তোমাতে বিলীন পর্ব-৬

0
9815

তোমাতে বিলীন
লেখিকা—আমায়া নাফশিয়াত
পর্বঃ ০৬

মিসেস লিমা মিসেস ইয়াসমিনের সাথে কথা বলার পর থেকে ভীষণ উৎফুল্ল হয়ে আছেন। ঊদিতা ও তানিয়া বুঝতে পারলো না ঠিক কী কারণে উনি এত খুশি। তবে ওনার খুশি দেখে তাদেরও ভালো লাগছে। মিসেস লিমা হাসিমুখে তাদের সাথে ঘরের সব কাজ করছেন।

মিসেস লিমা ঊদিতার বাবা মি.আনিসুলের সাথে ফোনে কথা বললেন অনেকক্ষণ । জানালেন কাল যে করেই হোক বাসার সবাইকে নিয়ে এখানে সকাল সকাল চলে আসতে ৷কোনো এক্সকিউজ তিনি শুনতে চান না ৷ বড় বোনের এমন নাছোড়বান্দা মার্কা কথাবার্তার সাথে পেরে না ওঠে হার মেনে অবশেষে মি.আনিসুল কথা দিলেন যে তিনি কাল সকালে সবাইকে নিয়ে এখানে আসছেন। বিজয়ীর হাসি হেসে ফোন রাখলেন মিসেস লিমা। যে করেই হোক ঊদিতার জন্য এ বিয়ের প্রস্তাব কিছুতেই নাকচ করা যাবে না। এ বাড়ির বউ হলে রাজরানীর মতোন থাকবে উনার ভাইঝি। দুইবোনের বিয়ে একজায়গায় হলে ক্ষতি কী!বরঞ্চ আরো বেশি ভালো হবে।

আর আশিয়ান যে ছেলে,,, ওর বাপের সম্পত্তি ছাড়াও ওর যা আছে তাতে সে রাজার হালে বাকিজীবন পার করতে পারবে। আস্ত একটা নামীদামী কোম্পানির মালিক সে। এই বয়সে কত সুনাম অর্জন করেছে সে তা বলবার অপেক্ষা রাখে না।আর আশিয়ান কত বিয়ের প্রস্তাব নাকচ করেছে,, ওর বাবা মা ওকে হাজার বলেও বিয়ের জন্য রাজি করাতে পারেন নি।

অথচ ঊদিতার কথা বলামাত্রই সে অকপটে রাজি হয়ে গেল কনে না দেখেই। এটা তো একপ্রকার অবিশ্বাস্য ব্যাপার বলা যায়। যে ছেলের জন্য হাজার মেয়ে পাগল সেই ছেলে ঊদিতাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে,,, বলতেই হয় যে ঊদিতা রাজ কপাল নিয়ে জন্মেছে।অবশ্য ঊদিতা কোন দিক দিয়ে কম,,,?এরকম আগুন সুন্দরী মেয়েকে নিজের বউ হিসেবে প্রত্যেকটা ছেলেই চায়!

ঊদিতা সন্ধ্যার নাস্তা তৈরি করে খেয়ে নিজের রুমে চলে গেল মাগরিবের নামাজ পড়ার জন্য। নামাজ আদায় করা শেষে রান্নাঘরে গিয়ে ফুপ্পিকে রাতের রান্না করতে হেল্প করতে লাগলো। মিসেস লিমা ঊদিতা এবং তানিয়াকে বললেন কালকে আবারও আলেয়ার শ্বশুরবাড়ির লোকেরা এখানে আসছেন। ঊদিতা স্বাভাবিক ভাবেই নিলো ব্যাপারটা। এবাড়ির মেয়ের সাথে যখন তাদের ছেলের বিয়ে ঠিক হয়েছে তখন এখানে ওদের অবাধ যাতায়াত চলবে,, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। বেচারি ঊদিতা তো জানেই না যে ওরা আলেয়ার জন্য নয় বরং তার জন্যই কাল এখানে আসছে।

রাতের ডিনার শেষে ঊদিতা নিজের রুমে চলে এলো। আর বাকিরা ড্রয়িংরুমে বসে নানান বিষয় নিয়ে কথাবার্তা বলছে। ঊদিতার কেন জানি আজ অনেক মাথাব্যথা করছে,,, তাই তাদের আলোচনায় সামিল না হয়ে রুমে এসে কোনোমতে নামাজটা আদায় করে নিয়েই বিছানায় শুয়ামাত্রই ঘুমিয়ে গেল সে।

ঊদিতা রুমে চলে যাওয়া মাত্রই মিসেস লিমা পরিবারের বাকি সদস্যদের জানালেন যে মিসেস ইয়াসমিন তার মেঝো ছেলে আশিয়ানের জন্য ঊদিতাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন। কালকে ওনারা বাসায় আসবেন বিষয়টা পাকাপোক্ত করতে। আশিয়ান যে বিয়েতে রাজি একথাও জানালেন তিনি তাদেরকে।

মিসেস লিমার কথা শুনে আলেয়া তো হিংসায় জ্বলে পুড়ে পুরো খাক হয়ে যাচ্ছে। ওর এই অভিশপ্ত রূপের কারণে ছেলেদের মায়েরাই পাগল হয়ে যায় পুত্রবধূ করার জন্য। আলেয়ার থেকেও অনেক ভালো বিয়ের প্রস্তাব পেয়েছে ঊদিতা। হিংসা তো হবেই। তাসকিন একজন সফটওয়্যার ইন্জিনিয়ার,,,তার বেতন মাত্র ২ লক্ষ টাকার মতো,,,। কিন্তু আশিয়ান একজন সেলেব্রিটি। নিজস্ব কোম্পানি তার,,,সারাদেশজুড়ে এই কোম্পানির অনেকগুলো ব্রাঞ্চ আছে,,,

আশিয়ানের মাসিক ইনকামই কোটি টাকার উপর। তার একার নিজস্ব ডুপ্লেক্স বাসা আছে,,,সিলেটে বাগানবাড়ি আছে,,,কক্সবাজারে সমুদ্রসৈকতের কাছেই নিজের হোটেল আছে। যা সে নিজের ইনকাম দ্বারা গড়ে তুলেছে। নিজ উদ্যোগে ২ টা এতিমখানা ও ১ টা বৃদ্ধাশ্রম করেছে।অনেক এতিম বাচ্চারা তার টাকায় পড়াশোনা করছে । সবদিক দিয়ে একজন পারফেক্ট ব্যক্তিত্ব হলো আশিয়ান। এরকম ছেলে তো লাখে একটা মিলে। এত মেয়ের ক্রাশ কিনা ঊদিতাকে বিয়ে করতে চাইছে। ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে আলেয়ার ৷

যাকে সহ্য করতে পারে না সেই ঊদিতাই এখন ঐবাড়ির বউ হয়ে যাবে,,এবং তার সাথেই বাকি জীবন এক ছাদের নিচে থাকতে হবে জা হিসেবে। এটা কোনোভাবেই মন থেকে মেনে নিতে পারছে না আলেয়া। বড়ভাই মুরাদের কথা শুনে ধ্যান ভাঙলো আলেয়ার;

মুরাদ:-বাহ,,, ভালোই তো। আশিয়ানের সাথে একবার দেখা হয়েছিলো আমার অফিসিয়াল কাজে,,,কথাবার্তায় বেশ ভালো ছেলে বলেই মনে হলো তাকে ,,, ব্যবহারও অনেক ভালো। খুব আন্তরিক। নীতিবান একজন মানুষ। আমাদের ঊদিতার ভাগ্য বলতে হবে,,,আশিয়ানের মতো ছেলেকে সে নিজের স্বামী হিসেবে পাবে। মামাকে রাজি করাও যেকোনো ভাবে। এরকম একটা প্রস্তাব হাতছাড়া করা ঠিক হবে না।

মি.গোলজার:-হ্যা,,,মুরাদ ঠিকই বলেছে,,, শালাবাবুকে বোঝাও তুমি,,, মেয়ের বয়স হোক কম,,,আগের যুগের মেয়েদের তো ১১ কী ১২ বছরে বিয়ে হয়ে যেতো। ঊদিতা তো তাও যথেষ্ট বুঝদার মেয়ে আছে। বিয়ের জন্য বয়সও ঠিক আছে। ছেলের বয়স ও বেশি নয়। এত ভালো একটা বিয়ের প্রস্তাব কোনোমতেই নাকচ করা যাবে না। এ পরিবারে বউ হলে তো আলেয়ার মতো ঊদিতারও ভাগ্য খুলে যাবে।যেখানে স্বয়ং পাত্রের মা ঊদিতাকে পছন্দ করে আংটি পড়িয়ে দিয়ে সাথে সালামিও হাতে ধরিয়ে দিয়ে গেছেন। সেখানে ওনাদেরকে মানা করে দেয়া মারাত্মক বোকামির কাজ হবে।কালকে এলে তোমার ভাইকে তুমি ভালোমতো বোঝাও,,, সাথে আমরাও বুঝাবো।

মিসেস লিমা:-হ্যা,,, তা তো বুঝাবোই,,,।কিন্তু মেয়েটার বয়স তাও অল্প হয়ে যায় যে,,,। এই বয়সে বিয়ে দিলে সেটা তো বাল্যবিবাহ বলে গন্য হবে। তা কী ঠিক হবে?এখনো মেয়েটার এসএসসির রেজাল্টও বের হয় নি।আর তারও তো একটা মতামত নেয়ার দরকার,,,তাই না?তাকে না জানিয়ে কী,,,

মি.গোলজার মিসেস লিমার কথা সম্পূর্ণ করতে দিলেন না।তিনি খেঁকিয়ে বলে উঠলেন;

মি.গোলজার:-ধ্যাত,,,তুমি বেশি বুঝো কেন?এত পড়াশোনা করে কী হবে শুনি?সেই তো মেয়েকে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে বিয়ে দিতে হবে। আর মতামত নিতে হবে কেন?মেয়ে কী আমাদের থেকে বড় হয়ে গেছে নাকি?আমরা তো মেয়ের ভালোই চাইছি। বিয়ের পর তার স্বামী যদি চায় তাহলে পড়াশোনা অবশ্যই চালিয়ে যাবে,,, এতে তো কোনো সমস্যা নেই। তোমার ভাইয়ের কী বর্তমানে এত মুরোদ আছে যে লাখ লাখ টাকা খরচ করে পরে অন্য কোনো ছেলের সাথে মেয়ের বিয়ে দেবে?অথচ এই ছেলের সাথে বিয়ে দিলে একটাকাও খরচ করতে হবে না তার। তারাই মেয়েকে সাজিয়ে নিয়ে যাবে। যৌতুকও দাবি করছে না,,, এত ভালো পরিবার কই পাবে ওরা?

মুরাদ:-বাবা কিন্তু ঠিকই বলেছে আম্মু। তুমি বোঝার চেষ্টা করো,,, আশিয়ানের সাথে বিয়ে হলে ঊদিতা ভীষণ সুখী হবে।এত ভালো ছেলে এবং এত অমায়িক পরিবার হাজার খুঁজলেও পাবে না। আমরা ওর ভালো চাই সবসময়। বয়সটা কিন্তু তেমন একটা ম্যাটার করে না৷দুজনেরই পারফেক্ট এইজ,,,।এখন তুমি যে করেই হোক মামা এবং শাহরিয়ারকে (ঊদিতার বড়ভাই) রাজি করাও। বাকিটা আমরা সামলে নেবো ৷

মিসেস লিমা:-সত্যি বলতে,, আমিও চাই আশিয়ানের সাথে ঊদিতার বিয়েটা হয়ে যাক। আমার ঊদিতাটা যে খুব সুখে থাকবে তা আমি জানি। শ্বাশুড়ি হিসেবে মিসেস ইয়াসমিন অনেক ভালো একজন মানুষ। কালকে ঊদিতার সাথে বসে বেশ কিছুক্ষণ গল্প করেছিলেন তিনি এবং ওনার ছোট মেয়ে। ঊদিতাও ওনার সাথে একদম ফ্রী হয়ে গেছে বলতে গেলে।আমি যে করেই হোক আনিসকে বোঝাবো। আশা করি আনিস বুঝবে। আর আনিস রাজি হলে শাহরিয়ারও তখন এমনিতেই রাজি হয়ে যাবে।ব্যাপার না,, আমি ওদেরকে ম্যানেজ করে নেব।

আলেয়া বাদে বাকি দুজন মিসেস লিমার কথা শুনে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন।অতঃপর আলোচনা সভা ভেঙে যে যার রুমে চলে গেল ঘুমাতে। কালকে অনেক কাজ আছে। মেহমান আসবেন বলে কথা।

🍀🍀🍀

আশিয়ান প্রায় রাত সাড়ে এগারোটা পর বাসায় ফিরলো৷আজ আরেকটাকে পরকালে পাঠিয়ে দিয়ে এসেছে। আশিয়ান কখনোই নিজে খুন করে না।ওর গ্যাঙের মানুষ দ্বারা করায়। কারণ ইলিয়ানা ও তার আম্মু মারামারি করা মোটেই পছন্দ করেন না। ওদের জন্যই সে এসব থেকে নিজেকে বিরত রাখে।

ওর আদেশে তার টিমের এরা কালপ্রিটকে বের করে এনে মেরে ফেলে। এসব কীটপতঙ্গ বেঁচে থাকলে দেশের ক্ষতি। তাইতো পুলিশের হাতে তুলে না দিয়ে নিজেই উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয় সে৷জেলে পাঠিয়ে কোনো লাভ নেই,, পুলিশকে মোটা টাকার ঘুষ দিয়ে ঠিকই বেরিয়ে যায় এবং আবারও অপকর্মে লিপ্ত হয়ে পড়ে এসব হারামি রা।দেশে সঠিক বিচারের বড্ড অভাব তাই তো আশিয়ান নিজেই ওদের বিচার করে।

খাওয়া দাওয়া সেড়ে সবাই যে যার রুমে চলে গেছে অনেক আগেই। আশিয়ান ও শাওয়ার করে খাবার খেয়ে নিয়ে কিছুক্ষণ বিছানার ওপর বসে রেস্ট নিলো। ঘুম না আসায় নিজের রুমের সাথে এটাচ্ ছাদের মতো বিশাল বারান্দায় চলে গেলো সে।বারান্দাটার পরিবেশ একদম খোলামেলা। এর ওপরে কোনো ছাদ নেই।

ছোটখাটো একটা সুইমিংপুল আছে সেখানে। আশিয়ান মাঝে মধ্যে সুইমিংপুলটাতে সাঁতার কাটে।সুইমিংপুলের একপাশে একটা টেবিল ও দুটো চেয়ার পেতে রাখা আছে।আর চারপাশে ঘিরে আছে শুধু কাঠগোলাপ গাছ, নয়নতারা ও টগরফুলের গাছ। এগুলো আশিয়ানের প্রিয় ফুলগাছ।

বেশ কয়েক জাতের দুর্লভ অর্কিডের গাছও ছিলো,,, কিন্তু সেগুলো ফেলে দিয়েছে আশিয়ান। ইলিয়ানার অর্কিড ফুল ভীষণ প্রিয় ছিলো,, রিলেশন থাকাকালীন সময়ে অর্কিড গাছগুলো নিজেই কিনে এনে লাগিয়েছিলো আশিয়ান। কিন্তু ব্রেকআপের পর ইলিয়ানার সব স্মৃতি সে নিজেই নষ্ট করে ফেলেছে। আশিয়ান চায় না এই মেয়ের কোনো স্মৃতি তার জীবনে জড়িয়ে থাকুক।

হাতে থাকা সিগারেটে লাইটার দিয়ে আগুন ধরিয়ে তাতে একটা টান দিয়ে ধোঁয়া ছেড়ে আকাশের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আশিয়ান। আকাশের বুকে একফালি চাঁদ উকি দিচ্ছে।যেন লুকিয়ে লুকিয়ে আশিয়ানের কষ্ট চাঁদটাও উপভোগ করছে।

সারা আকাশ জুড়ে তারার মেলা। দেখে মনে হচ্ছে কালো একটা শাড়িতে কে যেন সাদা রঙের চুমকি বসিয়ে দিয়েছে। কেমন ঝিকমিক করছে সবগুলো তারা। মৃদু হাওয়ায় আশিয়ানের চুলগুলো হাওয়ার তালে তালে দুলছে। বিষন্নতা ঘিরে ধরেছে তাকে ৷ এই মুহুর্তে ইলিয়ানার সাথে কাটানো প্রত্যেকটা মুহূর্তের কথা মনে পড়ছে তার।

অতীত,,,

ইলিয়ানা:- জান,,, তুমি আমাকে এত কেন ভালোবাসাে বলোতো?(গলা জড়িয়ে জানতে চেয়ে)

আশিয়ান ইলিয়ানার প্রশ্ন শুনে মুচকি হেসে তাকে দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বললো;

আশিয়ান:-তুমি তো আমার মন পাখি,,, কলিজার টুকরো,,,তোমাকে ভালোবাসব না তো কাকে বাসব বলো তো?আমি একসময় বিবর্ণ হয়ে যেতে পারি,,,কিন্তু তোমার প্রতি আমার ভালোবাসার সুপ্ত অনুভূতিগুলো কখনোই বিবর্ণ হবে না জান,,,কজ আই লাভ ইউ মোর দ্যান ইন মাই লাইফ,,।(শেষের কথা গুলো কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে)

ইলিয়ানা এবার আশিয়ানের দুইগালে আলতো করে ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে বললো;

ইলিয়ানা:-আই লাভ ইউ টু জানু,,,মৃত্যুর আগ অবধি তোমার সাথে থাকবো,,, তোমায় এভাবে সারাক্ষণ ভালোবেসে যাবো কথা দিলাম।জানি তোমার এত এত ভালোবাসার কাছে আমার ভালোবাসা কিছুই না,,, বড্ড ফিঁকে,,, তারপরও ভালোবাসি খুব।

আশিয়ান ইলিয়ানাকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে আবেগময় কন্ঠে বললো;

আশিয়ান:-হুমম জান,,,এভাবেই দুজন দুজনকে আজীবন ভালোবেসে যাবো,,,।খুব শীঘ্রই তোমাকে আমার করে নেবো সোনা,,, কথা দিলাম।

আশিয়ানের কথা শুনে ইলিয়ানা মুচকি হাসি দিয়ে শক্ত করে আশিয়ানকে জড়িয়ে ধরে মুহূর্তটাকে অনুভব করতে লাগলো।

বর্তমান,,,

কথা দিয়েও আজ সেই কথা রাখে নি ইলিয়ানা। তার দেয়া কথার কোনো মূল্যই ছিলো না তাই তো আশিয়ানকে ফেলে চলে গেছে সে। আশিয়ান ইলিয়ানার সাথে কাটানো সেই মুহূর্ত গুলো মন করে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো;

আশিয়ান:-সত্যিই বলেছিলে তুমি,,, আমার ভালোবাসার কাছে তোমার ভালোবাসা বড্ড ফিঁকে ছিলো,,, আমার জন্য তোমার মনে কিছুই ছিলো না কখনো,,, যার কারণে আমাকে ছেড়ে যেতে তুমি দুবার ও ভাবো নি। এত্তো ভালোবাসার ফল তুমি আমাকে এভাবে দিবে আমি তা কখনো কল্পনাতেও ভাবি নি,,,।

যদি আগে থেকে জানতাম তুমি টাকা ও ক্ষমতার লোভী,,, তাহলে জীবনেও তোমাকে ভালোবাসার মতো মারাত্মক ভুলটা আমি করতাম না। এখন যে তুমি আমার কাছে ফিরে আসতে চাইছো,,, কী মনে করেছিলে আমি বুঝতে পারি নি তাই না,,,?তুমি যে আমার টাকা ও আমার ফ্যাম এর কারণে আবার আমার লাইফে ব্যাক করতে চাচ্ছো তা আমি খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছি। আজ আমার যে ক্ষমতা ও টাকা আছে তাতে তোমার স্বামীর মতো হাজারটা এমপিকে আমি কিনে নিতে পারি,,,।

আমি নিজেকে চ্যালেন্জ করেছিলাম ইলিয়ানা,,,দেখো আমি আজ সফল,,,,নিজেকে এমনভাবে তৈরি করেছি যে এখন এই আশিয়ান তায়েফ চৌধুরীকে সারা পৃথিবীর মানুষ একনামে চেনে।জানো,,, তোমার থেকেও অত্যাধিক সুন্দরী হাজার হাজার মেয়ে আমার পেছনে লাইন দিয়ে পড়ে আছে। শতাধিক মেয়ে আমাকে একরাতের জন্য নিজে থেকে অফার করে,,, প্রচুর রুমডেটের অফার আসে আমার কাছে। কিন্তু আমি তা কখনো পাত্তাই দিই না। কারণ আমি মনে করি সব মেয়েরাই তোমার মতো ছলনাময়ী,,,পাক্কা অভিনেত্রী,,।

তাইতো মেয়েদের থেকে সবসময় দুরত্ব বজায় রেখে চলি। তোমার বিশ্বাসঘাতকতার কারণে এখন কোনো মেয়েকে বিশ্বাস করতেই ভয় লাগে আমার। তুমি তো খুব সুকৌশলে আমার মনটা ভেঙে দিয়ে চলে গেলে। কী ভেবেছো আমাকে কষ্ট দিয়ে তুমি সুখী হবে?মোটেই না,,। তুমি অবশ্যই আমার মন ভাঙার শাস্তি পাবে,,, এবং সেটা খুবই তারাতাড়ি।একদিন তুমি আমার পায়ে ধরে তোমার কৃতকর্মের জন্য মাফ চাইবে? কিন্তু তখন আমি তোমায় মাফ করবো না,,, বরং তৃপ্তির সাথে তোমার কষ্টগুলো উপভোগ করবো। যতটা কষ্ট তুমি আমাকে দিয়েছো তার থেকেও হাজার গুন কষ্ট তুমি নিজে পাবে।অপেক্ষা শুধু সময়ের। আপনা টাইম আয়েগা ইলিয়ানা,,, জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ্,,,।

পৈশাচিক এক হাসি দিয়ে হাতে থাকা জ্বলন্ত সিগারেটে কষে একটা টান লাগালো আশিয়ান।সিগারেট খাওয়া শেষ করে সেটা মাটিতে ফেলে স্লিপার দিয়ে মনের ঝাল মিটিয়ে পিষ্ট করে ফেললো সে।মনে মনে এই আধখাওয়া সিগারেটটাকে ইলিয়ানা ভেবেই মনের ঝাল মিটিয়েছে আশিয়ান। তারপর দুঃখে যন্ত্রণায় নিজের চুল ধরে টেনে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে তার নেশাধরানো খোলা কন্ঠে সুর করে গেয়ে উঠলো ;

(Tera Zikr____by Darshan Raval)

আভি,,,আভি তো মিলে তে,,,,
ফির জুদা হো গায়ে,,,
কিয়া থি,,,মেরি খাতা,,,??
তুম সাজা হো গায়ে,,,
মুঝে খো’নেকে বাদ একদিন
তুম মুঝে ইয়াদ কারো গে,,,
ফির দেখনা মিলনেকি মুঝছে
তুম ফারিয়াদ কারো গে,,,
মুঝে খো’নেকে বাদ একদিন
তুম মুঝে ইয়াদ কারো গে,,,
ফির দেখনা মিলনেকি মুঝছে
তুম ফারিয়াদ কারো গে…..💔

গানটি গেয়ে নিজেই পাগলের মতো হেসে উঠলো আশিয়ান। বিরবির করে বললো;

আশিয়ান:-ইউ উইল পে ফর ইট ইলিয়ানা,,, জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ ফর পারফেক্ট টাইমিং।

ধীরপায়ে হেঁটে বারান্দা থেকে নিজের রুমে ফিরে এলো আশিয়ান। বারান্দার ও রুমের ডোরলক করে লাইট নিভিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো সে। মনে মনে নিজের কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলো আশিয়ান,,,আজ এই মুহুর্ত থেকে আর কখনোই ওই কালনাগিনীর কথা ভাববে না। নতুন জীবনের জন্য নিজেকেই নিজে শুভকামনা জানালো,,, অপেক্ষা করছে এক নতুন ভোরের,,, যা তার জীবনকে আবারও তার আলোয় রাঙিয়ে তুলবে। যেখানে থাকবে না কোনো বিষন্নতা,,, থাকবে না কোনো কষ্ট ও গ্লানি। শুধুই বিরাজ করবে সুখময় আলোর দীপ্তি,,, যা আবারও নতুন করে বাঁচতে শেখাবে আশিয়ানকে।

মৃদু একটা হাসি দিয়ে চোখ মুদলো আশিয়ান। কয়েক মিনিট যেতে না যেতেই ঘুমের অতলে তলিয়ে গেল সে। হালকাভাবে শুনা যাচ্ছে তার নিদ্রাচ্ছন্ন ভারী নিঃশ্বাস।আজ এতটাদিন পর পরম সুখে আরামে নিদ্রার দেশে হারালো আশিয়ান।

🌄🌄🌄

পরদিন সকালে,,,
মিসেস লিমা ও তানিয়া সকাল থেকে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ঊদিতাকে কোনো কাজ করতে দিচ্ছেন না ওনারা। সব কাজ একাই ওনারা করছেন।ঊদিতা জিজ্ঞেস করেছিলো তাদেরকে যে তাকে কেন কোনো কাজ করতে দেয়া হচ্ছে না,,, প্রতিউত্তরে মিসেস লিমা বললেন;

মিসেস লিমা:-শোন,,, আজ তোর বাবা-মা,ভাই- ভাবী, ভাতিজা ওরা সবাই আসছে,,, এখন এসে যদি দেখে ওরা যে আমি তোকে দিয়ে কাজ করাচ্ছি তাহলে আমাকে তোর বাবা মনে মনে কী ভাববে বলতো?সামনে না বললে মনে মনে ঠিকই বলবে যে আমি তার মেয়েকে বেড়াতে নিয়ে এসেও কামলা খাটাচ্ছি।

ঊদিতা তার বাবা মায়ের আসার কথা শুনে আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে উঠলো। তবে মিসেস লিমার কথা শুনে কপট রাগ দেখিয়ে বললাে;

ঊদিতা:-উফফো ফুপ্পি,,,তুমি সবসময় খালি এক্সট্রা ভাবো,,,আমার আব্বু মোটেও এমন নয়। আর কাজ করা তো আমার হ্যাভিট,,,। এটা আমি জীবনেও ছাড়তে পারবো না। হুদাই বসে থাকতে কার ভালো লাগে বলো তো?আচ্ছা আজকে না আলেয়া আপুর শ্বশুরবাড়ির লোকজনেরা আসবে বললে? তাহলে আমি রান্না করি? ওই আন্টিটা বলেছিলো পরের বার এলেও আমার হাতের রান্না খাবে,,, যদি আমি থাকি আরকি!যেহেতু আমি এখানে আছি তাহলে রান্নাগুলো আমিই করি দাও।

ঊদিতার কথা শুনে তানিয়া ও মিসেস লিমা মুখ টিপে হাসছেন। ঊদিতা তাদের হাসির কারণ বুঝতে পারলো না। হাবলার মতো অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো;

ঊদিতা:-আশ্চর্য!আমি এমন কী বললাম যে হাসছো তোমরা?আমি তো শুধু রান্না করার কথাই তো বললাম!তাহলে হাসছো কেন তোমরা? আজব,,,,

মিসেস লিমা কোনোমতে হাসি আটকে বললেন;

মিসেস লিমা:-তুই না রান্না করবি?তাহলে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?আমাদের হাসির কারণ না খুঁজে কাজে লেগে পড় যা। ছানার মিষ্টি,৩ ধরণের পুডিং, কালোজাম,রসমালাই ও ফ্রুটকেক টা বানিয়ে রেখে দে তো জলদি।তারপর রুমে গিয়ে লম্বা করে একটা শাওয়ার নিবি। নিয়ে রেস্ট করবি। ততক্ষণে তোর ফ্যামিলির সবাইও হাজির হয়ে যাবে।

ঊদিতা মাথা ঝাকিয়ে কাজে নেমে পড়লো৷ বেচারি কোনো কিছুর আঁচ ও পেল না।কী থেকে কী হতে যাচ্ছে তার সাথে তা এখনো অজানা!

দুপুর একটা নাগাদ ঊদিতার পরিবারের সবাই মিসেস লিমার বাসায় এসে হাজির হলেন। এত জরুরি তলব দিলে না এসে থাকা যায় না।মিসেস লিমা আগে থেকেই বলে রেখেছিলেন যে ঊষা ও তার স্বামীকেও সাথে নিয়ে আসতে৷ কারণ এখানে একটা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হবে,, যাতে পরিবারের সবার উপস্থিতি ও মতামত আবশ্যক। ঊদিতা সবাইকে একসাথে দেখে খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেল। সব আণ্ডাবাচ্চা খুশি হওয়ার ঠেলায় একজোট হয়ে একরুমে গিয়ে খেলাধুলা আরম্ভ করে দিলো।

মিসেস লিমা ও মি.গোলজার ও মুরাদ ঊদিতার পরিবারের সবার সাথে বিয়ের প্রস্তাবের বিষয়টা নিয়ে আলোচনা শুরু করলেন ঊদিতার সামনেই।সব কিছু শুনে ঊদিতা কাঠ হয়ে গেছে প্রায়।

এজন্যই সেদিন ওই আংটি আর ১০ হাজার টাকা সালামি দিয়েছিলেন তাকে মিসেস ইয়াসমিন,,, ঊদিতা পুরো বোকা বনে গেলো যেন ঘটনাটার আকস্মিকতায়।কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে সে। সব শুনে শাহরিয়ার ও মি.আনিসুল গম্ভীর হয়ে গেলেন।

মুরাদ,মিসেস লিমা, মি.গোলজার একনাগাড়ে বুঝাতে লাগলেন তাদের দুজনকে। ঊষার স্বামী মিনাজ আশিয়ানকে চেনে,,, তার বসের প্রিয়ভাজন হয় আশিয়ান। সেও আশিয়ানকে খুব পছন্দ করে। ছেলে হিসেবে সে খুব ভালো। এরকম সোনার টুকরো ছেলে লাখে একটা মিলে। সবাই মিলে আশিয়ান ও তার পরিবারের গুনগান গাইতে লাগলো। মি.আনিসুল সবার কথা থামিয়ে ঊদিতার দিকে তাকিয়ে আদুরে কন্ঠে বললেন;

মি.আনিসুল:-আমার মেয়ে যা বলবে,, তাই আমি শুনবো,,,। অন্য কারো কথা নয়। মামণি সবই তো শুনলে তুমি। তোমার কী মত আব্বুকে বলো মা?আমার মেয়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে আমি কিছুই করবো না!

ঊদিতা এতক্ষণ মাথা নিচু করে বসেছিলো। মি.আনিসুলের কথা শুনে সে ধীরগলায় বললো;

ঊদিতা:-আব্বু,,, আজপর্যন্ত তোমার এবং ভাইয়ার পছন্দেই আমি জামাকাপড় পড়ে আসছি,,, যে স্কুলটা তোমাদের কাছে ভালো লেগেছে সে স্কুলেই পড়াশোনা করেছি। তোমাদের দুজনের কথা ছাড়া কখনো একপাও নড়ি নি। জীবনের সবকিছু তোমাদের সিদ্ধান্তেই হয়েছে,,, তাহলে আজ এত বড় একটা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে একা আমার উপর ছেড়ে দিচ্ছো কেন আব্বু?আমি তো এসবের কিছুই বুঝি না,,,। এখনো আমি তোমাদের উপর নির্ভরশীল আব্বু,,। তোমরা দুজন যা বলবে আমি তাই করবো। তোমাদের কাছে ভালো মনে হলে আগাও আর নয়তো এখানেই থেমে যাও,,, আমার কোনো আপত্তি নেই। আজপর্যন্ত তোমরা যা করেছো সব আমার ভালোর জন্যই করেছো,,,এবারও নিশ্চয়ই তাই করবে। তোমাদের কাছে ভালো লাগলে আমি রাজী,,,এটাই শেষ কথা আব্বু। এটাই আমার সিদ্ধান্ত।

ঊদিতার কথা শুনে শাহরিয়ার ও মি.আনিসুল যারপরনাই আনন্দিত হলেন। ঊদিতা যে তাদের পছন্দেই নিজের লাইফ পার্টনার চুজ করবে তা ওনারা ভাবতেই পারেন নি। এরকম বাবার বাধ্য মেয়ে হাজার খুঁজলেও পাওয়া যাবে কি না সন্দেহ!!

(ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।এবং গঠনমূলক কমেন্ট করবেন সবাই আশা করছি।গল্পটি কিছুটা বাস্তবভিত্তিক তবে পুরোটা নয়।বেশিরভাগই আমি সাজিয়েছি।আর গল্পের নায়িকার চরিত্রটা মূলত আমার ফুফুতো বোনেরই প্রতিরূপ।তবে নায়ক আমার নিজস্ব কল্পনার সৃষ্টি।যাইহোক,নাইস নেক্সট না লিখে উৎসাহ দিলে ভালো হয়।আপনাদের জন্য এত কষ্ট করে গল্প লিখি বিনিময়ে তো এতটুকু আশা করতেই পারি।হ্যাপি রিডিং গাইজ 😘ভালোবাসা অবিরাম❤️ )

#চলবে …

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here