#তোমার_প্রেমে_পড়েছি
#পর্ব_১০
#Rimy_Islam
দুপুরে সমস্ত রান্না নিজ হাতে করলো নমনী। গরুর মাংস ভুনা, আলুর দম, পটল ভাজা। এর মধ্যে তার প্রিয় একটা পদ রয়েছে টাকি মাছের ভর্তা। রাজশাহীতে এর চলন কম হলেও নাটোর জেলায় এর প্রচুর খ্যাতি রয়েছে। খাবার টেবিলে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করলো মাছ ভর্তাটা। পুরো পরিবারকে চেটে পুটে খেতে দেখে নমনীর চোখ ছলছল হয়ে উঠলো। জীবনের প্রথম সে রান্না করেছে কোনোকিছু। নিলয় খেতে খেতে ভাত মুখে নিয়ে বললো,
— আহ, যা রেঁধেছ না নমনী! আর এই মাছ ভর্তা জীবনের প্রথম খেলাম। অপূর্ব স্বাদ!
নীলুফা বেগম বললেন,
— আমার ছেলেরা আজ পর্যন্ত কোনোদিন রান্নার আমার প্রশংসা করলো না। তুমি দেখি আমাকেও ছাড়িয়ে গেছো! খেতে সত্যি অসাধারণ!
রায়হান সাহেব বললেন,
— নমনী মা, সুন্দর হয়েছে রান্নাটা।
নমনী লাজুক হেসে নেত্র’র দিকে তাকালো। সে গোগ্রাসে খাবার গিলে যাচ্ছে। সবাই কি বললো না বললো সেদিকে কোনো জ্ঞান নেই তার। কটকটে দৃষ্টিতে তাকালো নমনী। হঠাৎ চোখে চোখ পড়তে নেত্র সরল হাসে মাত্র। যার দরুন নমনীর অমর্ষ দ্বিগুণ বেড়ে গেলো। কিছু না বলে গটগট করে উপরে উঠে এলো। ছেলেটার বিদ্যা জ্ঞান ব্যতীত দুনিয়া জ্ঞান এক ছিটেও নেই। একটুপর নেত্র খাবারের থালা হাতে ঢুকে। নমনী সেদিকে একবার দৃষ্টিপাত করে পাশ ফিরে বসে। নেত্র বললো,
— সবাইকে যত্ন করে খাইয়ে নিজেই না খেয়ে চলে এলে! খাবার এনেছি, খেয়ে নিও।
— আপনি অসুর বুঝলেন! এত এত তারিফ পেলাম আপনি ব্যতীত। খারাপ লাগে না আমার?
— এতদিন শুনেছি প্রশংসায় মেয়েরা খুশি হয়।
— তাই হয়। আপনি করেননি বলে খারাপ লেগেছে।
— ওহ, তাই নাকি! আচ্ছা করছি। মাংসটা কিঁচিৎ ঝাল বেশি। তবে কষ্ট হলেও খাওয়া গেছে। আর মাছ ভর্তায় কেমন কাঁচা মাছের আঁশটে আঁশটে গন্ধ পেলাম বোধ হয়। প্রোপারলি খেতে পারিনি। তবে বেশ ভালো রেঁধেছ।
নমনী ঠোঁট বেঁকে বললো,
— এটাকে প্রশংসা বলে? পুরো দুর্নাম করছেন আমার।
— যা সত্যি তাই বলি আমি। তাছাড়া প্রশংসা বলতে আমি এটাই বুঝি।
নমনী কোমরে হাত রেখে অসদ্ভাবে বললো,
— নিজের চোখে দেখেছি কেমন গরুর মতো মুখে খাবার ঠুসছিলেন। মাছের ভর্তাও খেলেন স্বাদ মতো। কারণ বেস্বাদে খেলে মুখ বিকৃত হয়, যা আপনার ছিলো না। কাজেই ধরে নিতে পারি আপনি খাবার যথেষ্ট উপভোগ করেছেন।
নেত্র অস্পষ্ট হেসে বিনা বাক্য ব্যয়ে রুম ত্যাগ করে। নমনী সত্ত্বর খাবার খেয়ে খানিক বিশ্রাম নিয়ে দোতলার বারান্দায় এসে দাঁড়ায়। আনমনে নিচে তাকিয়ে দেখে উঠোনে নদী ঝাঁট দিচ্ছে। মাঝে মাঝে বিড়বিড় করে কি সব আবার বলছেও। আমিরা আসতেই সে বলতে থাকে, ‘ সবাই এত আদিখ্যেতা! নমনী মেয়েটা একটুও রান্না জানে না। আমি ঠিকমতো খেতেই পারিনি রে আপু। পেটে ভুকভুক করছে ক্ষিদে।
আমিরা বললো,
— ভুকভুক করে নাকি পেটে?
— মাত্রাতিরিক্ত ক্ষিদে পেলে করে। কাল থেকে আমি রান্না করবো। অকর্মা মেয়ের দ্বারা ওসব হবে না।
উপর থেকে নমনী সবটা শুনে রাগে আগুন হয়ে গেলো। তার মনে হলো নিচে গিয়ে নদীকে গোবরে স্নান করাতে। এমন মনে হতেই মাথায় একটা ফন্দি এসে যায় ওর। তাদের রুমে ডাস্ট বাসকেটে অনেক ময়লা জমেছে। সে দ্রুত রুমে থেকে ওটা নিয়ে এসে পুনরায় দাঁড়ায় সেখানে। তারপর উপর থেকে নদীকে উদ্দেশ্য করে ময়লাগুলো সব ঢেকে দেয়। ফলস্বরূপ আবর্জনা গুলো একটাও নষ্ট না হয়ে ঝুপঝুপ করে পড়লো নদীর মাথায়। সে হা হয়ে গেলো, সাথে আমিরাও। উপর থেকে তার হা হওয়া মুখটা দেখে ফিক করে হেসে আবার স্বাভাবিক হয়ে খুব করুন মুখ নিয়ে থাকলো নমনী। আমিরা এবং নদী একসাথে উপরে তাকাতেই মুখটা গোমড়া হয়ে যায় ওদের দু’ জনের। নমনী বললো,
— স্যরি স্যরি নদী! আমি পা পিছলে পড়ে যেতে এই ডাস্টগুলো তোমার উপর পড়েছে। তুমি গোসল করে নাও। অনেকদিনের জমা ময়লা কিনা! গা ঘিনগিন করবে।
নদী ফুপিয়ে কেঁদে সেখান থেকে চলে যায়। নমনীও রুমে চলে আসে। তার মনটা আজ খুব ভালো। নদীকে মন মতো জব্দ করতে পেরেছে।
আবহাওয়া ঝকঝকে। ক্লান্ত শেষ বিকেলে হালকা তাপহীন রোদ। আকাশে ভাসা মেঘ। নমনী প্রথমবারের মতো ছাদে পা রেখেছে। তার জানা ছিলো না ছাদে চিলেকোঠার ঘর রয়েছে। যদিও দরজা ভেতর থেকে লাগানো। নমনী টোকা দিতে ভেতর থেকে নেত্রর গলা পাওয়া গেলো। ‘ কে? ‘ বলতেই নমনী বললো, ‘ আমি নমনী।’ ঝড়ের গতিতে দরজা খুললো নেত্র। তার চোখ দু’টো ক্লান্ত, ভেজা চুল। গায়ে কোনো জামা নেই। খালি গায়ে নজর পড়তে নমনী উল্টো পাশ ফিরে বললো,
— এই লোক, আপনার জামা কোথায় উড়ে গেছে?
নেত্র ভাবনাহীন হয়ে বললো,
— বাতাসে উড়ে গেছে।
— মানে?
অবোধ বালকের ন্যায় হেসে নেত্র বললো,
— ছাদে এসেছিলাম পড়তে। চিলেকোঠার ঘরটায় পুরনো আসবাব রাখা হয়। কেউ আসে না। মাঝে মাঝে আমি আসি পড়তে। হঠাৎ খুব গরম বোধ হতে ছাদে এসে দাঁড়িয়েছিলাম। টি শার্টটা খুলে রেলিঙের উপর রেখেছিলাম। এমন সময় কোথা থেকে ঝড়ের মতো বাতাস এসে জামাটা উড়িয়ে নিচে ফেলে দিলো।
— আপনার চোখ কোথায় ছিলো? – কাঠ গলায় প্রশ্ন করে নমনী।
— চোখ বন্ধ ছিলো।
— হায় আল্লাহ! উপর, নিচ মিলে এতো ঘর থাকতে কিনা গরমে সেদ্ধ হতে এখানে এসেছেন!
— নিচে সবার ক্যাঁচক্যাঁচ শুনলে পড়া হয় না।
— চুল ভেজা কেন? এখানে কি ওয়াশরুম আছে?
— গরমে ঘেমে ভিজেছে বোধহয়।
নমনী ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। ঘরের ভেতরে নেত্র’র ফাঁক দিয়ে সামান্য দেখতেই শিউরে উঠলো। মাঝারি আকারের ঘরটায় পুরনো সব আসবাবে ঠাসা। সেখানে কোণায় দিকে একটা চেয়ার রাখা। বড় একটা রড বাল্ব জ্বলছে। সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার, ঘরে কোনো ফ্যান নেই। নেত্র যে এতক্ষণ খালি গায়ে রয়েছে সেকথা ভুলে গিয়েছিল প্রায়। হঠাৎ পুনরায় চোখ পড়তে বললো,
— নিচে যেয়ে জামা পরে আসুন। আপনার শরীরের সব দৃশ্যমান হচ্ছে, যা আমার কাছে দৃষ্টিকটু ঠেকছে।
— ছেলেদের খালি বুক নাকি মেয়েদের টানে। এখন দেখছি তোমাকে একটু বেশিই টানছে। আমাকে জামা পরাতে উঠে পড়ে লেগেছ!
— ফালতু ছেলে! যা বুঝার তা বুঝেন না, যা না বুঝার তা ঠিকই বুঝেন। বলি এক আর বুঝে আরেক।
নেত্র অন্ধকারাচ্ছন্ন মনে নিচে নেমে যায়। একা রয়ে যায় শুধু নমনী। শরীর তার হাজার ভোল্টেজে শক খাওয়ার মতো কাঁপছে। হৃদপিন্ডের রক্ত পাম্প করা দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। সে তার গতি ভুলে নমনীকে যথারীতি উত্তেজিত করতে গতি বাড়িয়ে দিয়েছে। নমনী চোখ বন্ধ করতেই ভেসে উঠলো নেত্র’র মুখ। তার ফাঁকা বুক। লোমহীন বুকে বিন্দু বিন্দু ঘামের ছিঁটে। ক্লান্ত, ঘর্মাক্ত ভ্রুলেখায় পড়ন্ত ভেজা চুলের স্পর্শ। যা নেত্রকে মুগ্ধকর করে তুলেছিলো। নমনী লজ্জা পেলো আপন মনেই।
চলবে…………..