তোমাতে বিলীন পর্ব: ১৭

0
12741

তোমাতে বিলীন
#লেখিকা—আমায়া নাফশিয়াত
পর্ব—17

আশিয়ান নিজেই নিজের মুখের গন্ধে টিকতে না পেরে ওয়াশরুমে গিয়ে ভালো করে ফ্রেশ হয়ে এলো। টাওয়েল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বিছানায় বসতেই ঊদিতা এসে প্রবেশ করলো রুমে। আশিয়ান ঊদিতার দিকে একপলক তাকালো। ঊদিতা আশিয়ানের কাছে এগিয়ে এসে ট্রে টা বিছানার পাশে সেন্টার টেবিলের ওপর রাখলো।ট্রে থেকে ভেষজ সুগন্ধি চা টা তুলে নিয়ে আশিয়ানের দিকে বাড়িয়ে দিলো ঊদিতা। চা থেকে খুব সুন্দর একটা ঝাঁঝালো স্মেল ভেসে আসছে। আশিয়ান চায়ের কাপ হাতে নিয়ে সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকালো ঊদিতার পানে। ঊদিতা বুঝতে পেরে বললো;

ঊদিতা:-এভাবে তাকাতে হবে না,,,আমি জানি আপনি স্ট্রং কফি খান। কেয়া ভাবী বলেছেন। আসলে আপনার মাথা ব্যথা করছে তো তাই এই ভেষজ সুগন্ধি চা টা বানিয়ে নিয়ে এলাম। এটা খেলে খুব জলদিই আপনার মাথা ব্যথা কমে যাবে। আর এইখানে দুটো স্যান্ডউইচ নিয়ে এসেছি আপনার জন্য,,, খিদে পেলে খেয়ে নেবেন। আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।

এই বলে আশিয়ানকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ঊদিতা ওয়াশরুমে চলে গেল মুখ ধুতে।আশিয়ান মনে মনে কিছু একটা ভেবে চুপচাপ চায়ের কাপটাতে চুমুক বসালো।উফফ,,,চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে মনটা একদম রিফ্রেশ হয়ে গেছে আশিয়ানের। এত মজার চা সে কোনোদিনই খায় নি।এমনকি সে জানেও না এরকম কোনো চা হতে পারে। মেয়েটার গুণ আছে বলতে হবে।এত মজার ঘ্রাণ ওয়ালা চা কীভাবে তৈরি করলো!গড নোজ!

ঊদিতা ওয়াশরুমে গিয়ে ওড়না রেখে বেসিনে মুখ ধোয়ার জন্য পানির কল ছেড়ে আয়নায় তাকাতেই নিজের গলার লাল দাগগুলোর ওপর চোখ পড়লো তার।এমন লাল লাল দাগ দেখে যেন আকাশ থেকে পড়লো ঊদিতা। হাত দিয়ে গলায় আলতো ভাবে ঘষা দিলো সে। কিছুটা জ্বালা করে উঠলো।হুট করে মনে পড়ে গেল কালরাতে আশিয়ানের কামড় আর চুমু দেয়ার কথা।রাক্ষসের মতো চুমু খেয়েছে যেন। একদম দাগ করে ফেলেছে। ঊদিতার অবশ্য একটু দুশ্চিন্তা হচ্ছে। আজকে রিসিপশন পার্টি,,, ওকে সাজাতে এলেই তো ওর গলার দাগগুলো স্পষ্ট চোখে পড়বে তাদের!তখন সবাই তাকে কী ভাববে!নিশ্চয়ই হাসাহাসি করবে!উফফ,,,কি মুসিবত!

আশিয়ান দুই মিনিটে পুরো চায়ের কাপ খালি করে ফেললো। একদম চেটেপুটে খাওয়া যাকে বলে। ঊদিতা ওয়াশরুম থেকে আসার আগেই চা শেষ। সাথে মাথা ব্যথাও গায়েব। এটা ম্যাজিক নাকি কিছু বুঝতে পারছে না আশিয়ান।এত জলদি কীভাবে মাথা ব্যথা কমে যেতে পারে!অন্যদিন তো কফি খেলেও ব্যথা সাড়ে না তার ঔষধ না খাওয়া অবধি। আর আজ এই সুগন্ধি চা তো কামাল করে ফেললো!বাহ,,,তার মানে আজ থেকে মাথা ব্যথা করলে আর ঔষধ খেতে হবে না।ভালোই তো! ঔষধ খাওয়া আশিয়ানের কাছে প্যারা ছাড়া আর কিছুই মনে হয় না।

একটা স্যান্ডউইচ হাতে নিয়ে কামড় বসালো আশিয়ান।

আশিয়ান:- উমম,,,ভীষণ টেস্টি ! (মনে মনে)

এমন সময় ঊদিতা ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো। এগিয়ে এসে আলমারি থেকে নতুন একটা টাওয়েল বের করে নিয়ে মুখ মুছতে লাগলো। এদিকে বেচারা আশিয়ান মুখে স্যান্ডউইচ ঢুকিয়ে একপ্রকার হা করে তাকিয়ে ছিলো ঊদিতার ভেজা নাদুসনুদুস মুখখানার দিকে৷কী কিউট টাই না লাগছিলো তাকে ভেজা অবস্থায়!

ঊদিতা টাওয়েল হেঙারে ঝুলিয়ে রেখে এগিয়ে এসে চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে আশিয়ানের দিকে তাকিয়ে জানতে চাইলো;

ঊদিতা:-মাথা ব্যথা কমেছে আপনার?

আশিয়ান মুখের খাবার টুকু গিলে নিয়ে মাথা ঝাকিয়ে জবাব দিলো;

আশিয়ান:-হু,,,। থ্যাংকস এতো ভালো চা খাওয়ানোর জন্য!

ঊদিতা:-মেনশন নট,,,। আপনার যদি আবার মাথা ব্যথা করে তাহলে অবশ্যই আমাকে বলবেন৷আমি চা বানিয়ে দেবো৷(মিষ্টি হেসে)

আশিয়ান ঊদিতার মুখের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বললো;

আশিয়ান:-ওকে,,,বলবো।

আশিয়ান স্যান্ডউইচ দুটো খেয়ে পানি পান করে রুম থেকে ধীর পায়ে বেরিয়ে গেলো। ঊদিতা চা আর বাকি স্যান্ডউইচ খেয়ে রুম গোছাতে লাগলো।রুম গোছানো শেষে ড্রেসিং টেবিলের কাছে গিয়ে একটু লোশন নিয়ে গলায় লাগালো তাতেও যদি দাগটা একটু হালকা হয়।লোশন লাগানো শেষে বিছানায় শুয়ে পড়লো সে।চা খাওয়ার পরও কখন যে চোখ লেগে এলো বলতে পারবে না।

সকাল ৯ টা বেজে গেছে প্রায়। ঊদিতা তখনও বেদম ঘুমে।আশিয়ান এরমাঝে আর রুমে আসে নি।সে তার জিম করার রুমে ডিভানের উপর এলোমেলো হয়ে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে।দুজন দুইরুমে ঘুমাতে ব্যস্ত। ঊদিতা তো এতক্ষণে হয়তো ভুলেও গেছে যে আজকে রিসিপশন পার্টি হবে।

এনা আর কেয়া এসে রুমের দরজায় নক করলো। দরজা খোলাই ছিলো।বেশ কয়েকবার নক করে সাড়া না পেয়ে কেয়া এবার দরজা একটু আলগা করে দেখলো যে ঊদিতা বিছানায় ঘুমিয়ে আছে।আশিয়ানকে রুমে কোথাও দেখতে পেল না কেয়া। এবার এনাকে সাথে নিয়ে কেয়া রুমের মধ্যে ঢুকে পড়লো।ঊদিতার দিকে তাকিয়ে এনা হেসে একটু জোরে ডেকে বললো;

এনা:-ভাবী,,,ও ভাবী,, আর কত ঘুমাবে এবার তো উঠো!

এনার ডাকে প্রায় ধড়ফড় করে ঘুম থেকে ওঠলো ঊদিতা।তাদেরকে দেখে বিছানা ছেড়ে নামলো।মাথায় ওড়না পড়ে জিজ্ঞেস করলো;

ঊদিতা:-জ্বী আপু কিছু বলবেন?

কেয়া:-সকালের নাস্তা করবে না?খিদে লাগে নি তোমার?

ঊদিতা:-জ্বী ভাবী।

এনা:-আচ্ছা মিষ্টিভাবী ভাইয়া কই?

ঊদিতা:-আমি তো জানি না!

এনা:-ওহহ,,।

কেয়া:-তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো কেমন? তারপর নাশতা করবে।

ঊদিতা:-ভাবী আমার নাশতাটা যদি রুমে এনে দিতেন তাহলে ভালো হতো আরকি!বাসায় তো প্রচুর মেহমান।ওনাদের সামনে আমি এত কম্ফোর্ট ফিল করবো না আসলে!(আমতা আমতা করে)

কেয়া:-সমস্যা নেই। মা বলে দিয়েছেন তুমি যাতে তোমার রুমে নাশতা করো।

ঊদিতা:-আচ্ছা ভাবী।

এনা নিচে গিয়ে সার্ভেন্টকে বলে এলো আশিয়ানের রুমে সকালের নাশতা পাঠিয়ে দিতে।মিনিট পাঁচেক পর সার্ভেন্ট এসে রুমে নাশতা দিয়ে গেল।ঊদিতা হাত মুখ ধুয়ে এসে নাশতা করতে লাগলো।এনা আর কেয়া গল্প করছে ঊদিতার সাথে।এর মধ্যে আশিয়ান একবারও রুমে আসে নি।ঊদিতার নাশতা করা শেষে তারিন আর আশা রুমে এসে ঢুকলো।আশা অবজ্ঞার দৃষ্টিতে ঊদিতাকে দেখছে।তারিন এসে ঊদিতাকে খোঁচা মেরে জিজ্ঞেস করলো;

তারিন:-কী গো?রাতে কী ঘুম হয়েছে?নাকি আমার দেবর তোমাকে ঘুমাতে দেয় নি?

ঊদিতা বুঝতে পারলো না তারিনের কথা।হাসিমুখেই বললো;

ঊদিতা:-বুঝলাম না ভাবী কী বলতে চাচ্ছেন?

আশা:-আহারে ন্যাকা,, কিচ্ছু বুঝে না।একদম অবুঝ খুকিকে বিয়ে করেছে আশিয়ান।

এনা শক্ত কন্ঠে বললো;

এনা:-আশা,,,ঠিক ভাবে কথা বলো।সে সম্পর্কে আমার ভাবী হয়!আম্মু শুনলে কিন্তু খবর আছে তোমার!

আশা মুখ বাঁকিয়ে ফোন টিপতে লাগলো,, কিছু বললো না প্রতিত্তোরে।ঊদিতা বুঝতে পারলো এরা তাকে আলেয়ার মতোই খোঁচা মারতে আসছে।তারিন এগিয়ে এসে ঊদিতার চুল হাতিয়ে বললো;

তারিন:ওমা,,তুমি গোসল করো নি এখনও?

ঊদিতা:-এখন গোসল করবো কেন?

তারিন:-ও আল্লাহ,, এই মেয়ে বলে কী?রাতে কী আশিয়ান তোমার সাথে কিছু করে নি?

কেয়া:-তারিন!(ধমকে ওঠে) এসব কী জিজ্ঞেস করছো তুমি তাকে?এসব একান্তই তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার!তুমি নাক গলাচ্ছো কেন?

তারিন:-এমা,,ভাবী আমাদের তো জানতে হবে আশিয়ান তার সাথে ওসব করেছে কিনা!

ঊদিতা:-কী করার কথা বলছেন আপনি?আমি আসলে কিছুই বুঝতে পারছি না!

তারিন:-হুম,, বুঝলাম!আশিয়ান তোমার সাথে ওসব কিছুই করে নি।করলে তুমি আমাদের কথা বুঝতে পারতে।যাই হোক,,তুমি কষ্ট পেয়ো না।আসলে আশিয়ান অন্য একটা মেয়েকে ভালোবাসে তো তাই ও তোমার প্রতি ইন্টারেস্টেড নয়।

তারিনের বলা কথা শুনে ঊদিতার মাথায় যেন বাজ পড়লো।আশিয়ান অন্য মেয়েকে ভালোবাসে?তবে তাকে কেন বিয়ে করলো?আচ্ছা ওরা কী তাকে আশিয়ানের প্রতি বিষিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে?হতেও পারে?আচ্ছা ওদের একটু বাজিয়ে দেখা যাক!

ঊদিতা এবার শান্ত কন্ঠে বললো;

ঊদিতা:-তাই নাকি ভাবী?তা কে সেই মেয়ে, যাকে আমার স্বামী ভালোবাসে?(জানতে চেয়ে)

ঊদিতার প্রশ্নে তারিন একটু হকচকিয়ে গেল।আশা ভ্রু কুচকে তাকালো ঊদিতার দিকে।তারিন আমতা আমতা করে বললো;

তারিন:-ওই যে তোমাদের বিয়েতে ইলিয়ানা নামক মেয়ে এসেছিলো ওর সাথে আশিয়ানের সম্পর্ক ছিলো।

ঊদিতা:-ছিলো!তার মানে এখন নেই?আর আমি যতদূর জানি ওনার এমপি আঙ্কেলের বউ হলেন ইলিয়ানা নামক মেয়েটা।আমার স্বামী তাকে আন্টি বলে সম্বোধন করেছেন আমার সামনে।আচ্ছা ধরলাম আপনার কথাই সঠিক।ওনার একসময় ওই মেয়েটার সাথে এফেয়ার ছিলো।কিন্তু এখন তো আর নেই।ওরা দুজনেই বিবাহিত।এখন তো তাদেরকে এককথায় এক্স বলা যায়।তাই না এনা আপু?

এনা:-কারেক্ট! এই তো তুমি বুঝতে পেরেছো মিষ্টিভাবী!

ঊদিতা:-তো এক্স সবসময় এক্সই থাকে।ওনারও এক্স আছে কিন্তু এতে আমার কিছু যায় আসে না।ওনার অতীতে কে ছিলো তা নিয়ে আমার বিন্দুমাত্র ইন্টারেস্ট নেই।কিন্তু ওনার বর্তমান আর ভবিষ্যৎ হলাম আমি।আমি হয়তো সম্পর্কের মারপ্যাঁচ এত বেশি বুঝি না কিন্তু আমি জানি মৃত্যুর আগ অবধি ওনি আমার।স্বামীর ভাগ কোনো মেয়েই ছাড়ে না আমি তো মরে গেলেও ছাড়বো না।আমার এত রূপ লাবন্য কিসের জন্য আছে যদি আমি আমার স্বামীকে নিজের কাছেই রাখতে না পারি?যাইহোক, ওনার আগের জীবনে কে ছিলো কে ছিলো না সেসব বাদ দিন।এখন আমি ওনার স্ত্রী,,আমিই ওনার সব।এখন দেখব কোন মেয়ে আমার স্বামীর দিকে নজর দেয়।আমাকে দেখতে যতোটা সরল সোজা মনে হয় আমি কিন্তু এতোটাই হাবাগোবা নই।বোধবুদ্ধি ঠিকই আছে আমার।খারাপ ভালো সব বুঝতে পারি আমি।

তারিন আর আশা হা হয়ে গেছে ঊদিতার কথা শুনে।ঊদিতাকে দেখলে বুঝাই যায় না যে সে এত কথা বলতে পারে।তারিন আর আশা মনে মনে ভাবছে,,, “কী থেকে কী হয়ে গেল?আমরা তো তাকে আশিয়ানের বিরুদ্ধে বিষিয়ে দিতে এসেছিলাম!কিন্তু এখন তো দেখি এই মেয়ে আমাদের উল্টো গোল খায়িয়ে দিলো!”

এনা আর কেয়া সপ্রশংস দৃষ্টিতে ঊদিতার দিকে তাকালো।উচিত জবাব ছুঁড়ে দিয়েছে সে তাদের মুখের ওপর।ব্রাভো গার্ল!

ঊদিতা তাদেরকে আর কিছু বললো না।টাওয়েল, ব্লাউজ আর পেটিকোট নিয়ে কেয়াকে বলে ওয়াশরুমে চলে গেল গোসল করতে।তারিন আর আশা মুখ চুন করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।এনা আর কেয়া হু হা করে হেসে ফেললো তাদের এভাবে জব্দ হতে দেখে।দুজনে হাইফাইভ দিলো।

এনা আর কেয়া নিচে গেলো কিছুসময়ের জন্য।মেহমানেরা নিচে গিজগিজ করছে।দুই নতুন বউকে দেখার জন্য তারা সবাই উদগ্রীব হয়ে বসে আছেন।সন্ধ্যা পর রিসিপশন পার্টি শুরু হবে।আশিয়ান ঘুম থেকে ওঠে নিজের রুমে চলে এলো।এসে ঊদিতাকে কোথাও দেখতে পেল না সে।

বেশি চিন্তা না করে রুমের দরজা লক করে টাওয়েল নিয়ে সুইমিংপুলে চলে গেল সাঁতার কাটতে।গিয়ে বেশ কিছুক্ষণ পানিতে দাপাদাপি করে বাথরোব পড়ে রুমে ফেরত এলো আশিয়ান।টাওয়েল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় নিজেকে দেখছে এমন সময় বাথরুমের দরজা খুলার শব্দ পেয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো সে।

ঊদিতা ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আশিয়ানকে দেখে জমে বরফ হয়ে গেলো যেন।এই মুহূর্তে আশিয়ানকে সে মোটেই আশা করে নি।আশিয়ান এবার পূর্ণদৃষ্টিতে ঊদিতার দিকে তাকালো।হাঁটু অবধি ভেজা লম্বা চুলগুলো খোলা,, টপটপ করে পানি পড়ছে চুল থেকে।মেজেন্টা কালার একটা থ্রি কোয়ার্টার হাতার ব্লাউজ ও একটা পেটিকোট তার পরনে।আশিয়ান ঊদিতাকে পা থেকে মাথা অবধি স্ক্যান করছে।ঊদিতার ফর্সা পেট,পিঠ ও কোমড় স্পষ্ট চোখে লাগছে আশিয়ানের।আশিয়ান ধীর পায়ে হেঁটে ঊদিতার একদম কাছে চলে গেল।ঊদিতা নিজেকে ঢাকবার বৃথা চেষ্টা করছে।

আশিয়ানের মতো ছেলেরা দুই রকমের হয়।যথা;
এক..গার্লফ্রেন্ড থাকলে ওরা কখনো অন্য কোনো মেয়ে তো দূরে থাক নিজের বউকেও কখনো ভালো করে দেখে না,,
দুই..গার্লফ্রেন্ড না থাকলে নিজের বউয়ের দিকেই পূর্ণ মনযোগ থাকে তাদের।

আশিয়ানের ক্ষেত্রে দ্বিতীয়টা ঘটেছে।যেহেতু গার্লফ্রেন্ড নাই সেহেতু নিজের বউয়ের দিকেই সকল এটেনশন যাচ্ছে তার।চাইলেও ঊদিতার ভুত তার মাথা থেকে নামছে না।এত সুন্দরী বউ চোখের সামনে থাকলে কী আর নিজেকে আটকে রাখা যায়?সত্যি বলতে,,খুব কম ছেলেরাই পারে নিজেদেরকে সংযত রাখতে।

ঊদিতা আশিয়ানকে উপেক্ষা করেও যেতে পারছে না।লজ্জায় মনে হচ্ছে এখুনি মরে যাবে সে।উফফ,,ভালো লাগে না।

আশিয়ান ঊদিতার কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের কাছে টেনে নিলো।ঊদিতা শেষ লজ্জায়।চোখ তুলে তাকাতে পারছে না সে আশিয়ানের দিকে।গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।এ কেমন অদ্ভুত অনুভূতি?

আশিয়ান ঊদিতার চুলে নাক ডুবিয়ে চুলের স্মেল নিতে লাগলো।কেমন যেন নেশা লাগিয়ে দিলো চুলের সুঘ্রাণটা।কী জানি কোন শ্যাম্পু ইউজ করে সে!এত সুন্দর স্মেল!আশিয়ান একহাত দিয়ে চুল সরিয়ে গলা থেকে সেখানে নাকমুখ গুঁজে দিলো।ঊদিতা থরথর করে কাঁপছে লাগাতার।আশিয়ান খুবই হার্ডভাবে চুমু খাচ্ছে গলার ভাঁজে।এমন স্পর্শে ঊদিতা শিউরে ওঠছে বারংবার।একহাতে আশিয়ানের চুল খামচে ধরলো সে আরেকহাত আশিয়ানের পিঠে বিচরণ করছে তার।আশিয়ানের চুমুর তোড়েই বোঝা যাচ্ছে যে সে নিজেকে কোনোমতেই কন্ট্রোল করতে পারছে না।সে যখন ঊদিতার ব্লাউজে হাত লাগালো খোলার জন্য ঠিক তখনই রুমের দরজায় কেয়া ও এনা নক করলো।

আশিয়ানের ঘোর কাটলো দরজা ধাক্কানোর শব্দে। বিরক্তি নিয়ে একবার দরজার দিকে তাকিয়ে তারপর ঊদিতার দিকে তাকালো।ভেজা লেপ্টে থাকা হরিণীর চোখের মতো লম্বা পল্লবযুক্ত আঁখি জোড়া আশিয়ানের দিকেই নিবদ্ধ।আশিয়ান ঊদিতার থুতনিতে একহাত দিয়ে চেপে ধরে ঠোঁটের কোণে গভীরভাবে একটা চুমু খেলো।তার নেশালো কন্ঠে বললো;

আশিয়ান:-শাড়ি পড়ছো ভালো কথা।ভুলেও কোনো ছেলের সামনে শাড়ি পড়া অবস্থায় যাবে না।আর বড় একটা ওড়না দিয়ে হিজাব বাঁধবে,, মনে থাকবে?(কিছুটা গম্ভীর হয়ে)

ঊদিতা ভয়ে একনাগাড়ে বেশ কয়েকবার মাথা ঝাঁকিয়ে উত্তর দিলো;

ঊদিতা:-জ্বী মনে থাকবে।

আশিয়ান ঊদিতাকে ছেড়ে সরে দাঁড়িয়ে বললো;

আশিয়ান:-গুড।এখন যাও দরজা খুলো গিয়ে।আমি ওয়াশরুমে যাচ্ছি ড্রেস চেঞ্জ করতে।

এই বলে আশিয়ান কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল।ঊদিতা একটা ওড়না দিয়ে নিজেকে প্যাঁচিয়ে দরজার কাছে গিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে লক খুলে দরজা খুলে দিলো।এনা, কেয়া আর মিসেস ইয়াসমিন রুমে ঢুকলেন।মিসেস ইয়াসমিন বড়সড় একটা গহনার বাক্স ঊদিতাকে দিয়ে বললেন এখান থেকে বেছে বেছে কয়েকটা গহনা রাতে রিসিপশন পার্টিতে পড়তে।ঊদিতা মাথা নেড়ে সায় জানালো।মিসেস ইয়াসমিন ঊদিতার কপালে চুমু খেয়ে চলে গেলেন।

এনা আর কেয়া ঝটপট ঊদিতাকে শাড়ি পড়িয়ে দিলো।শাড়িটা বেশ মার্জিত ভাবেই পড়িয়েছে তাকে ওরা।শাড়ি পড়া শেষ হতেই আশিয়ান ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো।নরমাল একটা ধূসর রঙা শার্ট আর একটা কালো জিন্স তার পরনে।ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে সেন্টার টেবিল থেকে ফোনটা নিয়ে কারও দিকে না তাকিয়েই হনহন করে বেরিয়ে গেলো সে।এনা আর কেয়া ততোটা পাত্তা দিলো না আশিয়ানকে।আশিয়ানের স্বভাব সম্পর্কে সবাই অবগত।

ঊদিতাকে হিজাব ও প্রয়োজনীয় গহনাদি পড়িয়ে দিয়ে পুরোপুরি রূপে তৈরি করে তাকে নিয়ে নিচে নেমে এলো ওরা।যেখানে শুধু মেয়েদের আসর বসেছে সেখানে সবার মাঝখানে আলেয়ার পাশে ঊদিতাকে বসিয়ে দিলো এনা আর কেয়া।আলেয়া ও ঊদিতাকে সব মহিলারা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে।কেউ কেউ গিফটের প্যাকেট অথবা গহনা দিচ্ছে উপহার হিসেবে।ঊদিতার সৌন্দর্য দেখে সব মহিলারা মুগ্ধ।সাথে তার অমায়িক ব্যবহার তো তাদের মন কেড়ে নিয়েছে।মিসেস ইয়াসমিনের ক্লোজ যে মহিলারা ওনারা তো মিসেস ইয়াসমিনকে বারবার বলছে যে তিনি প্রথমবারের মতো এবারও জিতছেন।মিসেস ইয়াসমিন মুচকি হাসছেন শুধু প্রতিত্তোরে কিছু বলছেন না।

সব ছেলেরা বাইরে আড্ডা দিতে ব্যস্ত।বাইরের এক কোণে বাবুর্চিরা বড় বড় ডেগচিতে রিসিপশনের জন্য রান্না করছেন।বাইরে অনেক সুন্দর করে স্টেজ সাজানো হয়েছে।আশিয়ান সবার সাথে আড্ডায় মশগুল।বন্ধুরা তো তাকে জ্বালিয়ে মারছে রাতে কী হয়েছে সেটা জানার জন্য।আশিয়ান ধমকে ধামকে তাদের মুখ থেকে এ প্রসঙ্গ বাদ দিয়েছে।

আশিয়ান প্রচন্ড রকমের দোটানায় ভুগছে।ঊদিতার প্রতি তার সাংঘাতিক লেভেলের মোহ সৃষ্টি হয়েছে ঠিকই কিন্তু কাউকে তো এত সহজে ভালোবাসা যায় না।আর ইলিয়ানাকে সে যেভাবে ভালোবেসেছিল সেভাবে তো মনে হয় না যে ঊদিতাকে ভালোবাসতে পারবে!জানে না সে ভবিষ্যতে কী হবে?

কীভাবে যে সন্ধ্যা হয়ে গেছে বুঝাই যায় নি।ঊদিতা অনেক আগেই রুমে ফিরে এসেছে।শাড়ি পাল্টে ওয়াক্তের নামাজ আদায় করে নিয়েছে।এখন মাগরিবের নামাজ আদায় করতে ব্যস্ত সে।আশিয়ান আর একবারও রুমে আসে নি।মাগরিবের নামাজ শেষে সবেমাত্র বিছানায় গিয়ে বসেছে এমনসময় আবার দরজাতে কে যেন নক করলো।ঊদিতা দরজা খুলে দিতেই এনা পার্লারের এক মহিলাকে সাথে নিয়ে রুমে ঢুকলো।এই মহিলাই তাকে এতদিন সাজিয়ে আসছে।এনা আগে থেকেই রেডি হয়ে আছে।কেয়া স্বামী সন্তান নিয়ে একটু বিজি তাই আসতে পারে নি।

ঊদিতা রিসিপশন পার্টিতে পড়ার জন্য ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল চেঞ্জ করতে।ড্রেস চেঞ্জ করে আসতেই শুরু হলো মেকআপ করা।মহিলাটি খুবই যত্নসহকারে ঊদিতাকে সাজাচ্ছে।প্রায় আধাঘন্টা পর ঊদিতার সাজগোজ কমপ্লিট হলে মহিলাটি তাকে গহনাগুলো পড়িয়ে দিয়ে হিজাব পড়িয়ে নেকাব ও লাগিয়ে দিলো।ব্যস,,ঊদিতা পুরোপুরি তৈরি।

আশিয়ানের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সব কেয়া আগেই নিয়ে গিয়েছিল।আশিয়ান অন্য একটা রুমে কাপড় চোপড় চেঞ্জ করে পুরোপুরি রেডি হয়ে তারপর নিচে চলে এসেছে।ঊদিতার পরিবার ও আলেয়ার পরিবার থেকে লোকজনরা সন্ধ্যার সাথে সাথেই এখানে চলে এসেছে।ঊদিতার রুমে গিয়ে মিসেস আনিত, উসামা ও ঊষা দেখা করে এসেছে।মি.আনিসুল ও শাহরিয়ার আশিয়ানের বাবা,চাচা ও বড় ভাইদের সাথে আলাপে মশগুল।

আশিয়ান তার বন্ধুদের সাথে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে জুস খেতে খেতে কথা বলছে।অনুষ্ঠান একদম জমে ওঠেছে।আলেয়া নিচে চলে এসেছে তাসকিনের সাথেই।সবাই তাদের সাথে কথা বলতে ও ফটো তুলতে ব্যস্ত।

বেশ কিছুক্ষণ পর ঊদিতাকে সাথে নিয়ে এনা আর কেয়া নিচে নামলো।ঊদিতাকে দেখতে পেয়ে আশিয়ানের হার্টবিট ফাস্ট হয়ে গেল।চোখজোড়া তার ঊদিতাতেই আটকে আছে যেন।তৌহিদ ও আসিফ মুচকি হেসে দুজন দুদিক থেকে আশিয়ানকে ধাক্কা দিতেই আশিয়ান নিজের হুঁশে এলো।বন্ধুরা তো তাকে নানাভাবে পিন্চ মেরে কথা বলছে।আশিয়ান কিছুটা লজ্জায় আর তাকাতে পারছে না।ঊদিতাকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে। গর্জিয়াস পাথরের কারুকাজ করা টিয়াল গ্রিন কালারের ফুলহাতা ও প্রচুর ঘের দেয়া লং গাউন পড়েছে সে।সাথে আছে সেইম কালারের বড় হিজাব ও নেকাব।ঊদিতার চোখজোড়া অনেক সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।আর কিছুই দৃষ্টিগোচর হবে না কারও একমাত্র ওর চোখজোড়া ছাড়া।

ঊদিতা আস্তে আস্তে নিচে এসেই শাহরিয়ারকে জড়িয়ে ধরলো।শাহরিয়ারও পরম মমতায় জড়িয়ে ধরে তার আদরের ছোট্ট বোনটাকে।ঊদিতা তার ভাইকে কুশল বিনিময় করে তারপর গিয়ে নিজের বাবাকে জড়িয়ে ধরে।মি.আনিসুল মেয়ের মাথায় চুমু খেয়ে আদুরে কন্ঠে তাকে নানা কথা জিজ্ঞেস করলেন।ঊদিতাও হাসিমুখে জবাব দিলো।আরচোখে আশিয়ানের দিকে একপলক তাকালো ঊদিতা।আশিয়ানকে কোনো হিরোর চাইতে কম লাগছে না।কালো শার্টের ওপর টিয়াল গ্রীন কালারের মখমলের ব্লেজার ও কালো প্যান্ট তার পরনে।চুলগুলো জেল দিয়ে একপাশে সেট করে রাখা।হাতে এপল ব্রান্ডের ওয়াচ্।পায়ে ফরমাল শোজ।সবকিছু মিলিয়ে তাকে জোসস লাগছে দেখতে।

সবশেষে ঊদিতাকে আশিয়ানের পাশে এনে দাঁড় করিয়ে প্রচুর ফটো তোলা হলো।আশিয়ান ঊদিতার হাত নিজের হাতের ভাঁজে নিয়ে বাইরে বেরোলো স্টেজে যাওয়ার জন্য।তাদের একসাথে হেঁটে আসার দৃশ্য ভিডিও করা হচ্ছে।ঊদিতা আশিয়ানের দিকে তাকালো আশিয়ানও একই সময়ে ঊদিতার দিকে তাকালো।দুজনের চোখে চোখ পড়া অবস্থায় একটা ছবি তুলে ফেললো ফটোগ্রাফার।আশিয়ানদের কাজিনরা মুখে আঙ্গুল পুরে সিটি বাজাতে লাগলো।তাসকিন আলেয়া ও আশিয়ান ঊদিতা তাদের ওপর ফুলের পাপড়ি অনবরত বর্ষিত হতে লাগলো।খুবই সুন্দর মুহূর্তটা।

স্টেজে ওঠার পর তাদের সিঙ্গেল ফটো,গ্রুপ ফটো,ফ্যামিলি ফটো সবরকমের ফটো তোলা হলো।সব্বাই খুশি এরকম নতুন দুটো পরিবারের সাথে সম্পর্ক জুড়ায়।এত এত আনন্দ করে খাওয়া দাওয়া শেষে অনুষ্ঠান সম্পন্ন হলো।আজকে আশিয়ানদের বাসায় ঊদিতা ও আলেয়ার পরিবারের সবাই থাকবে।বাইরের গেস্ট হাউজ খুলে দেয়া হলো অতিথিদের থাকার জন্য।

আজকে আবারও নতুন করে বাসর ঘর সাজানো হয়েছে নতুন কপোত-কপোতীদের জন্য।বরং আগের রাতের থেকে আজকে অনেক বেশি সুন্দর করে বাসর ঘর ফুল টুল দিয়ে সাজানো হয়েছে।ঊদিতা সেই কখন থেকে ফুলে সাজানো বিছানার মধ্যমণি হয়ে বসে আছে আশিয়ানের অপেক্ষায়।এশার নামাজ আগেই আদায় করে নিয়েছে সে।আশিয়ানের আসার নামগন্ধও নেই।প্রায় অপেক্ষা করতে করতে রাত প্রায় বারোটার দিকে রুমে এলো আশিয়ান।আজ আর ওসব ছাইপাঁশ গিলে নি।এই মুহূর্তে আশিয়ানের মুডটা প্রচুর গম্ভীর হয়ে আছে।মুড ঠিকই ছিলো কিন্তু তার এক বন্ধুর ব্রেকআপের কাহিনী শুনে তার মেজাজটা বিগড়ে গেছে।যার কারণে এই মুহুর্তে ঊদিতাকে তার কাছে ইলিয়ানা ও তার ফ্রেন্ড মাসুদের গার্লফ্রেন্ড সারার মতো লোভী মনে হচ্ছে।

আশিয়ান গম্ভীর মুখে এসে বিছানায় ঊদিতার সামনে মুখোমুখি হয়ে বসলো।ঊদিতা বিনয়ী কন্ঠে সালাম দিলো আশিয়ানকে।আশিয়ানও আগের ন্যায় গম্ভীর হয়ে সালামের জবাব দিলো।

(আপনারা প্লিজ বোনাস পার্ট চেয়ে আমাকে লজ্জা দিবেন না।আমি জানি গল্পটা আপনাদের অনেক ভালো লাগে।তাই আপনারা বারবার বলেন বোনাস পার্ট দেয়ার জন্য।লেখা থাকলে আমি অবশ্যই দিয়ে দিতাম।কিন্তু বর্তমানে নির্দিষ্ট পর্বের বেশি আমি লিখতে পারছি না।যদি লিখতে পারি তবে আমাকে বলতে হবে না আমি এমনিতেই দিয়ে দিবো।আর রইলো আশিয়ানের কথা,,, তাকে ঊদিতাই সঠিক পথে নিয়ে আসবে।সেটা আস্তে আস্তে বুঝতে পারবেন।গঠনমূলক কমেন্ট করে আমার পাশে থাকবেন সবসময় এবং এভাবেই সাপোর্ট দিয়ে যাবেন আমাকে আশা করছি।সো,,হ্যাপি রিডিং গাইজ।❤️)

#চলবে …

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here