#তোমার_নামে_আমাকে_ডাকো
#লেখিকাঃ সারজীন ইসলাম
|পর্ব-০৭|
দিন চারেক হয়েছে জমিদার রাহাত খান চৌধুরী সুস্থ হয়ে নিজ বাড়িতে ফিরে এসেছে। রাহাত খান চৌধুরীর বড় ছেলে ছোট ছেলে ঈশান খান চৌধুরী আজ সকালে বাড়ি ফিরেছে। তিনি পেশায় একজন পুলিশ অফিসার। একটা অপারেশনের জন্য দেশের বর্ডারে কিছুদিন ছদ্মবেশে তাকে থাকতে হয়েছিল। গতকাল রাতে সেই অপারেশন সাকসেসফুল হয়। খান চৌধুরী বাড়িয়া আত্মীয়-স্বজনের পরিপূর্ণ। জমিদার রাহাত খান চৌধুরী অসুস্থতার খবর পেয়ে আত্মীয়-স্বজনরা ছুটে এসেছে তার সঙ্গে দেখা করতে। জমিদার রাহাত খান চৌধুরী তার বন্ধুর মাধ্যমে সম্পত্তির কাগজপত্র ঠিক করে ফেলেছে। এই বিষয়ে কথা বলার জন্য আজ রাত নয়টার সময় সবাইকে বাড়িতে উপস্থিত থাকতে বলেছেন তিনি।
ঘড়ির কাঁটা সন্ধ্যে সাতটা কিংবা সাড়ে সাতটা মিথিলা এসেছে ওর বাবা-মা কে নিয়ে রাহাত খান চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করতে। মিথিলার বাবা ব্যবসার কাজে এতদিন দেশের বাইরে থাকায় অসুস্থ রাহাত খান চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করতে পারিনি। গতকাল সন্ধ্যায় তিনি দেশে ফিরেছে। তাই আর কালবিলম্ব না করে মেয়ে বউকে সঙ্গে নিয়ে চলে এসেছে রাহাত খান চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করতে। একে একে উপস্থিত সেখানে হয়েছে বাড়ির সবাই। মিথিলার বাবা আসিফ সাহেব বড্ড রসিক মানুষ। তিনি কথার ছলে সবাইকে হাসাতে পছন্দ করে। রাহাত খান চৌধুরী কে নানা ধরনের হাসির কথা বলা হাসাচ্ছে। তাদের আড্ডার মাঝে হঠাৎ করে কলিং বেল বেজে উঠে। এরমধ্যে সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসে মামুন খান চৌধুরী এবং তার সহধর্মিনী। বাড়ির কাজের লোক গুলো নাস্তা বানাতে ব্যস্ত। মিথিলা রাহাত খান চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ আমি খুলছি দরজা।’
কথাটা বলে মিথিলা ধীর পায়ে এগিয়ে যায় বাড়ির সদর দরজার দিকে। দরজা খুলে অবাক চোখে তাকায়। দুই তিন জন অপরিচিত মানুষ দাঁড়িয়ে আছে দরজার ওপাশে। তাদের মধ্যে একটা মেয়ের মুখের স্কাপ পড়া, চোখে সানগ্লাস। ভিতর থেকে ইমন খান চৌধুরী গলা ছেড়ে জিজ্ঞেস করে,
‘ কে এসেছে মিথিলা?’
মিথিলা ইমন খান চৌধুরী কে কিছু না বলে অপরিচিতদের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসু গলায় বলল,
‘ কাকে চাই আপনাদের?’
সামনে দাঁড়ানো কালো শার্ট পরিহিত অজ্ঞাত ব্যক্তি বলল,
‘ জমিদার রাহাত খান চৌধুরী বাড়িতে আছে?’
মিথিলা মৃদু স্বরে বলল,
‘ জ্বী আছে, আপনারা আসুন আমার সঙ্গে।’
মিথিলা সদর দরজা থেকে সরে গিয়ে তাদের ভিতর আসার জন্য জায়গা করে দিয়ে, তাদের আগে হেঁটে ড্রইংরুমে গিয়ে রাহাত খান চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ দাদুভাই এনারা তোমার সঙ্গে দেখা করতে চায়।’
মিথিলার কথা শুনে রাহাত খান চৌধুরী তাদের দিকে তাকায়। রাহাত খান চৌধুরী আলিশান একটা ডিভানে বসে আছে। এই বাড়ির একটা অলিখিত নিয়ম আছে রাহাত খান চৌধুরীর বসে থাকা ডিভানে সে বা তার সহধর্মিণীর ছাড়া কেউ বসতে পারবে না। রাহাত খান চৌধুরী অজ্ঞাত ব্যক্তিদের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ কী কথা বলবে তোমরা আমার সঙ্গে? তাছাড়া তোমাদের তো দেখে আমাদের এলাকার মনে হচ্ছে না!’
কালো শার্ট পরিহিত ব্যক্তি বলল,
‘ জ্বী, আপনি ঠিকই ধারণা করেছেন আমরা এখানকার স্থানীয় নয়। একটা বিশেষ দরকারে আপনার কাছে আসা।’
রাহাত খান চৌধুরী মৃদু স্বরে বলল,
‘ তোমার সব কথা শুনব তোমরা আগে বসো।’
রাহাত খান চৌধুরীর কথা শুনে অজ্ঞাত ভদ্রমহিলা ধীর গতিতে হেঁটে গিয়ে রাহাত খান চৌধুরীর পাশে বসে। মুহূর্তে চমকে উঠে চোখ বড় বড় হয়ে যায় সবার। ইমন খান চৌধুরী গর্জে উঠে বলল,
‘ আপনার সাহস দেখে আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি, আপনি কোন সাহসে আমাদের দাদু ভাইয়ের পাশে বসেন। দাদিমা ছাড়া এই দুঃসাহস আজ পর্যন্ত এই বাড়ির কেউ দেখায় নি।’
স্কাপের আড়াল থেকে ভদ্র মহিলা বলল,
‘ আমি বরাবরই একটু দুঃসাহসী।’
এইটুকু বলে ভদ্রমহিলার ঘাড় ঘুরিয়ে রাহাত খান চৌধুরী দিকে তাকিয়ে ধীর গলায় বলল,
‘ মাশাল্লাহ এখনো তো আগের মতো ইয়াং আছো? তাহলে শুধু শুধু দুশ্চিন্তা করে বারবার অসুস্থ হয়ে পরো কেন?’
রাহাত খান চৌধুরী সন্দেহের চোখে তাকিয়ে বলল,
‘ কে তুমি?’
কালো শার্ট পরা ব্যক্তি রাহাত খান চৌধুরীর দিকে কিছু কাগজপত্র এগিয়ে দিয়ে বলল,
‘ এগুলো দেখুন তাহলে বুঝতে পারবেন উনি কে?’
রাহাত খান চৌধুরী চোখে চশমা ঠিক করে হাত বাড়িয়ে কাগজগুলো হাতে নেয়। কাগজগুলো পৃষ্ঠা একটার পর একটা পাতা উল্টিয়ে পড়তে শুরু করে। বিস্ফোরিত চোখে তার পাশে থাকা মেয়েটার দিকে তাকায়। বিষ্ময় গলায় বলল,
‘ নীরা!’
চমকে উঠবে সবাই রাহাত খান চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে। নীরা? সে কোথা থেকে আসবে এখানে? সে তো অনেক বছর আগে স্বেচ্ছায় বাড়ি থেকে রাগারাগি করে চলে গেছে। স্কাপ পরিহিত ভদ্রমহিলা চোখের সানগ্লাস খুলে চোখের ইশারায় হ্যাঁ বোধক সম্মতি জানায়। ইমন খান চৌধুরী কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,
‘ দাদুভাই কী বলছো তুমি? কে নীরা আমাদের? কোথায় ও?’
কালো শার্ট পরিহিত অজ্ঞাত যুবক ইমন খান চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ আপনার দাদুভাইয়ের পাশে যে মেয়েটা বসে আছে তিনি নীরা, নীরা খান চৌধুরী। আপনার হারিয়ে যাওয়া ছোট বোন।’
ইমনের উত্তেজনায় বুক কাঁপছে। ভালো মন্দ কী বলবে কিছু বুঝতে পারছে না। রাজনৈতিক ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে কম তো খোঁজার চেষ্টা করেনি তার ছোট বোনকে। প্রতিবারই তার চেষ্টা বিফলে গেছে। আর আজ কী না তার ছোট বোন নিজের ইচ্ছায় ওদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। বসা থেকে উঠে গিয়ে মামুন খান চৌধুরী মেয়েটার সামনে দাঁড়িয়ে বলল,
‘ ছোট মা?’
এতক্ষণে বাড়ির অন্দরমহলের খবর পৌঁছে গেছে নীরা খান চৌধুরী বাড়িতে ফিরে এসেছে। যে যে অবস্থা হয়েছিল সেই সেই অবস্থায় কালবিলম্ব না করে এক প্রকার দৌড়ে ড্রইংরুমে ছুটে এসেছে। রাহাত খান চৌধুরীর সহধর্মিনী রাহাত খান চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে উত্তেজিত গলায় বলল,
‘ আমার বড় বুবু নাকি ফিরে এসেছে কোথায় সে? কতকাল দেখিনা তাকে কেমন দেখতে হয়েছে তাও জানি না। বলুন না কোথায় সে?’
রাহাত খান চৌধুরী তাকে শান্ত করার জন্য বলল,
‘ আছে তোমার বড় বুবু এখানেই আছে। তুমি শান্ত হয়ে বসো দুই দন্ড।’
নীরা বসা থেকে উঠে গিয়ে রাহাত খান চৌধুরীর সহধর্মিনীর সামনে দাঁড়িয়ে মৃদু স্বরে বলল,
‘ দাদিমা।’
রাহাত খান চৌধুরীর সহধর্মিনী এক পলক তাকিয়ে নীরা কে জাপটে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কান্না করে দেয়।
চলবে….