বিয়ের আসরে বরের ভাই কনের বোনকে নিয়ে জোরপূর্বক পালিয়েছে। কুড়ি মিনিট পূর্বে নিলয়ের বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে রোকন সাহেবের বড় মেয়ে মুমু-র সাথে। তার পাঁচ মিনিটের মাথায় জানা গেল নিলয়ের ছোট ভাই নেত্র, মুমু-র ছোট বোন নমনীকে নিয়ে পালিয়েছে।অবাক কান্ড বটে!একই বাড়ি থেকে দুই বিয়ে সম্পন্ন হয়ে গেল। একটি বিয়ে গোচরে হলেও অপরটি অগোচরেই রয়ে গেল। রোকন সাহেব জমিদার বংশী লোক।গ্রামে প্রতিপত্তি ও সম্পত্তি দুইয়ের আধিক্যে আশেপাশের এলাকা জর্জরিত। তিনি বন্দুক হাতে বসে আছেন। ছেলের বাবা রায়হান সাহেব হাত জোর করে বললেন, — বিয়ে তো হয়েছে। অনুমতি দিলে মেয়ে নিয়ে যাই? রাত হয়েছে তো! রোকন সাহেব বন্দুকে গুলি ঠিকঠাক দেখে নিয়ে তাঁর দিকে তাঁক করে বললেন, — মেয়ে নিয়ে যাবেন? কত সাহস দেখি নিয়ে যান। আমার ছোট মেয়েরে সহি সালামত এখানে না আনলে কেউ কোথাও যেতে পারবে না। এত বড় সাহস, আমার মেয়েরে নিয়ে ভাগছে! নিলয় নড়বড়ে গলায় বললো, — নেত্র বোধ হয় নমনীকে পছন্দ করতো। — পছন্দ বুঝাইতে আসো আমাকে? তোমাকে সর্বপ্রথম গুলি করে মারবো। তোমার ভাই বিনা সাহায্যে এত বড় কাজ করল কিভাবে? সব দুই ভাইয়ের পরিকল্পিত। নিলয় কিছু বলতে চেয়েও বাধা পড়ল। তার মা নিলুফা বেগম জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গেলেন। নিলয় কপাল কুঁচকে মুখ ফেরায়। এ আর নতুন কি! কোনো একটা দূর্ঘটনা ঘটলেই তার মা ভীমড়ি খেয়ে পড়ে যায়। নমনী একবার নেত্র-র দিকে তো একবার কাজীর দিকে তাকিয়ে পরিস্থিতি বুঝার চেষ্টা করছে।তার যে সত্যি সত্যি বিয়ে করতে হচ্ছে এই ছেলেকে, সে তা ঠিকমতো ঠাওর করতে পারছে না। কাজী সাহেব হাস্যজ্জ্বল চেহারায় বললেন, — মা,এখানে আর এখানে সই করো। দুইটা সই করবে। নমনী কান্নাভেজা কণ্ঠে বললো, — করবো না। নেত্র সঙ্গে সঙ্গে চোখ রাঙালো। নমনী সেদিকে দেখামাত্র চোখের পানি আর নাকের পানি এক করে বন্যা বানিয়ে দিল। স্বজোরে কেঁদে কেটে অস্থির করে তুললো চারপাশের পরিবেশ। কাজী সাহেব রসহীন গলায় বললেন, — একে তো সাথে কোনো সাক্ষী আনো নাই। তার উপর মেয়েরও বিয়েতে অমত। এ বিয়ে আমি দিতে পারবো না। মেয়ের পরিবার কেস করলে আমি বিনা নোটিশে জেলে চলে যাবো। এতক্ষণে নেত্র কথা বলে উঠল, — আমি একটু ওর সাথে কথা বলতে প্রাইভেসি চাই। হবে? — হ্যাঁ হ্যাঁ, পাশের ঘরটা খালি। তোমরা নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া করে ফাইনাল সিদ্ধান্ত জানিও। নেত্র অগ্নিকুন্ড দৃষ্টিতে শক্ত হাতে নমনীর হাত ধরে পাশের ঘরে এনে ছেড়ে দিল। একটা মাঝারি ফাঁকা কামরা। নমনীর পরনে বিয়ে বাড়ির সাজ। ভারী কারুকার্যের আকাশী- গোলাপী মিশেল লেহেঙ্গা। ঠোঁটে গোলাপী লিপস্টিক। হাতে একই রঙের কাচের চুড়ি। সেই পরিহিত চুড়ির ঝংকারে ফাঁকা ঘরে প্রতিধ্বনি বেজে থেমে গেল। নেত্র বললো, — দেখো নমনী, বিয়েটা ঝামেলাহীনভাবে করে যাও।একটা ‘না’ শব্দ শুনলে জানে মেরে দেব। বলো করবে? নমনী নিজ মতে অটল থেকেই বললো, — না। — কিহহ? — বললাম তো না। — ফাঁকা ঘরে তুমি আর আমি। একটু খেয়াল করো। খারাপ হতে বাধ্য করো না। তাছাড়া তোমার বোনের পালকীও এখনো আটকে রয়েছে। আমরা বিয়ে করে ফিরলে তবেই না তোমার বোন নতুন সংসারে পা রাখবে! নমনী ফুপিয়ে কেঁদে উঠল। নিজের বোনের মুখের দিকে তাকিয়ে হলেও এ বিয়েটা ওকে করতেই হবে। বরাবরই পরিবারের ছোটরা আদরের বেড়াজাল গন্ডিয়ে এমন গর্তে পড়ে যেখান তারা দীর্ঘস্থায়ীভাবে আটকে পড়ে।শেষ পরিনতি হলো নমনীর সাথে নেত্র-র বিয়েটা। একহাতে সই করে এবং অপর হাতে টিস্যু দিয়ে চেখের পানি রগড়ে সম্পন্ন হয় ওদের শুভ বিবাহ। এক নতুন জীবনের পথ চলা। এরপর গাড়িতে বসে বাড়ির পথে এগোয় ওরা। বাড়ির ভাবনা আসতেই বুকটা ছ্যাৎ করে উঠে নমনীর। না জানি ওখানের পরিবেশ কি ভয়ানক! বাড়ির গেটে পা রাখতেই থমকে গেল নমনী আর নেত্র। একটু আগের কোলাহলপূর্ণ বিয়ের বাড়িটা রীতিমতো শ্বশান ভূমিতে পরিণত হয়েছে। বাড়ির ভেতর থেকে পরিষ্কার কান্নার শব্দ ভেসে আসছে। ওরা দু’জন গেট মাড়িয়ে দরজার চৌকাঠে পা রাখতেই সবাই ওদের দিকে নজর ঢালে। কান্নার আওয়াজ ঝনাক করে গায়েব হয়ে গেল।নমনী দৌঁড়ে গিয়ে বড় বোনকে জড়িয়ে ধরে। রোকন সাহেব নেত্র-র দিকে বন্দুকের নল ধরতেই নেত্র হো হো করে হেসে বলে, — মেয়ের জামাইকে মারার আগে একবার মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে নিবেন। রোকন সাহেব নমনীর দিকে একবার শুধু জিজ্ঞাসাত্মক চোখে তাকান।যার অর্থ, ‘এই ছেলে যা বলছে তা কি সত্য?’ নমনী সাথে সাথে মাথা নত করতেই রোকন সাহেবের কাছে সবটা জলের মতো পরিষ্কার হয়ে গেল। রাত ১১ টার সময় দুই কন্যাসমেত বরযাত্রী বিদায় নেয়। না চাইলেও দুই মেয়ের ভবিষ্যৎ চিন্তায় নির্দিধায় সবকিছু মেনে নিয়েছেন তিনি। নতুন বাড়ির নতুন পরিবেশে যুতসই হবার ইচ্ছে, আকাঙ্খা কোনোটাই নমনীর নেই। বাসর ঘরে বসে টিমটিম করে এদিক-ওদিক দেখছে। নিজের সেফটির জন্য একটা কিছু প্রয়োজন। খচ্চর লোকটা এখন যেচে স্বামীত্ব দেখাতে এলে তখন দরকার পড়বে। অনেক খুঁজে অবশেষে একটা হাতুড়ি পেল নমনী। খুশিতে চোখ চকচক করে উঠল তার। চলবে……… #তোমার_প্রেমে_পড়েছি #পর্ব_০১ #Rimy_Islam