#তোমার_প্রেমে_পড়েছি
#পর্ব_০৫
#Rimy_Islam
গাড়ির গ্লাস নামাতেই হুড়মুড় করে একঝাঁপি বৃষ্টির ছাঁট এসে ঢুকে পড়ে। নমনী খলখলিয়ে হাসে। মুক্ত ঝরা হাসি। আচমকা হাওয়ায় ভাসা চিরল হাসির অর্থ অজানা থাকায় নেত্র চমকে তাকায় নমনীর পানে। রীতিমতো অবাক সে। অদ্ভুত মেয়ে! এই হাসি তো এই কান্না। মেয়ের মুড সুইং করে প্রচুর। আনমনে ভেবে নিজেই হাসে নেত্র। দেখতে দেখতে ওরা পৌঁছে গেল গন্তব্যে। যেখানে গাড়ি দাঁড় করায় সেখানে অসংখ্য লোকের গিজগিজ। হাতের দু’পাশে কিছু খাবারের দোকানও রয়েছে। এর বেশি গাড়ি চলাচল সম্ভব না। খানিক সামনে থেকে পানির নিচে রাস্তা তলিয়ে যাওয়ায় পিচ ঢালা রাস্তা আবছা দৃশ্যমান। নমনীর হঠাৎ খেয়াল হয় তার পেটে কুড়কুড় খিদে জানান দিচ্ছে। সকালে কিছু না খেয়ে বেরিয়ে পড়ার ফল।
— আমার খিদে পেয়েছে। কি খাবো?- ঝটপট প্রশ্ন নমনীর।
— আমাকে গিলে খাও।
— জ্বি!
নেত্র অনিচ্ছুক হাসে। শুরু থেকে নমনীর আচরণে যথারীতি ক্ষুব্ধ সে। অতঃপর বলে,
— দাঁড়াও শুকনো খাবার কিনে আনছি।
— থ্যাঙ্ক ইউ।
ভারী খাওয়ার যোগ্য কোনোকিছু না পেয়ে নেত্র দুইটি পাউরুটি, চারটি কলা, কেক এবং পানির বোতল এনে দেয়। নমনী গাড়িতে বসেই খাবার পালা মিটিয়ে নেয়। নেত্র বাড়ি থেকে খেয়ে বের হয়েছিল বিধায় সে শুধু চেয়ে চেয়ে নমনীর খাওয়া দেখে আর উপভোগ করে।
এবার ওরা দু’জন গাড়ি থেকে নেমে পড়লো। নমনী হতবাক। এত লোক চারিদিকে। বছরের এ সময়টায় দূর দূর থেকে বহু লোকের সমাগম হওয়ায় কানায় কানায় পানির সাথে মানুষেও পুরো জায়গাটা টইটুম্বুর হয়ে থাকে। নমনী হতাশ হয়ে বললো,
— আজ খুব ভিড়। শূন্য লোকালয়ের জায়গা পেলে বেশ হতো!
— তুমি বললে পুরো এলাকা বুক করে নিই।কি বলো?- বলেই নেত্র তাচ্ছিল্য হাসলো।
— প্লিজ মনটা ভেঙে দিয়েন না। যত্তসব ত্যাঁদড় মানুষ!!
নমনী গট গট করে হেঁটে চলে যায়।নেত্র মুখ অল্প হা করে আমার বন্ধ করে নেয়। কিছু বলার নেই এই মেয়েকে। নমনী সামনে এগিয়ে ছপছপ শব্দ তুলে পানিতে ঝাপানো শুরু করলো।চঞ্চল প্রাতে নমনীর প্রাণোচ্ছল স্বভাব নজর কাড়ে নেত্র’র। এক পর্যায়ে নমনী চেঁচিয়ে বলে উঠে,
— নৌকা! নৌকা! প্লিজ নেত্র আমি নৌকায় চড়বো! না শুনবো না।
নাছোড় নমনী জিদ করে বসায় নেত্র তাকে নিয়ে নৌকায় চড়তে বাধ্য হয়। একটা নৌকায় ওরা দুইজন ছাড়াও আরো তিনজন মানুষ উঠেছে।নেত্র’র হঠাৎ ভয় হয় নমনী সাঁতার পারে কি-না সেটা সে জানে না। ব্যতিক্রম কিছু ঘটে গেলে তখন কূল পাওয়া যাবে না।
নেত্র কিছুটা দ্বিধান্তিত গলায় বললো,
— এই নমনী! সাঁতার পারো তো?
— না। আপনি আছেন কি চেহারা দেখতে আর দেখাতে!
এবার নেত্র-র ঘামে ভিজে যাওয়ার উপক্রম। নমনীর একরোখা জিদের বশত নৌকায় উঠে বসলেও সাঁতার জানে না নেত্র। বরাবরই পানি, নৌকায় প্রচুর ভয় তার। নৌকাডুবি হলে সে অন্যকে কি বাঁচাবে, নিজেই আগে ডুবে মরবে!
নেত্র মুখ কাচুমাচু করে বললো,
— আমিও পারি না।
নমনী শিরশির কাঁপন অনুভব বোধে একটু কেঁপে উঠে।
— কি ভয়ংকর কথা!
এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে নেত্র বললো,
— শুনেছি এই বিলে এমন জায়গা রয়েছে যেখানে নৌকা বাই চান্স পড়লে একদম পানির অতল গহ্বরে টেনে নেয়। সেই পানির পাঁকবদ্ধ জায়গায় আল্লাহ না করেন আমরা পড়ি।
নমনীকে ভয় পাইয়ে দিয়ে নেত্র ভেতরে ভেতরে খুশি হয়।তার পরিকল্পনা কাজে দিচ্ছে। মেয়েটা ভয় পেয়েছে ভীষণ।এতেই কাজ হয়ে যাবে বোধ হয়।
— নৌকা পাড়ে ভেড়ান…. আমরা নামবো। মাঝ বিলে ইতোমধ্যে নৌকা পৌঁছে গেছে। মাঝি লোক কিচিৎ বিরক্ত নিয়ে বললো,
— ভয় নাই আপা। আপনেরা একা না। কত মানুষ আছে!
নেত্র পাশ থেকে ফিসফিস করে বললো,
— সাবধান! এটাই হয়তো আমাদের পৃথিবীতে শেষ দিন হতে চলেছে। বিদায় পৃথিবী, বিদায় নমনী! তোমার সাথে প্রেমের পালাই শেষ করতে পারলাম না। কত স্বপ্ন অপূর্ণ রয়ে গেল!
কথাগুলো বলেই নেত্র অপর পাশে মুখ ফিরিয়ে ইষৎ হাসে। নমনীর তটস্থ চেহারা নেত্র’র বিনোদনের কারণ হয়ে বসেছে।
অতঃপর নৌকা ভ্রমণের সেখানেই ইতি ঘটে। তড়িঘড়ি তারা নেমে পড়ে হাফ ছেড়ে বাঁচে। আরো কিছুক্ষণ আশেপাশে ঘুরে ফিরতি পথে যাত্রা শুরু করলো ওরা। নমনীকে ওদের বাড়ির সামনের পাঁকা রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে বিনা বাক্যালাপে চলে যায় নেত্র। সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার নেত্র একবারো নমনীদের বাড়ির ভেতরে যায়নি। সত্যি এসব থেকে কেমন একটা প্রেম প্রেম ভাব আসছে। নমনী শিহরিত হৃদয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে।
ঘরে ঢুকতেই মুমু আবার প্রশ্ন করে বসে। সে মাত্র স্নান পবিত্র হয়ে বের হয়েছে। অন্তত ভেজা চুল থেকে তীব্র শ্যাম্পুর গন্ধ এটার প্রমাণ দিয়ে চলেছে।
— কি কি করলি রে নমনী? কোথায় কোথায় ঘুরলি? তোর বরটা কত রোমান্টিক! আর আমার জন একটা হাদারাম পাঠা।
— কি রান্না হয়েছে মধ্যাহ্নে? খুব ক্ষিদে পাচ্ছে আপু। সকালেও ঠিকমতো খাওয়া হয়নি।
মুমু চরম তিক্ত মেজাজে বললো,
— কথা পাল্টাচ্ছিস কেন? বাব্বাহ, বিয়ের দুই দিন যেতে না যেতেই বোনের সাথে দূরত্ব করে দিলি !
— আমি ক্লান্ত ভীষণ।
— নেত্র বাড়িতে এলো না যে?
নমনী হেসে মুমু’র পাশে বসে বললো,
— আমরা প্রেম করছি তাই। প্রেমিক পুরুষ কখনো প্রেমিকার বাড়িতে অনায়াসে গমন করে না।
— বলিস কি! নেত্রকে একটু বলিস তো ওর গাধা ভাইটাকে কিছু শিখিয়ে পড়িয়ে দিতে!পোড়া কপাল আমার!
পুরো দিন গড়িয়ে রাত চলে আসে। নমনীকে রেখে যাওয়ার পর থেকে নেত্র আর যোগোযোগ করেনি। আগ বাড়িয়ে নিজ থেকে নমনীও ফোন করেনি। কিন্তু এবার খুব চিন্তায় পড়ে গেলো নমনী। এমন তো হবার কথা নয়! দ্বিধাগ্রস্থ নমনী নিজেই ফোন করলো নেত্রকে। আশ্চর্য সে ধরলো না!
চলবে……….