তোমাতে বিলীন পর্ব-২

0
12685

তোমাতে বিলীন
লেখিকা-আমায়া নাফশিয়াত
#পর্ব—০২

শক্ত কাঠের একটা চেয়ারের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে এক লোককে। একটু আগেই লোকটাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে আসা হয়েছে। সারা গোডাউন জুড়ে ২০ জন লোক কালো গেটআপে দাঁড়িয়ে আছে আশেপাশে।চেহারা দেখা যাচ্ছে না ওদের।

এটা একটা গোপন সংঘ তাদের। যেখানে অন্যায়কারীদেরকে উচিৎ শাস্তি দেয়া হয়। ২০ জন লোক সবার মুখে কালো মাস্ক লাগানো। চেনার কোনো কুদরতই নেই তাদের।চেয়ারে বাঁধা লোকটিকে ৫ জন মিলে এতক্ষণ উদম কেলানি দিয়েছে। এত মার খেয়ে বেচারার অবস্থা খারাপ। এদের কাউকেই চিনতে পারছে না সে। কী কারনে এত মারধর করলো তাও বুঝতে পারছে না।

একটা দশাসই লোক এতক্ষণ তার গালে হাজারটার মতো চড় মেরেছে। গালদুটোকে একদম আলুর ভর্তা করে দিয়েছে। কিন্তু টু শব্দ করারও উপায় নেই। মুখের ভেতর কাপড় গোঁজে দিয়েছে ওরা অনেক আগেই।খালি ছটফট করছে সে বান মাছের মতো। কিন্তু লোকগুলো নির্বিকার ভাবে দাঁড়িয়ে আছে তাদের জায়গায়।

ঠিক এমন সময় গটগট শব্দে গোডাউনের ভেতর কেউ প্রবেশ করলো। সেই ২০ জন লোক আগন্তুকটিকে দেখে স্যালুট দিলো। আগন্তুকটি অভ্যস্ত ভঙ্গিতে তাদের মধ্যে একজনকে ইশারা করলো। সাথে সাথে লোকটি একটা চেয়ার এগিয়ে দিলো তাকে। আগন্তুকটি আয়েশ করে পায়ের উপর পা তুলে চেয়ারে বসলো। আরেকজনকে ইশারা করতেই সে এসে বন্দী লোকটার মুখ থেকে কাপড় সরিয়ে দিলো। আগন্তুকটিকে দেখে প্রথমে মোটেও চিনতে পারলো না বন্দী লোকটি। চেঁচিয়ে বলে উঠলো;

বন্দী:-তোদের সাহস তো কম নয়,,, কে তোরা যে আমাকে এভাবে কিডন্যাপ করে নিয়ে এসেছিস??হে,,,একবার বের হতে পারলে তোদেরকে জ্যান্ত পুতে ফেলবো শালা,,,। (চিৎকার করে)

আগন্তুকটি পৈশাচিক এক হাসি দিলো। তারপর আস্তে করে মাথা থেকে কালো হুডি সরিয়ে মুখ থেকে কালো মাস্কটা সরালো সে। আগন্তুকটির চেহারা দেখে ভয়ে চমকে উঠলো বন্দী লোকটি। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো ;

বন্দী:-আ,,,,আ,,,আপনি,,,,আপ,,,নি,,,(ভয়ে তোতলিয়ে)

আগন্তুকটি এবার জোরে হেসে উঠলো বন্দী লোকটির তোতলানো দেখে। পা নাচাতে নাচাতে ভরাট কন্ঠে বলে উঠলো;

আগন্তুক:-কীরে মদনা,,,আমার চেহারা দেখেই তোর সব সাহস হাওয়া হয়ে গেল নাকি হুম???এতক্ষণ তো মুখ থেকে খুব ব্যাটাগিরি মার্কা কথা বেরোচ্ছিলো। তাহলে এখন মুখে রা নেই কেন হে??(কঠিন কন্ঠে)

মদন চুপ করে আছে। কী কথা বলবে সে??বলার মতো কিছু আছে আর??? যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয় প্রবাদবাক্যটা যে কতটা সত্যি তা এখন হারে হারে টের পাচ্ছে সে। যেখানে Underworld এর King ATC Saraj Khan এর নাম শুনলে মন্ত্রী মিনিস্টাররা পর্যন্ত ভয়ে কেঁপে ওঠে সেখানে আজ মদন খুব বাজেভাবে ফেঁসে গেছে।

এককথায় ধনীর যম গরীবের বন্ধু– রবিনহুডের মতো এই সারাজ ও অন্যায়কারীর যম ও নিপীড়িত মানুষদের বন্ধু বললেই চলে। সারাজকে দেখে মদনের তার বিগত সব কুকর্মের কথা মনে পড়ে গেল। ভয়ে থরথর করে কাঁপছে সে সারাজের ভয়ংকর রক্তলাল চক্ষু দেখে।

মদন একটা মেয়ে পাচারকারী চক্রের হেড। ওর নামে প্রায় ৫৪ টার মতো মামলা আছে। বর্তমানে আরেকটা মামলা দেয়া হয়েছে তার ওপর। সে একটা গরিব ঘরের মেয়েকে তুলে নিয়ে একসপ্তাহ ভরা টানা ধর্ষণ করেছে। মেয়েটা আধমরা অবস্থায় বর্তমানে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন আছে।

তার ওপর বেশ অনেকগুলো ধর্ষণ ও মেয়েকে খুনের মামলাও করা আছে। মেয়েদেরকে পটিয়ে পাটিয়ে নিজের এরিয়ায় নিয়ে এসে পাচার করে দেয় সে এবং এসবে তাকে সাহায্য করে তার বিশ্বস্ত চ্যালাপেলারা। সারাজ অনেক আগেই একবার তার বিশ্বস্ত ডানহাত মির্জাকে দিয়ে ওয়ার্নিং দিয়েছিলো মদনকে,, কিন্তু সে এলাও-ই করে নি সারাজের থ্রেডকে। তাই আজ একদম তুলে নিয়ে আসা হয়েছে তাকে।
এবং সারাজের কাছে তুলে নিয়ে আসা মানে সাক্ষাৎ মৃত্যুকে আলিঙ্গন করা। সে প্রত্যেক অন্যায়কারীকেই তুলে নিয়ে আসার আগে লাস্ট ওয়ার্নিং দেয়,,, এতে যদি সে শুধরে না যায় তাহলে অপরাধীকে তুলে নিয়ে এসে গোডাউনে সারাজ না আসা পর্যন্ত আটকে রাখা হয়। এবং সারাজ আসা মানেই নির্ঘাত ভয়ংকর মৃত্যু।

মদনের সারা শরীর বেয়ে টপটপ করে ঘাম ঝরছে। ভয়ের চোটে মুখ থেকে কোনো কথাই বের হচ্ছে না তার। যেন নির্বাক কোনো পুতুল সে। সারাজের হাতে মোটা শেকলের মতো একটা ইস্পাতের চেইন ছিলো৷ সেটা একমনে নাড়াতে নাড়াতে বললো;

সারাজ:-কীরে,,, King ATC Saraj Khan কে চিনতে কোনো ভুল হয়নি তো তোর???না চিনে থাকলে বল,,,ভালো করে চিনিয়ে দিই তোকে,, (দাঁত কিড়মিড় করে)

হৃৎপিণ্ড ভীষণভাবে লাফালাফি করছে মদনের। হাত পা তড়িৎ গতিতে কাঁপছে তার। সারাজ আবারও বলে উঠলো;

সারাজ:-এখন এত কাঁপা-কাঁপি কেন করছিস বলতো,,, এতদিন এসব কুকর্ম করার সময় মনে ছিলো না যে এই কিং সারাজ একবার ধরতে পারলে তোর বাপের নাম ভুলিয়ে ছেড়ে দেবে৷।হে,,,??কী,,,?? সারাজের থ্রেডকে সিরিয়াসলি না নিলে এরকমই হবে জানতি না তুই ??? শুয়োরের বাচ্চা,,,

এই বলে প্রচন্ড রেগে চেয়ার ছেড়ে মদনের গালে টাসস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো সারাজ। হুংকার দিয়ে বললো;

সারাজ:-কুত্তার বাচ্চা,,, মেয়ে দেখলেই হুশ থাকে না,,, তাই না,,?? কী করে পারলি এই ১৫ বছরের ফুলের মতো নিষ্পাপ মেয়েটাকে ধর্ষণ করতে?? বল,,, শালা শুয়োরের বাচ্চা,,,!! তোর বুক একটুও কাঁপলো না??এই সারাজ ধরতে পারলে তোর কী অবস্থা করবে তা কী তুই আন্দাজ ও করতে পারিস নি??? আজ তোকে এমন ভয়ংকর মৃত্যু দিবো আমি যা তুই কখনো কল্পনাও করিস নি,,, সো গেট রেডি ফর ইউর পানিশমেন্ট,,, আজকেই এই দুনিয়ায় তোর শেষ রাত,,,কালকের ভোরের আলো দেখার সৌভাগ্য তুই পাবি না। তোর চ্যালাপেলাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছি আমি,,, কী ভেবেছিস তুই এই সারাজের হাত থেকে পালিয়ে গিয়ে বেঁচে যাবি??? হাহ্,,, কক্ষনো নয়।।

এই বলে পৈশাচিক একটা হাসি দিয়ে লম্বা করে দম নিলো সারাজ। হাত দিয়ে তালি বাজালো সে। সাথে সাথে কালো পোশাক পরিহিত এক দশাসই টাইপের লোক হাতে ধারালো চাকু নিয়ে সারাজের দিকে এগিয়ে এলো। সারাজ আয়েশ করে চেয়ারে বসে লোকটাকে খুবই সাধারণ ভঙ্গিমায় বলে উঠলো;

সারাজ:-মির্জা,,, এক্ষুনি তুমি এই শালার পুতের পুরুষত্বের বারোটা বাজাবে,,, এই চাকু দিয়ে কেটে দাও তার ঐ কলঙ্কিত লিঙ্গটি যা দিয়ে সে হাজারো মেয়ের সর্বনাশ করেছে।

মির্জা:-ওকে বস,,,

এই বলে মির্জা এগিয়ে গেলো মদনের দিকে। মদন সারাজের কথা শুনে ও মির্জার এগিয়ে আসা দেখে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে লাগলো। কান্না করে সারাজের কাছে জীবন ভিক্ষা চাইতে লাগলো।

মদন:-নাআআআআ,,,,,আমার এতবড় সর্বনাশ করো না প্লিজ। আমি কথা দিচ্ছি,,, আর জীবনেও এসব কুকর্ম করবো না,,, আমি আমার কাজের জন্য অনুতপ্ত,,, আমাকে মেরো না প্লিজ দোহাই লাগে তোমাদের। (কাকুতি মিনতি করে)

সারাজ একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো ;

সারাজ:-ওহহ,, রিয়েলি,,, তুই ভালো হয়ে যাবি??বেস্ট জোকস শুনালি তুই আমায় মদনা,,,এতো দেখছি ভুতের মুখে রাম নাম,,, এভাবে তোর কাছে কতশত মেয়ে নিজের জীবন ভিক্ষা চেয়েছে,,, কতশত মেয়ের জীবন নষ্ট করেছিস তুই তার কী কোনো হিসাব আছে শুনি তো একটু???তখন তো তুই তাদের আকুতি মেশানো কথায় কোনো পাত্তাই দেস নি। নিজের লালসার শিকার বানিয়েছিস তুই ওই সব নিরীহ মেয়েদেরকে। তুই ভাবলি কী করে যে এত এত মারাত্মক অপরাধ করে তুই পার পেয়ে যাবি??? তাও কিং এটিসি সারাজ খানের কাছে। সে আশায় গুড়ে বালি। সারাজ ফার্স্ট এন্ড লাস্ট একবারই চান্স দেয় অপরাধীদেরকে,,, একবার মাত্র নিজেকে শুধরানোর সুযোগ দেয়,,, সেই সুযোগ কাজে না লাগানো মানে নিজের লাইফকে নিজ দোষে হারানো। সো এখন এত আক্ষেপ করেও লাভ নেই। মৃত্যুর জন্য তৈরি হো,,,।।মির্জা,,, (মির্জাকে ডেকে)

মির্জা:-ইয়েস বস,,,

সারাজ:-লেট ফিনিশ ইউর ওয়ার্ক,,,

মির্জা:-ওকে বস,,,

হাতে চেইন প্যাঁচিয়ে মির্জাকে আদেশ করলো সারাজ। সাথে আরও কয়েকজনকে ইশারা করলো কিছু। আরও ৫ জন এগিয়ে এলো মির্জার কাছে। একজন মদনের পরনে থেকে প্যান্ট খুলে নিলো। মদন তারস্বরে চিৎকার করছে। চিৎকার করে করে গলার বারোটা বাজাচ্ছে সে। সারাজের ইশারায় একজন তার মুখ বেঁধে দিলো। যাতে চিৎকার করতে না পারে।

মির্জা পৈশাচিক হেসে ধারালো ছুরি দিয়ে এক পোঁচে মদনের লিঙ্গটা আলাদা করে ফেললো। মদন গলাকাটা মুরগির মতো একনাগাড়ে ছটফট করছে। মির্জা ছুরি দিয়ে মদনের কপালে কেটে লিখে দিলো ‘আমি ধর্ষক’।তারপর সেই কাটা জায়গায় লবন মরিচ ঢলে দিলো। পাগলের মতো ছটফট করছে মদন ছাড়া পাওয়ার জন্য ৷

সারাজের কথা মতো মদনের শার্ট খুলে সারা বুকজুড়ে ছুরি দিয়ে লেখা হলো “কিং এটিসি সারাজের কথা না শুনার শাস্তি”।পিঠে লেখা হলো “একজন ধর্ষকের প্রাপ্য শাস্তি”। এবং তাতেও লবন মরিচ ঢলে দেওয়া হলো।

সারাজ একমনে ফোন টিপছে। বাকিরা তাদের কাজ সারতে ব্যস্ত। মদন চাপা আর্তনাদ করতে লাগলো। অনবরত গোঙাচ্ছে সে। এখনো মরেনি। তাই হাত পা কেটে এখানেও লাল মরিচ, লবন ও বোম্বে মরিচ ডলে দেয়া হলো।

এত ভয়াবহ অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে ঐ ছটফট করতে করতে মুহূর্তেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো মদন। সারাজ হাসলো মদনের দিকে তাকিয়ে। তার দেয়া ওয়ার্নিংকে এলাও না করে খুব বড় ভুল করেছে মদন,, মারাত্মক ভুল করেছে। যার ফলস্বরূপ এত ভয়ংকর মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হলো তাকে। সারাজ বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে মির্জাকে লক্ষ্য করে বললো ;

সারাজ:-ওর লাশটা একদম পাব্লিক প্লেসে রেখে আসবে মির্জা,,, যাতে এত ভয়ংকর মৃত্যু দেখে সবার কলিজা কেঁপে ওঠে। আর কোনো অমানুষের বাচ্চা যাতে কোনো মেয়েকে ধর্ষণ করার আগে একশোবার চিন্তা করে মদনের শেষ পরিণতি দেখে। মদনের সমস্ত কুকীর্তি ফাঁস করে দেয়ার ব্যবস্থা করবে। (আদেশ করে)

মির্জা:-জ্বী বস,,, আপনি ভাববেন না,,,সব হয়ে যাবে।বস,,পরে কাকে টার্গেট করবো?? (জানতে চেয়ে)

সারাজ শয়তানি মার্কা মুচকি হাসি দিয়ে বললো ;

সারাজ:-সেরা ক্যাসিনো ব্যবসায়ী এবং পতিতা বিক্রির দালাল সাজ্জাদ তোফায়েলকে,,,

এই বলে গোডাউন থেকে বেরিয়ে গেলো সারাজ।সারাজের সাথে একজন বডিগার্ড এসেছিলো সেও সারাজের পিছে পিছে চলে গেলো।বাকিরা মদনকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।

❄️❄❄️

তাসকিনের পরিবারের সবাই চলে আসার পর ঊদিতারা সবাই ডিনার করতে বসলো। আজকের ধকলে সবাই ক্লান্ত,, বিশেষ করে মিসেস লিমা এবং ঊদিতা। তাদের ওপর ধকল গেছে অনেক বেশি।
ঊদিতা এবং তানিয়া সবাইকে খাবার বেড়ে দিয়ে ওরা নিজেরাও চেয়ার টেনে বসে পড়লো। খাবার খেতে খেতে আলেয়ার এনগেজমেন্ট ও পাত্র পক্ষের সবার কথা আলোচনা ও সমালোচনা করতে লাগলো ওরা। সবার মাঝে একমাত্র ঊদিতাই মুখে কুলুপ এঁটে একমনে খাবার খাচ্ছে। মিসেস লিমা ঊদিতাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন ;

মিসেস লিমা:-এখন বাসায় যাওয়ার চিন্তা বাতিল করে ফেল ঊদিতা। তোর আর এখন কোথাও যাওয়া হচ্ছে না।

ঊদিতা:-কিন্তু ফুপ্পি,,,

মিসেস লিমা ঊদিতার কথা থামিয়ে দিয়ে বললেন;

মিসেস লিমা:-দেখ,,, আমি তোর কোনো কথা শুনছি না। তোকে এখানে থাকতেই হবে। তুই হলি আমার মেইন হ্যাল্পিং হ্যান্ড। এসব বিয়ে শাদীর কাজে নিজের মানুষ ছাড়া পর কাউকে বিশ্বাস করা যায় না। দুয়েকদিন পর তোর বাবা,মা ও ভাই, ভাবী চলে আসবে এখানে। চিন্তা করিস না।তোকে ছাড়া আমি একদম অচল। তা আজকে হারে হারে বুঝতে পেরেছি আমি। বলেও লাভ নেই,,,তোকে এখন আমি কোথাও যেতে দিচ্ছি না ব্যস।

মিসেস লিমার সাথে সায় জানালেন ঊদিতার ফুপা মি.গোলজার ও। বললেন;

মি.গোলজার:-তোমারই তো বোনের বিয়ে। থেকে যাও মা,, তুমি ছাড়া তোমার ফুপ্পি একাহাতে সব সামলাতে পারবে না।

মিসেস লিমা:-থাকবে না মানে???ও থাকতে বাধ্য।। এখন কোথাও যাওয়া চলবে না।(ঘাড়ত্যাড়ামি করে)

মিসেস লিমার একরোখা মনোভাব জীবনেও যাবে না।তিনি বলেছেন মানে তার অনুমতি ছাড়া আর একপাও কোথাও যেতে পারবে না ঊদিতা। তাই আর কথা না বাড়িয়ে চুপ করে গেল সে। ঊদিতার মাথায় এখন মিসেস ইয়াসমিনের দেয়া স্বর্নের আংটি ও সেই ১০ হাজার টাকা ঘুরপাক খাচ্ছে। ঊদিতার এখনো এসব কিছু বোধগম্য হচ্ছে না। রান্না করে খাওয়ালে যে কেউ কাউকে এসব সালামি দেয় তা ঊদিতার কেন জানি মোটেই বিশ্বাস হচ্ছে না। ফুপ্পিকে জানাবে কি না সেটা নিয়েও দোটানায় পড়ে গেছে ঊদিতা।এখন সবার সামনে এসব জানালে সেটা নিয়ে সারারাত ধরে আলোচনা চলবে তাই সে ঠিক করলো সবার সামনে না বলে আলাদা করে বলবে মিসেস লিমাকে।।

খাওয়াদাওয়া সেড়ে সবাই যে যার রুমে চলে গেল। রান্নাঘরে থালাবাসন ধোয়ার ফাঁকে ঊদিতা মিসেস লিমাকে বললো যে তার রুমে আসতে।
অতঃপর ধোয়ামোছার পালা শেষ করে ঊদিতা তার রুমে গেল এবং তার পিছু পিছু গেলেন মিসেস লিমা। ঊদিতা দরজা আটকে মিসেস লিমাকে সব খুলে বললো। আংটি ও টাকা বের করে দেখালো তাঁকে। মিসেস ইয়াসমিনের বলা কথাগুলোও বাদ দেয় নি সে। মিসেস লিমা অবাক হয়ে ঊদিতার বলা সব কথা শুনলেন। আংটি হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে বলে উঠলেন;

মিসেস লিমা:-কী জানি বাপু,,,!!বড়লোকের কায়- কারবার বোঝাও মুশকিল। খুশি হয়েই হয়তো দিয়েছে তোকে। থাক,,, রেখে দে তোর কাছে। আর আংটিটা আঙ্গুলেই পড়ে থাক খুব সুন্দর লাগছে তােকে এই আংটিটায়। টাকাগুলো ব্যাগে রেখে দে।নয়তো হারিয়ে ফেলবি৷

মিসেস লিমার কথায় ঊদিতার মনে আর কোনো সংশয় রইলো না। সে স্বাভাবিকভাবেই মেনে নিলো সব।

কিন্তু মিসেস লিমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে অন্য চিন্তা। মিসেস লিমা ভীষণ চালাক,,। তিনি ঠিক বুঝে গেছেন যে মিসেস ইয়াসমিন এসব এমনি এমনি ঊদিতাকে গিফট করেননি। বলতে গেলে এটা পরোক্ষ ভাবে কনে দেখার সালামি।

ঊদিতাকে যে নিজের ছেলের জন্য মনে ধরেছে মিসেস ইয়াসমিনের তা মিসেস লিমা ফট করে বুঝে গিয়েছেন। অবশ্য এই নিয়ে অনেক বিয়ের প্রস্তাব এসেছে ঊদিতার জন্য। কিন্তু সবগুলোই রিজেক্ট করে দিয়েছিলেন ঊদিতার বাবা মি.আনিসুল খান ৷

মিসেস লিমা মনে মনে হাসলেন,,, এবার আর হয়তো রিজেক্ট করার মতো কোনো কারণ খুঁজে পাবেন না মি.আনিসুল,,,কারণ ওইবাড়ির প্রত্যেকটা ছেলে কাজে কর্মে,, রূপের দিক থেকে,, সবদিক দিয়ে একদম পারফেক্ট। ঔ বাড়ির পুত্রবধূ হওয়া সৌভাগ্যের ব্যাপার।

তবে মিসেস লিমা একটা বিষয়ে কনফিউশানে ভুগছেন,, তা হলো মিসেস ইয়াসমিন তার কোন ছেলের জন্য ঊদিতাকে পছন্দ করেছেন!! মিসেস ইয়াসমিনের তো ৩ ছেলে ও ১ মেয়ে। বড়ছেলের বিয়ে হয়ে গেছে। মেঝোটা আজকে আসে নি,, শুনেছেন সে নামকরা একজন বিজনেসম্যান। নিজের পরিচয় নিজেই গড়েছে সে। সমস্ত মন্ত্রী, এমপি ও বড় বড় নামকরা নেতারাও তার কথায় উঠবস করে।
এতটাই ক্ষমতাশালি সে।বাহিরের দেশগুলোতেও তার বেশ নামডাক আছে।খুব প্রভাবশালী ছেলে সে। যেমন সুন্দর ও স্মার্ট তেমনি রাগী আর এটিটিউটওয়ালা। তাদের বাসার সব ছেলেদের মধ্যে সেই বেশি সুদর্শন ও একরোখা মনোভাবের ছেলে। যেটা মুখে বলে সেটাই করে ছাড়ে। এককথার মানুষ। বাংলাদেশের এমন কোনো মানুষ নেই যে তাকে চেনে না,,, আশিয়ান তায়েফ চৌধুরীর নামটা বললেই হবে,,, যাকে সবাই একনামে চেনে।

বেশিরভাগ মেয়েরাই তার জন্য পাগল। কিন্তু সে পাত্তা দেয় না এসব। কাজকর্ম নিয়ে ব্যস্ত থাকতেই ভালোবাসে বেশি। সব কিছুতেই সে পারফেক্টনেস খুঁজে। যা করে টাইম মেইনটেইন করেই করে,,,হুদাই সময় নষ্ট করার মতো বান্দা সে নয়। ফালতু আড্ডায়ও তাকে কখনো পাওয়া যায় না। খুব কম কথা বলে সে,,, এটা তার একটা বদ স্বভাব। প্রয়োজনীয় কথাবার্তা ছাড়া এক্সট্রা একটা শব্দও তার মুখ থেকে কেউ বের করতে পারে না,,,। সবসময় ফর্মাল গেটআপে থাকতে পছন্দ করে সে।

যাইহোক,,, কিন্তু মিসেস লিমা যতদূর জানেন,, আশিয়ান মেয়েদের ছায়াও সহ্য করতে পারে না৷ ওর ৪ বছরের দীর্ঘ রিলেশন ব্রেকআপ হওয়ার পর মেয়েদের ওপর থেকে বিশ্বাস জিনিসটাই ওঠে গেছে আশিয়ানের। তার কাছে সব মেয়েরাই ছলনাময়ী।এসবকিছু আলেয়ার কাছ থেকে জেনেছেন ওনি৷

যে ছেলে কোনো মেয়েই সহ্য করতে পারে না সেই ছেলের জন্য মেয়ে দেখতে আসাটা নিছক বোকামিই বটে ৷ তাহলে কী ওনার ছোট ছেলে এশফাক তাশজিদের জন্য???এটাও বর্তমানে অসম্ভব বলা যায়,,, কারন ছেলেটা এখনো একজন স্টুডেন্ট। ডাক্তারি পড়ছে সে। এখন ওকে বিয়ে দেবে না তার বাবা যেহেতু এখনো সে নিজের পায়ে দাঁড়ায় নি। তাহলে???কার জন্য??? এসব চিন্তা করতে করতে মাথার মগজ গোলা হয়ে গেল মিসেস লিমার ৷ মগজকে আর বেশি না ঘাটিয়ে তিনি তার রুমে চলে গেলেন ঘুমাতে।

ঊদিতাও তার মা বাবার সাথে একবার ল্যান্ডফোন দিয়ে কথা বলে নিয়ে ঘুমাতে চলে গেল বিছানায়।ঊদিতা ফোন ইউস করে না।ফোনের প্রয়োজন ও পড়ে নি কখনো তার।

আম্মু ও আব্বুর সাথে কথা বললে মনটা একদম শান্ত হয়ে যায় ঊদিতার,,, সেই শান্তি যে আর কোথাও নেই,,,!!এসব ভাবতে ভাবতেই সুখনিদ্রায় পাড়ি জমালো ঊদিতা।।

❄️❄️❄️

চৌধুরী হাউজ,,
সারা ড্রয়িং রুম জুড়ে আড্ডার আসর বসেছে। সেই আসরে পরিবারের সব্বাই হাজির। নেই শুধু মাত্র আশিয়ান।অবশ্য কেউ তার আসার অপেক্ষা করছে না,,, কারণ সবাই জানে এসব আড্ডা ফুর্তি তার মোটেও পছন্দ না। এখনো বাসায় আসে নি সে। এত রাত অব্দি সে বাইরে। ওর টেনশনে মিসেস ইয়াসমিন শান্তিমতে কোথাও বসতেও পারছেন না। ছেলেটা প্রায়শই এরকম রাত করে বাসায় ফিরে। রাত প্রায় সাড়ে ১১ টা বাজে এখন।অথচ ওর বাসায় আসার নামগন্ধও নেই। কী ছেলে থেকে কী হয়ে গেল সে,,, ভাবতেই দীর্ঘঃশ্বাস ফেললেন মিসেস ইয়াসমিন।

ইলিয়ানা ওকে ছেড়ে যাওয়ার পর থেকেই আশিয়ান একদম চেঞ্জ হয়ে গেছে। সেই থেকে সে নিজেকে পুরোপুরি রূপে পাল্টে ফেলেছে। হাসিখুশি থেকে একদম গম্ভীর রূপ ধারণ করেছে। ইলিয়ানার চলে যাওয়ার পর থেকে তাকে এখনো পর্যন্ত মন থেকে হাসতে দেখেন নি মিসেস ইয়াসমিন।তার হাসিখুশি ছেলের এই পাথর রূপ তিনি কোনোমতেই মেনে নিতে পারছেন না। কি করলে আশিয়ান আগের মতো হয়ে যাবে তা নিয়ে সারাক্ষণ ভেবে চলেছেন তিনি। মনে মনে নিজে থেকে একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন। আজ রাতেই আশিয়ানের সাথে তিনি কথা বলবেন বলে ঠিক করলেন ।

ড্রয়িং রুমে তাসকিনের বিয়ের বিষয় নিয়ে উরাধুরা
আলোচনা চলছে।এনগেজমেন্ট কোথায় হবে,, কীভাবে হবে,,কে কী পড়বে,, কোনদিন থেকে শপিং স্টার্ট করতে হবে,, কীভাবে ডেকোরেশন করা হবে,, ফটোসেশান কীভাবে হবে,, এসবই আলোচনার মেইন টপিক।

সবাই যখন মৌমাছির মতো গুঞ্জন তুলতে ব্যস্ত ঠিক তখনই বাসার ভেতর চেহারায় একরাশ ক্লান্তি নিয়ে চিরাচরিত ফর্মাল গেটআপে সদরদরজা দিয়ে ড্রয়িং রুমে প্রবেশ করলো আশিয়ান। সবার দিকে একপলক তাকিয়ে কারও সাথে কোনো কথা না বলে সে গটগট শব্দে সোজা তার রুমের দিকে চলে গেল।
তার এমন ব্যবহারের সাথে গত ২ বছর ধরে সবাই পরিচিত। তাই কেউ তেমন একটা মাথা ঘামালো না এ নিয়ে। সবাই আগের মতোই আবার আলোচনায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো ৷

আশিয়ানের আগমনে মিসেস ইয়াসমিন প্রশান্তির একটা নিঃশ্বাস ফেললেন। তারপর উঠে চলে গেলেন রান্নাঘরে আশিয়ানের জন্য কফি বানাতে ও রাতের ডিনার গরম করতে। এসব কাজ সার্ভেন্টরাই করতে পারতো,,, কিন্তু আশিয়ান সার্ভেন্ট দ্বারা সংঘটিত কোনো কাজ মোটেই পছন্দ করে না। তাইতো এখনো পর্যন্ত মিসেস ইয়াসমিন আশিয়ানের কাপড় চোপড় ধোয়া,,রুম পরিষ্কার করা,, খাবার তৈরি করা,, কফি তৈরি করা সব একা নিজ হাতেই করে থাকেন। এতে অবশ্য ওনার কোনো অসুবিধা হয় না। নিজের ছেলের জন্যই তো করছেন এসব অন্য কারো জন্য তো আর নয়।

আশিয়ান রুমে গিয়ে গলা থেকে টাইটা টেনে খুলে নিলো। ক্লান্ত হয়ে ধপ করে বিছানায় বসে পড়লো সে। তারপর আস্তে ধীরে পা থেকে শু জুতা ও মোজা খুলে ফেললো। গা থেকে শার্ট খুলে ছুড়ে মারলো বিছানায়।

এসি অন করে রিল্যাক্স হয়ে বিছানায় হেলান দিয়ে বসলো সে। ইদানীং বেশি হার্ড ওয়ার্ক করলেই মাথা ব্যথা শুরু হয়ে যায়। আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি। দুহাত দিয়ে মাথার চুল টেনে ধরে শান্ত ভঙ্গিতে স্থবির হয়ে বসে আছে আশিয়ান ৷ জীবনটা কেন জানি খুব বেরঙিন হয়ে গেছে,,। তারও আর ভালো লাগছে না এমন বিস্বাদ মার্কা জীবন,,।

যার জন্য সে এই দেবদাসে পরিণত হয়েছে সে তো ঠিকই কত সুন্দর হেসেখেলে জীবন পাড় করছে। শুধু শুধু নিজের জীবনটা এভাবে নষ্ট না করে আবারও নতুন করে সব শুরু করলে কী ভালো হবে না??? তার আম্মু তো প্রায় শ’খানেক মেয়ে দেখেছেন তার জন্য,, কিন্তু সে ইচ্ছে করেই এসব ইগনোর করেছে,,। আশিয়ানের জন্য তাসকিনের বিয়ে আটকে ছিলো এতদিন। এজন্যই তো আজ তার বয়সে ছোট তার চাচাতো ভাই তাসকিনের জন্য মেয়ে দেখতে যাওয়া হলো,, এবং সব ঠিকঠাকও করে ফেলা হলো,, যদিও সে যায় নি সেখানে,, কিন্তু ফোন করে তাকে এসব জানিয়েছে তার ছোটভাই তাশজিদ।

খুব অশান্তি লাগছে আজ আশিয়ানের। এই মুহুর্তে তার কিচ্ছুটি ভালো লাগছে না। চুপচাপ এই অবস্থায় বিছানায় শুয়ে পড়লো সে।

এদিকে,,
মিসেস ইয়াসমিন রান্নাঘরে আশিয়ানের জন্য খাবার গরম করছেন একমনে। সারা রান্নাঘর ফাঁকা,, সবাই ড্রয়িংরুমে আড্ডায় মত্ত। মিসেস ইয়াসমিন আনমনে কী একটা ভেবে কাজ করে চলেছেন,, তাই তো এনার আগমন ওনি টের পেলেন না।

(ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।এবং দয়া করে অনুপ্রেরণামূলক কমেন্ট করবেন সবাই এসব নাইস, নেক্সট না লিখে।আর একটা কথা এটা ঢাকা ভার্সিটি হবে না।এটা হবে ঢাকার একটি প্রাইভেট ভার্সিটি।আমি ঢাকার বাসিন্দা নই,এ কারণে আমি ঢাকার কোনো জায়গার নামও তেমন জানি না।আর টিনশেড বাসা বলতে কিন্তু জীর্ণ শীর্ণ কুটির বুঝাই নি আমি।বাসাটা অনেক সুন্দর আর শৌখিন টাইপের হবে তবে তাসকিনদের বাসার মতো এত হাইফাই লেভেলের নয়।আশা করি বুঝতে পারছেন সবাই। এনিওয়ে,,হ্যাপি রিডিং গাইজ।
আর আপনি ও আপনার সব বন্ধুদের ইনভাইট করবেন প্লিজ আমাদের এই ছোট গ্রুপটা বড় করার জন্য)

চলবে…🍃

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here