তোমাতে বিলীন
লেখিকা—আমায়া নাফশিয়াত
পর্ব—৩১
ঊদিতা রাতে খাবার খেতে চায় নি।কিন্তু আশিয়ান জোর করে মুখে তুলে খাবার খায়িয়ে দিয়েছে তাকে।ঘুমানোর সময়ও মুখ ফিরিয়ে,অন্যদিকে পাশ ফিরে শুয়ে ছিলো কিন্তু আশিয়ান জোর করে নিজের কাছে টেনে নিয়ে এসেছে।একপ্রকার জোর করে ইন্টিমেট হয়েছে সে ঊদিতার সাথে।ঊদিতা তো রাগের জ্বালায় হাঁপুস নয়নে কান্না করছে বাচ্চাদের মতো।আশিয়ান হাসতে হাসতে শেষ।তারপরও ঊদিতার রাগ কমে নি।নিজে থেকে একটুও রেসপন্স করে নি সে আশিয়ানকে।
সকালে সাড়ে আটটার দিকে ঊদিতা ঘুম থেকে ওঠে গোসল করার জন্য ওয়াশরুমে ঢুকলো।দরজাটা লক করতে পারলো না তার আগেই আশিয়ান এসে হাজির।আশিয়ানকে দেখে তো ঊদিতার মাথায় বাঁশ ভেঙে পড়েছে যেন।কারণ এর আগে কখনো দুজন একসাথে গোসল করে নি।তাহলে আজ কীসের জন্য এসেছে?ঊদিতা জীবনেও তার সাথে একসঙ্গে গোসল করতে পারবে না!লজ্জায়ই আধামরা হয়ে যাবে।ঊদিতা আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করলো;
ঊদিতা:-এ,,একি,,?আপনি এখানে কেন এসেছেন?সরুন আমি এখন গোসল করবো!
আশিয়ান দুষ্টু হাসি দিয়ে বাথরুমের ভেতর ঢুকতে ঢুকতে জবাব দিলো;
আশিয়ান:-একা কেন গোসল করবে সুন্দরী?আমরা আজ থেকে একসাথে গোসল করবো!তুমি আর আমি,,আমরা দুজন!
ঊদিতা:-সরুন!আপনার মতো আজাইরা সময় নেই আমার।আমি করবো না আপনার সাথে গোসল!যান এখান থেকে।
আশিয়ান ঊদিতার হাত ধরে নিজের কাছে টেনে নিয়ে ওয়াশরুমের দরজা লক করে ফেললো।তারপর ঊদিতাকে একহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে শাওয়ার অন করে দিলো।ঝিরঝির করে পানি পড়ছে তাদের দুজনের ওপর।আশিয়ানের চুল থেকে থুতনি পর্যন্ত পানি গড়িয়ে গিয়ে ঊদিতার মুখের ওপর পড়ছে।ঊদিতা অন্য দিকে নিজের মুখ ফিরিয়ে নিলো।আশিয়ান মুচকি হেসে জোর করে ঊদিতার মুখ নিজের দিকে ফিরিয়ে তার ঠোঁটের সাথে নিজের ঠোঁট জোড়া লাগিয়ে ফেলে চুমু খেতে লাগে।ঊদিতা নিজেকে ছাড়াতে চাইলো কিন্তু আশিয়ান দুহাত দিয়ে তাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে।আশিয়ান ঊদিতার ঠোঁট ছেড়ে বললো;
আশিয়ান:-এত পালাই পালাই করো কেন?আজ বর বাসায় আছে,কোথায় তাকে একটু নিজে থেকে আদর করবে ভালোবাসবে তা না,,সবসময় খালি ছোটাছুটির ধান্দা।
ঊদিতা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো;
ঊদিতা:-আপনি প্লিজ চলে যান,,,আমার লজ্জা লাগছে এভাবে একসাথে গোসল করতে।
আশিয়ান শুনলো না।সে নেশাভরা দৃষ্টিতে ঊদিতার দিকে তাকিয়ে আছে নিষ্পলক ভাবে।ঊদিতা আশিয়ানের এমন চাউনি দেখে শিউরে ওঠে।আশিয়ান ঊদিতাকে দেয়ালের সাথে লাগিয়ে গলায় মুখ ডুবিয়ে দিলো।ঊদিতা আঁকড়ে ধরে আশিয়ানের চুল।
এভাবেই শত শত দুষ্টামি শেষে দুজন গোসল করে বের হলো।ঊদিতা পুরোপুরি অতিষ্ঠ আশিয়ানের দুষ্টুমিতে।ঊদিতা ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের চুল মুছচ্ছে আর আরচোখে আশিয়ানকে লক্ষ্য করছে।আশিয়ান বিছানার ওপর বসতে বসতে বললো;
আশিয়ান:-এভাবে আরচোখে বারবার না দেখে সামনাসামনি এসে দেখো,,আমি মানা করবো না।ইনফেক্ট আমি তোমার হাসবেন্ড হই।আমাকে তুমি চাইলে এমনিতেই দেখতে পারো।
ঊদিতা মুখ বাঁকালো আশিয়ানের কথা শুনে।আশিয়ান এবার শুনিয়ে শুনিয়ে দুঃখ করে বললো;
আশিয়ান:-আগে আগে আম্মু আমার চুল মুছে দিতেন।এখন আর দেয়ার মতো কেউ নাই।হুম ঠান্ডা লেগে মরে গেলেও কার কী!আমি তো কারও কেউ হই না।(ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে)
ঊদিতা নিরবে একটা টাওয়েল নিয়ে এসে আশিয়ানের মাথা মুছে দিতে লাগলো।ঊদিতার কর্মকাণ্ড দেখে আশিয়ান মুচকি হাসলো শুধু।আশিয়ান ঊদিতার কোমড় দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে পেটে মুখ গুঁজে আদো আদো কন্ঠে বললো;
আশিয়ান:-আই লাভ ইউ জান,,,!প্লিজ ফরগিভ মি!প্রমিজ করছি,আর জীবনে কখনো আমার বাবুর আম্মুকে আমি কিছু বলবো না।অনেক ভালোবাসি তো!এবার অন্তত ক্ষমা করে দাও।
ঊদিতা আশিয়ানের কথার জবাব দিলো না।তবে ভালোবাসি কথাটা শুনে তার মনে এক দমকা হাওয়ার আগমন ঘটলো।উত্থাল পাতাল হাওয়া বইছে মনে।ঊদিতা প্রসঙ্গ পাল্টে বললো;
ঊদিতা:-নিচে চলুন,,,নাশতা করবেন সবার সাথে।
ঊদিতা নিচে চলে গেল।আশিয়ান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।তার বউটা বড্ড অভিমানী।জানে না আর কী করলে,কীভাবে এবং কোনদিন তার অভিমানের বরফ গলবে।এরপর থেকে বুঝেশুনে কথা বলতে হবে নয়তো বউয়ের যা রাগ বাপরে!কথা বলে না ঠিকই কিন্তু তার যেই শান্ত চোখের চাউনি একদম কলিজা কাঁপিয়ে দিতে সক্ষম।
যেই আশিয়ানকে ঘরে বাইরে সবাই ভয় পায়,,সেই আশিয়ান এখন বউয়ের রাগকে ভয় পাচ্ছে।যে ছেলেটা সবার সামনে বাঘের মতো চলাফেরা করে সেই ছেলেটা এখন বউয়ের সামনে ভেজা বিড়াল বনে গেছে পুরো তরে।এই আশিয়ান ভুল করলেও জীবনে কাউকে সরি বলে নি।আজ সে-ই তার বউকে হাজার বার সরি বলেও ক্ষমা পাচ্ছে না।কী অদ্ভুত একটা ব্যাপার।আসলে সত্যি কথা যেটা যে রাজা পুরো সাম্রাজ্যকে পরিচালনা করে সেই রাজাও মনে হয় তার বউকে ভয় পায়।
আশিয়ান নিচে চলে এলো নাশতা করতে।সবাই বলতে মিসেস ইয়াসমিন,মিসেস তারানা,কেয়া,তাজিম,তাসকিন,আলেয়া ওরা ডাইনিং রুমে বসে টুকটাক কথা বলে নাশতা করছে।বাকিরা যে যার কাজে চলে গেছে। আশিয়ান সবাইকে গুড মর্নিং জানালো।ঊদিতা আরচোখে একবার তার দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিয়ে নাশতা বেড়ে দিতে লাগলো।আশিয়ান বসতে বসতে ঊদিতাকে জিজ্ঞেস করলো;
আশিয়ান:-কিছু খেয়েছো তুমি?
ঊদিতা শান্ত কন্ঠে জবাব দিলো;
ঊদিতা:-আমি পরে খাবো,,আপনি খেয়ে নিন।
আশিয়ান:-পরে কীসের জন্য?এখুনি এসে বসো!সবাই মিলে একসাথে নাশতা করবো।
আশিয়ানের কথায় তাল মিলিয়ে মিসেস ইয়াসমিন ও বললেন;
মিসেস ইয়াসমিন:-হ্যা রে মা,,,তুইও বসে যাচ্ছিস না কেন?তোর আর কী কাজ?বসে পড়,,
মিসেস ইয়াসমিনের কথা শুনে বাধ্য হয়ে ঊদিতা আশিয়ানের পাশে এসে বসলো নাশতা করার জন্য।আশিয়ান নিজ হাতে ঊদিতাকে নাশতা বেড়ে দিলো প্লেটে।ঊদিতার প্রতি আশিয়ানের কেয়ার দেখে সবাই মিটমিট করে হাসছে।
নানারকমের গল্প করে নাশতা খেতে লাগে সবাই।কথায় কথায় আশিয়ান বলে উঠে;
আশিয়ান:-আম্মু!একটা কথা বলতে চাই!
মিসেস ইয়াসমিন:-হ্যা বল বাবা,,কী বলতে চাস!
আশিয়ান:-বলছিলাম অনেকদিন হলো কোথাও ঘুরতে যাই না।ঊদিতাও সারাদিন ঘরে বসে থেকে বোর হয়।তাই আমি চাইছিলাম ওকে নিয়ে কোথাও থেকে ঘুরে আসি।এতে একটু রিফ্রেশ হলাম আরকি।আমিও কাজের ব্যস্ততায় হাঁপিয়ে গেছি পুরো।
মিসেস ইয়াসমিন:-এ তো ভালো কথা।আমিও তোকে বলতে চাইছিলাম কোথাও থেকে ঘুরে আসতে।কয়েকদিনের জন্য ট্যুরে চলে যা তোরা দুজন।বিয়ের পর হানিমুনেও তো যাসনি।এখন নাহয় যা।
ঊদিতা বাঁধা দিয়ে বলে উঠে;
ঊদিতা:-এমনিতেই তো ভালো আছি মা।ঘুরতে যাওয়ার কী দরকার?
আশিয়ান:-তুমি চুপ থাকো।আমি যা ভালো বুঝবো তাই করবো।আমার ইচ্ছে করছে ঘুরতে যেতে সো আমি যাবোই।এবং তোমাকে সাথে নিয়েই যাবো।মুখের ওপর আর একটা কথাও যেন না শুনি।
আশিয়ানের গমগমে গলায় বলা কথা শুনে ঊদিতা চুপ করে গেল।মিসেস ইয়াসমিন বলে উঠলেন;
মিসেস ইয়াসমিন:-তা কোথায় যাবি তা ঠিক করেছিস আশিয়ান?দেশের ভেতরে না বাইরে?
আশিয়ান:-ভাবছি সিলেট যাবো!আমার বাগানবাড়িটাতে।ওখানেই থাকবো কয়েকদিন।আর সিলেটের কিছু দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে দেখবো।এতে আমারও ভালো লাগবে আর ঊদিতাও ইনজয় করবে।
কেয়া:-ভালোই হবে।ঊদিতার ভালো লাগবে ওখানে গেলে আশা করি।কোনদিন যাবে?
আশিয়ান:-আজ রাতেই।মাহবুবকে বলবো ট্রেনের টিকেট কাটতে।
তাসকিন:-আরে বাহ,,তুই দেখি অনেক ফাস্ট।
আশিয়ান:-কিছু কিছু ক্ষেত্রে ফাস্ট হতে হয়।ও তুই বুঝবি না।
এসব কথা শুনে মিসেস তারানা তাসকিনকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন;
মিসেস তারানা:-তাহলে তুই ঘরে থাকবি কেন?আলেয়াকে নিয়ে তুইও কোথাও ঘুরতে যা!
তাসকিন:-আর বলো না।আমাকে ফকির বানানোর ধান্দায় থাকো তোমরা খালি।আশিয়ানের মতো এত টাকা আমার নেই।আমি গরীব মানুষ।আর তোমার বৌমা তো আমাকে ফতুর করে দেয় কোথাও নিয়ে গেলে।আমি বাবা পারবো না।
আলেয়া কটমট করে তাসকিনের দিকে তাকালো।তাসকিন আলেয়ার দিকে না তাকিয়ে ব্রেড চায়ে ভিজিয়ে খেতে লাগলো।মিসেস তারানা ছেলের মাথায় গাট্টা মেরে বললেন;
মিসেস তারানা:-হারামজাদা!তোর বাপের কম আছে নাকি এত কিপটামি যে করিস।একটামাত্র বউ তার জন্য খরচ করবি না তো কার জন্য করবি?চুপচাপ ওকে নিয়ে ঘুরতে যাবি আর কোনো কথা শুনতে চাই না।আলেয়া,, মা তুই কোথায় যেতে চাস?(জানতে চেয়ে)
আলেয়া উৎফুল্ল হয়ে বললো;
আলেয়া:-মা,,আমি বালিতে যেতে চাই।গুগলে দেখেছিলাম বালি অনেক সুন্দর একটা জায়গা।আমি ওখানে যেতে চাই মা।ওকে বলো।
মিসেস তারানা এবার তাসকিনকে বললেন;
মিসেস তারানা:-তোর বাপকে আমি বালি ট্যুরের টিকেট কাটতে বলে দিচ্ছি।আলেয়াকে নিয়ে আজ তুই শপিংয়ে চলে যা।গিয়ে কেনাকাটা করে আয়।
আলেয়ার তো খুশিতে মনে লাড্ডু ফুটছে।মিসেস ইয়াসমিন এবার আশিয়ানকে বললেন;
মিসেস ইয়াসমিন:-তোরাও তো ট্যুরে যাচ্ছিস,,তাহলে আজকে বরং তাদের সাথে গিয়ে তোরাও শপিং করে আয়।
ঊদিতা সাথে সাথে বলে উঠে;
ঊদিতা:-শপিংয়ে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই মা।আমার যথেষ্ট কাপড় চোপড় আছে,,সবগুলোই নতুন।অযথা কেনাকাটা করে টাকা নষ্ট করতে হবে না।
ঊদিতার কথা ধরে তাসকিন আলেয়াকে বললো;
তাসকিন:-দেখেছো,,,আশিয়ানের টাকা পয়সার কোনো অভাব নেই তাও ঊদিতা ভাবী প্রয়োজনের বাইরে একটা টাকাও খরচ করে না।ভাবীর জন্য আশিয়ানের কোনো খরচই হয় না।আর তোমার নীচে টাকা ঢালতে ঢালতে আমি কুল-কিনারা পাই না।এখনও সময় আছে ভাবীর মতো একটু হিসেব করে চলো প্লিজ।মিতব্যয়ী হউ।
আশিয়ান তাসকিনকে খোঁচা মেরে বললো;
আশিয়ান:-আমার বউ দুনিয়ায় একপিসই আছে।ওর মতো কাউকে স্ত্রী হিসেবে পেতে হলে ভাগ্য লাগে ভাগ্য।যেটা তোর নেই।চাইলেও কেউ আমার বউয়ের মতো হতে পারবে না।কজ মাই ওয়াইফ ইজ এন ইউনিক পারসন ইন দ্যা ওয়ার্ল্ড।
তাসকিন বেচারা শরম পেয়ে গেল।সাথে আলেয়াও।আশিয়ান খাবার খেয়ে নিজের রুমে চলে গেছে।ঊদিতাও নাশতা সেড়ে রুমে চলে এলো।আশিয়ান ঊদিতারই অপেক্ষা করছিলো।ঊদিতা রুমে প্রবেশ করতেই তার হাত ধরে টেনে দেয়ালের সাথে লাগিয়ে নিয়ে ঊদিতার নাকের সাথে নাক ঘষে আশিয়ান বললো;
আশিয়ান:-কাপড় চোপড় গুছিয়ে নাও জান,,,হানিমুনে যাবো তো আমরা।
ঊদিতা অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে কাঠকাঠ কন্ঠে বললো;
ঊদিতা:-আপনি একাই যান।আমি কোথাও যাবো না।
আশিয়ান ঊদিতার গালে স্লাইড করে তার ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে বললো;
আশিয়ান:-যেতে তো তোমাকে হবেই সোনা,,,তুমি ছাড়া আমাদের রোমান্স হবে কী করে?আমার বাবুর আম্মু বানাতে হবে না তোমায়?
ঊদিতা বিরক্তি নিয়ে বললো;
ঊদিতা:-আপনি প্রচুর খারাপ একজন মানুষ!
আশিয়ান:-হুম,,,জানি তো!এই খারাপ মানুষটা তোমার সংস্পর্শে এসে ভালো হয়ে গেছে!এখন যাও সোনা,,তোমার ও আমার প্রয়োজনীয় সবকিছু প্যাক করে ফেলো তো জলদি।রাতের ট্রেনেই রওনা দিচ্ছি আমরা।ও হ্যা,,তুমি ট্রেনে যাবে না প্লেনে?
ঊদিতা গোমরা মুখ করে বললো;
ঊদিতা:-ট্রেনে।
আশিয়ান:-গুড,,,আমিও সেটাই চুজ করেছি।
ঊদিতা:-এভাবে ধরে রাখলে কী করে প্যাক করবো শুনি?(ভ্রু নাচিয়ে)
আশিয়ান:-এতে এতো রাগ করার কী হয়েছে?আমার বউ তুমি,,,তোমাকে তো আমি ধরে রাখতেই পারি।যাকগে,,,যাও গিয়ে তৈরি করো সব।
আশিয়ান সরতেই ঊদিতা দ্রুত হেঁটে গিয়ে আলমারির সামনে দাঁড়ালো।আশিয়ান এগিয়ে এসে আলমারির ওপর থেকে একটা মাঝারি আকারের লাগেজ নামিয়ে দিলো।ঊদিতা আলমারি থেকে তার প্যাকেট করা যে জামা গুলো আছে সেগুলো বেছে বেছে কয়েকটা নামালো।বোরকা নিলো,হিজাব আর নেকাবও নিলো,সাথে জায়নামাজ ও নামাজের ওড়না।আশিয়ান বিছানায় বসে বসে নিজের গালে হাত দিয়ে ঊদিতাকে দেখছে।আশিয়ান হঠাৎ বলে উঠে;
আশিয়ান:-নাইটিগুলো সাথে নিয়ো ওখানে গেলে কাজে লাগবে!
ঊদিতা এবার কোমড়ে হাত রেখে মারমুখো ভঙ্গিতে বলে উঠে;
ঊদিতা:-আপনার সমস্যাটা কী?আমাকে আমার কাজ করতে দিন না!আর আপনি তো দেখা যায় মহা লুচ্চা।নাইটি কেন নিবো আমি?
আশিয়ান নিরীহ কন্ঠে বললো;
আশিয়ান:-আমি আবার কী করলাম বউ?আর নাইটি না নিলে কী করে হবে বলো?হানিমুনে তো নাইটি মাস্ট বি লাগবে!অবশ্য তুমি না নিলে নেই আমি নতুন কয়েকটা অর্ডার দিয়েছি।
ঊদিতা বিরবির করে বললো ‘আস্ত একটা অসভ্য সাথে আজাইরা।’
আশিয়ান আর কিছু বললো না।বারান্দায় গিয়ে ফোন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।ঊদিতা নিজের ও আশিয়ানের কাপড় চোপড় পরিপাটি ভাবে সব লাগেজে ভরে নিলো।
🍁🍁🍁
রাত ৯ টার দিকে বাসার সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আশিয়ান ও ঊদিতা গাড়িতে উঠে বসলো।সামনে মাহবুব গাড়ি ড্রাইভ করছে।আশিয়ান ঊদিতার কোমড় জড়িয়ে ধরে ফোন টিপছে।ঊদিতার খিদে পেয়েছে কিন্তু আশিয়ানকে বলছে না।আশিয়ান সেটা বুঝতে পেরে ঊদিতাকে দুটো বার্গারের প্যাকেট আর একটা গ্রিলের প্যাকেট দিলো।ঊদিতা কিছু না বলে আশিয়ানের হাত থেকে প্যাকেট নিয়ে খুলে খেতে শুরু করে।বাসা থেকে কিছু খেয়ে আসে নি সে।আশিয়ানও হা করলো খাওয়ার জন্য।ঊদিতা বাধ্য হয়ে আশিয়ানকেও খায়িয়ে দিলো।
প্রায় আধাঘন্টা পর ওরা রেলস্টেশনে এসে নামলো।আশিয়ান মাহবুবকে দিয়ে আগেই আলাদা স্পেশাল কেবিন বুক করে রেখেছে তাদের জন্য।নির্দিষ্ট বগি খুজে বের করে মাহবুব তাদের লাগেজ নিয়ে কেবিনে রেখে সে তাদের থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল।আশিয়ান ঊদিতাকে সাথে নিয়ে তাদের বিছানার মতো বিশাল সিটে বসলো।
ট্রেন ছাড়বে আরও পনেরো মিনিট পর।ঊদিতা আশিয়ানের কাঁধে মাথা রেখে কখন যে ঘুমিয়ে গেছে টেরই পায় নি।ট্রেন যখন চলতে শুরু করে তখন ঝট করে আশিয়ানের কাঁধ থেকে মাথা তুলে সে।আশিয়ান ঊদিতাকে নিজের আরও কাছে টেনে এনে তার মাথা নিজের বুকে জড়িয়ে ধরে বললো;
আশিয়ান:-ঘুমিয়ে পড়ো সোনা!আমি আছি তোমার কাছে।
ঊদিতা ভরসা পেয়ে আশিয়ানকে দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে তার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লো।আশিয়ান জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে নিজের প্রিয়তমাকে বুকে নিয়ে।
রাত প্রায় দুইটা বাজে।ঊদিতার ঘুম ভেঙে গেছে।দেখে আশিয়ান দেয়ালে হেলান দিয়ে ঢুলছে।ঊদিতা আশিয়ানের গালে হাত রেখে বললো;
ঊদিতা:-এই যে শুনুন,,ঠিক করে ঘুমান,, নয়তো মাথা ব্যথা করবে।
আশিয়ান ঠিক হয়ে ওঠে বসে ঊদিতাকে জিজ্ঞেস করলো;
আশিয়ান:-খিদে পেয়েছে তোমার?খাবে এখন?
ঊদিতা:-খাবার কই খাবো যে?
আশিয়ান:-মাহবুব কিনে দিয়েছিলো সাথে রেস্টুরেন্ট থেকে।আসো খেয়ে নিই দুজন!
ঊদিতা:-হুম,,,
দুজনে একসাথে বসে খাবার খেয়ে নিলো।অবশ্য আশিয়ান নিজের হাত দিয়ে খেতে চায় নি।তাই ঊদিতা নিজেও খেলো তাকেও খায়িয়ে দিলো।খাওয়া সেড়ে আশিয়ান ঊদিতার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লাে।ঊদিতা আশিয়ানের চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে আলতোভাবে।অভিমানটাও এখনো কমে নি তার।তবে মানুষটার যত্ন করতে কখনো ভুলে না সে।
সঠিক টাইমের ফোনের এলার্মের শব্দে ঘুম ভাঙলো আশিয়ানের।ঊদিতা তখনও ঘুমিয়ে কাঁদা।বালিশে মাথা রেখে গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে সে বিড়ালছানার মতো।আশিয়ান ঊদিতার বুক থেকে মাথা তুলে দেখলো ঊদিতা ঠোঁট উল্টে বাচ্চাদের মতো মুখ বানিয়ে ঘুমাচ্ছে।আশিয়ান হেসে ফেললো তার কিউট ইনোসেন্ট বেবি ফেসের দিকে তাকিয়ে।আলতো করে তার গাল টেনে দিয়ে গালে ঠোঁট ডুবিয়ে চুমু খেলো সে।ঊদিতা একটু নড়চড় করে আবারও ঘুমিয়ে গেছে।আশিয়ান জানালার গ্লাস খুলে বাইরে তাকালো,তখন ভোরের আলো আবছাভাবে ফুটে ওঠেছে।আর মাত্র ১০ কী ১৫ মিনিট পর সিলেট রেলস্টেশনে থামবে ট্রেনটি।
আশিয়ান ঊদিতার চোখে মুখে অসংখ্য চুমু খেয়ে তাকে ঘুম থেকে জাগালো।ঊদিতা শোয়া থেকে ওঠে বসে নিজের হিজাব নেকাব সব ঠিক করে ফেললো।ট্রেন অলরেডি থেমে গেছে।আশিয়ান লাগেজ হাতে নিয়ে ঊদিতার একহাত ধরে ট্রেন থেকে নেমে এলো।স্টেশনে প্রচুর ভীর।আশিয়ান ঊদিতার হাত শক্ত করে ধরে স্টেশনের বাইরে বেরিয়ে এলো।
তারপর তার পরিচিত দুই লোক এগিয়ে এসে আশিয়ানকে ও ঊদিতাকে সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করলো।একটা লোক আশিয়ানের হাত থেকে লাগেজটা নিয়ে গাড়ির পিছনে ডিকিতে তুলে রাখলো।লোকদুটি আর কেউ নয়,আশিয়ানের সিলেট ব্রাঞ্চের অফিসের ম্যানেজার ও তার সাথে তার ড্রাইভার।আশিয়ান ও ঊদিতা গাড়ির পিছনের সিটে বসলো।সামনে ম্যানেজার ও ড্রাইভার।গাড়ি চলতে শুরু করলো লাক্কাতুরা বাগানবাড়ির উদ্দেশ্যে।
প্রায় মিনিট বিশেক পর বাগানবাড়ির গেটের ভেতর প্রবেশ করলো তাদের গাড়ি।আসার সময় বিরাট চা বাগান দেখে ঊদিতা বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেছিলো।এত সুন্দর জায়গা সে জীবনেও দেখে নি।চারিদিকে সবুজ আর সবুজের সমারোহ।স্পষ্ট ভাবে ফুটে ওঠা ভোরের আলোয় কী যে সুন্দর লাগছিলো দেখতে তা বলার বাইরে।অবশেষে বাসায় পৌঁছে গেলো ওরা।গাড়ি থেকে নেমে চারপাশে চোখ বুলালো ঊদিতা।বাসাটা কাঠের তৈরি।সিম্পল ডুপ্লেক্স বাসা।আর চারপাশে ফল ফুলের গাছে ভরপুর।গেটের সামনে দুজন সিকিউরিটি ছিলো।বাসার বাগানে একজন মালিকে দেখলো ঊদিতা।বাসা প্রত্যেকদিন পরিষ্কার করা হয়।তারজন্য আলাদা লোক আছে।
আশিয়ান ও ঊদিতা বাসার ভেতর প্রবেশ করলো।বাসার ভেতরটা শৌখিন জিনিসপত্র দিয়ে সাজানো হয়েছে।দেখতে অনেক দৃষ্টিনন্দন লাগছে।আশিয়ান ঊদিতার কানে কানে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলো;
আশিয়ান:-পছন্দ হয়েছে?
ঊদিতা মৃদু হেসে মাথা ঝাঁকালো।সত্যি বলতে তার ভীষণ পছন্দ হয়েছে।এই মুহূর্তে রাগ অভিমানের কথা সে বেমালুম ভুলে গেছে।আশিয়ানের কাছ থেকে রুম কোনটা জেনে নিয়ে ঊদিতা ওপরে চলে গেল।আশিয়ান নিচে তাদের সাথে কথা বলছে।
ঊদিতা রুমে এসে পরনের বোরকা খুলে ফেললো।এখানকার আবহাওয়া অনেক মনোরম।ঠান্ডা ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে ঊদিতার।এবং এই আরামদায়ক মুহূর্তে তার প্রচুর ঘুম পাচ্ছে।তাই সাতপাঁচ না ভেবে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো সে।এবং ঘুমিয়ে গেল তৎক্ষনাৎ।
আশিয়ান বেশ কিছুক্ষণ পর রুমে এসে দেখলো ঊদিতা অগোছালো হয়ে ঘুমিয়ে আছে।আশিয়ান মুচকি হেসে নিজের পরনের জামাকাপড় পাল্টে একটা টাওজার ও একটা হাতকাটা সেন্ডো গেঞ্জির মতো দেখতে কালো রঙের একটি গেঞ্জি পড়ে ঊদিতার পাশে গিয়ে শুয়ে পড়ে।তারপর ঊদিতাকে টেনে নিজের কাছে নিয়ে এসে গলায় মুখ ডুবিয়ে দেয়।ঊদিতা ঘুমের মধ্যেই বিরবির করে বললো;
ঊদিতা:-এমন,,করেন কেন!আমাকে ঘুমাতে দিন প্লিজ।
আশিয়ান মুচকি হেসে ঊদিতার গলায় চুমু খেতে লাগে।কোনো থামা থামি নেই।একসময় ঊদিতার মতো আশিয়ানও ঘুমের অতলে হারিয়ে গেল।লং জার্নিতে আজ দুজনেই বেশ টায়ার্ড।
#চলবে