তোমাতে বিলীন পর্ব: ৩৭

0
8217

তোমাতে বিলীন
লেখিকা—আমায়া নাফশিয়াত
পর্ব—37|

আশিয়ান ঊদিতার কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের কাছে টেনে নিয়ে এসে একহাত দিয়ে ওর নাক টেনে আদুরে কন্ঠে বললো;

আশিয়ান:-আল্লাহ তোমার দোয়া কবুল করেছেন কিন্তু।তুমি ছেলের মা হতে যাচ্ছো।তোমাকে তোমার ছেলে আমার থেকেও বেশি ভালোবাসবে।

ঊদিতা মৃদু হেসে আশিয়ানের বুকে মাথা রেখে বললো;

ঊদিতা:-এরকম করে বলছেন কেন?আমাদের সন্তান আমাদের দু’জনকেই সমান ভাবে ভালোবাসবে।আমি তো চাই ঠিক আপনার মতো কিউটের ডিব্বা দেখতে হোক আমার ছেলে।আমি সবসময় আপনাকে বেশি করে দেখি কারণ আমি চাই আমার সন্তান তার পাপার গড়নের হোক।যার মুখের দিকে তাকালে আমার আপনার কথা বেশি করে মনে হবে।আমি ততই আপনার প্রেমে পড়বো।

ঊদিতার কথা শুনে আশিয়ান ঠোঁট এলিয়ে হাসলো।ঊদিতাকে কোলে নিয়ে বিছানায় বসিয়ে সে ফ্লোরে হাঁটু গেড়ে বসে ঊদিতার ভরা পেটে কান পাতলো।ঊদিতার পেট এখন অনেকটাই বড় হয়েছে।মাঝেমধ্যে পিচ্চিটা কিক মারে তার পেটে।সুখের ব্যথায় ঊদিতা তৃপ্তির হাসি হাসে।অনুভব করে নিজের কলিজার টুকরো বাবুটাকে।আশিয়ান পেটে হাত বুলিয়ে বাচ্চার সাথে আদুরে কন্ঠে কথা বলে;

আশিয়ান:-আমার আব্বুটা!কেমন আছো তুমি সোনা বাচ্চা?পাপা তোমাকে অনেক মিস করি বাবাই,,,কখন আসবে তুমি আব্বু?আমার যে পিচ্চি সোনাটার জন্য আর তর সইছে নাহ।

আশিয়ানের পাগলামি দেখে ঊদিতা হাসে।বাপের কথায় সায় দিয়েই যেন পেট কাঁপিয়ে একটা লাথি মারে পিচ্চিটা।আশিয়ান তখন ঊদিতার ফর্সা উন্মুক্ত পেটের দিকেই তাকিয়ে ছিলো।সে স্পষ্ট ছোট একটা পা দেখতে পেল।ঊদিতা মৃদু আর্তনাদ করে ওঠে পেটে লাথি খেয়ে।আশিয়ান ঊদিতার দিকে তাকিয়ে বিস্মিত হয়ে বলে;

আশিয়ান:-ঊদিতা,,,তুমি,,,তুমি দেখেছো,,আমি আমার ছেলের পা স্পষ্ট দেখতে পেয়েছি।অহ মাই আল্লাহ,,,এত খুশি আমি কই রাখি!আমি আমার ছেলের পা দেখেছি আজ।কি ছোট ছোট ছিলো দেখতে।উফফ,,আই কান্ট এক্সপ্লেইন দ্যাট ঊদিতা।এত আনন্দ লাগছে আমার!

আশিয়ান যেন আত্মহারা হয়ে গেছে খুশিতে।ঊদিতা হাসলো আশিয়ানের খুশি দেখে।অভিযোগ মেশানো কন্ঠে বললো;

ঊদিতা:-আপনার ছেলে এত দুষ্টু কেন বলুন তো?কী জোরে লাথিটা মারলো আমার পেটে।আসার আগেই দুষ্টুমি শুরু করে দিয়েছে দেখা যায়।উফফ,,ব্যথা করছে পেটে,,,।

আশিয়ান:-দেখতে হবে না কার ছেলে?আমার ছেলে মনে হয় বড় হয়ে নামকরা ফুটবলার হবে তাই এরকম কিক মারলো বুঝলে?

আশিয়ানের কথা শুনে ফিক করে হেসে ফেললো ঊদিতা।ছেলে নাকি ফুটবলার হবে!আশিয়ান এবার ঊদিতার পেটে চুমু খেয়ে বললো;

আশিয়ান:-সোনা আমার,,,মাকে কষ্ট দিয়ো না বাবা,,,আম্মু ব্যথা পায় তো আব্বুটা,,,।তুমি না কত ভালো ছেলে আমার!

ঊদিতার চোখ জোড়া ছলছল করে,,,এত সুখ আল্লাহ তার ভাগ্যে রেখেছেন তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।এত সুখ তার কপালে সইবে তো!মনে মনে ভাবে ঊদিতা।

দিনকে দিন ঊদিতা গুলুমুলু আলুর মতো হয়ে যাচ্ছে।শরীরে পানি এসেছে কিছু।আর বাকিটা আশিয়ানের খাওয়ানোর জন্যে।ঊদিতার নিজেকে রাক্ষস মনে হয় মাঝে মাঝে।এত খাবার খাওয়ার খুব কী প্রয়োজন আছে?বুঝতে পারে না সে।
আশিয়ানের কেয়ারের জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে গেছে সে।তার এত কেয়ার এত আদর যত্নে মনে হয় পৃথিবীতে একমাত্র ঊদিতাই প্রেগন্যান্ট হয়েছে।যেন আর কোনো মেয়ে বাচ্চা জন্ম দেয় নি।

বেশ কিছুদিন ধরে ঊদিতার আশিয়ানকে নিয়ে একটা সন্দেহ মাথা চাঁড়া দিয়ে উঠছে।আশিয়ান দুইটা ফোন ইউজ করে।একটা আইফোন,অন্যটা ভিভো লেটেস্ট মডেলের একটা ফোন।আইফোন যেটা সেটা আশিয়ান সবসময়ই ব্যবহার করে থাকে আর ঊদিতাও মাঝে মধ্যে এই ফোন ঘাঁটে।তবে ভিভো যেটা সেটা আশিয়ান কখনো ফেলে রাখে না।সেটার পাসওয়ার্ডও ঊদিতাকে কখনো বলে নি।এমনকি কখনো টাচ্ও করতে দেয় নি তাকে।

একদিন হাতে নিয়েছিলো ঊদিতা ফোনটা কিন্তু আশিয়ান তার হাত থেকে ছোঁ মেরে ফোনটা নিয়ে নেয়।আর বলে এটা তার অফিসের কাজের ফোন।এটাতে জরুরি ফাইল সমূহের পিডিএফ আছে।তাই সে এই ফোনটা কাউকে ছুঁতে দেয় না।ঊদিতাও তেমন একটা ঘাঁটে নি এসব বিষয় নিয়ে।কিন্তু ইদানীং ভাবতে বাধ্য হচ্ছে।এই ফোন থেকে কল আসলে আশিয়ান বারান্দায় গিয়ে বারান্দার দরজা অফ করে দেয় যাতে বারান্দায় কেউ যেতে না পারে।আর রাত ছাড়া এই ফোনে কেউ কল বা ম্যাসেজ কিছুই দেয় না।

ঊদিতার প্রেগন্যান্সি চলাকালীন সময়ে প্রথম থেকেই যখনই এই ফোনে কারও কল আসতো তখনই সে মিসেস ইয়াসমিনের কাছে ঊদিতাকে গছিয়ে দিয়ে ১-২ ঘন্টার জন্যে বাইরে বের হতো।কোথায় যায় তা কাউকে সে বলে না এমনকি ঊদিতাকেও না।ঊদিতা এই বিষয়টা নিয়ে কিছুটা চিন্তিত।সে বুঝতে পারে না রাতের বেলা আশিয়ানের কীসের কাজ।তাও এক সপ্তাহ কী দুই সপ্তাহ পর পর একবার করে বেরিয়ে যায়।বাসার নরমাল পোশাক পরেই যায়।আবার নরমাল পোশাকেই ফেরে।কোথায় গিয়েছিলো সেটা ঊদিতা একবার জিজ্ঞেস করেছিলো তাকে কিন্তু আশিয়ান এই কথা কাটিয়ে অন্য প্রসঙ্গে চলে গেছিলো।সেই থেকে সন্দেহটা আরও গাঢ় হয়েছে ঊদিতার।

আজ রাতেও আশিয়ানের ঐ ফোনে কে জানি কল দিয়েছে।ঊদিতা তখন আধশোয়া হয়ে বই পড়ছিলো।আশিয়ান বারান্দায় গিয়ে ফোনে কথা বলা শেষ করে রুমে এসে ঊদিতার কপালে চুমু খেয়ে বললো;

আশিয়ান:-সোনা বিছানা থেকে একদম নামবে না।আমি এনাকে এখানে রেখে যাচ্ছি।একটু কাজ আছে।কোনো প্রয়োজন হলে এনাকে বলবা,,নিজে থেকে কিছু করতে যাবে না কেমন?

ঊদিতা বই বন্ধ করে আশিয়ানের গালে হাত বুলিয়ে বললো;

ঊদিতা:-কোথায় যাচ্ছেন?

আশিয়ান:-কাজ আছে একটু!দ্রুতই বাসায় আসবো।চিন্তা করো না।

ঊদিতা চুপচাপ আশিয়ানের দিকে তাকিয়ে রইলো।আশিয়ান নরমালি একটা টি শার্ট আর একটা জিন্স প্যান্ট পড়ে মুখে মাস্ক লাগিয়ে ফোন হাতে নিয়ে আরেকবার ঊদিতার কপালে চুমু দিয়ে চলে গেল।আশিয়ান যাওয়ার প্রায় ৩ মিনিট পর এনা রুমে এসে ঊদিতার পাশে বসলো।এনা ঊদিতাকে হাসিমুখে বললো;

এনা:-আমাদের পুচকুটা কী করে ভাবী?

ঊদিতা মৃদু হেসে জবাব দেয়;

ঊদিতা:-পুচকুটা ভীষণ দুষ্টু!কিছুক্ষণ পর পর পেটে লাথি মারে।

এনা হেসে ফেললো ঊদিতার কথা শুনে।ঊদিতা একটু চুপ থেকে জিজ্ঞেস করলো;

ঊদিতা:-আপু,,,আসলে একটা কথা জানতে চাই!

এনা:-হ্যা ভাবী বলো!

ঊদিতা:-উনি এভাবে মাঝেমধ্যে কোথায় যান রাতের বেলা তুমি জানো?

এনা একমুহূর্ত চুপ থেকে তারপর বললো;

এনা:-না ভাবী,,আমি জানি না।ভাইয়া কখনো আমাদেরকে বলে কোথাও যায় না।সে তাঁর মতে মতে কাজ করে।কাউকে জবাবদিহি করে না কখনো।আর আমরাও তেমন একটা আগ্রহ দেখাই না।কারণ জানি আমার ভাইয়া একজন ভালো মানুষ।তিনি এমন কিছু করবেন না কখনো যাতে আমাদের পরিবারের মান ক্ষুন্ন হয়!

ঊদিতা এনার কথা গুলো মনে মনে নাড়াচাড়া করছে।সে নিজেও জানে আশিয়ান কেমন।তারপরও মনে খটকা লাগে কেন জানি।মনে হয় আশিয়ানের অন্য একটা রূপ রয়েছে যা কেউ জানে না।ঊদিতা আবারও জিজ্ঞেস করে;

ঊদিতা:-আচ্ছা আপু,,,তোমার মনেও কী একটু খটকা লাগে না ওনার ব্যাপারে?মানে ওনি এই যে মাঝে মধ্যে রাতের বেলা হুট করে বেরিয়ে যান একটা ফোনকল পেয়ে,,একটু হলেও তো সন্দেহ জাগে মনের মধ্যে!

এনা চুপ হয়ে গেছে ঊদিতার কথা শুনে।এনা ঊদিতাকে নিজের সন্দেহের কথা বলতে চাচ্ছে না।কারণ এই অবস্থায় ঊদিতাকে এসব কথা বললে সে হাইপার হয়ে যেতে পারে,,এতে তার ও তার বাচ্চার ক্ষতি হবে।এনা তা চায় না।তাই সে চুপচাপ বসে রইলো।এনার এভাবে চুপ করে যাওয়া দেখে ঊদিতার সন্দেহ আরও বেশি করে গাঢ় হয়।মনে মনে ঠিক করে ফেলে,, আজ যেভাবেই হোক আশিয়ানের মুখ থেকে আসল কথাটা বের করেই ছাড়বে।এট এনি কস্ট,,,

💌💌💌

আশিয়ান ফুল ব্ল্যাক গেটআপে গোডাউনে প্রবেশ করে।আশিয়ানের পেছনে দুজন বডিগার্ড।তাকে দেখতে পেয়ে গোডাউনের ভেতর থাকা কালো পোশাক পরিহিত বডিবিল্ডার টাইপের লোকগুলো একদম সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে গেল।আশিয়ান গটগট শব্দে হেঁটে চেয়ারে বেঁধে রাখা লোকটার মুখোমুখি হয়ে অন্য একটি চেয়ারে বসলো।

লোকটার মুখ বাঁধা ছিলো।মুখ দিয়ে গোঁ গোঁ শব্দ করছে সে।আশিয়ান নিজের মাস্কটা খুলে লোকটার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো।আজকে যেই লোকটিকে ধরে আনা হয়েছে সে একজন সাইকো টাইপের লোক, ঠান্ডা মাথার খুনি,,সাথে সে একজন ডক্টরও।বহু লোককে সে নিজের প্রশান্তির জন্যও খুন করেছে।আর একজন ধর্ষকও বলা যায় তাকে।তবে ধর্ষিতা মেয়েদেরকে সে কখনো বাঁচিয়ে রাখে না,,, কুকাজ শেষে মেরে ফেলে।তার নিজের মেয়েও তার থেকে রক্ষা পায় নি।নিজের ফুটফুটে ১৭ বছরের মেয়েটিকে সে পশুর মতো নির্যাতন করে তারপর গলা টিপে হত্যা করে।

একজন সৎ পুলিশ অফিসার তাকে তার পাপের শাস্তি দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু সেও এই লোকটার কবল থেকে রক্ষা পায় নি।এতটাই ডেঞ্জারাস সে।তার নাম কবির রিজভী।আশিয়ান মির্জাকে দিয়ে ওয়ার্নিং দিয়েছিলো তাকে কিন্তু সে উল্টো আশিয়ানকে হুমকি দিয়ে চিঠি পাঠায়।কতটা ডেঞ্জারাস হলে আশিয়ানের সাথে পাঙ্গা নিতেও ভয় পায় না সে!তাই এবার তার খেল খতম করার জন্য আশিয়ানের কথায় মির্জা ও তার টিমের লোকজন মিলে কবিরকে তুলে নিয়ে এসেছে।

আশিয়ান পায়ের ওপর পা তুলে মির্জাকে ইশারা দিলো কবিরের মুখ থেকে টেপটা খুলে দিতে।মির্জা তার মুখ থেকে টেপ সরিয়ে দিতেই কবির কুটিল হাসি দিয়ে বলে উঠে;

কবির:-আমার হাতে মরার তোর এত শখ আশিয়ান?ছদ্মবেশী সারাজ হয়ে আমাকে ভয় দেখাস?মনে রাখিস তোর থেকেও বড় ধরিবাজ আমি।তুই আমার বালটাও ছিড়তে পারবি না।

আশিয়ান বাঁকা হেসে হাতের মোটা চেইনের ব্রেসলেট নাড়াচাড়া করে বলে;

আশিয়ান:-তোর তেজ দেখা যায় কমে নি এখনো।তোর জানে ভয়ডর নেই হারামি?একটু পর যে তোর সব জারিজুরি শেষ হয়ে যাবে তা কী তুই বুঝতে পারছিস না?নাকি কয়েকডোজ দিয়ে বুঝিয়ে দেবো?

কবির:-শালা,,,কাকে ভয় দেখাস তুই?আমাকে?আজ পর্যন্ত কোনো র‍্যাব,পুলিশও আমার কিছু করতে পারে নি সেখানে তুই দু পয়সার মাফিয়া আমার কী করবি রে?নিজের মেয়েকেও ধর্ষণ করতে ছাড়ি নি আমি,,,এতটাই সাহস আমার!সেখানে তোরা আমার টিকিটিরও কিছু করতে পারবি না!

আশিয়ান:-বাহ বা,,,এত কনফিডেন্স?আগে এখান থেকে বের হয়ে দেখা!তারপর বড় বড় ধাপ্পা মারিস!

কবির:-এবার যদি বের হই তবে তোর প্রেগন্যান্ট বউকে ধর্ষণ করবো আমি মনে রাখিস!দেখবো তুই কী করে তখন তোর কচি বউকে আমার হাত থেকে বাঁচাস!

কবিরের এই কথা শুনে আশিয়ানের মাথায় রক্ত ওঠে গেল।সে লাফ দিয়ে বসা থেকে ওঠে মির্জার হাত থেকে হকিস্টিকটা নিয়ে ধমাধম বারি মারতে লাগলো কবিরকে।কত্তবড় সাহস ঊদিতাকে নিয়ে বাজে কথা বলে।আজ ওর জিভ টেনে ছিঁড়ে ফেলবে আশিয়ান।এত্ত জোরে জোরে বারি মারছে যে ইম্পোর্ট করা হকিস্টিকটা ভেঙে গেল।মির্জা আরও একটা হকিস্টিক এগিয়ে দিলো আশিয়ানকে।আশিয়ানের চোখ জোড়া থেকে যেন রক্ত বের হবে রাগে এমন অবস্থা।কবির এত বারি খাওয়ার চোটে বারবার আর্তনাদ করে উঠছে।আশিয়ান ঠাস ঠাস করে মেরে মেরে বলতে লাগলো;

আশিয়ান:-কু্ত্তার বাচ্চা।আজকে তোকে কুকুরের মতো মারবো আমি।শুয়োরের বাচ্চা তোর সাহস কী করে হয় আমার বউকে নিয়ে বাজে কথা বলার।আজ তোর জিভটা আমি কেটে নেব হারামজাদার বাচ্চা।

আশিয়ান যখন তাকে হকিস্টিক দিয়ে মারতে ব্যস্ত তখন কবির তার একটা পায়ের আঙ্গুলের চিপায় রাখা ব্লেড দিয়ে পা উঁচু করে আশিয়ানের হাতে লাগিয়ে ফেললো।ব্লেডটা ধারালো ছিলো প্রচুর।যার কারণে আশিয়ানের হাতের তালু লম্বা হয়ে গভীর ভাবে কেটে গিয়ে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হতে শুরু করে।মির্জা ও সাথের দু তিনজন এসে দ্রুত কবিরের পা থেকে ব্লেড সরিয়ে হাত পা আরও শক্ত করে বেঁধে ফেললো।আশিয়ান হকিস্টিক ফেলে দিয়ে কেটে যাওয়া হাতটা ঝাড়া দিলো।কবির আবারও বলে উঠে;

কবির:-তোর মা,বোন বউরে চু* আমি।কী করবি তুই আমার?

আশিয়ান রক্তচক্ষু মেলে কবিরের দিকে তাকালো।তারপর মির্জার কোমড়ের বেল্টের সাথে আটকানো চাকুটাকে একটান দিয়ে খুলে নিয়ে কবিরের জিভ টেনে বের করে ধারালো চাকু দিয়ে একপোচ মেরে কেটে নিয়ে ফেলে দিলো।কবির গলাকাটা মুরগির মতো ছটফট করছে জিভ কেটে নেয়ায়।আশিয়ানের হাতের রক্ত আর কবিরের জিভ কাটার রক্ত সবমিলিয়ে একাকার অবস্থা।আশিয়ান রাগী কন্ঠে মির্জাকে আদেশ দিলো;

আশিয়ান:-মির্জা,,এই মুহূর্তে এই কুত্তার বাচ্চাকে গরম রড দিয়ে পিটিয়ে শরীরের চামড়া জ্বলসিয়ে তাতে লবন মরিচ ডলে দিয়ে তার শরীরের প্রত্যেকটা অংশকে পিস পিস করে কেটে কুকুরকে খেতে দিবে।এত ভয়ানক মৃত্যু দিয়ে মারবে যাতে সে দু তিন ঘন্টা যাবৎ মরন যন্ত্রণা উপভোগ করে তারপর মরতে পারে।এবং তার মাথা কেটে নিয়ে একটা পাবলিক প্লেসে রেখে আসার ব্যবস্থা করবে।যাতে ওর এমন বিভৎস মৃত্যু দেখে মানুষের অন্তরাত্মা কেঁপে ওঠে।ওর কুকীর্তি সব ফাঁস করার ব্যবস্থা করবে।

মির্জা:-ইয়েস বস!

আশিয়ানের কথামতো মির্জার আদেশে একজন লোক গিয়ে লোহার গরম রড আগুনের ভেতর থেকে বের করে নিয়ে এলো।মির্জা হাতে মোটা গ্লাভস লাগিয়ে রডটা দিয়ে জোরে জোরে বারি মারতে লাগে কবিরকে।কবিরের তো চোখ মুখ উল্টে যাবার মতো অবস্থা।সে ভাবেও নি সারাজ ও তার টিম চাইলে ঠিক কতোটা ভয়ানক হতে পারে।আশিয়ান ভয়ানক কন্ঠে বলে উঠে;

আশিয়ান:-এখন দেখ কেমন লাগে শুয়োরের বাচ্চা।সারাজ ওরফে আশিয়ানকে এখনো চিনতে পারিস নি তুই!তাই তো এত ফটর ফটর করেছিস।তোর কথা বলবার মতো জিহ্বাটাই কেটে ফেলে দিয়েছি আমি।এখন দেখি কীভাবে কথা বলতে পারিস তুই?আজকের এই দিনটাকে উপভোগ কর।সবথেকে ভয়ানক মৃত্যু যন্ত্রণা তোকে দেবো আজ।বুঝতে পারবি অন্যায় করার ফল কেমন মারাত্মক হতে পারে!

আশিয়ানের কথা মতো মারাত্মক মৃত্যু যন্ত্রণা দিয়ে কবিরকে মারা হলো।তার শরীরের প্রত্যেকটা অংশকে পিস পিস করে কেটে বস্তাতে ভরে দুয়েকজন মিলে জঙ্গলে ফেলে এলো।রাতে কুকুর হায়েনারা মিলে ছিড়েখুঁড়ে খাবে।এবং মাথাটা একজন নিয়ে গেল পাবলিক প্লেসে রেখে আসার জন্য।আরও দুজন কবিরের সমস্ত কুকীর্তি ফাঁস করার জন্য চলে গেল।আশিয়ান কাজ শেষ করে পরবর্তী টার্গেট যে তার কথা মির্জাকে বলে তারপর গোডাউন থেকে বেরিয়ে এলো।নরমাল গেটআপে একটা ফার্মেসীতে গিয়ে হাতটা ব্যান্ডেজ করিয়ে তারপর বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো সে।

🐠🐠🐠

রাত সাড়ে এগারোটার দিকে আশিয়ান বাসায় ফিরে।রুমে এসে দেখে ঊদিতা ঘুমিয়ে আছে।আর এনা তার পাশে শুয়ে ফোন টিপছে।আশিয়ানকে দেখে এনা শোয়া থেকে ওঠে বসলো।তারপর ভাইকে বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।আশিয়ানের আসার কথা শুনে ঊদিতার ঘুম ভেঙে যায়।ঊদিতাও শোয়া থেকে ওঠে বসে।আশিয়ান কিছু না বলে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসে।ঊদিতা তখনও আশিয়ানের ব্যান্ডেজ করা হাতটা দেখে নি।

আশিয়ান ফ্রেশ হয়ে এসে গম্ভীর কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো;

আশিয়ান:-খেয়েছো তুমি কিছু?

ঊদিতা:-জ্বী,,, মা খায়িয়ে দিয়েছেন।

আশিয়ান:-গুড।

আশিয়ান ঊদিতার কাছে এসে বসে ঊদিতার পেটে মাথা রেখে দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে মুখ গুঁজে চুপচাপ বসে রইলো।ঊদিতা আশিয়ানের মাথায় চুমু খেয়ে বললো;

ঊদিতা:-কী হয়েছে আপনার?এত আপসেট লাগছে কেন?

আশিয়ান:-কিছু না।এমনি ভালো লাগছে না।

আশিয়ান হাতটা লুকিয়ে রেখেছিলো একপ্রকার কিন্তু ঊদিতার চোখে পড়ে গেল।ঊদিতা ব্যস্ত হয়ে আশিয়ানের হাত ধরে বললো;

ঊদিতা:-হাতে কী হয়েছে আপনার?ব্যান্ডেজ লাগানো কেন?কীভাবে কাটলো?

আশিয়ান ঊদিতার গালে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো;

আশিয়ান:-কিছু হয় নি ঊদিতা।ব্যস্ত হয়ো না প্লিজ।এমনিই কেটে গেছে বেখেয়ালিতে।

ঊদিতা:-এমনি কী করে কাটে?ইশশ,,,না জানি কতটা ব্যথা পেয়েছেন!(কাঁদো কাঁদো কন্ঠে)

আশিয়ান:-মাথায় হাত বুলিয়ে দাও না।ব্যথা করে।

ঊদিতা আশিয়ানকে এবার নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগে।আশিয়ান চুপচাপ শুয়ে আছে।সারা রুম জুড়ে নিরবতা বিরাজ করছে।দুজনের কারও মুখে কোনো কথা নেই।

দীর্ঘ নিরবতার পর ঊদিতা আশিয়ানকে জিজ্ঞেস করলো;

ঊদিতা:-রাতের খাবার খাবেন না আপনি?

আশিয়ান:-ইচ্ছে করছে না।

ঊদিতা:-আমি কাউকে আনতে বলি?এভাবে না খেয়ে থাকলে তো অসুস্থ হয়ে পড়বেন আপনি!

আশিয়ান:-ইচ্ছে করছে না বউ।হাত দিয়ে খেতেও আলস্য লাগছে।

ঊদিতা আশিয়ানের মাথায় চুমু খেয়ে বললো;

ঊদিতা:-আমি খায়িয়ে দিবো নে।ভাবীকে ফোন দিয়ে বলি কাউকে দিয়ে পাঠিয়ে দিতে।

আশিয়ান আর কিছু বললো না।ঊদিতা আশিয়ানের ফোন দিয়ে কেয়াকে কল করে বললো সার্ভেন্টকে দিয়ে খাবার পাঠিয়ে দিতে।কিছুক্ষণ পর একজন মহিলা সার্ভেন্ট এসে একটা ট্রে তে করে খাবার রেখে গেল।ঊদিতা একটা খালি বাটিতে হাত ধুয়ে প্লেটে খাবার বেড়ে আশিয়ানকে মুখে তুলে খায়িয়ে দিতে লাগলো।আশিয়ানও বিনাবাক্যব্যয়ে চুপচাপ খেতে থাকে।

খাওয়ানো শেষে ঊদিতা সেন্টার টেবিলের ওপর এটো থালাবাসন গুলো রেখে দেয়।আশিয়ান পানি খেয়ে আবারও ঊদিতার বুকে মাথা রাখে।ঊদিতা আশিয়ানের মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে জিজ্ঞেস করে;

ঊদিতা:-কোথায় গিয়েছিলেন সেটা কী আমায় একবার বলা যায় না?

আশিয়ান ঊদিতার বুক থেকে মাথা তুলে ঊদিতার দিকে তাকায়।তারপর ওঠে বসে অন্যদিকে তাকিয়ে রয়।জবাব দেয়ার মতো কিছু খুঁজে পাচ্ছে না সে।ঊদিতা আশিয়ানের হাত ধরে বলে;

ঊদিতা:-আমি তো আপনার স্ত্রী!এটুকু জানার অধিকারও কী আমার নেই বলুন?

আশিয়ান:-আমি তোমাকে এখন কিছু বলতে পারবো না ঊদিতা।প্লিজ কিছু জানতে চেয়ো না।

ঊদিতা এবার একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিলো।আশিয়ানের হাত টেনে নিয়ে নিজের পেটের ওপর রাখলো সে।আশিয়ান অবাক হয়ে ঊদিতার দিকে তাকিয়ে আছে।সে বুঝতে পারছে না ঊদিতা আসলে কী করতে চাইছে।

ঊদিতা:-নিজের বাচ্চাকে ছুঁয়ে নিশ্চয়ই মিথ্যা বলবেন না আমায়!বলুন,,,আপনি মাঝেমধ্যে রাতে কোথায় যান?কেন যান?কী কাজ করেন গিয়ে?চুপ না থেকে জবাব দিন?

আশিয়ান স্থির দৃষ্টিতে ঊদিতার দিকে তাকিয়ে আছে।বুঝতে পারছে না কী বলবে ঊদিতাকে।অবশেষে সব সত্যি খুলে বলার সিদ্ধান্ত নিলো সে।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here