তোমার অপেক্ষায়…..(পর্ব -১) #মৌমিতা হোসেন

0
594

#তোমার অপেক্ষায়…..(পর্ব -১)
#মৌমিতা হোসেন

বাসন্তি রঙের জামদানি পড়ে খুব সুন্দর করে সেজে খোঁপায় গাঁদা ফুল লাগাচ্ছে নন্দিনী। গাঁদা ফুল নন্দিনীর ভীষন পছন্দ। কারন কোন একদিন অনন্ত বলেছিলো, গাঁদা ফুলে নাকি নন্দিনীকে একেবারে হলুদ প্রজাপতির মতো লাগে। ঐ যে বেশ কবছর আগে কোন একদিন বলেছিলো আর কি। ব্যস এরপর থেকে প্রতিবছর এই দিনে নন্দিনীর গাঁদা ফুল লাগবেই লাগবে। কোনভাবেই এই জিনিস নন্দিনী মিস করতে চায়না। তাই আজকেও এর ব্যতিক্রম ঘটতে দেয়নি সে। খোঁপায় ফুল লাগিয়ে পাশে তাকাতেই দেখে চৈতি অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। চৈতি হলো নন্দিনীর ছোট বোন। বোন কম বান্ধবী বেশি। চৈতিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে নন্দিনী বলে,”কীরে বোনু এভাবে তাকিয়ে কি দেখছিস? আমি বুঝি আজ প্রথম এভাবে সেজেছি?”

চৈতি পলক ফেলে বলে,”না বুবু প্রতি বছরেই তো এই দিনে তুমি এভাবে সাজগোজ করো। এটা তো নতুন কিছু নয়।”

“তাহলে তাকিয়ে আছিস কেনো?”

“কারন আমার বুবুকে এভাবে সাজলে একদম হলুদ পরীর মতো লাগে। ইচ্ছে করে সারাদিন তোমাকে এভাবে দেখতে থাকি।”

বোনের কথা শুনে নন্দিনী হাসে। কথা না বাড়িয়ে তাড়াতাড়ি চুড়ি পড়ে ব্যাগে টিপের পাতা রাখতে নিলেই চৈতি বলে,”টিপটা লাগিয়ে যাওনা বুবু। অনেক ভালো লাগে দেখতে।”

নন্দিনী মুখে লাজুক হাসি রেখে বলে,”জানিস তো এই দিনে টিপটা আমায় ও নিজ হাতে পরিয়ে দেয়। আমি নাকি টিপ পড়তে পারিনা। বাঁকা পড়ি। তাই এই কাজটা ওর জন্য রেখে দিয়েছি। ভালো লাগে ও পড়িয়ে দিলে।”

চৈতি কথা বাড়ায়না। চুপচাপ নিজের রুমে চলে যায়। নন্দিনী তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে ব্যাগ নিয়ে বের হতে নিলে নন্দিনীর মা শালিনী বলে,”একাই বের হবি? চৈতিকে সাথে করে নিয়ে গেলে ভালো হতোনা?”

নন্দিনী কপালে ভাঁজ ফেলে বলে,”কি যে বলো না মা। তোমাদের হবু জামাইয়ের সাথে ডেটিং এ যাচ্ছি। সেখানে যাবো চৈতিকে নিয়ে? ও কি ভাববে বলোতো? জানোতো ও কম কথা বলে। বেশ ঠান্ডা প্রকৃতির। সবার সাথে সহজেই এডজাস্ট করতে পারেনা। তাছাড়া আজকের দিনটা ও আমার সাথে কাটাতে চায় তাই…” কথা শেষ করে চোখ তুলে সামনে তাকাতেই দেখে শালিনী রান্নাঘরে চলে গেছে। মায়ের এমন আচরনের কোন কারন খুঁজে পায়না নন্দিনী। কারন মাঝে মাঝেই মা এমন করে। ওর কথার মাঝে এভাবে কিছু না বলে চলে যায়। হঠাৎ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সকাল প্রায় এগারোটা। বারোটার আগে টিএসসি পৌঁছুতে হবে নন্দিনীকে।

এসব ভেবেই নন্দিনী তাড়াতাড়ি ডাইনিং টেবিলের কাছে গিয়ে পানি খেয়ে দড়জার কাছে যেতে নিলেই রহিমা এসে বলে,”আফা খালাম্মা কইছে নাস্তা খাইয়া যাইতে। তাড়াতাড়ি নাস্তা খান তারপর বাইর হন।”

নন্দিনী কিছুটা বিরক্ত হয়ে চলে যেতে নিলে শালিনী বলে,”কীরে নন্দিনী রহিমা কি বলেছে শুনতে পাসনি? নাস্তা না খেয়ে কোথাও যাবিনা। তাড়াতাড়ি বোস। আমি খাইয়ে দিচ্ছি।”

নন্দিনী বুঝতে পারে যে না খেয়ে আজ বের হওয়া যাবেনা। তাই চুপচাপ বসে দুই গাল খেয়েই বলে,”এখন যাই মা? তোমাদের হবু জামাই এসে অপেক্ষা করবে। বছরে একটা দিনই তো আসে সে। জানোই তো সময়মতো না গেলে ভীষন অভিমান করে।”

শালিনী কিছু বলেনা। চুপচাপ মেয়ের কপালে আদর দিয়ে খাইয়ে দেয়। এরপর বারান্দায় গিয়ে তাকিয়ে দেখতে থাকে আদরের মেয়ের অনন্দ,হাসিমাখা উজ্জল মুখ। মেয়ের আনন্দ দেখে চোখ দুটো ছলছল করে ওঠে শালিনীর। তবে মনে মনে প্রতিনিয়ত ভাগ্যকে দোষ দিতে থাকে।
_______

রিকশা থেকে নেমে টিএসসি পার হয়ে আপন মনেই হাঁটতে থাকে নন্দিনী। পহেলা ফাল্গুন এর সাথে আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। তাই আশেপাশে যেনো আজ বাসন্তি সাজের ধুম চলছে। অল্প বয়সী থেকে শুরু করে মাঝ বয়সী পর্যন্ত সবাই আজ উৎসব পালনে ব্যস্ত। ফেব্রুয়ারী মাস বইমেলা চলছে। তাই মনে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় এড়িয়াতে ভীড়টা অনেক বেশি। নন্দিনী এসবের মাঝেই সবটা দেখতে দেখতে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। টিএসসি গিয়ে বসার কথা থাকলেও এবার বসবে মেলার ভেতরে। কাল রাতে অনন্ত ফোন করে বলেছিলো বইমেলায় ঢুকে কিছুদূর গিয়েই ডানদিকে একটা বসার জায়গা আছে সেখানেই যেনো অপেক্ষা করে। নন্দিনী মনে মনে ভাবে,এবার টিএসসিতে অনেক ভীড় তাই হয়তো অনন্ত এমন আবদার করেছে।

নন্দিনী ভীড় ঠেলে অনেক কষ্টে সামনে গিয়ে সেই জায়গায় বসে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে বারোটা বেজে গেছে। তাই তাড়াতাড়ি ব্যাগ থেকে ছোট আয়না বের করে নিজেকে একবার দেখে নেয়। সব ঠিক আছে তবে চেহারায় কেমন যেনো একটা বয়সের ছাপ পড়েছে মনে হয়। ঠিক আগের মতো উজ্জলতা এখন আর নেই। নন্দিনী মনে মনে ভাবে,বয়সতো আর কম হলোনা। চল্লিশ ছুঁই ছুঁই। এখনো কি আর সেই আগের মতো উজ্জলতা থাকবে?

এসব ভাবনার মাঝে হঠাৎ একটা বাচ্চা ছেলে বাদাম নিয়ে এলে নন্দিনী বিশ টাকার বাদাম নেয়। বাদাম নিয়ে ব্যাগে ভরে রাখে। অনন্ত বাদাম খুব পছন্দ করে। এজন্যই প্রতিবার এই দিনে এসে আগেই বাদাম কিনে ব্যাগে ভরে রাখে নন্দিনী। এর মধ্যে কাঁধে কারো হাতের ছোঁয়া পেলে তাকিয়ে দেখে অনন্ত চলে এসেছে।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here