#তোর_নামের_রোদ্দুর
পর্বঃ১১
লেখনিতে:মিথিলা মাশরেকা
আজ তিনবছর পর আবারো শুদ্ধকে দেখেছে মুনিয়া।বেশ খানিকটা দুর দিয়ে পাশ কাটিয়ে গেলেও তাকে চিনতে অসুবিধা হয় নি ওর।সেদিন এই মানুষটাই ওর সম্মান বাচাতে গিয়েছিলো,আর তার প্রতিদান হিসেবে আজ অবদি ওর ভাইয়ের তীব্র ঘৃনা বয়ে বেরাচ্ছে।ভাবতেও ওর নিজের প্রতি ঘৃনাটা বেড়ে যায়।যদি সে সময়টায় নিজেকে,আশপাশটাকে বুঝতে শিখতো,তবে হয়তো সবটা অন্যরকমই হতো।তবুও নিজের দোষে শাস্তিটা শুধু নিজে পেলেও তা মেনে নিতো মুনিয়া।কিন্তু সে ঘটনার দায় আজ এতোগুলো মানুষকে কষ্ট দিচ্ছে ভেবে নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করে ওর।ভাবে যদি নিজের ভাগ্যকে মাথা পেতে নিতো,শুদ্ধের কাছে সাহায্য না চাইতো,অন্তত শুদ্ধ আর ওর পরিবার তো জড়াতে না ওর সাথে।কষ্ট পেতে হতো না কাউকেই এভাবে।
.
মেহজাবিন মুনিয়া।বাবা মারা যাওয়ার পর মা ভাইই ওর সব।আয়ান কোনোদিন কোনোকিছুতে কমতি হতে দেয়নি ওর।ইচ্ছে ছিলো বিদেশে পড়াশোনা করবে।সবটুকো দিয়ে আয়ান ওর ইচ্ছেগুলোকে পুর্নতা দিয়েছে সবসময়।শুদ্ধর সাথে আয়ানের পরিচয় হওয়ার আগেই বিদেশে চলে যায় মুনিয়া।তাই আয়ানের যে একটা বোন আছে,নাম মুন,সে বিদেশে থাকে এটুকো ছাড়া কিছুই জানতো না ওর বিষয়ে শুদ্ধ।প্যান্ডেমিকের জন্য বেশ অনেকটা সময়ই পড়াশোনা একপ্রকার নেই বললেই চলে মুনিয়ার,ভাবলো দেশে ফিরে ওখান থেকেই অনলাইন ক্লাস করে নেবে।মা ভাইকেও সময় দেওয়া প্রয়োজন।তাই হুট করেই দেশে ফিরে আসে ও।মুনিয়াকে দেখে আয়ান কতোটা খুশি হয়েছিলো তা আয়ান ছাড়া হয়তো অন্য কেউ বর্ননা করতে পারবে না।ভালোই কাটছিলো ওর মা ভাইয়ের সাথে দেশের দিনগুলো।
অভ্যস!স্বভাব!বরই বেহায়া এরা।এদের যতই তাড়াও,যাবে না।যদি না তুমি চেষ্টা করতেই থাকো।পাশ্চাত্য দেশের আচার ব্যবহার দেশে ফিরেও ধরে রেখেছিলো মুনিয়া।বদলানো হয়ে ওঠে নি।ক্লাবে যেতো ও।সন্ধ্যার আগে ফিরতো বলে কিছু বলতো না আয়ান।কিন্তু একসময় কিছু ফ্রেন্ডের সাথে লুকিয়ে লুকিয়ে বারে যেতে শুরু করে মুনিয়া।অল্প সময়ে প্রচুর বন্ধুবান্ধব জুটে যায় ওর।
এমনি কিছু বন্ধুবান্ধবীর সাথে একরাতে লুকিয়ে বারে চলে যায় ও।সবার মতো সবার সাথে ড্রিংক করেছিলো,আড্ডা দিচ্ছিলো।বারটা কখন ফাকা হয়ে এসেছে,খেয়ালই করেনি।একসময় এক ছেলে বন্ধু এসে গায়ে হাত দেয় ওর।সরিয়ে দিলে আরো দুজন কাছে চলে আসে।সবটুকো জ্ঞান কাজে লাগিয়ে মুনিয়া বুঝতে পারলো,ওরা বড়সড় ক্ষতি করে দেবে ওর।বান্ধবীরুপি মেয়েদুটোও হাসছে,যেনো মজা নিতে এসেছে।
সোজাভাবে দুরে থাকতে বলেছিলো ওদের,কানে তোলেনি।মুনিয়া নিজেও অনেকটাই ড্রাংক ছিলো,গায়ের জোর কতোটাই বা খাটাবে?মোবাইলটা বের করতেই একজন তা কেড়ে নিয়ে নেয়।উপায়ন্তর না দেখে কোনোমতে ধাক্কিয়ে বেরিয়ে আসলো ওখান থেকে।রাস্তায় এসে বুঝলো রাতটা অনেক।এই ফাকা রাস্তায় কেউ সাহায্য করতে আসবে না ওকে।কাদতে কাদতে ছুটতে লাগলো ওভাবেই।
শেহনাজ মন্জিল থেকে ফিরছিলো শুদ্ধ,বরাবরের মতো ওর শ্যামাপাখিকে লুকিয়ে দেখতে গিয়েছিলো ও।রাস্তায় একটা মেয়ের পিছনে চারজন ছেলেকে দৌড়াতে দেখে বুঝতে অসুবিধা হয়নি ওর কি ঘটেছে।দ্রুত ড্রাইভ করে মুনিয়ার সামনে গাড়ি থামায় ও।ছেলেগুলো দাড়িয়ে গেলো।মুনিয়া ছুটে এসে শুদ্ধকে বললো,
-ভাইয়া প্লিজ!হেল্প মি।ও্ ওরা…
এটুকো বলেই কান্না করে দিলো মুনিয়া।শুদ্ধ গাড়ির কাচ নামিয়ে একপলক ওর দিকে তাকালো।হাটু অবদি ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরনে ওর।চুলগুলো ছোটছোট,ছাড়া,নিচের দিকে কিছুটা কালার করা।দেখেই বোঝা যাচ্ছে বিদেশী সংস্কৃতির কোলে বড় হয়েছে।বয়সটা খুব একটা বেশি না।ভয় পেয়ে রয়েছে খুব।মুনিয়া আবারো বললো,
-আ্ আমাকে বাচান।এই ফ্রেন্ড নামক ফ্রডগুলো ধোকা দিয়েছে আমাকে।দে আর ট্রাইয়িং টু ফোর্স মি।প্লিজ হেল্প!প্লিজ!
শুদ্ধ শান্তভাবে বললো,
-ওকে রিল্যাক্স।তুমি গাড়িতে বসো।
কিছুটা ইতস্তত করছিলো মুনিয়া।বিশ্বাসের উপর থেকেই বিশ্বাস ঊঠে গেছে ওর।শুদ্ধ ব্যাপারটা বুঝে বললো,
-ইউ ক্যান ট্রাস্ট মি।ভাইয়া ডেকেছো।ক্ষতি হতে দেবো না তোমার বোন।কি নাম তোমার বোন?
-ম্ মেহজাবিন মুনিয়া।
-ওকে মুনিয়া,ওঠো গাড়িতে।
মুনিয়া গাড়িতে উঠতে যাবে এক ছেলে এসে তখন তখনই ওর হাত খপ করে ধরে ফেলে টানতে থাকে ওকে।সিটবেল্ট খুলে গাড়ি থেকে নেমে ছেলেটার নাক বরাবর ঘুষি মেরে দেয় শুদ্ধ।পরে যায় ছেলেটা।হাত ছাড়া পেয়ে জড়োসরো হয়ে দাড়ালো মুনিয়া।এবার ছেলেগুলোর দিকে তাকালো শুদ্ধ।ওরাও মোটামুটি মাতালের মতো ঢুলছে।একজন বললো,
-উফ্!বাংলা সিনেমা ছাড়া আজকাল কাজ হাসিলই হয়না একদম!আসছে হিরোগিরি দেখাতে!ধুরু!
কথাটা বলেই সবগুলো বিশ্রিভাবে হাসলো।শুদ্ধ শান্তভাবেই বললো,
-দেখো ভাই।ঝামেলা চাচ্ছি না আমি।নিজেদের পথ দেখো।
কথাটা বলে মুনিয়াকে গাড়িতে ওঠার জন্য ইশারা করলো।নিজেও চলে আসছিলো।একজন পথ আগলে দিয়ে বললো,
-আরে ভাই,তুমি তো নিজে নিয়া যাইয়া এন্জয়ই করবা তাইনা?তো আমাদেরও একটু…
শুদ্ধর মাথায় রক্ত চড়ে গেলো।ছেলেটার কলার ঝাকিয়ে দাতে দাত চেপে বললো,
-ইউ বাস্টার্ড!নোংরা চিন্তাভাবনা ছাড়া আর কিছু মাথায় আসে না তোদের তাইনা?বোন ডেকেছি ওকে।
পিছন থেকে একটা ছেলে লোহার পাইপ নাড়াতে নাড়াতে বললো,
-তাহলে বোনকে বোনজামাইদের হাতে তুলে দিয়ে কেটে পরো।
যে ছেলেটার কলার ধরেছিলো,শুদ্ধ ঘুষি দিয়ে মাটিতে ফেলে দিলো ওকে।নিজের মোবাইলটা বের করে মুনিয়ার দিকে ছুড়ে মারলো।ওই ছেলেটার দিকে এগোতে এগোতে বললো,
-বাসা,পুলিশ স্টেশন যেখানে খুশি ফোন করে দাও।এটাকে আমি দেখছি।ওদের ছাড়লে ওরা ভবিষ্যতে আরো মেয়ের সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করবে।
শার্টের হাতা গুটিয়ে এগিয়ে গেলো শুদ্ধ।আগে লোহার পাইপটা নিয়ে মার লাগালো ছেলেটাকে।মুখ থুবড়ে মাটিতে পরলো ও।শুদ্ধ একা তিনজনকে বেধরক পেটাচ্ছে।মারপিট আর রক্ত দেখে ঘাবড়ে যায় মুনিয়া।রক্তে ফোবিয়া আছে ওর।ভয় পাচ্ছে প্রচন্ড।ফোন হাতে নিয়ে আয়ানকে ফোন লাগানোর আগেই একটা ছেলে এসে ইট দিয়ে পেছন থেকে শুদ্ধের মাথায় বারি লাগিয়ে দেয়। আতকে ওঠে মুনিয়া।ফোনটাও ওর হাত থেকে কেড়ে নেয় একজন।গা ছেড়ে দিয়ে মাটিতে শুয়ে পরলো শুদ্ধ।
শুদ্ধ হাতে ভর করে ওঠার চেষ্টা করলো।একটা ছেলে দ্বিতীয়বারের মতো ওর গায়ে লোহার পাইপ দিয়ে বারি মারতেই চারপাশ অন্ধকার হয়ে আসতে লাগলো ওর।আবছা আবছা শুধু এটুকোই দেখলো মুনিয়াকে টেনে টেনে নিয়ে যাচ্ছে ওরা।নিজের সবটা দিয়ে ওঠার চেষ্টা করলো শুদ্ধ।পারে নি।জ্ঞান হারায় ওখানে।
মুনিয়াকে শুদ্ধের গাড়ি করেই ছেলেগুলো নিয়ে যেতে থাকে।গাড়িতে ধরে রেখেছিলো ওকে।জোরাজোরি করে লাভ হয়নি।পাশের ছেলেটার পকেটে ফোন দেখেছিলো মুনিয়া।ভাবলো যেভাবেই হোক ওটা হাতাতে হাবে।চোখ বন্ধ করে অজ্ঞান হওয়ার ভান করলো ও।ওকে যে ধরে ছিলো সে ছেলেটা গা এলিয়ে আরাম করে বসলো সিটে।বললো,
-যাক।বিদেশীনির ছটফটানি থেমেছে।ওই নাহিদ!আর কতোদুর?
-এইতো।পনেরো মিনিট।
ছেলেটা আরো আরাম করে বসলো।মুনিয়া চোখ আধখোলা করে বুঝলো ছেলেটা চোখ বুজে আছে।প্যান্টের পকেট থেকে অতি সন্তর্পনে আস্তেধীরে ফোনটা নিয়ে নিলো মুনিয়া।কল করলে কথা বলতে পারবে না।জানতে পেরে যাবে ওরা।তাই আগে দুবার কল করে ম্যাসেজ করলো ও আয়ানের ফোনে।
‘ভাইয়ু,বাচা আমাকে।আমার বড় ক্ষতি হয়ে যাবে ভাইয়ু।ওরা সর্বনাশ করে দেবে আমার।ওদের একজনের ফোন থেকে ম্যাসেজ করলাম তোকে।প্লিজ তাড়াতাড়ি ফোনটার লোকেশন ট্রেস করে চলে আয়।প্লিজ!’
এতো রাতে শুদ্ধর নাম্বার থেকে আসা এমন ম্যাসেজের আগামাথা কিছু বুঝলো না আয়ান।তাই কল লাগালো।কল বাজতেই পাশের ছেলেটা লাফিয়ে উঠে বসলো।শুদ্ধের ফোনটা মুনিয়ার থেকে কেড়ে নিজের পকেটে পুরেছিলো ও।মুনিয়া তাড়াতাড়ি রিসিভ করে বললো,
-ভাইয়ু,হেল্প মি।চলে আয় প্লিজ!ওরা আমাকে….
শেষ করার আগেই ফোনটা নিয়ে কল কেটে দেয় ছেলেটা।কষিয়ে চড় মারে মুনিয়াকে।চিৎকার করে কাদতে থাকে মুনিয়া।ফোনের ওপাশ থেকে মুনিয়ার গলা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলো আয়ান।রাগে চোখ দিয়ে পানি পরতে লাগলো ওর।শুদ্ধর সাথে ওর বন্ডিংটা তখনো একপাক্ষিক,এখনকার মতোই।শুদ্ধ বরাবরই বেস্টফ্রেন্ড ভেবে ইনসিয়াকে নিয়ে কথা বলে এসেছে ওর কাছে।শুধু ওরই কাছে।কাজিন হওয়ায় যা অন্য কারো কাছে বলাটা সমাচীন মনে হয়নি ওর।প্রথমে ভাবতো হয়তো ওর অনুভুতি্ুলোও ভুল,কিন্তু কি করবে ও?দুর্বল হতে শুরু করেছিলো ইনসিয়ার প্রতি।যা অন্য কোনো কাজিনের প্রতি কোমোদিনই তৈরী হয়নি ওর।নিজেকে দুরে সরিয়ে রেখেও দেখেছে ইনসিয়ার থেকে।লাভ হয়নি।উল্টো ইনসিয়া নামক রোদ্দুরে দগ্ধ হয়েছে।দুরুত্ব কুড়িয়ে কুড়িয়ে খেয়েছে ওকে।
তবে কি শুদ্ধের এতোসব কথা মিথ্যে ছিলো?ইনসিয়াকে ভালোবাসলে কেনো মুনিয়ার সম্মান নিয়ে খেললো ও?আজ মুনিয়ার কথায় স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে ওপাশের লোকটা ওর সাথে খারাপ কিছু করেছে,করতে চলেছে।নাম্বারটা শুদ্ধের।তবে তো এটাই দাড়ায় মুনিয়া শুদ্ধের কাছে আছে,আর শুদ্ধই ওর বিপদের জন্য দায়ী।এতো রাতে মুনিয়া কিভাবে শুদ্ধের কাছে যাবে বা অন্যকিছু ঘটতে পারে এটা ভাবার সুযোগই দেয়নি ও ওর মস্তিষ্ককে।পাগলের মতো বেরিয়ে খুজতে শুরু করে বোনকে।শুদ্ধের বাসায় ফোন করে জানতে পারলো বাসায় নেই ও।মুনিয়াকে যেখানে পায়,শুদ্ধের গাড়িও ওখানে ছিলো।আর ওর ফোন থেকেই তো ম্যাসেজ করেছিলো মুনিয়া।ব্যস্!দ্বিতীয়বার ভাবে নি আর।সবটার জন্য শুদ্ধকেই দোষী সাব্যস্ত করে আয়ান।
সে রাতে ছেলেগুলোর হাতে নিজের সর্বস্ব বিসর্জন দিতে হয় মুনিয়াকে।আটকাতে পারেনি কাউকেই। একটা বাংলোতে নিয়ে গিয়ে পশুর মতো ওর উপর ঝাপিয়ে পরেছিলো ওরা চারজন মিলে।মুনিয়া চেচিয়েছে ওর সর্বোচ্চটা দিয়ে।লাভ হয়নি।একসময় অজ্ঞান হয়ে যায় ও।জ্ঞান ফেরার পর নিজেকে হাসপাতালের বেডে আবিস্কার করে ও।পাশে পেয়েছিলো ওর ভাইয়ু কে।তার চেহারা দেখেই বুঝেছিলো ও জানে মুনিয়া নিজের সতীত্ব হারিয়েছে।কিছু বলার মুখ ছিলো না ওর।তবুও বলতে যেতেই বুঝলো সম্মানের সাথে গলার আওয়াজটাও হারিয়েছে ও।চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে মুনিয়ার।আয়ান নিজেও হুহু করে কেদে দিয়ে বললো,
-কাদিস না মুন।কিচ্ছু হবে না তোর।তোর ভাইয়ু আছে তোর পাশে।
মুনিয়া আরো কাদতে লাগলো।আয়ান এবার হয়ে উঠলো।ডাক্তার এগিয়ে এসে বললো,
-মিস্টার চৌধুরী,ইউ নিড টু বি স্ট্রং।শুধুমাত্র আপনার স্পেশাল অনুরোধে আপনার বোনের কেইস পুলিশ বা মিডিয়াতে জানাজানি হয় নি।আমরা নিজেদের সর্বোচ্চটা দিচ্ছি।মাত্রাতিরিক্ত শকে আপনার বোন ওর বাকশক্তি হারিয়েছে।শরীরের ওপরও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রন নেই ওর।ও শুনবে সবটাই, বুঝবে সবটাই তবে হয়তো বলতে বা আপনাকে বোঝাতে পারবে না।সো ইউ মাস্ট হ্যাভ টু বি স্ট্রং।
ডাক্তারের কথায় নুইয়ে গেলো মুনিয়া।জীবনটাকে খেয়ালখুশিমতো চালানোর ইচ্ছেটা ওকে এমন জীবন প্রতিদান দেবে কল্পনাতেও ছিলো না ওর।ওকে চুপ করতে দেখে আয়ানের হাত মুঠো হয়ে আসলো।চোখ দিয়ে যেনো রক্ত ঝরবে এখনই।শক্ত গলায় বললো,
-তোর এই অবস্থার জন্য শুদ্ধ দায়ী তাইনা?
মুনিয়া ভাইয়ের দিকে তাকালো।আয়ান নিজের মোবাইলটা বের করে শুদ্ধের ছবি সামনে ধরে বললো,
-মুন,এই ছেলেট ছিলো?ও করেছে তোর এতোবড় সর্বনাশ?বল না!ও ছিলো সে রাতে তোর সাথে?
আবারো হাসফাস করতে শুরু করলো মুনিয়া।যে মানুষটা ওকে বাচাতে এসে নিজেই আঘাত পেয়েছিলো,বেচে আছে কিনা তা জানেনা মুনিয়া,সেই মানুষটাকেই ওর ভাই দোষী ভাবছে।মাথা তুলে,শরীর নাড়িয়ে অস্থির হয়ে উঠলো মুনিয়া।মুনিয়ার জবাব নিজের মতো করে বুঝে সেদিন শুদ্ধকেই দোষী ভেবে নিয়েছিলো আয়ান।পুলিশ কেইস না করে নিজের মতো করে একেকভাবে আঘাত করতে শুরু করলো ও শুদ্ধকে।আর সে সবকিছুর জন্য দায়ী একমাত্র মুনিয়া।বিনাদোষে সাজা পাচ্ছে শুদ্ধ!
—————–🍁
একটা কাচের দেয়ালের আড়াল মানুষের মনকে শান্তি শাস্তি দুটোই দিতে পারে।কথাটা দেখে নিলাম আজ।জানালার ওপাশে যতোক্ষন দাড়িয়ে ছিলাম মেয়েটা সদ্য জবাই হওয়া কোনো প্রানীর মতো ছটফট করছিলো।পাশে কেউ ছিলোনা বলে চলে যেতে পারি নি।কেবিনে ঢুকতেই দরজা থেকে আওয়াজ ক্ষীন হতে লাগলো ওর।আস্তে আস্তে থেমে গেলো মেয়েটা।অচেনা হওয়া সত্ত্বেও কেউ আমাকে দেখে এভাবে রিয়্যাক্ট কেনো করবে বুঝলাম না।তবুও তাকে চুপ করতে দেখে ভেতরটায় শান্তি লাগছিলো।এগিয়ে এসে হাতে হাত রেখে বললাম,
-রিল্যাক্স।আমি আছি।
মুনিয়া অবাক হলো।সে রাতে এভাবেই শুদ্ধও ওকে বলেছিলো।ও আছে।এ মেয়েটাকেও চেনে না।তবে বাইরে দিয়ে যাওয়ার সময় শুদ্ধের হাত ধরতে দেখেছে ওকে।তবে কি ওই ইনসিয়া?খুশিতে চকচক করে উঠলো ওর চোখ।যদি তাই হয় তবে ওকে সবটা বলবে ও।ওর ভাই কি বাজেভাবে কষ্ট দিচ্ছে শুদ্ধকে।কিন্তু কিভাবে বলবে?
মেয়েটার এক্সপ্রেশন বুঝে উঠতে পারছি না।একবার খুশি হচ্ছে,আবার অস্থিরতা দেখাচ্ছে।ওদিকে শুদ্ধও এতোক্ষনে হয়তো খুজতে শুরু করে দিয়েছেন আমাকে।নাহ্!যেতে হবে আমাকে।ডাক লাগালাম,
-সিস্টার?কেউ আছেন?
মুনিয়ার কেবিন থেকে ডাক শুনে ছুটে আসলো নার্স।অবাক হয়ে বললো,
-আপনি কে?
-ওয়েল,আমি পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। জানালা দিয়ে দেখলাম উনি কেমন কেমন করছেন।একা ছিলেন,তাই ভেতরে…
-ম্যাম আপনি চেনেন ওনাকে?
-জ্বি না।নিতান্তই উনি ওমন করছিলেন বলে…
-ম্যাম।আজ অবদি অনেকবার উনি এমন অস্থির হয়ে উঠেছেন।প্রতিবারই ঘুমের ওষুধ ইনজেক্ট করে থামাতে হয় ওনাকে।আপনাকে দেখে কি করে…
মেয়েটার দিকে তাকালাম।অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।মনে হলো হাসছে।আমাকে দেখে ও এতোটা শান্ত কেনো হয়ে গেলো?প্রশ্নটা আমারও।কিন্তু এবার যেতে হবে।শুদ্ধ কি করছেন তা ভাবতে এখনই ভয় করছে আমার।হাত সরিয়ে নিয়ে একটু হেসে বললাম,
-টেক কেয়ার।আসছি আমি।
মেয়েটা আবারও উত্তেজিত হয়ে উঠলো।নার্স বললো,
-ম্যাম,উনি চাননা আপনি চলে যান।এমনটা উনি ওনার নিজের ভাইয়ের সাথেও করেন না।
আরেকদফায় অবাক হলাম।বললাম,
-ওকে ওকে,ওকে ফাইন।যাবো না।শান্ত হোন আপনি।
মেয়েটা আবার চুপ।নার্স পাশের টেবিল থেকে ইন্জেকশন নিয়ে আসলো।ওটা দেখেই আবারো রিয়্যাক্ট শুরু ওর।বললাম,
-যাবো না আমি।আপনার রেস্ট দরকার।ইন্জেকশনটা পুশ করতে দিন।এখানেই আছি আমি।
ও থামলো।নার্স ইন্জেকশন দিতেই ঘুমিয়েও গেলো।নার্স বললো,
-ম্যাম,আই থিংক উনি আপনাকে চেনে।নইলে বিশ্বাস করুন,উনি এভাবে ইন্জেকশন নেন না।কয়েকজন মিলে ধরে জোর করে পুশ করতে হয়।আপনি শিওর আপনি ওনাকে চেনে না?
-না।কি নাম ওনার?
-মেহজাবিন মুনিয়া।আর ভাইয়ের নাম আ…
-সিস্টার!আঠারো নং কেবিনের পেশেন্টের ওষুধ দেননি কেনো?
নার্স কথা শেষ না করেই দৌড়ে বেরিয়ে গেলেন।এ নামের কাউকে চিনি না আমি।তবুও আমার জন্য যদি কেউ এতোটুকো স্বস্তি পেয়ে থাকে,আলহামদুলিল্লাহ।মৃদ্যু হেসে বেরিয়ে এলাম কেবিন থেকে।
#চলবে…