#তোমার_প্রেমে_পড়েছি
#পর্ব_০৬
#Rimy_Islam
সকালে নিলয় আসে মুমুকে নিতে। অপরদিকে গতকাল থেকে নমনী এবং নেত্র’র মধ্যে কোনো প্রকার কথা হয়নি। এমনকি নেত্র আসেনি পর্যন্ত নমনীকে নিতে। আকাশ কালো গাম্ভীর্যের পর্দা ভেদ করেই হাসি মুখে বেরিয়ে এলো নমনী।এরপর সালাম দিয়ে বললো,
— কেমন আছেন ভাইয়া?
নিলয় নমনীর দিকে একবার তাকিয়ে লাজুক হেসে বললো,
— ভালো। তোমার কি খবর? নেত্র রোজ ফোন করে তো নাকি?
— জ্বি,জ্বি। আচ্ছা ও আসেনি যে?
— আসবে তো। একটু কাজের জন্য বললো পরে আসবে। দুই ভাই একদিন তোমাদের বাড়ি থাকবো, আশেপাশে ঘুরবো। তারপর আগামীকাল তোমাদের নিয়ে রওনা হবো।
কথাবার্তার এ পর্যায়ে মুমু এসে বলে উঠে,
— আমি আরো কিছুদিন থাকতে চাই।
নিলয় থতমত খেয়ে যায়। জোরপূর্বক হেসে বললো,
— সেটা পরে দেখা যাবে। বাবা বলেছে তোমাদের নিয়ে শীঘ্রই বাড়ি যেতে। তাছাড়া বাড়িঘর নাকি ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।
— এতদিন বিয়ে হয়েছিল না তখন কি বাড়ি ফাঁকা ছিল না!
নমনী তাদের মাঝে বলে উঠলো,
— উফ… আপু তুই এভাবে কথা বলছিস কেন? থাম একটু প্লিজ!
দুপুরে সবাই যখন টেবিলে মধ্যাহ্ন ভোজে বসেছে ঠিক সেই মুহূর্তে এলো নেত্র। মুখে অপরাধীর ছাপ ফুটিয়ে ভেতরে ঢুকে বললো,
— সরি! একটু দেরি হয়ে গেল।ইম্পর্ট্যান্ট ক্লাস ছিলো।
রেহান সাহেব নমনীর দিকে তাকাতেই নমনী অনুনয়ের ভঙ্গিতে তার বাবাকে খারাপ আচরণ থেকে বিরত থাকার ইঙ্গিত করে। মেয়ের কথা ভেবে তিনি নেত্রকে বললেন,
— আমরা এইমাত্র খেতে বসছি। খুব দেরি করনি। তুমিও আমাদের সাথে বসো।
বাধ্য ছেলের মতো নেত্র বসে পড়ে। খাবার শেষে যার যার মতো উঠে গেলে মুমু নেত্রকে নিয়ে ঘর দেখাতে নিয়ে যায়। নমনী তার মায়ের সাথে সব গোছগাছ করতে সাহায্য করে। তার মা জয়া বেগম খুব সরল মানুষ। লোকসম্মুখে একহাত ঘোমটার আড়ালে নিজের মুখটা ঢেকে রাখেন। কথা বলেন তো ‘ জ্বি, আচ্ছা, আসছি ‘ এমন ছোট ছোট প্রতিত্তরে সীমাবদ্ধ তাঁর জীবন। তবে মেয়ে দুইজনের সাথে বেশ আমোদে স্বভাবে থাকেন।
তিনি বললেন,
— নেত্রকে দেখলে ভালোই মনে হয়।
নমনী হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ে। মনে মনে নেত্রকে গালি দিয়ে তার চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করতে থাকে। সব গুছিয়ে যখন সে রুমে প্রবেশ করে, নেত্র তখন বিছানায় শুয়ে পড়েছে। চিৎ হয়ে শুয়ে কপাল বরাবর একহাত রেখে বন্ধ চোখে শুয়ে আছে সে।
নমনী ‘উহুম…উহুম’ শব্দ করে তার আগমনী সংকেত দিয়েও কোনো লাভ হলো না। নমনীর মনে সন্দেহ হলো সত্যি নেত্র ঘুমে কিনা! কারণ পাঁচ মিনিটের মধ্যে মানুষ ঘুমায় কিভাবে?
নমনী এক পর্যায়ে চিৎকার করে বললো,
— নেত্র…. এই যে নেত্র মহাশয়! কান জোড়া সজাগ করিয়া উন্মুক্ত মস্তকে আমার কথা একটু শুনবেন কি?
কোনো সাড়া নেই। প্রচন্ড আক্রোশে ফেটে পড়ে নমনী। রুমের সাথের লাগোয়া বাথরুম থেকে এক মগ পানি এনে ঝপ করে পুরোটা ঢেলে দেয় ঘুমন্ত নেত্র’র মুখে। চরম পতনের সাথে নেত্র উঠে বসে বললো,
— What is this? Seriously ! পানি দিলে আমার গায়ে?
নমনী রাগী চেহারায় বললো,
— হ্যাঁ দিয়েছি। কখন থেকে ডেকে মরছি কেউ না শুনলে এই পন্থা অবলম্বন ছাড়া অন্য কোনো পথ ছিলো না।
— এইটা অনেক পুরনো পদ্ধতি। মেয়েদের রাগ হবে আর পানি ফেলবে।
— নতুন, পুরাতন দিয়ে কাজ নেই। আপনার ঘুম ভেঙেছে এই যথেষ্ট। কাল থেকে ফোন দেননি কেন? বাসায় সামনে নামিয়ে দিলেন, ঠিকঠাক পৌঁছেছি কিনা একটা ফোন দিয়ে খোঁজ নেননি কেন? রাতেও আমি ফোন করায় ধরেননি কেন?
— Take a deep breath Nomoni ! শান্ত হও। প্রথম উত্তর, আমি ফোন করিনি কারণ প্রয়োজন বোধ হয়নি তাই। দ্বিতীয় উত্তর, মেইন রোড যেখানে তোমাকে নামিয়ে দিয়েছি,সেখান থেকে তোমার বাড়ি যেতে দুই মিনিট সময় লাগে।তাই না পৌঁছানোর কারণ ছিলো না। লাস্ট উত্তর, আমি পড়ার চাপে ছিলাম। তোমাকে আমার সাথে থাকতে হলে মানতে হবে বই আমার প্রথম বউ। এরপর দ্বিতীয় বউ তুমি। তাই তোমার ফোন ধরিনি। পড়া শেষ করতে অনেক রাত হয়েছিল বিধায় পরে আর ফোন করা হয়ে উঠেনি।
নমনী তপ্ত লৌহরূপ ধারণ করে বললো,
— ফোন করার প্রয়োজন বোধ করেননি! না পৌঁছানোর কারণ ছিলো না! বই আপনার প্রথম বউ!
— পুনরাবৃত্তি করছো কেন?
নমনী উত্তর দিলো না। সে দ্রুত বাথরুমে ঢুকে পড়ে। নেত্র অবাক হয়ে সবটা দেখছে। নমনী টেনে হিঁচড়ে বড় এক বালতি পানিসহ মগ এনে বিছানার পাশে রাখলো। তারপর পরপর কয়েক মগ পানি লাগাতার নেত্র’র গায়ে ছুঁড়ে মারলো। নেত্র এবং তার সংলগ্ন বিছানার জায়গাটা পুরো জবজবে হয়ে ভিজে গেলো। আকস্মিক এমন কান্ডে নেত্র হতবাকের সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছে গেলো।
চলবে………….