#তোমার_ছায়া (পর্ব ১১)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
ফারহাকে এক হাতে ধরে জঙ্গলের পথ ধরে এগুতে থাকে আবরার। এতো বড় জঙ্গলে ফারহাকে নিয়ে কোন দিকে যাবে সেটাও নিশ্চিত করতে পারছে না সে। পত ধরে এগিয়ে যেতে যেতে হটাৎ থমকে দাড়ায় আবরার। পারহার দিয়ে চেয়ে দেখে, ফারহার দুটি ভয় মাখা চোখ তার দিকে ঝাপসা অন্ধকারে তাকিয়ে আছে।
আবরারের দিকে চেয়ে কাঁপা গলায় বললো,
– হটাৎ থেমে গেলেন কেন?
আবরার বললো,
– এই পথ ধরে এগিয়ে যাওয়া ঠিক হবে না। যদি ওরা আবার ফিরে আসে তাহলে ধরা পরে যাবো। তাছারা ওরা এতো সহজে আমাদের ছেরে দিয়েছে এটা বিশ্বাস যোগ্য না। বিপদ এখনো পুরোপুরি কাটেনি। তুমি পাশে না থাকলে হয়তো এতোটা টেনশন থাকতো না। এখন এই গভির জঙ্গলে তোমাকে নিয়েই যত টেনশন। তাই সোজা পথে না হেটে আমাদের জঙ্গলের মাঝ দিয়ে পথ খুজে নিতে হবে।
ফারহা আর কিছু বলছে না। ভয় মাখা চেহারা নিয়ে আবরারের দিকে তাকিয়ে আছে। আবরার ফারহার হাত ধরে এবার পথ ছেরে জঙ্গলের মাঝে ঢুকে গেলো।
অনেকটা পথ আসার পর ফারহা পা ধরে বললো,
– আমি আর হাটতে পারছি না। পা টা ব্যাথা করছে খুব। কা’টার আ’ঘাতে হয়তো কিছুটা ছিলেও গেছে।
আবরার আবছা অন্ধকারে চার পাশে তাকিয়ে একটা ভাঙা গাছের উপর ফারহাকে বসালো। পাশে নিজেও বসলো।
ফারহা কাঁদু কাঁদু ভাব নিয়ে বললো,
– আমরা কি এখান থেকে বের হতে পারবো না? আমার খুব ভয় হচ্ছে।
আবরার ফারহাকে আশ্বাস দিতে বললো,
– ভয় পেও না, আমি আছি। একটা না একটা ব্যবস্থা নিশ্চই হয়ে যাবে।
– কিভাবে বের হবো? আমরা তো এখানের কিছুই চিনিনা। তাছারা ফোনও নেই যে, কাউকে কল দিবো বা লোকেশন দেখে বের হবো।
ফারহার কথা গুলো আর কানে আসছেনা আবরারের। কিছুটা দুরে কিছুর উপস্থিতি টের পেয়ে, তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে ওদিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন।
দেখে কয়েকটা লোক, টর্চ হাতে কিছু খুজে বেড়াচ্ছে। কেউ একজন কড়া গলায় বললো,
– কোথায় হাড়িয়ে গেলো চোখের পলকে? মেয়েটাকে আমার চাই চাই। সারা জঙ্গল খুজে দেখ।
মুহুর্তেই বুকটা ধুক করে উঠলো আবরারের। পাশে থাকা ফারহার হাত ধরে চার পাশে তাকিয়ে দেখে কিছু কিছু বড় গাছের গোড়ায় অনেক ঝোপ। লুকানোর জন্য আপাতত এর চেয়ে ভালো জায়গা এই মুহুর্তে চোখে পরছে না। যদিও এসব যায়গায় সা’সাপের ভয় অনেকটা বেশি। তবুও যেভাবেই হোক, ফারহাকে ওদের চোখের আড়াল করতে হবে।
ফারহার দিকে তাকিয়ে মুখে আঙুলের ইশারা দিয়ে বললো,
– একধম সাউন্ড করবে না। ওরা আবার আমাদের খুজতে এখানে চলে এসেছে। আমার সাথে এসো চুপচাপ। আর ভয় পেলে চোখ বন্ধ করে থাকবে।
বলেই ফারহাকে নিয়ে ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে পরলো সে। দেখে ফারহা মুখে কিছু না বললেও চোখ বন্ধ করে ভয়ে থর থর করে কাঁপছে।
হটাৎই আবরার ফারহাকে টেনে বুকের সাথে চেপে ধরে আরো আড়াল করার চেষ্টা করছে। মাথাটা এক হাতে বুকের সাথে চেপে ধরে আছে, যেন ফারহা চাইলেও কিছু দেখতে না পায়।
আবরারের বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে আছে ফারহা। যেন এই বুকটাই এই মুহুর্তে তার জন্য সবচেয়ে নিরাপদ স্থান।
আবরার ঝোপের আড়ালো লোক গুলোর উপস্থিতি বুঝার চেষ্টা করছে।
লোক গুলো কিছুক্ষন টর্চ নিয়ে এদিক ওদিক খোজাখুজি করে অন্য দিকে চলে গেলো। একটা স্বস্থির নিশ্বাস নিয়ে ফারহার দিকে স্থির দৃষ্টিতে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো সে। কোথায় এসে কিসের মাঝে ফেঁসে গেলো দুজন।
ধিরে ধিরে ঘন অন্ধকার নেমে এলো। আবরার ফারহার গালে হাত রেখে বললো,
– তুমি খুব সাহসি মেয়ে। মোটেও ভিতু নও। বুকে সাহস নিয়ে শুধু আমাকে ফলো করবে। আমি যা করবো তাই করবে। এই নাও একটা লা’ঠি। আমি একটা নিলাম। কোনো বিপদ আসলেই আক্র’মণ করে বসবে। মনে রেখো এই অচেনা শহরের মানুষ রুপি প’শু গুলোর জীবনের চেয়ে নিজের ইজ্জত ও জীবন দুটুই খুব গুরুত্বপূর্ণ।
দুইটা লা’ঠি হাতে দুজন এক পা, এক পা করে এগিয়ে যাচ্ছে। কিছুক্ষন হেটে ফারহা মাটিতে বসে বললো,
– পানি খাবো। খুব তৃষ্ণা পেয়েছে।
আবরার চার পাশে তাকিয়ে বললো,
– এখন এই জায়গায় পানি কোথায় পাবে তুমি? দেখো ফারহা, খাওয়ার চিন্তা পরে করা যাবে। আপাততঃ এখান থেকে বের হওয়ার রাস্তা খুজতে হবে। কষ্ট করে আর কিছুটা চলো, হয়তো কিছু পেলেও পেতে পারি।
ফারহা চুপচাপ মাথা নাড়িয়ে আবার উঠে দাড়ালো। আবরার তাকে ধরে আবার সামনের দিকে পা চালালো। বেশ কিছুটা পথ আসার পর খুটখুটে অন্ধকারের মাঝে কিছু আলো চোখে পরলো। সামনেই হয়তো কোনো রাস্তা বা কারো বাড়ি-ঘর অথবা বাজার এমন কিছু।
দুজনের মুখেই হাসি ফুটে উঠলো। ফারহা খুব ভয়ে ছিলো। নতুন জীবন পাওয়ার মতো আনন্দে আবরারকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো সে।
আবরা হেসে বললো,
– এখনই এতো খুশি হওয়ার দরকার নেই। আগে এইসব থেকে একেবারে মুক্ত হই।
বলেই ফারহাকে ধরে আবার সামনের দিকে এগিয়ে গেলো সে।
খুটখুটে অন্ধকারে কিচুটা পথ এগিয়ে গেলে দেখে। কয়েক টা লোক টর্চ হাতে তাদের দিকে এগিয়ে এসে বললো,
– এই কারা তোমরা? আর এতো রাতে জঙ্গলে কি করতে গিয়েছিলে, দুজন?
পাশ থেকে একটা লোক বললো,
– কি আর করতে যাবে? বুঝতেছেন না, ওরা কি করে বের হচ্ছে?
ওদের কথা শুনে আবরার বললো,
– দেখুব আপনারা যেমনটা ভাবছেন, বিষয়টা মোটেও এমন নয়। আমরা খুব বিপদে পরে এখানে চলে এসেছি।
আবরারের কথায় লোকটা স্ব-শব্দে হেসে বললো,
– হাতে নাতে ধরা পরলে সকলে এমনই কাহিনি শুনায়। আর যদি সত্য হয়, তাহলে বলো তোমাদের পরিচয় কি? কি হও একে অপরের?
একটগ আগেও ভাই বোন পরিচয় দিয়েছে, সেই থেকে ফারহা ভয়ে ভয়ে বললো,
– আমার ভাইয়া হয়,,
আর অপর দিকে আবরার বলে ফেলে,
– আমার ওয়াইফ হয়।
এর পর দুজনই একে অপরের দিকে তাকিয়ে রইলো।
লোকগুলো আবরারের কলার চেপে ধরে বললো,
– এর পরেও আবার কি কাহিনি সাজাবি দুজন?
ফারহা ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে আবরারে পেছনে ঘেসে দাড়ালো।
আবরার লোকটার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে বললো,
– কি করছেন আপনারা? আর আমরা যেই হই, আর যাই করি এতে আপনাদের প্রব্লেম কোথায়?
পাশ থেকে আরেকটা লোক বললো,
– এতো দেখি চোরের মায়ের বড় গলা।
কিছুক্ষনের মাঝে ওখানে চেচামেচি শুনে অনেক মানুষ এসে জড়ো হয়। কেও কেও জিজ্ঞেস করছে, ভাই কি হয়েছে? কারা এরা?
পত্যেক বারই উত্তর আসে,
– আরে ভাই, আর বলবেন না, দুজন জঙ্গলে ঢুকে ফষ্টিনষ্টি করছিলো, আর এখন হাতে নাতে ধরা খেয়ে বড় বড় কথা বলছে।
একটার পর একটা ঝামেলার জন্য আবরারের মাথা এমনিতেই খারাপ ছিলো। তাই চিৎকার করে বলে উঠে,
– মুখ সামলে কথা বলুন। এখানে কেউই আমার পরিচিত নন। তাই বেয়া’দবি করতে দ্বিতীয় বার ভাববো না৷ ভালোয় ভালোয় বলছি আমাদের যেতে দিন।
মুহুর্তেই কয়েকটা ছেলে এসে আবরারকে লা’থি ঘু’সি মে’রে দেয়। তখনই একটা গাড়ি এসে তাদের সামনে দাড়ায়। আর একটা লোক নেমে বললো,
– কি হয়েছে, এতো ভির কেন এখানে?
একটা লোক তাকে চেয়ারম্যান বলে সম্বোধন করে, তাদের বানানো কাহিনিটা খুলে বললো।
চেয়ারম্যান বললো,
– কয়দিন আগে একটা ঘটনা ঘটেছিলো না এই জঙ্গলে? ওই যে মজিদ ভাইয়ের মেয়েটা কোন ছেলের সাথে পালিয়ে গিয়েছিলো। তারপর পর দুই দিন পর সকালে জঙ্গলে ওই মেয়েটার লা’শ পাওয়া যায়।
লোকজনের নানার কিচির মিচিরের মাঝে চেয়ারম্যান বললো,
– আজ রাতের মাঝে দুজনের বিয়ে পরিয়ে দেওয়া হবে।
আবরার এবার করুন গলায় বললো,
– প্লিজ বুঝার চেষ্টা করুন, আমরা বিপদে পরে এখানে এসেছি।
তখনই আবরারকে থামিয়ে দিয়ে বললো,
– হয়তো তুমি মেয়েটাকে আজ বিয়ে করে কালকে সকালেই এই এলাকা ছারবে, আর নয়তো দুজনকেই পু’লিশে দেওয়া হবে, জঙ্গলে ফষ্টিনষ্টি করার কারণে। এর পর দুজনের ফ্যামিলি এসে ছারিয়ে নিয়ে যাবে। আর আজকাল কার ছেলে মেয়েরা আকাম করার সময় ভাবে না৷ আর ধরা খেলে সব মিথ্যা সাজাতে থাকে।
অপর দিকে দুই হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে আছে ফারহা। চোখ বেয়ে গড়িয়ে পরছে জল। জীবনে কখনো কল্পনাও করেনি তার নামের পাশে এমন একটা কলঙ্ক যোগ হবে।
এটা খুব দ্রুতেই সারা এলাকায় ছড়াতে থাকে, দুইটা ছেলে মেয়ে জঙ্গলে আকাম করতে গিয়ে এলাকা বাসির হাতে ধরা পরেছে। তাই রাতের মাঝে দুজনকে বিয়ে করিয়ে পরদিন এলাকা ছারা করবে।
এখানে সবাই অপরিচিত। আর এমন একটা জঘন্য কলঙ্ক নিয়ে ফ্যামিলির সামনে দাড়াতে চায়না তারা কেউই। তাদের দুজনের ফ্যামিলি এসব শুনলে কখনোই নিতে পারবে না। আর ফারদিন তো তার বেষ্ট ফ্রেন্ড। আর সে নিজে একজন ভার্সিটির টিচার। এমন একটা মিথ্যা কলঙ্ক নিয়ে কিভাবে সবার সামনে দাড়াবে দুজন?
রাত তখন ১২ টা। দুজনকেই একটা বাড়িতে নিয়ে বিয়ে পরিয়ে দিলো সবাই। তারপর রাতে এখানে থাকতে দিলো আর বললো, ভোর হতেই এলাকা ছারবে দুজন।
আবরারের চোখ দুটু রক্তিম লাল হয়ে আছে। মাথাটা দুই হাতে চেপে ধরে শক্ত হয়ে বসে আছে সে। একটু পর পর বড় বড় নিশ্বাস নিচ্ছে। শেষ পর্যন্ত নিজের ছাত্রী ও বন্ধুর বোনের সাথে এমন একটা কলঙ্কে জড়িয়ে তাকেই বিয়ে করতে হলো? ফারদিনের সামনেই বা কিভাবে দাড়াবে সে?
আর অন্য পাশে বিছানার এক কোনে বসে বসে কাঁন্না করছে ফারহা। তার ফ্যামিলি তাকে কত বিশ্বাস করতো। বাবা তো সব সময় বলতো, আমার ফারু কখনো আমার কথার বাইরে কিছু করবে না।
আর মা তো বলেই দিলো তাদের সম্মান নষ্ট হবে এমন কিছু করলে, আর তাদের সিদ্ধান্তের বাইরে কিছু করলে ডিরেক্ট তে’জ্য মেয়ে করে দিবে।
বাবা ও ভাইয়ের বিশ্বাসের মর্যাদা দিতে পারেনি সে। তাই বিছানার এক কোনে বসে ডুকরে কেঁদে উঠে ফারহা।
To be continue……
~ গল্পটা ক্লিয়ার হতে অনেক সময় লেগেছে। এবার হয়তো গল্পের নামের সাথে গল্পটা মিল পাবে সকলে। যারা বুঝেন নি, তারা একটা গানের মাধ্যমেই বুঝে নিন।
‘চাই ছুটে যাই, দুরে কোথাও পালাই,,,
‘তোমার ছায়া’ থেকে সরে যেতে চাই,,,,,,