#তোমার_প্রেমে_পড়েছি
#পর্ব_০৮
#Rimy_Islam
— আপনি জড়- জীব কিসব বলছেন নেত্র?
প্রতিত্তরে নেত্র শুধু হাসে।
অতঃপর নেত্র হেসে আবারো বললো,
— এই যেমন; আকাশ, বাতাস, এই যে তুমি মগ হাতে ধরে আছো এই মগটাও জড় পদার্থ। এসবের মধ্যে আমার কোনো প্রেম দেখেছ? দেখনি তো! কারণ আমার প্রেম বইতে। তেমন জীবন্ত কত কিছু থাকতে আমার প্রেম তোমাতে। বুঝেছ?
নমনী দুই হাতে মাথা চেপে ধরে ধৈর্য্চ্যুত হয়ে বললো,
— এমনই যদি হয় তাহলে আপনার বাবা-মা, ভাই এরাও তো জীবিত বস্তু। এদের দেখলে প্রেম পাই না? ভালোবাসেন না? যদি ভালোবাসেন তাহলে আমি প্রথম প্রেম কিভাবে হই?
— উফ্ নমনী! আমার বাবা-মা, ভাই আমার ভালোবাসা, প্রেম নয়। প্রেম কেবল তুমি।
— ভালোবাসা নেই আমাতে?
নেত্র গভীর ভাবনাচ্ছন্ন ভঙ্গিমায় বললো,
— হয়তো না! কারণ তোমাকে দেখে মুগ্ধ হয়ে বিয়ে করেছি। মুগ্ধতা প্রেম হতে পারে, তবে ভালোবাসা না। ভালোবাসার মতো গভীর বিষয় এক দেখায় ঘটে না। ঘটে ধীরে ধীরে নিরবে।
— প্রেম, ভালোবাসায় পি.এইচ.ডি করেছেন দেখছি!
নেত্র বাঁকা হেসে বললো,
— তুমি রেগে যাচ্ছ কেন? মনে হচ্ছে আমার প্রেমে পড়েছ! এই নমনী… এমন কিছু কি ঘটেছে? যদি ঘটে তবে সর্বপ্রথম আমাকে বলো। একটা পার্টির আয়োজন করবো।
— আমার জীব, জড় কোনোটাতেই প্রেম পাই না।
বলেই গটগট করে হেঁটে চলে গেলো সে।
সকালে পাকঘরে মুমুকে কাজে সাহায্য করতে এগিয়ে এলো নমনী। মুমুর মুখ থমথমে। সে আড়চোখে নমনীর দিকে তাকালো ঠিকই,কিন্তু কিছু বললো না। গতরাতে নমনী এবং নেত্র’র মাঝের মধুর সম্পর্ক মুমুর দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এরপর থেকেই তার মনে ভর করেছে আক্রমণাত্বক ক্ষোভ। যা যে কোনো সময় নমনীকে আক্রমণ করতে প্রস্তুত। কোথায় নিজের বোনকে সুখে দেখে খুশি হওয়ার বদলে মুমু নিজেকে যথারীতি অশান্ত করে তুলেছে। তার মনে চাপা কষ্ট, নিলয়টা যদি নেত্র’র মতো হতো!
নমনী বোধ হয় কিছু একটা আন্দাজ করলো। তাই বললো,
— কি হয়েছে আপু?
মুমু এবার সোজা নমনীর চোখে চোখ দেখে বললো,
— তুই আমার কষ্ট কি বুঝবি! তোর বর কি তোকে সময় দেয় না, মরার মতো ঘুমোতে দিন-রাত এক করে দেয়?
নমনী এবার বুঝলো কেন মুমুর মন খারাপ। তাই সে হেসে হেসে বললো,
— নিলয় ভাইয়া পড়ে পড়ে ঘুমায় সেটাও ভালো। অন্তত নেত্র’র মতো বইয়ে মুখ গুঁজে থাকে না। শোনো কাল কি হয়েছে….
— শুনবো না, সব দেখেছি নেত্র তোকে বলতে পাগল।
— তোমার বোনকে ভালো দেখে খুশি হওয়া দরকার। তুমি পর লোকের মতো কথা বলছো কেন?
— আমি খুশি অনেক। কিন্তু তোকে যে দায়িত্ব দিয়েছিলাম সেকথা মনে আছে?নিলয়ের সাথে নেত্র কথা বলেনি এখনো।
নমনী দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। কোথাও একটা শুনেছিল, ‘দুই বোনের একবাড়িতে বিয়ে হতে নেই।’ কথাটা আসলেই সত্য।
ড্রাইভারের ছোট মেয়ে মিষ্টি সেই কখন থেকে একই বুলি আওড়ে চলেছে। ‘ কি মজা…. খালামনি আসবে…. গল্প করবে কত আর আমাকে ঘুরতে নিয়ে যাবে। নতুন জামা কিনে দিবে।’ নমনী ইশারায় মিষ্টি ওর কাছে ডেকে জিজ্ঞেস করলো,
— কে আসছে রে মিষ্টি সোনা?
মিষ্টি ভারী বিষ্ময় নিয়ে বললো,
— এমা! তুমি আমার নাম জানলে কোথ থেকে বউমনি?
— তোর মা বলেছে। বলতো কে আসবে?
— খালামনি।
— ওহ আচ্ছা।
মিষ্টি চলে যেতে আমিরা কাছে ভিড়লো। কম বয়সে বিবাহিত জীবনে পদার্পণ করলেও তার চেহারার লাবণ্যতা কমেনি। উল্টো যেন আরো বৃদ্ধি পেয়েছে । তার মুখটা লাজে ভেজা দেখে নমনী বুঝে নিলো সে কিছু একটা বলতে এসেছে।
— কি বলো?
— ভাবিজান, বলতে লজ্জা পাইতেছি। আবার না বইলাও উপায় নাই। আমার বইন আইজ আসতে ছে। এ বাড়ির কেউ তার আসার খবর জানে না। আপনে আম্মারে একটু কইতে পারেন?
— এ কেমন কথা আমিরা! আমার চেয়ে এ বাড়িতে তোমার অধিকার বেশি। কারণ তুমি অনেক পুরনো এবং বিশ্বস্ত। আমার জানা মতে তুমি গিয়ে বললে কেউ কিছু বলবে না।
— আপনার পায়ে ধরি এইটুকু কাজ কইরা দেন।
নিলুফা বেগম রুমে বসে কুশনের কভার তৈরি করছিলেন। তিনি হাতের তৈরি নানান কাজে বেশ পারদর্শী। এটা সেটা করেই তাঁর দিন কেটে যায়। নমনী এই বাড়িতে আসার পর প্রথম শাশুড়ীর রুমে প্রবেশ করলো। নিলুফার ঘর জুড়ে নিজ হাতে করা অসংখ্য পুঁতির শো পিচ শোভা পাচ্ছে। নমনীর মনে মনে বলে,’ বাব্বা, শাশুড়ী আমার দেখি পুরোদস্তুর কর্মী মহিলা!’
‘ মা ভেতরে আসবো?’ বলতে বলতে সে দরজা ছেড়ে ভেতরে ঢুকে পড়ে। নিলুফা বেগম হাতের কাজ ফেলে ব্যস্ত চিত্তে বললেন,
— পারমিশন চাইতে হবে না। আমার কাছে এসে বসো। কি লাগবে?
নমনী থতথম খেয়ে বললো,
— না… কিছু লাগবে না। একটা কথা বলার ছিলো।
— বলো।- কোমল স্বরে বললেন নিলুফা বেগম।
— আমিরা বলছিলো আজকে গ্রাম থেকে ওর বোন আসছে। সে ভয়ে আপনাদের বলতে সাহস পাচ্ছে না।
— ওই ছোঁয়াচে মেয়েটা আবার আসবে কোন সাহসে?
নমনী অবাক হয়ে গেল। ছোঁয়াচে মেয়ে! কোথাও একটা ঝামেলার ইঙ্গিত পেলো সে। মেয়েটাকে নিয়ে সবার এতো জড়তা কেন? কঠিন কোনো ব্যাপার তাকে নিয়ে পূর্বে এ বাড়িতে ঘটেছে কি?
চলবে……..