#তোমার_ছায়া (পর্ব ২০)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
মাহিন তার দ্বিতীয় স্ত্রী নিয়ে কোনো সংকোচ ছারাই বাসায় প্রবেশ করলো। আয়রিন এখনো দরজার পাশে স্তব্দ হয়ে দাড়িয়ে আছে। কিছুই যেন বুঝে উঠতে পারছে না সে।
মুহুর্তেই তার মা সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসছে। আর হা করে তাকিয়ে আছে মাহিন ও পাশে দাড়িয়ে থাকা মেয়েটার দিকে। অবাক দৃষ্টিতে এক হাতে মেয়েটার দিকে ইশাকা করে বললো,
– মেয়েটা কে?
মাহিন কোনো সংকোচ ছারাই বললো,
– আমার স্ত্রী। তোমাদের বৌ মা।
মা একটু রেগে বললো,
– এসব কোন ধরনের ফাজলামু মাহিন? বৌ মানে? নিজের বিয়ে করা বৌ এর সামনে দাড়িয়ে আরেকটা মেয়েকে বৌ হিসেবে পরিচয় দিতে তোর একটুও লজ্জা লাগছে না?
মাহিন সোজাসুজি ভাবে বললো,
– বিয়ে করা স্ত্রী’কে স্ত্রী বলে পরিচয় দেওয়াতে তো আমি লজ্জার কিছু দেখছি না।
মা ঠাস করে একটা চ’র বসিয়ে দিয়ে বললো,
– কেন করলি এমন টা? ঘরে বৌ রেখে অন্য একটা মেয়েকে কিভাবে বিয়ে করে আনলি তুই?
মাহিন পুনরায় মাথা উঠিয়ে বললো,
– আমার লাইফ তোমাদের কথায় অনেক চলেছে। বাট, আর না। মাই লাইফ, মাই রুল্স।
বলেই নতুন বৌকে নিয়ে রুমের দিকে চলে গেলো মাহিন। আয়রিন এবার একটা শ্বাস নিয়ে স্ট্রং হয়ে দাড়ালো। মনে কিছু সাহস সঞ্চয় করে দৌড়ে রুমের সামনে গিয়ে দুজনের পথ আটকে দারালো। আর মাহিনের দিকে চেয়ে বললো,
– আপনি চাইলেই যা ইচ্ছে তাই করতে পারেন না।
মাহিন রাগ ও বিরক্তিতে বললো,
– মাথা এমনিতেই অনেক গরম হয়ে আছে। তাই অজথা সামনে এসে নিজের বিপদ টেনে আনবে না একধম। আর তোমাকে আমি আগেই বলেছি, এই বাড়িতে বৌ হয়ে থাকতে পারবে। বাট কখনো বৌ এর অধিকার চাইতে আসবে না।
– আপনি বললেই হলো নাকি? তাহলে বিয়ে করেছেন কেন আমাকে? দেখেন মাহিন, আমি কোনো ভাবেই আপনাকে অন্য একটা মেয়ে নিয়ে রুমে ঢুকতে দিবো না।
আর কিছু না বলে ঠাস করে একটা চ’র বসিয়ে দেয় আয়রিনের গালে। এর পর বৌ নিয়ে সোজা রুমে প্রবেশ করে মাহিন।
আয়রিন গালে হাত দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
– এসব কি হচ্ছে মা? ওকে কিছু বলুন না। কেন ঘরের মাঝে সতিন নিয়ে আসলো সে? প্লিজ মা, ওকে কিছু বলুন না।
মাথায় হাত দিয়ে ড্রয়িং রুমে সোফায় বসে আছে মাহিনের মা। আর এক পাশে বসে কাঁন্না করছে আয়রিন। মাহিন রুম থেকে বের হলে আয়রিন ছুটে গিয়ে মাহিনের সামনে দাড়িয়ে বললো,
– বলুন না, আপনি কি সত্যি সত্যিই বিয়ে করেছেন? নাকি কোনো প্র্যাঙ্ক করছেন? দেখুন আমি কোনো ভাবেই অন্য কোনো মেয়েকে আপনার সাথে সহ্য করতে পারবো না।
মাহিনের সোজা উত্তর,
– আমি কেন প্র্যাঙ্ক করতে যাবো?ওর সাথে আমার চার বছরের রিলেশন, আর এখন তাকে বিয়ে করে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়েছি।
– তাহলে আমি কে? কেন বিয়ে করেছেন আমায়? বলুন কেন বিয়ে করেছিলেন আমারয়?
– বাবা মায়ের চাপে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছিলাম। আর তখন জানতাম না যে মাহি প্র্যাগনেট ছিলো। বিয়ের দিন রাতে জানতে পারি আমি, যে মাহি প্র্যাগনেট। তার পর থেকে যেন সব এলোমেলো লাগছিলো। পারিনি তোমাকে কিছু বলতে, আর পারিনি মাহিকে প্রত্যাক্ষান করতে। তো আমি কি করবো বলো? ওর জীবনটা এভাবে নষ্ট করে দিতে চাইনি আমি। তাই স্ত্রীর অধিকার দিয়ে দিলাম।
– আর আমার জীবনটা কি জীবন না? আমার জীবনটা কেন নষ্ট করলেন? দেখেন মাহিন, আমাকে যতটা ভালো দেখছেন আমি মোটেও এতোটা ভালো মেয়ে না। মে’রে ফেলবো ওই মেয়েকে, তবুও আমার স্বামীর ভাগ কাউকে দিবো না আমি।
মাহিন এবার লাগাতার কয়েকটা চ’র দিয়ে আয়রিনের চুল চেপে ধরে বলে,
– খুব পাখনা গজিয়েছে না? ছোট লো’কের বাচ্চা। কবুতরের খোপের মতো বাসা থেকে এমন রাজপ্রসাদে পা দিয়েই সাহসটা আকাশ ছুয়েছে? বেশি তিড়িংবিরিং করবি তো একধম পাখনা দুটি কে’টে মাটিতে ফেলে রেখে দিবো। ছোট লো’কের বাচ্চা।
বলেই আয়রিনের চুল ছেরে হাটা ধরে মাহিন। আয়রিন রাগে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
– একটাকেও ছা’রবো না আমি। আপনাদের স্বামী-স্ত্রী দুজনকেই উচিৎ শিক্ষা দিয়ে ছা’রবো আমি। সেই বিয়ের পর থেকে অনেক অপমান সহ্য করেছি। কাউকে কিছু বুঝতে দিই নি। আর না, আমার বাবা ভাইকে এক্ষুনি জানাচ্ছি সব কিছু। একটাও শান্তিতে থাকতে পারবি না। সব কিছু এলোমেলো করে দিবো আমি।
শান্ত আয়রিন কে যেন আজ খুবই হিংস্র দেখাচ্ছে। আসলে অনেক মানুষই এমন। নিজের প্রিয় মানুষটার সাথে অন্য কাউকে কখনোই সহ্য করতে পারে না।
,
,
– আর কতো দিন এভাবে থাকবে বাবা? জানো ফোন দিলে ফারহা ইদানিং খুব কাঁন্নাকাটি করে। আর তারও তো কোনো দোষ ছিলো না। ফারহা কখনোই তোমাদের কথার বাইরে কিছু করতো না। একটা এক্সিডেন্টের মতো ঘটে গেছে বিষয় টা। হয়তো আল্লাহ্ তাদেরকে এক করেই পাঠিয়েছে। আমরা তো চাইলে কপালের লিখন পরিবর্তন করতে পারি না তাই না? দেখবে ওরা খুবই সুখে থাকবে। মেনে নাও না বাবা। ফারহা প্রতিদিন কাঁন্না করে, শুধু একবার তোমাদের সাথে কথা বলার জন্য। তামাদের পায়ে ধরে ক্ষমা চাওয়ার জন্য।
ফারদিনের কথায় বাবা বসা থেকে উঠে বললো,
– ওর কথা আমি শুনতেও ইচ্ছুক না। নেক্সট টাইম কখনো ওর জন্য কিছু বলতে আসবি না। সবাই যার যার মতো ভালো থাক।
বলেই চলে গেলো বাবা। ফারদিন মায়ের দিকে করুন চোখে চেকে বললো,
– মা,,,,
মা ও চলে গেলো উঠে। নিরুপায় ফারদিন নিশ্চুপ হয়ে বসে রইলো কিছুক্ষন। আর তখনই আবরারের ফোন পেয়ে রিসিভ করে কথা বলে সে।
মাকে ডেকে দরজা বন্ধ করতে বলে বেড়িয়ে পরে সে। মা কয়েক বার ডাক দিলেও কিছু বললো না ফারদিন। রাত বাজে তখন ১১ টা।
,
,
অনেক রাত হয়ে যাওয়ায় মাহিনদের বাসায় যায় নি কেউ। আয়রিনকে বললো, কোনো রকম আজকের রাতটা পার করতে। কাল সকালেই আসছে তারা।
পর দিন সকালে রওয়া দেয় আবরার, তার বাবা ও ফারদিন। মেয়ের এমন খবর শুনে বসে বসে কাঁন্না করছে মা। ফারহা শাশুড়ি মায়ের পাশে বসে তাকে শান্ত রাখার চেষ্টা করছে।
ওই বাড়িতে যেতে যেতে সকাল পার হয়ে যায়। মাহিনও আজ বাড়িতেই ছিলো। ওখানে যাওয়ার পর অনেক সিনক্রিয়েট হয়ে যায় তাদের মাঝে।
মাহিন রুম গিয়ে অনেক গুলো টাকা এনে আবরারের গায়ে ছুড়ে মে’রে বলে,
– এই নিন, আপনাদের মেয়ের কাবিনের টাকা।
আবরারের দিকে এভাবে টাকা ছুড়ে মারা মাত্রই ফারদিন মাহিনের বুক বরাবর লা’থি মেরে বললো,
– শু** বাচ্চা, টাকার গরম দেখাচ্ছিস? তোর কি ধারণা টাকা দিয়েই সব হয়ে যায়। একটা মেয়ের জীবন নষ্ট করে টাকা দিয়ে সব কিছু উড়িয়ে ফেলতে চাইছিস? বেশি বড়লোকি দেখাতে আসবি, একেবারে ফে’রে ফেলবো। শু** বাচ্চা।
লা’থি খেয়ে অনেকটা দুড়ে ছিটকে করে মাহিন। পাশ থেকে ওখানের দুইটা লোক এসে ফারদিনকে ধরে আটকানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু আজ যেন ফারদিনের দু’চোখ জুড়ে আগুন ঝড়ছে। কারণ পাশেই আয়রিনোর কান্না ভেজা মুখ দেখলে সব কিছু এলোমেলো লাগতে শুরু হলো তার।
আবরার নিজেও আজ ফারদিনকে আটকে রাখতে কষ্ট হচ্ছে। এমনই আচরণ করছে ফারদিন।
এসবের মাঝে, ওখাবে কয়েকজন মানুষ এসব থামিয়ে বললো,
– দয়া করে এমন বিশৃঙ্খলা না করে ঠান্ডা মাথায় কথা বলি সবাই। এতে একটা সমাধান খুজে পাবেন। এমন বিশৃঙ্খলা করলে শুধু ঝামেলাই বাড়বে।
,
,
আয়রিনকে নিয়ে চলে এলো সবাই। কারণ জোর করে কিছু করলেও ওই বাড়িতে আয়রিন কখনোই সুখি হতে পারবে না।
বাসায় আসার পর থেকে ফারহাকে ধরে অনেক্ষন কাঁদলো আয়রিন।
– আমার সাথেই কেন এমনটা হতে হলো, বলতে পারবি ফারহা?
আয়রিনকে জড়িয়ে ধরে ফারহা বললো,
– কষ্ট পাবি না একধম। আল্লাহ্ যা করে ভালোর জন্যই করে। আর লাইফে পার্ফেক্ট কাউকে পেলেও অনেক সময় সুখ কপালে থাকে না। এমন কাউকে বেছে নিতে হয় যে সারা জীবন তোর ছায়ার মতো তোর পাশে থাকবে।
– আমার লাইফে কেন এমন একটা মানুষ এলো না। কেন আমার সাথেই এমনটা হতে হলো?
– হয়তো তোর লাইফেও এমন কেউ আসবে যে তোকে সারা জীবন আগলে রাখবে। তোর ছায়া হয়ে তোর সাথে থাকবে সারা জীবন।
আয়রিন আর কিছু না বলে নিশ্চুপ হয়ে কাঁদছে।
,
,
আজ আর বাসায় গেলো না ফারদিন। কারণ এখানে সবই অস্বাভাবিক। কেউই স্বাভাবিক নেই। তাই রাতেও এই বাড়িতেই থাকছে আজ।
রাত তখন গভির। ঘুম আসছে না ফারদিনের। চোখ বন্ধ করে অনেক্ষন শুয়ে থাকার পরও ঘুম আসছে না। কেন যেন এক অজানা কারণে বুকের ভেতর টা টিপ টিপ করছে।
ঘড়ির কাটা তখন রাত ২ টা পেরিয়েছে। রুমের সামনে দিয়ে ছায়া র মতো কিছু চোখে পরতেই উঠে বসে যায় সে। দরজা খোলা থাকায় দেখতে পায় এখনই রুমের সামনে দিয়ে কে যেন হেটে গেলো।
ফারদিনও চুপচাপ রুম থেকে বেড়িয়ে আসে। দেখে ছাদের সিঁড়ি বেচে উপরে উঠে গেলো সে। ফারদিনও দেড়ি না করে ছাদের দিকে হাটা ধরে।
ছাদে আসতেই চাঁদের আলোয় দেখতে পায় আয়রিন ছাদের এক পাশে খুব কিনারায় উঠে দাড়িয়ে আছে। অশ্রু শিক্ত চোখ মুছে কিছুক্ষন আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো সে। চোখ বন্ধ করে নিজের সব ভার নিচের দিকে ছেড়ে দিতেই খেয়াল করে সে হাওয়ায় ভাসছে। কেউ একজন এক হাতে তার কোমড় জড়িয়ে বিড়াল ছানার মতো ছো মেরে কোলে তুলে নিয়েছে। অবাকের চরম সীমানায় আয়রিন। খুব অবাক সে। এই অসময়ে আবার কে এলো?
To be continue……