#তোমার_ছায়া (পর্ব ২)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
ফারহা কে একটু আগে করা অপমান যেনো মুহুর্তেই ভুলে গেলো আবরার। মেহেদী পরানোর জন্য হাত বাড়িয়ে দিলো ফারহার দিকে। কিন্তু ফারহা ভুলেনি কিছুই। মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে রইলো।
আয়রিন ফারহার কাধে আলতো ধাক্কা দিয়ে বললো,
– কিরে, কোন ধ্যানে আছিস? সেম আমার ডিজাইনটা ভাইয়াকেও এঁকে দিবি।
নিরুপায় হয়ে মনে মনে আয়রিনের গোষ্টি উদ্ধার করতে করতে এক হাতে আবরারের হাতটা ধরে অন্য হাতে মেহেদী আঁকা শুরু করলো ফারহা।
আঁকার সময় আয়রিন তাদের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলে,
– খুব মানাবে দুজনকে।
ফারহা মাথা তুলে আয়রিনের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকায়। মান ইজ্জত যেই টুকু আছে ওটাও খাবে নাকি এই মেয়ে?
ফারহার এমন লুক দেখে আয়রিন হেসে বললো,
– আরে আমি তো ভাইয়ার আর আমার দুজনের মেহেদীর ডিজাইনের কথা বলছি। খুব মানাবে ভাইয়ার আর আমার মেহেদী ডিজাইন।
ফারহা নিজের বোকামিতে একটু লজ্জা পেলেও তা প্রকাশ করলো না। চুপচাপ বললো,
– ওহ্।
,
,
ফারহার ভাই ফারদিন। ফারহার আর সে একসাথেই এসেছিলো। ফারদিনকে সন্ধা থেকে দেখা গেলেও এখন রাতে হলুদ লাগানোর মুহুর্তে কোথাও সে নেই। ফারহা এদিক সেদিক খুজে ফারদিনকে না পেয়ে ফোন দিলো।
দুইবার রিং হতেই ফোন রিসিভ করে ফারদিন। ফারহা বলে উঠে,
– সবাই এখানে তোমাকে খুজছে আর তুমি কোথায় গেলে ভাইয়া? আর আবরার ভাইয়া ফোন দিচ্ছে তুমি ফোন ধরছো না কেন?
ওপাশ থেকে শান্ত গলায় উত্তর এলো,
– ভালো লাগছে নারে ফারু, তাই বাসায় চলে এসেছি।
– মানে কি, তুমি বাড়ি চলে গেলে?
– হুম ভালো লাগছিলো না তাই কাউকে বলে আসারও ধৈর্য পাই নি। তোরা ইনজয় কর, আনার ভালো লাগছে না, ঘুমাবো বায়।
ফারদিনের কথার আগা মাথা কিছুই বুঝলো না ফারহা। ফোন রেখে আয়রিনের কাছে এসে দেখে সবাই আয়রিনকে হলুদ লাগাচ্ছে। ফারহা গিয়ে লাগাতেই আয়রিনও তাকে লাগিয়ে দিলো। ফারহা একটু অবাক হয়ে বললো,
– আমাকে লাগাচ্ছিস কেন?
পাশ থেকে সাথি বললো,
– হলুদ লাগিয়ে দিলে তারাতারি বিয়ে হয়। আয়রিন তো আবরার স্যারকেও হলুদ লাগিয়ে দিয়েছে।
ফারহা একটু অবাক হয়ে বললো,
– এসব কি আয়রিন?
আয়রিন একটু হেসে বললো,
– তেমন কিছু না, তোর আর ভাইয়ার বিয়েটা যেন তারাতারি হয়ে যায় তাই। হিহিহি।
ফারহা লাফ দেওয়া কথার মতো বলে উঠলো,
– জীবনেও না, তোর ভাইয়ের মতো ঘার ত্যারাকে আমি তো দুরে থাক, জীবনেও কোনো মেয়ে বিয়ে করবে না।
তখনই সাথির ইশারায় ফারহা পেছন ফিরে আবরার কে দেখে একটা শুকলো ঢোক নিলো।
,
,
সারা মুখে হলুদ মাখায় নাজেহাল অবস্থা। ভেতরে গিয়ে ওয়াশ রুমে মুখ ধুয়ে নিলো ফারহা। বের হতেই ওয়াশ রুমের সামনে সাদাফকে দেখে থমকে যায় সে।
পাশ কাটিয়ে চলে আসতে চাইলে সাদাফ দেওয়ালে এক হাত দিয়ে পথ আটকে দাড়ায়। ফারহা একটু রাগি লুক নিয়ে বলে,
– পথ ছারুন আমার।
সাদাফ বললো,
– হুম ছারবো, ধরে রাখতে আসিনি। অনেক দিন পর দেখছি তোমায়। কেমন আছো?
ফারহার অস্বস্থি লাগছে খুব। বিরক্তি নিয়ে বললো,
– হুম ভালো,, পথ ছারুন আমার।
সাদাফ আরো ভালো করে আটকিয়ে বললো,
– সেদিন কিভাবে পারলে দুই বছরের সম্পর্ক শেষ করে দিতে।
রাগে ফারহার শরির কাঁপছে। তবুও নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে বললো,
– আমি চাইনি, আপনিই বাধ্য করেছেন আমায়।
– এই তোমার ভালোবাসা?
– আপনার ভালোবাসাও কতোটা শুদ্ধ ছিলো তা তো তখনই প্রমান করে দিয়েছেন। আর এই বিষয়ে আমি কোনো কথা বলতে ইচ্ছুক নই,,,,
বলেই সাদাফের হাত ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে সেখান থেকে হাটা ধরে ফারহা। সাদাফ সোজা হয়ে দাড়িয়ে তাকিয়ে থাকে ফারহার চলে যাওয়ার দিকে। হলুদ শাড়িতে খুব মানিয়েছে মেয়েটাকে। তার সুন্দর্যের সাথে শাড়িটা পুরোপুটি মিশে গেলো। আচ্ছা ব্রেকআপের পর প্রাক্তনকে এতো সুন্দর লাগে কেন?
অনুষ্ঠান শেষ হতে প্রায় রাত ২ টা বেজে গেলো। শেষ রাতে এসেও বান্ধবিদের জ্বালায় ঘুমাতে পারছে না ফারহা। চারজন একসাথে আছে মানেই তাদের আলোচনা বিশ্বের বড় বড় গবেষনাগারকেও হার মানাবে। উপায় না পেয়ে ফারহা একটা বালিশ নিয়ে সোফায় গিয়ে শুয়ে পরলো। এবার একটু ঘুমাতে পারলেই হয়।
,
,
সকালে ঘুম কাতুর চোখে হাত দিয়ে চোখ কঁচলাচ্ছে ফারহা। ভোরের আলো ফুটে উঠেছে। রুমের বাইরে কয়েকজন চা নাস্তা নিয়ো দৌড়াদৌড়ি করছে। বাকিরা হয়তো এখনো ঘুম থেকে উঠেনি। আয়রিন, সাথি, সুমাইয়া সবাই এখনো ঘুমাচ্ছে। তিনজন মিলে সারা রাত রুমটা একবার উল্টো করেছে আরেকবার পাল্টা করেছে। এমন অবস্থা করেছিলো তিনজন মিলে।
শেষ রাতে ঘুমিয়ে এখন মরার মতো পরে আছে।
ফারহা আরো কিছুক্ষন চোখ বন্ধ করে রইলো। না, ঘুম আসছে না আর। রুম থেকে বেড়িয়ে বাইরে এলো। ফারহাকে দেখে লতা রহমান এগিয়ে এসে বলে,
– ফ্রেশ হয়েছো?
ফারহা দুই দিকে মাথা নাড়ায়। লতা রহমান আবার বলে,
– ওয়াশ রুমে গেলে এক পাশে টুথ পাউডার পাবে। ফ্রেশ হয়ে নাও, আমি নাস্তা তৈরি করছি। আর বাকিদেরও ডেকে দিও।
ফারহা লক্ষি মেয়ের মতো ঘুমু ঘুমু চোখে এক পাশে মাথা কাত করে হ্যা সূচক সম্মতি জানালো।
শাক/চুন্নি গুলো যেই মরার মতো ঘুমাচ্ছে, মনে হয়না ডাকলে উঠবে এখন। তাই ফারহা হাটতে হাটতে ছাদে চলে গেলো। দেখে আবরার আগে থেকেই ছাদে হাটাহাটি করছে।
আবরারকে দেখে নেমে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই ডাক দেয় আবরার। ফারহা দাড়িয়ে পেছন ফিরে তাকালো। আবরার তার কাছে এসে শান্ত ভাবে বললো,
– সরি।
ফারহা একটু ভ্রু-কুচকে বললো,
– সরি কেন?
আবরার শান্ত ভাবে বললো,
– কালকের ব্যবহারের জন্য।
– ইটস ওকে। আমি কিছু মনে করিনি। আমি জানতাম না, আপনার রুমে বাইরের কেউ প্রবেশ করা টা আপনি পছন্দ করেন না।
আবরার আর কিছু না বলে অন্য দিকে তাকিয়ে রইলো। ফারহা আবার বললো,
– আচ্ছা ওই ছেলেটা আপনার কি হয়?
আবরার বললো,
– কোন ছেলেটা?
– ওই যে, একটু ফর্সা করে লম্বা, ব্লু শার্ট পরেছিলো কালকে দেখলাম।
– ওহ্ সাদাফের কথা বলছো? আমার বাবার বন্ধুর ছেলে। কেন, কি করেছে সে?
– না কিছু না এমনি।
বলেই নিচে চলে আসলো ফারহা। রুমে এসে বাকি বান্ধবিদের টেনে তুললো। ৯ টা বাজে, এখনো পরে পরে ঘুমাচ্ছে।
,
,
আবরারের অনেক ফোনের কারণে দুপুরে বর পক্ষ আসার একটু আগে আসলো ফারদিন। ফারহা এগিয়ে গিয়ে বললো,
– এতোক্ষনে এলে কেন ভাইয়া? কোনো সমস্যা? আর কালকে এভাবে ফোন কেটে দিলে কেন?
প্রশ্ন গুলোয় একটু বিরক্তি নিয়ে ফারদিন বললো,
– এতো কথা বলিস না তো, ভালো লাগছে না।
বলেই সামনের দিকে চলে গেলো। হা হয়ে তাকিয়ে আছে ফারহা। ভাইয়া তো তার সাথে এভাবে কথা বলে না। কাল থেকে ভাইয়ার কি হলো হটাৎ।
,
,
সামাজিক ভাবেই বিয়েটা শেষ হলো। আয়রিন কে বিদায় দিচ্ছে সবাই। গত কাল থেকে হাসিখুশি মেয়েটাও এখন কাঁদছে সবাইকে ধরে। আমারও খুব খারাপ লাগছিলো। আমাকেও হয়তো একদিন এমন একটা যায়গায় এসে দাড়াতে হবে।
সাদাফকে গত কাল রাতে দেখেছিলো সে। আর বিয়ের আগে দুপুর বেলায় এসেছে। ফারহার সাথে কথা বলতে চেয়েছিলো বার বার। বাট সুজুগ পায়নি দেখে হয়তো হয় নি।
আয়রিনকে বিদায় দিয়ে ফারদিনকে খুজতে লাগলো ফারহা। ভাইয়ের মতিগতি ভালো লাগছে না তার কাছে।
দেখে সবার বিপরিত পাশে একা দাড়িয়ে আছে সে। ফারহা গিয়ে পেছন থেকে কাধে হাত রাখতেই চমকে উঠে চোখের পানি মুছে নের ফারদিন। ফারহার দিকে চেয়ে একটু হাসলো। ফারহা বললো,
– কাঁদছো কেন ভাইয়া?
– কই না তো।
– আমার কাছে লুকানোর চেষ্টা করেও লাভ হবে না ভাইয়া। কাঁদছো কিনা ওটা জিজ্ঞেস করিনি, কেন কাঁদছো তা জিজ্ঞেস করেছি।
ফারদিন একটু হেসে ফারহার গালে হাত রেখে বললো,
– একদিন আমার বোনটাকেও এভাবে বিদায় দিয়ে দিতে হবে তাই না রে?
To be continue……