#তোমার_ছায়া (পর্ব ৬)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
আবরার স্যার আমার প্রেম পত্র দিয়েছে। এটাও কি সম্ভব? নিজেরি বিশ্বাস হচ্ছে না আজ। তার মতো একটা মানুষের সাথে প্রেম পত্র শব্দটা কিছুতেই মিলছে না৷ তাহলে কি স্যারও আমার সত্যিই পছন্দ করে?
টেবিলে শোয়ার মতো করে বেগে মাথা রেখে মুখ লুকিয়ে এসব ভাবছে ফারহা। চিঠি আর ফুল দুটুই বেগের মাঝে খুব যত্ন করে লুকিয়ে রেখেছে।
তার এখন কি করা উচিৎ? চিঠির উত্তর দিবে নাকি চুপচাপ বসে থাকাই ভালো হবে। না, উত্তর না দিলে যদি স্যার রাগ করে? এর চেয়ে ভালো উত্তর দেওয়াটাই ঠিক হবে। যা হওয়ার তা পরে দেখা যাবে।
ক্লাসের ফাকে লুকিয়ে খাতার মাঝে একটা লেখা লিখলো সে।
‘অন্যের চোখের দৃষ্টিতে নিজে আহত হয়েছেন ভালো কথা, তাই বলে এভাবে হুটহাট চিঠি লিখে আরেক জনের হৃদপিণ্ডে আঘাত করাটা কিন্তু অন্যায়, ভিষন অন্যায়। ‘
এর পর আর ক্লাসে মোটেও মন বসেনি তার। ছুটির পর একে একে সব চলে যেতে লাগলো সবাই। ক্লাস খালি হতেই লিখা টা ওই টেবিলে রেখে চলে গেলো সে। সোজা হেটে গেটের বাইরে, পেছন ফিরেও তাকালো না।
বাসায় আসার পর থেকেই অস্থিরতা ভাবটা ধিরে ধিরে বাড়তে লাগলো তার।
পর দিন কলেজে আসলে, সেই একই ভাবে আরেকটা চিঠি পায় সে।
‘ সত্যিই তো, এই মারাত্মক অন্যায়ের কি শাস্তি হওয়া উচিৎ বলো তো। আচ্ছা যাই হোক, তুমি সেই শাস্তিটা নিজ হাতে দিও।’
একটু হাসলো ফারহা। এই লোকটার চলাফেরার সাথে চিঠির ভাষা গুলো একধমই বেমানান।
আজ আর কিছু লিখলো না ফারহা। বাড়িতে আসার পর থেকে রুমে বসে আছে চুপচাপ। আবরারের কথা ভাবতেই বার বার হাসি পায় তার। এমন লাগছে কেন তার? অদ্ভুত। কাল শুক্রবার, কলেজ বন্ধ। একদিন আর দেখা হবে না তাদের। সেটা ভেবেও মনটা খারাপ হয়ে উঠে।
,
,
বাসায় সবাই স্বাভাবিক ভালো চললেও মাহিন প্রয়োজন ছারা তেমন একটা কথা বলে না আয়রিনের সাথে। তার সব কিছুতেই যেন একটা বিরক্তির ছাপ লক্ষ করে আয়রিন।
আর দুই দিন পরই মাহিনের ফ্লাইট। রুমে বসে লেপটপে কাজ করছিলো সে। আয়রিন তার কাছে এসে বললো,
– আপনাকে কিছু বলার ছিলো।
মাহিন কাজ করতে করতে বললো,
– হুম বলো,
– আমি আমার বাবার বাসায় থাকতে চাই। এখানে ভালো লাগছে না আমার।
মাহিন এখনও কাজ করতে করতে বললো,
– আচ্ছা কাপর চোপর গুছিয়ে রাখবেন। কাল সকালে যাবেন।
আয়রিন কিছু বলতে যাবে, তার আগেই মাহিন তাকে থামিয়ে দিয়ে বললো,
– বলছি তো আপনার যেমনটা ইচ্ছা সেভাবেই চলতে পারো, বাবা মাকে আমিই ম্যানেজ করে নিবো।
আয়রিন আর কিছু না বলে চুপচাপ চলে গেলো সেখান থেকে।
সে ভালোই বুঝতে পারছে যে মাহিন তাকে দু’পয়সার ও মুল্য দিচ্ছে না৷
মেয়েদের নাকি দুইটা জীবন। একটা বাবার বাড়ি আরেকটা নাকি স্বামীর বাড়ি। বাট এখন তার মাখে মনে হচ্ছে তার বাবার আশ্রয়ই তার কাছে সবচেয়ে শান্তির ও নিরাপদ আশ্রয়। বাকি সব মিথ্যা।
,
,
আজ শনিবার। কলেজে আগে আগেই এসেছে ফারহা। চুপচাপ এক পাশে বসে আছে আর গেটের দিকে তাকাচ্ছে, কখন আবরার কলেজে আসবে। আজ এই বেটাকে সামনে থেকেই ধরবো। দেখি তার রি-একশান কেমন হয়?
বেশ কিছুক্ষন পর অপেক্ষার পর কলেজ গেট দিয়ে প্রবেশ করলো আবরার। ফারহা হাস্যজ্জল মুখে চার দিকে তাকিয়ে আবরারের সামনে গিয়ে দাড়ালো। আবরারের দিকে এক হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
– লুকিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন নেই, সরাসরিই দিন।
আবরার একটু অবাক ভঙ্গিতে বললো,
– মানে?
ফারহা সোজাসুজি ভাবেই বললো,
– ঢং করা লাগবে না, আমি সব জানি। যাই হোক, আসল কথা হলো, লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করতে আমার ভালো লাগে না। তাই যা দেওয়ার সরাসরিই দিবেন৷
আবরার এবার রেগে বললো,
– সাজ সকালে ফাজলামি করছো আমার সাথে?
ফারহাও এবার একটি রেগে চিঠি গুলো বের করে বললো,
– এ্যাক্টিন ভালো লাগলেও ওভার এ্যাক্টিন কখনোই ভালো লাগে না। তাহলে এই চিঠি গুলো কেন দিয়েছেন, হুম?
আবরার এবার একটু স্বাভাবিক হয়ে চিঠি গুলো হাতে নিয়ে চোখ বুলাতে লাগলো। এর পর আর কিছু না বলে চুপচাপ চিঠি গুলো নিয়েই চলে গেলো সেখান থেকে।
ফারহা এখনো বেকুবের মতো দাড়িয়ে আছে হা করে। কি হচ্ছে সব যেন মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে তার। আবরারের এমন নিরবতায়ও যেন বিপদের পূর্বাভাস। নিজেকে নিজে প্রশ্ন করতে লাগলো,
– একটু বেশিই করে ফেলেছিস নাকি ফারহা। তোকে দিয়ে কখনোই ঠিক কাজ টা হয় না। যেখানে যাস, সেখানেই একটা গন্ডোগোল পাকিয়ে ফেলিস।
ক্লাস শুরু হওয়ার পরও বিষয়টা নিয়ে ভাবতে লাগলো। পাশ থেকে সাথি ধাক্কা দিয়ে বললো,
– কি রে এমন ভাব নিয়ে বসে আছিস কেন? কারো সাথে কোনো কথাই বলছিস না?
ফারহা সাত পাঁচ না ভেবে চুপু চুপি সব কিছু বলেই দিলো তাদের। সব শুনেই অবাক ভঙ্গিতে মুখে হাত দিলো সাথি ও আয়রিন দুজনই। সাথি বললো,
– বলিস কি? আবরার স্যার তোকে প্রেম পত্র দিয়েছে?
ফারহা চুপ করতে বলে চার পাশে তাকালো, কেউ শুনে ফেলেছে নাকি দেখতে। এবার সাথি চুপিচুপি বললো,
– সত্যি?
ফারহা মাথা নিচু করে বললো,
– হুম,,,
আয়রিন পাশ থেকে বললো,
– তাই তো তোকে আমি আগে থেকেই ভাবি ডাকি।
সাথি আবার বললো,
– তার মানে তুইও সব জানতি?
– না তবে কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পেরেছি ওদের চক্কর।
তখনই ক্লাস টিচার লেকচার বন্ধ করে বললো,
– হেই, এটা কথা বলার জায়গা নয়।
তখনই ক্লাসে প্রবেশ করে শাকিল ভাইয়া। হাতে একটা নোটিস নিয়ে স্যারের হাতে দিলো। স্যার তা পড়ে ফারহার দিকে তাকিয়ে বললো,
– স্ট্যান্ড আপ।
ফারহা দাড়ালো। স্যার আবার বললো,
– তোমাকে প্রেন্সিপাল স্যার অফিস কক্ষে ডাকছে ।
ভয়ে এবার যেন বুকটা শুকিয়ে আসলো ফারহার। কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না। সব তো ঠিকঠাকই আছে, তাহলে আবার অফিসে ডাকার কি দরকার ছিলো।
ভাবতে ভাবতেই অফিস কক্ষে গিয়ে দেখে ফাস্ট ইয়ারের একটা জুনিয়র ছেলেও দাড়িয়ে আছে ওখানে। ফারহা স্যারের অনুমতি নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে বললো,
– ডেকেছিলেন স্যার?
প্রেন্সিপাল স্যার কোনো উত্তর না দিয়ে ছেলেটার দিকে চেয়ে বললো,
– তোমার নাম আবরার হাসান তাই তো?
ছেলেটা মাথা নিচু করে বললো,
– জ্বি স্যার।
– তোমার সিনিয়র আপু কে প্রেম পত্র দিয়েছো কেন তুমি?
ছেলেটা আবারও বললো,
– আপুকে আমার খুব ভালো লাগে স্যার। তাই দিয়েছিলাম।
স্যার বললো,
– ভালো লাগাটাই স্বাভাবিক, কিন্তু চিঠি দেওয়ার আগে এটা ভাবা উচিৎ ছিলো যে, সে তোমার কলেজের সিনিয়র আপু।
ছেলেটা এবার একটু মুচকি হেসে বললো,
– সিনিয়র আপু দেখেই তো বেশি ভালো লাগে স্যার। আর সেও তো আমাকে ভালোবাসে।
ফারহা বেকুবের মতো একবার জুনিয়র আবরারের দিকে তাকাচ্ছে আরেকবার পাশে বসে থাকা আবরার স্যারের দিকে তাকাচ্ছে। পরিস্থিতি এবার একটু হলেও বুঝতে পেরে চট করে বললো,
– মিথ্যে কথা, ওর মতো পিচ্চি ছেলেকে আমি ভালোবাসতে যাবো কোন দুঃখে? ও তো আমার ছোট ভাইয়ের মতোই।
ছেলেটাও চট করে বললো,
– স্যার ও ভয়ে এখন মিথ্যা বলছে। সে ও যে আমায় ভালোবাসে তার প্রমান আছে আমার কাছে।
স্যার ভ্রু-কুচকে বললো,
– কি প্রমান?
– স্যার সে ও আমায় চিঠি দিতো। সেগুলো আমার কাছেও আছে। স্যার ও খুব ভয় পাচ্ছে, ওকে কিছু বলবেন না প্লিজ। মা/রলে ওর মা/র গুলোও আমাকে দিবেন স্যার। নাহলে সে খুব ব্যাথা পাবে।
পাশ থেকে আবরার স্যার বললো,
– হায়রে কি ট্রুরু লাভ। প্রেমিকার মা/রও প্রেমিক ভাগ করে নিতে চাইছে। আহা, তোমাদের ভালোবাসায় আমি মুগ্ধ।
ছেলেটা বুকের বা’পাশে একটা হাত রেখে একটু ঝুকে মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো,
– থ্যাংক ইউ স্যার,,,,
ফারহার মাথায় যেন আগুন জ্বলতে শুরু করলো। স্যারদের সামনেই জুনিয়র ছেলেটাকে বললো,
– একটা চ/র খাবি তুই। আমি কোন দুঃখে তোকে ভালোবাসতে যাবো রে? আর প্রেম করার বয়স হয়েছে তোর? চিঠি গুলো দেখে আমি ভেবেছিলাম অন্য আবরার দিয়েছিলো। আমি কি জানতাম নাকি যে এটা তুই আবরার? আর তোর নাম যে আবরার সেটাও তো জানতাম না আমি।
তখনই প্রেন্সিপাল স্যার বললো,
– অন্য কোন আবরার?
এবার ফারহা পরে গেলো আরেক মসিবতে। আমতা আমতা করে বলতে লাগলো,
– না মানে কেউ না। কেউ না স্যার এমনি।
তখনই জুনিয়র ছেলেটা বললো,
– দেখলেন তো স্যার। বলছি না সে ভয়ে এমন করছে। সত্যি বলতে সে আমাকেই ভালোবাসে স্যার। আমরা দুজন দুজনকেই ভালোবাসি। ভালোবাসা কি অপরাধ স্যার? আর তা যদি অপরাধ হয় তাহলে যেই শাস্তি দিবেন তাই মাথা পেতে মেনে নিবো স্যার।
আবরার স্যার এবার বসা থেকে উঠে প্রেন্সিপাল স্যারকে বললো,
– স্যার এদেরকে এভাবে হবে না। ওদের দুজনের অভিবাবক কে ইনফর্ম করুন। আর ইমেডিয়েট লি কলেজে আসতে বলুন।
প্রেন্সিপাল স্যারও তার সাথে বললো,
– ওকে এখন ক্লাসে যাও। দুজনের অভিবাবক আসলে, আবার ডাকা হবে।
ফারহা এবার কাঁদু কাঁদু ভাব হয়ে বললো,
– প্লিজ স্যার আমার বাবাকে আর ভাইয়াকে ডাকবেন না প্লিজ। ওরা এসব শুনলে আমাকে মেরেই ফেলবে। আমি তো ইচ্ছে করে জেনে শুনে করিনি এসব। প্লিজ স্যার।
পাশের জুনিয়র ছেলেটা বললো,
– এতো ভয় পাচ্ছো কেন তুমি? স্যার তো আমাদের উপকারই করতে চাইছে তাই না? আমাদের ভালোবাসার খবরটা তো একদিন না একদিন ফ্যামিলিকে জানাতেই হবে তাই না? এখন আগে থেকেই তারা জেনে রাখলে আমাদের জন্যই তো ভালো।
ফারহা রাগে ছেলেটার দিকে চেয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,
– শুধু এখান থেকে বাচি, তারপর তোর একদিন কি আর আমার যেই কয়দিন লাগে।
To be continue…..
~ গতকালকে দিতে চেয়েছিলাম। বাট গল্প লিখার পর আবার আমার ভুলে তা ডিলিট হয়ে গেছে। তাই ওটা আবার লিখা লাগছে।