#তোমার_প্রেমে_পড়েছি
#পর্ব_১২
#Rimy_Islam
নমনী ভড়কে যায়। নতুন মানুষটাকে তার শুরু থেকেই মানতে সমস্যা হচ্ছে। যেখানে সে নিজেই চলে এসেছে আলাপ করতে, সেখানে কথা না বলে কি উপায় আছে!
প্রিয়ম অনুমতির প্রতীক্ষা না করেই ভেতরে ঢুকে পড়ে। সাজানো রুমটায় চোখ বুলিয়ে নমনীর কাছে এসে দৃষ্টি স্থির করে বললো,
— স্যরি, না বলে চলে এলাম। তোমাকে যেন আনইজি দেখাচ্ছে! ঠিক আছ?
নমনী হালকা কেঁশে বললো, — জি।
— নিচে খাবার ছেড়ে এলে?
— ক্ষিদে ছিল না।
প্রিয়ম অদ্ভুত চোখে নমনীর দিকে চোখ কুঁচকে তাকিয়ে রইলো। তারপর চেনা ভঙ্গিতে বিছানার উপর বসে বললো,
— আচ্ছা নমনী, তুমি কখনো অস্ট্রেলিয়া গিয়েছ?
— না। কেন বলুন তো?
— তোমার মুখটা দেখলে মনে হয় তুমি আমার পূর্ব পরিচিত। নেত্র’র সাথে লাভ ম্যারেজ নাকি এ্যরেঞ্জ ম্যারেজ?
— প্রথমত, আমার সাথে আপনার পূর্ব কোনো সংযোগ থাকতে পারতো যদি আপনি এদেশে থাকতেন। পথে-ঘাটে দেখা হলেও হতে পারতো। কিন্তু আপনি পরদেশে থেকে আমাকে পূর্বে দেখেছেন বললে সেটা বিশ্বাসযোগ্য হচ্ছে না। দ্বিতীয়ত, আমাদের এ্যরেঞ্জ ম্যারেজ।
প্রিয়ম হতাশায় ডুবে বললো,
— ফেসবুকে তুমি আমার ফ্রেন্ড নও তো?
— হতে পারে না। আমি ফেসবুক চালাই না।
কথাটা বলে নমনী ঘামতে লাগলো। কপালে জমে ওঠা বিন্দু বিন্দু ঘাম শাড়ির আঁচলে মুছে নিলো। নমনীর ফেসবুক একাউন্ট আছে। প্রিয়মকে এ সত্যটা বলতে কেন জেনো তার মন সায় দিচ্ছে না। সবকিছু ভেবেই মিথ্যা বলে দেয় সে। প্রিয়মের চোখে স্বচ্ছ সন্দেহের ছাপ পড়ে রয়েছে। কোথাও একটা নমনীর মিথ্যা সে ধরতে পেরেছে বোধ হচ্ছে।
— হয়তো। – অনেকটা সময় ব্যয় শেষে প্রত্যুত্তর জানায় প্রিয়ম।
দুপুরে স্বপরিবারে বাহিরে খেতে যায়। প্রিয়ম জোর করায় না করেনি কেউ-ই। কেবল একজন মানুষ গেলো না। সে হচ্ছে নেত্র। রেস্টুরেন্টের শান্ত পরিবেশেও নমনীর মন অশান্ত হয়ে উঠলো। কোনো রকম খেয়ে উঠতে পারলে ও কোনো একটা কাজের বাহানায় বেরিয়ে যাবে। যার ফলে প্রচন্ড গোগ্রাসে খেতে গিয়ে হেঁচকি উঠে যেতে প্রিয়ম পানি এগিয়ে দেয়। তারপর বলে,
— আস্তে আস্তে খাও। আমাদের খাওয়া শেষ হলেও তোমার জন্য অপেক্ষা করবো।
নমনী বিনা কথায় পানির গ্লাসটা নিয়ে অল্প পানি পান করে রেখে দেয়। মুমু একবার চোখ রাঙিয়ে আবারো খেতে শুরু করে।
— আমার খাওয়া হয়েছে। আমি এবার উঠছি।- নমনী তড়িৎ গতিতে বলে।
নীলুফা বেগম বললেন,
— এসেছ আমাদের সাথে, আর যাবে একা? একটু বসো। সবার হলে একসাথে যাবো।
— মা আমার এক বান্ধবীর সাথে দেখা করতে হবে।
— এটা কি কথা নমনী? পরিবারের সাথে এসেছিস বান্ধবীকে বলে দে। – ঝাঁঝ মাখা কণ্ঠে বলে মুমু।
অগত্যা যাওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করে থেকে যেতে হয় তাকে। গাড়িতে যাবার সময় পুনরায় নমনীর জায়গা হয় প্রিয়মের পাশে। প্রিয়ম একমনে ড্রাইভিং করছে। এদিকে পাশে বসা নমনী একটু পরপর শাড়ি ঠিক করছে। ফ্রন্ট মিররে নমনীকে দেখে মৃদু হাসে প্রিয়ম। নমনী বাড়ি ফিরে নেত্রকে ইচ্ছে মতো বকে।
— এটা কি ছিল নেত্র? আপনি যাননি তবে আমাকে কেন যেতে দিলেন?
নেত্র মাত্র একটু আলসে দুপুরে চোখ বুজেছে। এ সময়ে নমনীর তিক্ত কথায় খানিক মেজাজ চড়ে যায় তার।
— আমিও যাচ্ছি না, তুমিও যাবে না এটা কেমন হতো ভেবে দেখেছ? সবাই কি ভাবতো?
— কারো কিছু ভাবায় যায় আসে না নেত্র। আপনার ভাই মোটেও ভালো না। কেমন করে আমার দিকে তাকায়, নজর খারাপ। উঠে পড়ে কথা বলতে রুমের মধ্যে চলে আসে। এসব কি ঠিক?
— না, ঠিক না। আমি জানি প্রিয়ম অন্যরকম। ওর থেকে দূরত্ব রেখে চলবে।
— দূরত্ব বজায় রাখতে আমি চাই। আপনার ভাই দেয় না।
— আজব! মুড ভালো করো। সারাদিন প্যানপ্যান ভালো লাগে না।
নমনী মুখ ভার করে রইলো। নেত্র আবার বললো,
–কাল সারাদিন আমরা বাইরে কাটাব। কেমন হবে?
— জানি না।
প্রিয়ম আসায় একটা দিক ভালো হয়েছে। নদী মেয়েটার নজর নেত্র থেকে সরে তার ওপর পড়েছে। নদীর এখন প্রধান কাজ প্রিয়মের তদারকি করা। অতিথি আপ্যায়নে কোনো কমতি সে করছে না। একদিন হঠাৎ সে নমনীর রুমে এসে পড়লো। নেত্র ছিলো না দেখে স্বস্তির একটা শ্বাস ছেড়ে সে বলে,
— ভাবি আসবো?
নমনী খানিক চমকায়। বাড়িতে আসা অব্দি এ পর্যন্ত নদী কখনো তার সাথে ভালো করে কথা বলেনি। সে বললো,
— এসো। কিছু দরকার?
— না। আপনি বোধ হয় আমার উপর রেগে আছেন। তাই স্যরি বলতে এসেছি। আগে যা করেছি সব ফেলে দেন। এখন আমরা সই সই।
— সই সই আবার কি?
— মানে বান্ধবী। আপনি যা দরকার আমাকে বলবেন। ভালো না লাগলে বলবেন, এসে গল্প করবো। ভালো লাগলেও বলবেন। এসে আপনার সুখ বাটবো।
— তাই! আচ্ছা বেশ।
পরদিন নমনীকে নিয়ে নেত্র’র বেরোবার কথা থাকলেও সে গেল না। আর এ সুযোগ হাতছাড়া করতে নারাজ প্রিয়ম সুযোগ কাজে লাগিয়ে সবার সামনে নমনীকে নিয়ে বেরোবার প্রস্তাব জানায়। প্রথমে সবার কাছে ব্যাপারটা দৃষ্টিকটু ঠেকলেও কথার প্যাঁচে মানিয়ে নেয় প্রিয়ম। বাড়ির সবার জন্য কেনাকাটা করতে নমনীর সঙ্গ দরকার হবে। তাই সে তাকে এবং মুমুকে সাথে নিতে চায়। মুমুকে নিচ্ছে দেখে নমনীর কিছুটা সন্দেহ কমলেও উৎকণ্ঠা কমেনি।
চলবে……