#তোমায়_পাবো_বলে
পর্ব_২৫
#নিশাত_জাহান_নিশি
বুকটা ধড়ফড় করে কেঁপে উঠতেই আমি আপুর রুমের দরজা থেকে সরে এসে উপর তলা থেকে ড্রইং রুমের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গলা ছেড়ে চিৎকার করে বললাম,,
“পরশ শুনছেন? পিয়ালী আপু দরজা খুলছেন না!”
পরশ, মা এবং পায়েল বিস্ফোরক দৃষ্টিতে পিছু ফিরলেন। কপালের ভাঁজে হটকারি ভাব ফুটিয়ে পরশ দৃঢ় গলায় বললেন,,
“আবার ডেকে দেখ। হয়তো ঘুমুচ্ছে।”
“অনেক বার তো কড়া নাড়লাম দরজায়। ভেতর থেকে কোনো প্রত্যত্তুর, আওয়াজ বা প্রতিধ্বনি ও আসছে না। আমার ভীষণ টেনশান হচ্ছে পরশ। প্লিজ আপনি একবার এসে দেখে যান।”
এই পর্যায়ে এসে পরশ ভীষন ভড়কে উঠলেন। মুখমন্ডলে উদ্বিগ্নতার ছাপ স্পষ্ট। ঝট করে চেয়ার ছেড়ে উঠে উনি সিঁড়ির দিকে অগ্রসর হলেন। মা বসা থেকে উঠে দ্রুত পায়ে হেঁটে সিঁড়ির দিকে পা বাড়াচ্ছেন আর পেরেশানি গলায় বলছেন,,
“মেয়েটাকে বিগত দু, তিন দিন যাবত খুব আপসেট দেখাচ্ছিল। সময়, সুযোগ বের করে যে জিগ্যেস করব কি হয়েছে মেয়েটার তার ও জোঁ পাচ্ছিলাম না। সব হয়েছে আমার এই কুলাঙ্গার ছেলেটার জন্য। এই এক ছেলের জন্য চিন্তা করতে করতে আমার মেয়েটার দিকে তাকানোরই সময় পাই নি।”
পেছন থেকে পায়েল তিক্ততা মিশ্রিত গলায় মা কে শাসিয়ে বলল,,
“মা প্লিজ। এখন এই কথা গুলো বলা বন্ধ কর। এই সংকটাপন্ন মুহূর্ত গুলোতে ও তোমার অহেতুক বিষয় নিয়ে বকবক করতে হবে? দেখছ, আমরা সবাই টেনশানে আছি আর এই দিকে তুমি আছো আউল ফাউল টপিক নিয়ে ব্যস্ত।”
মা নিশ্চুপ হয়ে পরশের পিছু পিছু পিয়ালী আপুর রুমের দরজায় এসে থামলেন। পর পর কয়েক বার শুকনো ঢোক গিলে পরশ রুমের দরজায় করাঘাত করে চেঁচিয়ে বললেন,,
“পিয়ালী শুনছিস? দরজাটা খোল। এই পিয়ালীলী?”
পরশের পাশাপাশি মা ও কান্নাজড়িত কন্ঠে পিয়ালী আপুকে ডাকতে আরম্ভ করলেন। পায়েল থরথরিয়ে কেঁপে আমার হাত দুখানা চেঁপে ধরে কম্পিত গলায় বলল,,
“আপুর কি হলো ভাবী? আমার না ভীষণ টেনশান হচ্ছে। ভয় ও করছে।”
আমি ও পায়েলের হাত দু খানা চেঁপে ধরে শুকনো গলায় বললাম,,
“আমার মনে হচ্ছে আপুর উডবির সাথে কিছু হয়েছে৷ উভয়ের মাঝে কোনো ঝগড়াঝাঁটি বা কথা কাটাকাটি হয়েছে। যার রেশ ধরেই আপু নির্ঘাত খারাপ কিছু একটা করেছে!”
ইতোমধ্যেই পরশ সামনের চুল গুলো টেনে আতঙ্কিত গলায় বললেন,,
“আই থিংক দরজাটা ভাঙ্গতে হবে। আমি বাহির থেকে লোকজন নিয়ে আসছি।”
মা কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন। ধপ করে ফ্লোরে বসে গুঙ্গিয়ে কেঁদে বললেন,,
“যা করার তাড়াতাড়ি কর পরশ। আমার মন সায় দিচ্ছে না। মনে হচ্ছে মেয়েটা নির্ঘাত খারাপ কিছু একটা করেছে।”
পরশ আর এক মুহূর্ত বিলম্ব করলেন না। ছুট দিলেন বাড়ির বাইরে। আমি এবং পায়েল মায়ের পাশে বসে মা কে শান্তনা দিচ্ছিলাম। এই পর্যায়ে এসে পায়েল ও ফুঁফিয়ে কাঁদতে আরম্ভ করেছে। আমি বসা থেকে উঠে দরজায় আবার ও কড়া নাড়তে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। মাঝে মাঝে দরজাটায় সজোরে ধাক্কা ও মারছিলাম। যে জায়গায় পরশ একজন সবল পুরুষ মানুষ হয়ে দরজাটার কিছু করতে পারেন নি সে জায়গায় আমি তো দুর্বল এক মেয়ে মানুষ। আমার দ্বারা আর কতটুকুই বা সম্ভব হবে? ধৈর্য্য হারিয়ে দরজাটায় লাস্ট ধাক্কা দিতেই আচমকা মনে হলো যেন অবিশ্বাস্য ভাবেই দরজাটা সত্যি সত্যি খুলে গেল! ঘটনার আকস্মিকতায় আমি প্রকান্ড দৃষ্টিতে দরজার ওপাশে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই দেখলাম পিয়ালী আপু অর্ধখোলা চোখে এবং ঢুলুঢুলু শরীরে দরজার এক পাশ ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। হতভম্বিত হয়ে আমি মুখ হাত চেঁপে ধরে চিৎকার করে বললাম,,
“আপুপুপু?”
চেতনা শক্তি হারিয়ে আপু মাথা ঘুড়িয়ে পড়ে যাওয়ার পূর্বেই আমি আপুকে শক্ত হাতে ঝাপটে ধরে বললাম,,
“কি হয়েছে তোমার আপু? কি করছিলে তুমি রুমে?”
ফটাফট মা এবং পায়েল বসা থেকে উঠে আমার মতোই পিয়ালী আপুকে ঝাপটে ধরে কান্নাজড়িত গলায় সমস্বরে বললেন,,
“এই? কি হয়েছে তোর? এমন করছিস কেনো তুই?”
পিয়ালী আপু এবার সত্যি সত্যিই চেতনা শক্তি হারালেন। শরীরের ভার আমাদের গাঁয়ের উপর ছেড়ে দিলেন। আমি, মা এবং পায়েল পেরেশানগ্রস্থ হয়ে আপুকে কোনো মতে বিছানায় এনে লম্বভাবে শুইয়ে দিলাম। কাঁদতে কাঁদতে মা পিয়ালী আপুর শিথিল হয়ে আসা হাত-পা দ্বয় ঘঁষতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। আমি ডেস্কের উপর থেকে পানির জগ থেকে পানি ঢেলে আপুর সমস্ত মুখমন্ডলে ঠান্ডা পানি ছিঁটাতে শুরু করলাম। পায়েল আপুর মাথার পাশে বসে কাঁদতে কাঁদতে আপুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। ইতোমধ্যেই পরশ হম্বিতম্বি হয়ে লোকজন নিয়ে পিয়ালী আপুর রুমে প্রবেশ করলেন। পরশের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আমি গলা জড়ানো স্বরে বললাম,,
“আপু নিজে থেকেই দরজাটা খুলে দিয়েছেন। চলে যেতে বলুন উনাদের। আর যত দ্রুত সম্ভব ডক্টর ডাকুন। আমার মনে হচ্ছে আপু স্লিপিং পিল খেয়েছেন!”
পরশ পিছু ফিরে লোকজনদের ইশারা করে বললেন চলে যেতে। লোকজন রুম থেকে প্রস্থান নিতেই পরশ উদ্বিগ্নতা নিয়ে পকেট থেকে ফোন বের করে ফ্যামিলি ডক্টরের নম্বরে ডায়াল করতেই পায়েল হাসি মুখে পেছন থেকে ডেকে বলল,,
“ভাইয়া, ভাবী। আপুর জ্ঞান ফিরেছে!”
আমি এবং পরশ দৌঁড়ে পিয়ালী আপুর মুখোমুখি দাঁড়াতেই পিয়ালী আপু আঁখিদ্বয় বুজে ঢুকড়ে কেঁদে বললেন,,
“সৌরভ আমাকে ঠকিয়েছে! সৌরভ এখন অন্য কাউকে বিয়ে করতে চাইছে!”
মা কান্না থামিয়ে বিষয়টাকে স্বাভাবিক ভাবে নিয়েই পিয়ালী আপুর ডান হাতটায় চুমু খেয়ে শান্ত গলায় বললেন,,
“তোদের মধ্যে ঝগড়া হয়েছে তাই তো? কোনো ব্যাপার না মা, আমি এই বিষয়ে সৌরভের পরিবারের সাথে কথা বলব। সামান্য ঝগড়াঝাঁটির জন্য এসব পাগলামো করতে হয় মা? তোর ভাইয়া-ভাবীকে দেখ না? এত ভুল বুঝাবুঝি, এত মারধর, শাসন করার পরে ও দুজন কেমন একসাথে আছে! এদের দেখে ও তো কিছু শিক্ষা নিতে পারিস! টয়াকে আমি কম কথা শুনিয়েছিলাম? এখন ও তো শুনাচ্ছি। হয়তো ভবিষ্যতে ও শুনাব! তাই বলে কি টয়া খারাপ কিছু করে বসবে? রুমের দরজা আটকে বসে থাকবে? স্লিপিং পিল নিবে? পরশকে দেখিস না? কি সুন্দর বউয়ের পক্ষে কথা বলে বউকে শান্ত রাখে? দুজন দুজনের ভালোটা কত বুঝে। সৌরভ ও এমন হবে দেখিস। তোকে খুব বুঝবে। সাময়িক ভুল বুঝাবুঝির কারনে আর কখন ও এমন ভুল সিদ্ধান্ত নিবি না মা। মনে থাকে যেন কথাটা!”
আমি এবং পরশ তাজ্জব দৃষ্টিতে মায়ের দিকে দৃষ্টিগোচর করতেই পিয়ালী আপু হিংস্র গলায় বলে উঠলেন,,
“তোমার ছেলে এবং ছেলের বউয়ের জন্যই আমার বিয়েটা ভেঙ্গে যাচ্ছে মা! তাদের কুকীর্তির জন্যই সৌরভের বাবা-মা বিয়েটা থেকে পিছিয়ে যাচ্ছেন। উনারা বলছেন, যে পরিবারের ছেলে পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে একটা মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে যেতে পারে। পরিবারের মান-সম্মান নষ্ট করতে পারে। সে পরিবারের মেয়ে হয়ে আমি যে ভবিষ্যতে তাদের মান সম্মান নষ্ট করব না তার তো কোনো গ্যারান্টি নেই!”
পরশ তুখাড় রেগে দাঁতে দাঁত চেঁপে বললেন,,
“সৌরভের পরিবার এবার একটু বেশিই বাড়াবাড়ি করছে। সৌরভের নাম্বারটা দে তো। আমিই সৌরভের সাথে কথা বলছি!”
মা এবার চটে গেলেন। রাগান্বিত গলায় পরশকে বললেন,,
“সৌরভের সাথে কোনো কথা নেই আমাদের। কথা হবে সৌরভের পরিবারের সাথে। আর সৌরভের সাহস হয় কিভাবে? আমার মেয়েকে সরাসরি বিয়ের ভাঙ্গার কথা বলার? দু পরিবার মিলে বিয়েটা ঠিক করেছিলাম আমরা। সম্পূণ এরেন্জ্ঞ। বিয়ে ভাঙ্গতে হলে সৌরভের পরিবার এসে আমাদের সাথে কথা বলবেন, নয়তো আমরা যাব। এখানে সৌরভ কে হ্যাঁ বিয়ে ভাঙ্গার? সৌরভের পরিবারকে এক্ষনি কল করে বল আমরা বিকেলের দিকে যাচ্ছি সৌরভদের বাসায়। ছেলে খেলা পেয়েছে নাকি? মুখে বলল আর বিয়েটা ভেঙ্গে গেল?”
মায়ের মুখ থেকে কথা টেনে পিয়ালী আপু পুনরায় হিংস্র গলায় বললেন,,
“কেন যাবে ঐ বাড়িতে মা? আমার বিয়েটা ভাঙ্গতে? তোমার ছেলের কুকীর্তি পুনরায় সামনে আনতে? পরিবারের মান-সম্মান ডুবাতে? ছেলেকে নিয়ে খুব গর্ব করতে না? এখন সেই মুখটা থাকবে তো মা? ভাইয়া হাতে ধরে আমাদের পরিবারের বদনাম রটাল। পরিবার, পরিজন, আত্নীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীদের সম্মুখে আমাদের পরিবারের মান সম্মান নষ্ট করল। অথচ এক সময় ভাইয়াকে আমি আইডল মানতাম! আর এখন কি? ভাইয়াই আমার জীবনটাকে নষ্ট করে দিল?”
ইতোমধ্যেই ঠাস করে এক চড় পড়ল পিয়ালী আপুর বাঁ গালে। চড়টা অবশ্যই মা মেরেছেন! বাজখাঁই গলায় মা পিয়ালী আপুকে বললেন,
“বাড়ির মেয়ে হয়ে তুই বাড়ির বিরুদ্ধে বদনাম করছিস? নিজের ভাই সম্পর্কে কটুক্তি করছিস? সেই ভাই, যেই ভাই কিনা তোকে এবং পায়েলকে সেই ছোট বেলা থেকে আগলে আগলে আসছে। তোদের যেকোনো প্রয়োজনে আমাদের চেয়ে বেশি ভেবেছে। তোদের দু বোনের জন্য কম সেক্রিফাইজ করে নি আমার ছেলে। আমি স্বচক্ষে দেখেছি আমার ছেলে তার বোনদের জন্য ঠিক কতটুকু করেছে। সেই ভাইয়ের একটা ভুলের জন্য তুই একটা বাইরের ছেলে এবং বাইরের পরিবারের হয়ে কথা বলছিস? মান-সম্মান গেলে আমাদের গেছে। সাফার করলে আমরা করেছি। এতে সৌরভের পরিবারের কি আসে যায়? বিয়েটা ভাঙ্গলে আমরাই ভাঙ্গব! এক্ষনি আমি সৌরভের বাবার সাথে কথা বলছি!”
মা বসা থেকে উঠতেই পরশ মায়ের হাতটা টেনে ধরে মাথা নুঁইয়ে বললেন,,
“থাক না মা৷ বিষয়টাকে এত জটিল করে দেখছ কেন? ঠান্ডা মাথায় ভেবে একটা সিদ্ধান্ত নাও। আমার এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে সৌরভের সাথে পার্সোনালী কথা বলাটা ভীষণ জরুরী। তুমি চাইলে আমি সৌরভের সাথে পার্সেনালী কথা বলতে পারি!”
“তুই না এক কাজ কর। বউয়ের সাথে বসে বসে পার্সোনালী কথা বল!”
হাসব না কাঁদব বুঝতে পারছি না! মাকে চেনা বড় দায়। এই ভালো তো এই খারাপ৷ পরশ নির্বোধ দৃষ্টিতে মায়ের দিকে তাকাতেই মা রাগে গজগজ করে বললেন,,
“ব্রেকফাস্ট করে অফিসে যা। জবটা আগে কনফার্ম কর৷ সৌরভের পরিবারের সাথে আমিই কথা বলব। আমার ছেলের বিরুদ্ধে কোনো কটুক্তি আমি সহ্য করব না। আমার ছেলে আমার কাছে সবসময় ঠিক। যা বলার আমি আমার ছেলেকে বলব। মারব, কাটব, বকব যা ইচ্ছে তা করব। বাইরের কেউ অধিকার রাখে না আমার ছেলে সম্পর্কে খারাপ মন্তব্য করার। আমার ছেলের চরিত্র নিয়ে দু কথা বলার।”
রাগে গজগজ করে মা প্রস্থান নিলেন। শুকনো ঢোক গিলে আমি স্বয়ং মনে বিড়বিড় করে বললাম,,
“বাপরে! এতো দেখছি ছেলে অন্ত প্রাণ। পূর্বের তুলনায় আমায় আর ও সাবধান হতে হবে। কিছুতেই মায়ের সামনে পরশের সাথে খারাপ ব্যবহার করা যাবে না। বিন্দু পরিমান রাগ, ঝাল ও দেখানো যাবে না। বর্বর তো ভুলে ও বলা যাবে না। আগের বার তো মা রাগ করে মিলি আপুর সাথেই বিয়ে ঠিক করে নিচ্ছিলেন৷ দেখা যাবে এবার বাড়ি থেকেই আমায় বের করে দিবেন ডিভোর্স পেপার সমেত! তখন পরশের কথা ও মা শুনবেন না। বাপরে বাপ! গাঁয়ের লোম দাঁড়িয়ে উঠছে আমার। মা রা সত্যিই বুঝি এতটা ছেলে পাগল হয়?”
পিয়ালী আপু ঢুকড়ে কেঁদে চলছেন। বেহায়ার মত পরশ পিয়ালী আপুর পাশে বসতেই পিয়ালী আপু পরশ ভাইয়ার হাত জোড়া চেঁপে ধরে কান্নাজড়িত গলায় বললেন,,
“স্যরি ভাইয়া। বিশ্বাস করো? আমি মন থেকে কিছু বলি নি তোমায়। অতি দুঃখে মুখ ফসকে কথা গুলো বের হয়ে গেছে৷ তুমি আমার কথায় কষ্ট পেও না ভাইয়া প্লিজ। তুমি যেমন ভাবীকে খুব ভালোবাসো। তেমনি আমি ও তো সৌরভকে ভীষণ ভালোবাসি। তাই তো আমি বিয়েটা ভাঙ্গতে চাইছি না ভাইয়া। প্লিজ তুমি মা কে বুঝাও ভাইয়া। একটু শান্ত হতে বলো মা কে। তুমি বুঝালেই মা বুঝবেন। পারলে তুমি আজকের মধ্যেই সৌরভের সাথে কথা বলো ভাইয়া প্লিজ!”
পরশ ম্লান হেসে অতি সাবলীল গলায় বললেন,
“তুই চিন্তা করিস না। আমি মাকে ঠিক বুঝিয়ে নিব। জানিসই তো! মা যতোটা গর্জেন ততোটা আসলে বর্ষেন না। আর আজই আমি সৌরভের সাথে কথা বলব এই বিষয়ে। তুই এখন একটু রেস্ট নে। ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া কর।”
পিয়ালী আপু মলিন হাসলেন। পরশ দৃষ্টি ঘুড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,,
“পিয়ালীর একটু খেয়াল রেখো। মা আজ ভুলে ও এই রুমে আসবেন না। সো তোমাকেই পিয়ালীর খেয়াল রাখতে হবে। মনে থাকবে?”
মাথা নাঁড়িয়ে আমি হ্যাঁ সূচক সম্মতি জানালাম। মা, আমি, পরশ এবং পায়েল মিলে ব্রেকফাস্ট করে বাকি ব্রেকফাস্ট টুকু নিয়ে আমি পিয়ালীর আপুর রুমে প্রবেশ করলাম। পিয়ালী আপুকে ফ্রেশ করিয়ে খাইয়ে দাইয়ে আমি রান্নাঘরের দিকে অগ্রসর হতেই উপর তলা থেকে পরশের ডাক এলো। বুঝতে পারছি না কি করব এখন! রান্নাঘরে এক গাধা হাড়ি পাতিল পড়ে আছে৷ আগে হাড়ি পাতিল মাজব নাকি পরশের কাছে যাব? দুটানায় ভুগে আমি রান্নাঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকতেই পেছন থেকে মায়ের গলার স্বর কর্নকুহরে ভেসে এলো। মা রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে আসছেন আর তটস্থ গলায় আমায় বলছেন,,
“পরশ ডাকছে কেন শুনে এসো। আমি রান্নার জোগাড় করে দিচ্ছি। পরশ বাড়ি থেকে বের হলেই কাজে লেগে পড়বে। ঘুমিয়ে পড় না আবার! হাত চালিয়ে রান্না করতে হবে। কিছু না বুঝলে অবশ্যই আমায় ডেকে দিবে। আর শুনো? পায়েলকে বলে দিও। আজ ভার্সিটি মিস করতে। পিয়ালীর আশেপাশে থাকতে!”
আমি মাথা নুঁইয়ে বললাম,,
“ঠিক আছে মা!”
মা প্রস্থান নিলেন। আমি ও দু তলায় উঠে প্রথমে পায়েলকে বলে দিলাম ভার্সিটি মিস করে পিয়ালী আপুকে সময় দিতে। এরপর নিজের রুমে প্রবেশ করলাম। পরশ ফরমাল ড্রেসে সিগারেট ফুঁকছেন রুমে! এই বিরক্তি ভরা দৃশ্য দেখতেই আমার ভ্রু উঠে গেল কপালে। চ্যালচ্যালিয়ে হেঁটে আমি লোকটার হাত থেকে সিগারেট টা ছোঁ মেরে কেড়ে নিয়ে তীক্ষ্ণ গলায় বললাম,,
“লজ্জা করে না আপনার? রুমে বসে বসে এই অস্বাস্থ্যকর জিনিসটা ফুঁকতে?”
পরশ বিরক্তি সূচক গলায় বললেন,,
“না করে না। আর এর পুরোটা দোষই তোমার!”
“মানে? কি করলাম আমি?”
”এত লেইট করছিলে কেন আসতে? ১৫ মিনিট পর এসেছ। ১৫ মিনিট আমাকে অযথা ওয়েট করতে হয়েছে!”
“কাজ করছিলাম আমি। শ্বাশুড়ী মা ছুটি দিলেই তবে আমায় আসতে হয়।”
নাক দিয়ে সিগারেটের ধোঁয়া নির্গত করে পরশ আমার হাত থেকে সিগারেটটা ছোঁ মেরে কেড়ে নিতেই আমি নাক ফুলিয়ে বললাম,,
“আবার ও আপনি সিগারেটটা নিয়েছেন? কথা শুনবেন না আপনি আমার?”
মুহূর্তের মধ্যে পরশ হাত থেকে সিগারেটটা ছুঁড়ে ফেলে শক্ত হাতে আমায় ঝাপটে ধরে আমার ঠোঁটে ঠোঁট মিশিয়ে বললেন,,
“শুনব তো কথা। তোমার নেশা লেগে গেছে এখন! সিগারেটের নেশা তো এর কাছে অতি তুচ্ছ!”
মিটিমিটি হেসে উঠতেই পরশ কিছু সময়ের ব্যবধানে আমায় ছেড়ে ভেজাক্ত ঠোঁট জোড়া মুছে ব্যস্ত ভঙ্গিতে ফাইলসহ অফিসের ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে রুম থেকে প্রস্থান নিচ্ছেন আর বলছেন,,
“আসছি আমি। সৌরভের সাথে কথা বলেই তবে বাড়ি ফিরব। নিজের যত্ন নিও। আর মা, পিয়ালী, পায়েল সবার খেয়াল রেখো। কিছু না বুঝলে মা কে অবশ্যই ডেকে দিও।”
#চলবে…?
(তাড়াহুড়োর মধ্যে লিখেছি। রি-চেইক ও করা হয় নি। ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)