#তোমার_নামে_আমাকে_ডাকো
#লেখিকাঃ সারজীন ইসলাম
|পর্ব-১৪| সংযোজিত অংশ
সূর্যের চতুর্দিকে ঘূর্ণায়মান পৃথিবীর বার্ষিক পরিক্রমণ ঋতু পরিবর্তনের সাথে জড়িত। জীববৈচিত্র্য ও প্রকৃতির ক্ষেত্রে ঋতু ব্যাপক ভূমিকা ও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে। বাংলায় সাধারণত ছয়টি ঋতুর প্রাধান্য দেখা যায়। যথা- গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত। প্রবল শৈত্যের পৌষ-মাঘের পরে আসে বাংলার শেষ দুই মাস ফাল্গুন ও চৈত্র। এই দুই মাস মিলে বসন্ত যাপন করে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের সকল মানুষ বিশেষত বাঙালীরা। কারণ অধিকাংশ বাঙালী মনের খুব কাছের ঋতু বসন্তকাল। প্রকৃতি যখন তার দখিন-দুয়ার খুলে দেয়, বইতে শুরু করে ফাগুন হাওয়া, মধুর অমৃত বাণী শোনা যায় কোকিলের কণ্ঠে, রঙের উচ্ছ্বাস জাগে অশোক-পলাশ-শিমুলে, বেরিয়ে আসে শীতের খোলসে ঢুকে থাকা কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, নাগলিঙ্গম, আর এসব ফুলে ফুলে ভ্রমর করে খেলা; তখনই যেন প্রবল বিক্রমে আগমন ঘটে রাজাধিরাজের, ঋতুরাজ বসন্তের। পহেলা ফাল্গুন দিনটিতে আনুষ্ঠানিকভাবে মর্ত্যলোকে অভিষেক ঘটে ঋতুরাজের, আর তাকে স্বাগত জানাতে প্রকৃতি নেয় এক বর্ণিল সাজ। গাছে গাছে জাগে নতুন পাতা, নতুন ফুলের সমারোহ। সবাই যেন মত্ত শীতের শুষ্কতাকে প্রাণপণে আড়াল করার চেষ্টায়। অবশ্য ফুল যদি না-ও ফোটে, বসন্তের আগমন ধ্বনিকে কোনো ভাবেই চাপা দেয়া যায় না। কারণ কবি যে বলেই দিয়েছেন, ‘ফুল ফুটুক আর না-ই ফুটুক আজ বসন্ত। নিলাংশ চোখ বন্ধ করে প্রকৃতির এই দারুন সৌন্দর্য উপভোগ করছে। বসন্ত আগমন ঘটতে আর মাত্র হাতে গোনা কয়েকটা দিন বাকি। কিন্তু প্রকৃতির উচ্ছ্বাস দেখে মনে হচ্ছে বসন্তের আগমন ঘটে গেছে। নিলাংশ সে বরাবর প্রকৃতি প্রেমী। প্রকৃতির মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলতে ভালোবাসো। সুযোগ পেলেই কাউকে কিছু না বলে প্রকৃতির মাঝে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। কিছুক্ষণ আগে ঘোরাঘুরির সময় রনক আর রবিনের সাথে দেখা হয়ে যায় তাই তাজ কে রনক আর রবিনের সাথে পাঠিয়ে দিয়েছে বাড়ির দিকে। অন্তর সাথে কথা বলার সময় একটা বাচ্চা এসে অন্তর কে ডেকে নিয়ে যায় প্রেক্ষিতে আর কথা বলা হয়ে ওঠেনি অন্তরের সঙ্গে। জানানো হয়নি শালি সাহেবা বলার কারণ! ঘটনা আজকে সকাল বেলার, নিলাংশ রেডি হচ্ছিল একটু আশপাশটা ঘুরে দেখবে তার জন্য রেডি হয়ে ওর আম্মুর কাছে বলে বেরোনোর সময় ড্রইংরুমের দেখতে পায় অন্তরকে। তখন অন্তর অবশ্য দেখতে পায়নি নিলাংশ কে। নিলাংশ অন্তরের উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে ছিল। তাদের টুকটাক কথাবার্তা কানে আসে নিলাংশের। তখন জানতে পারে অন্তর নামের মেয়েটি নীরার বন্ধু। নীরা বাড়িতে এসেছে শুনে তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে। কিন্তু তখন নীরা বাড়িতে নেই। অগত্যা একরাশ মন খারাপই নিয়ে ফিরে যেতে হয়েছে অন্তত নামের মেয়েটিকে। ‘নীরা’ হয়তো অন্য সবার কাছে এটা নামমাত্র কিন্তু নিলাংশের কাছে? এক নিদারুন লালিত আসক্তি। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিলাংশ উপলব্ধি করে নীরা নামের মেয়েটার প্রতি না দেখে প্রণয়াসক্ত হওয়া শুরু করেছে। নিলাংশের এখনো মনে আছে, বাবা মায়ের হাত ধরে শ্রাবন সন্ধ্যায় যখন হসপিটালে গিয়েছিল তখন ফুপি তোয়ালে মোড়ানো ফুটফুটে পুতুল তুলে দিয়েছিল তার কোলে। কী দুঃসহ সেই অনুভূতি। যা কখনো ভোলার নয়।
—————
আশা খান চৌধুরী আর ইশা চৌধুরী আজ রান্না ঘর দখল করেছে। ইশার আর আশা খান চৌধুরীর ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা ইধা অভিমান ভাঙ্গানোর। দেখা যাক সেই প্রচেষ্টা সফল হয় কিনা?
—————-
চোখের সামনে অপ্রত্যাশিত কিছু দেখে সবাই হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। দিঘী বন্ধু বান্ধবরা উদ্ভট আচরণ করতে শুরু করে। ইধা হাসে তাদের কান্ড কারখানা দেখে। দিঘী এদেরকে একসঙ্গে সামলাতে না পেরে রাম ধমক দিয়ে সবাইকে চুপ করায়। তাতে কি আর কাজ হয়? নিজেদের মধ্যে ফিসফিসিয়ে কথা বলছে আর আড়চোখে সেলিব্রিটি কে দেখছে। এরমধ্যে ওয়েটার এসে কেক আর অন্যান্য খাবার পরিবেশন করে দিয়ে যায়। ইধা রাজুর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,
‘ অনেক নিজেদের মধ্যে কথা বলেছো, এখন এসো কেক কাটবে।’
বিস্ফোরিত চোখে তাকায় সবাই ইধার দিকে। একে পর এক চমক হজম করতে পারছে না তারা। একে তো তাদের সমানে নায়িকা ইধা চৌধুরী। তার উপরে তিনি বাংলা বলছে? এ যেনো অবিশ্বাস্য ঘটনা। ইধা সবার অবস্থা বুঝতে পেরে মৃদু হেসে বলল,
‘ আগে বসো, তারপর তোমাদের কৌতুহলের ঝুড়ি খুলে বসবে।’
ইধার কথা মত সবাই বলে পড়ে সোফায়। দিঘী ইধার পাশে বসে সবার দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে বলল,
‘ তোদের চোখ মুখ দেখে মনে হচ্ছে তোদের মনে বেশ কৌতূহল জাগছে এই বিষয়টা নিয়ে তাই না? আর তোদের টেনশন দিবো না। আমি সব কিছু ক্লিয়ারলি বলছি। তোরা জানো আমার আর ইরা আপুর বড় একজন আপু আছে। অভিমান করে আপু বাড়ি থেকে চলে গেছিলো। আমাদের আপু আর কেউ না তোদের সামনে যে বসে আছে সেই ইধা চৌধুরী হলো আমাদের আপু। রাজুর জন্মদিনের সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য আপুকে অনুরোধ করি এখানে আসার জন্য। এবার বুঝতে পেরেছিস ব্যাপারটা!সব কিছু ক্লিয়ার হয়েছে? নাকি আরো কিছু জানার বাকি আছে তাদের?’
রাজু অবাক গলায় বলল,
‘ শুধুমাত্র আমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য এত কিছু?’
দিঘী ভাব নিয়ে বলল,
‘ আমাদের বন্ধুর জন্মদিন, আর তা কি না সাদা মাটা ভাবে পালন করা হবে কখনো না। তু বি একদিন ইয়াদ করেগা হামারা দোস্তি।’
দিঘীর কথা বলার ধরন দেখে সবাই ফিক করে হেসে দেয়। ইধা ওদের থামিয়ে দিয়ে বলল,
‘ অনেক কথাবার্তা হয়েছে। এবার কেক কাটো রাজু। খাবারগুলো না হলে ঠান্ডা হয়ে যাবে।’
ইধার কথার সম্মতি জানিয়ে রাজু ওর বন্ধু-বান্ধবীদের নিয়ে কেক কাটে। একে একে কেক খাইয়ে দেয় একে অপরকে। মেতে ওঠে সকলে হাসিঠাট্টায় মাঝে।
চলবে….
নোট : নাগলিঙ্গম বা হাতির জোলাপ এক প্রকার বৃক্ষ এবং এর ফুল। এই গাছের ইংরেজি নাম ‘cannonball tree’ এবং বৈজ্ঞানিক নাম Couroupita guianensis, যা Lecythidaceae পরিবারভুক্ত। এর আদি নিবাস মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার বনাঞ্চল। এর ফল ফুটবল আকারের এবং বাদামি-খয়েরি বর্ণের। ফুলটি বড় আকারের ফণাযুক্ত। পরাগচক্র দেখতে অনেকটা সাপের ফণার মতো। তবে একটি-দু’টি নয়, দীর্ঘদেহী গাছের নিচে ছোট ছোট ডালের সঙ্গে অনেকগুলো ফুল ফোটে। গোলাপি আর হালকা হলুদের অপূর্ব সংমিশ্রণ তাতে। ছয়টি পাপড়িতে দারুণ সৌন্দর্যময়ী সে। তবে ফুলগুলো কিন্তু ফুটে রয়েছে গাছের গুঁড়িতে। এটি পৃথিবীর অনেক জায়গায় চাষ করা হয়। বাংলাদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বলধা গার্ডেন, রমনা পার্ক, তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশন, সরকারি বিজ্ঞান কলেজ, নটর ডেম কলেজ, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ, টঙ্গী, শ্রীমঙ্গলের বাংলাদেশ চা গবেষণা ইন্সটিটিউট, বরিশালের বিএম কলেজ, বরিশালে সরকারের স্বরূপকাঠি কলেজ, ময়মনসিংহের মহিলা শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ, গফরগাঁও সরকারি কলেজ, নওগাঁ জেলার হাট নওগাঁ ঈদগা মাঠ, গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ সারাদেশে অনধিক ৫০টি গাছ রয়েছে। তবে ২০ বছর আগে এক বৃক্ষ জরিপে উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা হিসাব করে দেখেছেন বাংলাদেশে ৫২টি নাগলিঙ্গম বৃক্ষ আছে। এই দুর্লভ বৃক্ষের ফুল শুধু বসন্তের সময় ফুটে থাকে। কমেন্টে নাগলিঙ্গম ফুলের ছবি দেওয়া হয়েছে।