিয়ে আলাদা একটা চেয়ার টেবিল বুক করে সেখানে বসলো।এখানে এনা ছাড়া আর কেউ বসে নি তাদের সাথে।ঊদিতা আশিয়ানের মুখোমুখি হয়ে বসেছে।চারপাশে মোটা পর্দা টাঙানোর দরুন তাকে কেউ দেখতে পাচ্ছে না।

আশিয়ান ঊদিতাকে জিজ্ঞেস করলো কী খাবে।ঊদিতা শুধু বললো আশিয়ান যা অর্ডার করবে তাই সে খাবে।এদিকে আশা, আলেয়া ওরা যেমন অর্ডার করেছে তেমনি রাক্ষসের মতো গিলছে।ওয়েটার খাবার দিয়ে যাওয়ার পর ওরা যার যার খাবার নিয়ে খেতে লাগলো।আশিয়ান ঊদিতার খাওয়ার স্টাইল দেখে ফিদা।কী সুন্দর পরিপাটি ভাবে খাবার খাচ্ছে মেয়েটা,,না প্লেটের এক্সট্রা জায়গা নষ্ট হচ্ছে,না হাত ভরছে,আর না ঠোঁটের আশপাশে খাবারের এঁটো লাগছে।একদম পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ভাবে তার ভাগের সব খাবার খেয়ে ঊদিতা ওঠে গেল। হাত ধুয়ে এসে আবার আগের জায়গায় বসে তাদের অপেক্ষা করছে সে।

সবার খাওয়া দাওয়া শেষে রেস্টুরেন্টের বিল পে করে বাইরে বেরিয়ে এলো সবাই। বাসায় যাওয়ার সময় হয়ে গেছে।আশিয়ান ঊদিতাকে এনার পাশে রেখে “একটু অপেক্ষা করো আমি আসছি” বলে একটা সুপারশপের ভেতর ঢুকে গেল।ঊদিতাও এনার পাশে দাঁড়িয়ে আছে।

এনা আর ঊদিতা টুকটাক কথা বলছে বাকিদের থেকে একটু দুরত্বে দাঁড়িয়ে।হঠাৎ এনার ফোন আসায় ঊদিতাকে ওয়েট করতে বলে অন্যপাশে সরে এলো।এনা সরে যেতেই আশা মোক্ষম সুযোগ পেয়ে গেল।চুপিচুপি ঊদিতার কাছে এসে দাঁড়িয়ে আলাপ করার ভঙ্গিতে বললো;

আশা:-ঊদিতা,, তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিলো!

ঊদিতা হঠাৎ আয়শার আগমনে একটু অবাক হলো।সবাই ঊদিতার সাথে কুশল বিনিময় করলেও আয়শা একটা কথাও বলে নি তার সাথে।প্রথম থেকেই সে ঊদিতাকে কেমন যেন ইগনোর করে গেছে।এখন যেচে কথা বলতে আসায় একটু নয় পুরোটাই অবাক হলো ঊদিতা।তারপরও হাসিমুখে আশাকে জবাব দিয়ে বললো;

ঊদিতা:-জ্বী আপু,, বলেন কী বলবেন!

আশা গলার স্বর খাদে নামিয়ে যাতে ঊদিতা শুনতে পায় এমনভাবে বললো;

আশা:-শুনো,,,তুমি এই বিয়েটা করো না।আশিয়ান মোটেও ভালো ছেলে নয়।এমনি তোমার সামনে ভালো সাজার নাটক করছে সে।আমি তোমার ভালো চাই তাই তোমায় বারন করছি।তুমি জানো সে আমার সাথে রুমডেট পর্যন্ত করেছে। কতটা খারাপ হলে এমন করতে পারে।

আশার সব কথা যেন ঊদিতার মাথার ওপর দিয়ে রকেটের বেগে ছুটে গেল।পাশ ফিরে আশাকে কিছু বলতে নিবে তখন দেখে আশা হাওয়া।অপরপাশে তাকাতেই দেখলো আশিয়ান বড়সড় একটা ব্যাগ হাতে এদিকেই আসছে।আসলে আশিয়ানকে আসতে দেখে বেশি কিছু বলতে পারে নি আশা।আশিয়ানের চোখে পড়ার আগেই মানে মানে কেটে পড়েছে সে।নয়তো আশিয়ান যে চালাকের চালাক সব বুঝে ফেলবে।

বেচারি ঊদিতা আশার এত কথা মাথায় ঠিকমতো সেট করতে পারে নি।তাই আশিয়ান কাছে আসার সাথে সাথেই ঊদিতা তার দিকে প্রশ্নবাণ ছুড়ে দিলো;

ঊদিতা:-আচ্ছা,,,, রুমডেট মানে কী?(জানতে চেয়ে)

ঊদিতার মুখ থেকে এমন একটা কথা শুনতে পেয়ে আশিয়ান পুরোপুরি বাকরূদ্ধ হয়ে গেছে।আশিয়ান ভাবতেও পারে নি যে ঊদিতা তাকে এমন একটা প্রশ্ন করবে।আশিয়ান বিস্ময় চেপে গম্ভীর হয়ে বললো;

আশিয়ান:-হোয়াট ননসেন্স!তুমি আমাকে এসব কী জিজ্ঞেস করছো?তুমি জানো না এর মানে কী?(কিছুটা রেগে গিয়ে)

ঊদিতা:-জানি না দেখেই তো আপনাকে জিজ্ঞেস করলাম।এর আগে কখনো এই ওয়ার্ডটা কোথাও শুনি নি আমি।আজই প্রথম শুনেছি।আমি তো ইংলিশ খুব ভালোই পারি তবে এই ওয়ার্ডের মিনিং জানি না।এটা কী খারাপ কিছু??(ইনোসেন্ট ফেসে)

আশিয়ান এবার ভ্রু কুচকে তাকালো ঊদিতার দিকে। সিরিয়াসলি আজকালকার যুগে রুমডেট শব্দের অর্থ জানে না এমন একটা মানুষ কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না।আর এই মেয়ে কীনা এত বড় হয়ে এই শব্দের অর্থটা জানে না।একটু বেশিই ইনোসেন্ট হয়ে গেল না।একদম নিষ্পাপ যাকে বলে।আশিয়ান আবারও গুরুগম্ভীর কন্ঠে জিজ্ঞেস করল;

আশিয়ান:-জানো না যখন তবে হঠাৎ এই ওয়ার্ডটা মনে পড়লো কী করে তোমার?আর হুট করে এমন একটা কুইশ্চেন তুমি কেন করলে আমায়?কে বলেছে তোমাকে এসব?

ঊদিতা:-জানেন,,আমি এখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম,, হঠাৎ ওই যে লাল রঙের শর্ট ওয়েস্টার্ন ড্রেস পড়া আপুটা আছে না,,ওনি এসে প্রথমে আমাকে বললো আমি যাতে এই বিয়েটা না করি,আপনি নাকি মোটেও ভালো ছেলে নন,আমার সামনে নাকি আপনি ভালো সাজার নাটক করছেন,আর আপনি নাকি ওই আপুটার সাথে রুমডেট করেছেন।আমি প্রথম কয়েকটা কথা বুঝতে পারলেও ওনার লাস্ট কথাটা বুঝি নি,,ওনাকে ভালো করে জিজ্ঞেস করতে যাবো ততক্ষণে ওনি ওদিকে চলে গেছেন।আর জানতে পারলাম না ওনি আসলে ঠিক কী বলতে চাইলেন।

আশিয়ান রাগে দাঁত কিড়মিড় করে হাত মুষ্টি বদ্ধ করে নিজের রাগ কন্ট্রোল করলো।আজ আশার একদিন কী তার একদিন।এই মেয়েটাকে উচিৎ শিক্ষা না দিলে চলছে না।সাহস কতবড় আমাকে এতটা খারাপ প্রমাণিত করার চেষ্টা করলো জোঁকটা।ভাগ্যিস এই মেয়েটা এর অর্থ জানে না। নয়তো মানসম্মান আর থাকতো না।মেয়েটা খারাপ ভাবতো আমাকে!

আশিয়ান শান্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো;

আশিয়ান:-তুমি সত্যি জানো না এর অর্থ কী?তোমার ফ্রেন্ড সার্কেল কারো কাছ থেকে শুনো নি কখনো?

ঊদিতা:-সত্যি বলছি লাইফের প্রথম এই লাল ড্রেস ওয়ালা আপুর মুখ থেকে এসব শুনলাম।আসলে আমি পড়াশোনায় ভালো ঠিকই কিন্তু এতবেশী অভার স্মার্ট নই।বাইরের জগৎ সম্পর্কে আমার জ্ঞান খুবই সামান্য।আর রইলো ফ্রেন্ড সার্কেলের কথা। আমার একটা মাত্র বান্ধবী তোয়া।সেও আমার মতোই ইন্ট্রোভার্ট টাইপের মেয়ে।আমরা পড়াশোনা ছাড়া স্কুলে গিয়ে কখনো অযথা সময় নষ্ট করি না।আর কোনো ফ্রেন্ড নেই আমার ও ছাড়া।

আশিয়ান একধ্যানে ঊদিতাকে লক্ষ্য করছে।তার আম্মু অবশেষে তাকে খুবই ইনোসেন্ট একটা মেয়ের সাথে বিয়ে দিচ্ছেন যে কিনা রুমডেট মানে কী তা জানে না! বাহ,,এমন মেয়ে দুনিয়ায় আছে তবে! সত্যিই অবিশ্বাস্য ব্যাপার!আদিম যুগের মানুষ মনে হয় এই মেয়ে।ভুল করে এখনের যুগে চলে এসেছে।যাক ভালোই হলো।এরকম নিষ্পাপ মেয়েই বিয়ে করা ভালো।বেশি পাকনা যারা তাদের বিয়ে করা লস।ঊদিতা আবারও জিজ্ঞেস করলো;

ঊদিতা:-আচ্ছা ওই আপুটা যা বলে গেল তা কী সত্যি?আসলে আপনাকে দেখে আমার কেমন জানি বিশ্বাস হচ্ছে না যে আপনি খারাপ!

আশিয়ান:-তোমার কী মনে হয়?আমি ভালো নাকি খারাপ?(জানতে চেয়ে)

ঊদিতা:-আমি এতোটাই বোকা নয় যে অন্যকারো মুখ থেকে শুনে বিশ্বাস করে নেবো সব।আমার কেন জানি মনে হচ্ছে ওই আপুটা নিজেই খারাপ!আবার মানুষকে খারাপ বানাতে আসে।আমি মানুষ দেখলে কিছুটা হলেও চিনতে পারি যে সে খারাপ নাকি ভালো।আপনার মাঝে আমি খারাপের কিছুই দেখি নি যদিও আপনি ভীষণ একরোখা টাইপের ব্যক্তি।তবে এতে খারাপের কিছু নেই।

আশিয়ান:-তাই নাকি?ভালো তো।তোমার পজিটিভ থিংকিং দেখে ভালো লাগলো।

ঊদিতা:-তবে এটা বুঝতে পারলাম না রুমডেটটা কী?ওই আপুটা ভালো করে বলেও গেল না।আমার ভীষণ কৌতুহল হচ্ছে শুনার জন্য।তবে এটা বুঝতে পারছি খারাপ কিছু হবে। নয়তো ওই আপু এই কথা বলতো না।

আশিয়ান:-ছোট ছোটর মতো থাকো।এতসব তোমার জানতে হবে না।আর ওর কথা বাদ দাও ওর মানসিক সমস্যা আছে।এজন্য এসব বলেছে।যাইহোক এই ওয়ার্ডটা তুমি এক্ষুনি ভুলে যাও।কারো কাছ থেকে এর উত্তর জানার চেষ্টাও করো না।পরে মানুষ তোমাকে খারাপ ভাববে।কে কী বললো তা শুনার দরকার নেই।এসব বাদ দিয়ে নিজের চিন্তা করো।মনে থাকবে?(আদেশ করে)

ঊদিতা মাথা নেড়ে সায় জানিয়ে বললো;

ঊদিতা:-জ্বী,,, থাকবে।

আশিয়ান সন্তুষ্ট হয়ে বললো;

আশিয়ান:-গুড।আর এই ব্যাগটা নাও।

এই বলে আশিয়ান ঊদিতার হাতে একটা ব্যাগ তুলে দিলো।ঊদিতা প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো;

ঊদিতা:-ব্যাগে কী আছে?

আশিয়ান প্যান্টের পকেটে দুহাত ঢুকিয়ে একটা ভাব নিয়ে বললো;

আশিয়ান:-ব্যাগে বেশ অনেকগুলো ব্রান্ডের চকোলেটস আছে।একটা বক্স তোমার ভাতিজা-ভাতিজী ও বোন পোর জন্য।বাকি সব তোমার।আর হ্যা,, আমার তরফ থেকে তোমার ফ্যামিলির জন্য কিছু কেনাকাটা করেছি।প্যাকেটে নাম লেখা আছে।সে অনুযায়ী তাদেরকে তুমি নিজহাতে দিয়ে দিয়ো।তবে শুধু তোমার পরিবারের জন্যই কিনেছি এসব।আলেয়ার পরিবারের কারোর জন্য নয়।ওদেরকে কিনে দেয়ার দায়িত্ব তাসকিনের।কারণ শ্বশুর বাড়িটা তার, আমার নয়।আমি শুধু আমার শ্বশুর বাড়ির লোকেদের জন্য কিনেছি।আশা করি বুঝতে পারছো।

ঊদিতা মনে মনে ভীষণ খুশি হয়েছে আশিয়ানের কাজে।লোকটা কত দায়িত্ববান।এখনই শ্বশুর বাড়ির লোকেদের কত খেয়াল রাখছে সে।ক’জনই বা এত দায়িত্ববান হয়?ঊদিতা হাসিমুখে আশিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো;

ঊদিতা:-ধন্যবাদ আপনাকে।আপনি সত্যিই অনেক ভালো মনের একজন মানুষ।

বিনিময়ে আশিয়ান কিছু বললো না। শুধু মুচকি একটা হাসি দিলো।ঊদিতা আশিয়ানের দিকে একবার তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলো।যা-ই হোক এখনো বিয়ে হয় নি যেহেতু ততদিন তার দিকে এভাবে তাকাবে না ঊদিতা। কারণ এখন পর্যন্ত আশিয়ান তার কাছে পরপুরুষই বটে।

এমন সময় তাহমিদ তাদেরকে ডাক দিলো বাসায় যাওয়ার জন্য।আশিয়ান ঊদিতাকে সঙ্গে নিয়ে গাড়ির সামনে গিয়ে ডোর খুলে দিলো ঊদিতাকে বসার জন্য। ঊদিতা তার সিটে গিয়ে বসে পড়লো। বাকিরা পিছে বসতেই আশিয়ান ড্রাইভিং সিটে বসে ডোর লাগিয়ে গাড়ি স্টার্ট করলো।অতঃপর গাড়ি চালাতে লাগলো বাসার উদ্দেশ্যে।

প্রায় আধাঘন্টা পর ঊদিতার বাসার সামনে গাড়ি থামালো আশিয়ান।ঊদিতা তাদেরকে সালাম দিয়ে হাসিমুখে শপিংব্যাগ সবগুলো হাতে নিয়ে বাসার ভেতর চলে গেল। ঊদিতা চলে যেতেই আশিয়ান আবারও গাড়ি স্টার্ট দিয়ে নিজের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।গাড়ির পেছনে তাহমিদ,এনা,কেয়া ওরা সারাদিনে কে কী করলো না করলো, কী কী কেনা হয়েছে তা নিয়ে আলোচনা করতে ব্যস্ত।

আশিয়ান একমনে ঊদিতার কথা ভেবে চলেছে। কেন ভাবছে তা সে নিজেই জানে না। অবাধ্য মন বারবার তার কথাই মনে করছে।যা সত্যি অবিশ্বাস্য। বিয়ে হবার আগেই দেখা যায় মেয়েটা আশিয়ানের মনে প্রভাব বিস্তার করা শুরু করেছে।না জানি বিয়ের পর কী হয়!!হয়তো এই মেয়েটার মধ্যেই আশিয়ানের সব সুখ নিহিত রয়েছে!

ঊদিতা বাসায় ঢুকে সোজা নিজের রুমে চলে গেল। কারণ ড্রয়িং রুম জুড়ে আলেয়া, তার কাজিন ও আত্নীয় স্বজনরা সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছে।এত মানুষের সামনে ঊদিতা কখনোই কম্ফোর্ট ফিল করবে না। আর আলেয়ার কাজিনেরা আলেয়ার মতোই বেশরম টাইপের।এদের সাথে ঊদিতার জীবনেও বনবে না তাই সে এদিক ওদিক না তাকিয়ে ডিরেক্টলি নিজের রুমে এন্ট্রি নিলো।

ঊদিতা সবার লাস্টে বাসায় এসেছে।সে আসতেই মিসেস আনিতা মেয়ের পিছু পিছু ওর রুমে গেলেন।মিসেস আনিতার সাথে উসামা আর ঊষা ও ছিলো।ঊদিতা রুমে ঢুকেই ফ্যান ছেড়ে দিয়ে বোরকা খুলে বিছানায় ক্লান্ত শরীর এলিয়ে দিলো।মিসেস আনিতা মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন।ঊষা আর উসামা শপিং ব্যাগ খুলে খুলে দেখতে লাগলো সব।এত সুন্দর সুন্দর ড্রেস দেখে তারা সত্যিই ভীষণ অবাক হয়েছে। আলেয়ার ড্রেস গুলোর থেকে ঊদিতার গুলো হাজার গুণে সুন্দর।

ঊদিতা আশিয়ানের কেনা কাপড়চোপড় গুলো প্যাকেটের নাম দেখে সবাইকে দিয়ে দিলো।মিসেস আনিতা তো ভীষণ খুশি হয়েছেন আশিয়ানের কাজ দেখে।

এমনসময় মি.আনিসুল,শাহরিয়ার,মিসেস লিমা আর তানিয়া ঊদিতার রুমে এলো।ওনাদেরকে সব দেখানো হলো।তারপর মিসেস আনিতার আদেশে ঊদিতার জন্য কেনা প্রত্যেকটা জিনিস আলমারিতে সযত্নে তুলে রাখা হলো।

মি.আনিসুল ও শাহরিয়ারের জন্য কেনা কাপড়চোপড়ের প্যাকেট তাদের হাতে ধরিয়ে দিলেন মিসেস আনিতা।মি.আনিসুল অনেক খুশি হয়েছেন ওনার চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছে। যাক অবশেষে ভালো একটা ছেলের কাছেই মেয়েকে পাত্রস্থ করছেন তিনি।এটা ভেবেই অনেক প্রশান্তি লাগছে তার মনে।

ঊদিতা চকোলেটের প্যাকেট দুইটা খুলে পিচ্চি থেকে শুরু করে সবাইকে বিতরণ করলো।বাকি আরো ৫-৬ প্যাকটের মতোন আছে ওগুলো সে নিজের জন্য রেখেছে।আজকে হাঁটতে হাঁটতে ঊদিতা বেশ ক্লান্ত হয়ে গেছে আর এরমাঝে তার শরীরও ভালো নয়।তাই বিছানায় শরীর এলিয়ে দিতেই ঘুমিয়ে পড়লাে সে।

(আমি ভীষণ ব্যস্ত আছি।বাসায় অনেক মেহমান।তাদের জন্য আমি ফোন হাতেই নিতে পারছি না।তারপরও আপনাদের অনুরোধে আজ আরও একপার্ট দিলাম।কালকের পার্ট এ বোধহয় এনগেজমেন্ট হয়ে যাবে তাদের।এভাবেই সবসময় উৎসাহ দিলে ভালো লাগে।আপনাদের সবার জন্য রইলো ভালোবাসা 💜হ্যাপি রিডিং)

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here