#তোর_নামের_রোদ্দুর পর্বঃ২৩

#তোর_নামের_রোদ্দুর
পর্বঃ২৩

লেখনিতে:মিথিলা মাশরেকা

কয়েকটা দিন আগে যাকে বিছানায় পিঠ ঠেকিয়ে সাপোর্ট নিতে দেখলাম,যে মেয়েটা নিজের অস্থিরতা ছাড়া অন্য কোনো ভাব প্রকাশ করতে পারতো না,সেই মেয়েটাই বালিশে পিঠ ঠেকিয়ে শান্তভাবে বসে।পাশেই একজন মহিলা ডাক্তার ওর কনুই ধরে হাত উপরেনিচে নাড়াচ্ছে আর গুনছে।মুনিয়া অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে ওর হাতের দিকে তাকিয়ে।হাত নাড়াচারার সাথে বিছিয়ে রাখা পায়ের আঙুলগুলোও মৃদ্যু কাপছে ওর।এতোটা পরিবর্তন?মাত্র এই কয়েকদিনে?কি করে সম্ভব?

-এন্ড হেয়ার ইট গোজ হান্ড্রেড!মুনিয়া!ইউ আর গেটিং মোর এক্টিভ!খুব তাড়াতাড়ি এই হাত তুমি একাই তুলতে পারবে দেখে নিও।

কথাটা বলে ডাক্তার মুনিয়ার হাত নামিয়ে দিলেন।মুনিয়ার মুখে তৃপ্তির হাসি।আমি বিস্ময় নিয়ে দরজাতেই দাড়িয়ে।ডাক্তার আপুটা বললো,

-ইটস্ টাইম টু স্লিপ!

মুনিয়া আবারো হাসলো।কি সুন্দর মানিয়েছে ওকে হাসিটা।আপুটা ওকে একটা ইনজেকশন দিয়ে শুইয়ে দিলো।চুপচাপ চোখ বন্ধ করে নিলো মুনিয়া।ইনজেকশন দিতে দিলো এভাবে?ঘুমিয়ে গেছে?তাহলে আমি আর থেকে কি করবো?ওর এতোটা ইম্প্রুভ হচ্ছে সেটা দেখেই শান্তি লাগছে।যাক!মেয়েটার সেদিনের মতো পাগলামিটা তো নেই।এখন যা দেখলাম,খুব তাড়াতাড়িই সেরে উঠবে ও।চলে আসার জন্য পা বাড়ালাম।এক নার্স তখনই ভেতরে ঢুকতে গিয়ে আমাকে দেখে বলে উঠলো,

-আরে ম্যাম?আপনি?আপনি ডক্টর?

এটা সেই নার্স যে প্রথমদিন মুনিয়ার সাথে ছিলো।হয়তো এপ্রোন দেখে ভেবেছে আমি ডাক্তার।ওই আপুটা কিছু ফাইলস্ দেখছিলো।নার্সের কথায় চোখ তুলে তাকালো আমার দিকে।একটু অবাক হয়ে পরপরই একগাল হেসে বললো,

-আরে ইনসিয়া?কখন এলে তুমি?

বিস্ফোরিত চোখে তাকালাম আমি।উনি আমার নাম জানেন?কি করে?কিন্তু আমি তো চিনতেই পারছি না ওনাকে।তাহলে?

আপুটা নিশব্দে হেসে ফাইলটা পাশের টেবিলে রেখে বললো,

-ডোন্ট গেট স্কেয়ার্ড্!অতোটাও বাজে দেখতে নই আমি!নাকি চিনতে পারো নি আমাকে?

ভ্রুকুচকে তাকালাম।আপুটা হাসতে হাসতেই বললো,

-আমি ডক্টর ইশিতা।ইশানের বড় বোন।তুমি তাপসীর কাজিন ইনসিয়া না?

শ্বাস ফেললাম আমি।উনি তাপসী আপুর ননদ?হ্যাঁ।তাইতো!ওনার কথা তো সেদিন শুদ্ধও বলেছিলেন।ইশ্!ব্যাপারটা কি বাজে হলো।উনি আমাকে চিনলেন,অথচ আমি চিনলাম না ওনাকে।চিনবই বা কিভাবে?সেই বিয়ের পর তাকে কোনোদিন দেখেছি বলে মনে পরে না।বিয়েতেও অতো মানুষের ভিড়ে দেখা একজনকে এতোদিন মনে রাখা সম্ভব?নিজেকে সামলে বললাম,

-জ্বি আপু।আমিই ইনসিয়া।আর সরিও।আসলে অনেক আগে শুধু বিয়েতেই দেখেছিলাম আপনাকে।তাই চেহারাটা…

-ইটস্ ওকে।দোষটা আমারো বেয়াইন সাহেব।তারপর আর যাওয়া হয়ে ওঠেনি আপনাদের বাসায়।বোঝোই তো,ডাক্তারী পড়া।ছলচাতুরি কাজে দেয় না একদম!হেই!তুমিও তো মেডিকেল স্টুডেন্ট তাইনা?

মাথা উপরেনিচে নাড়ালাম।ইশিতা আপু গলার স্থেটোস্কোপটা হাতে ঝুলিয়ে এগিয়ে এসে বললো,

-এসো ভিতরে?চেনো মুনিয়াকে তুমি?ডেকে দিবো ওকে?

-ন্ না থাক।পেশেন্ট ঘুমোচ্ছে,তাকে এভাবে…

-কিন্তু তুমি তো মনে হয় দেখা করতেই এসেছিলে!

-নো নিড।দেখে নিয়েছি।ও রেস্ট করুক।

-ওকে।চলো তবে আমার ডেস্কে?

-না আপু।যেতে হবে আমাকে।আজ ফার্স্ট ক্লাস ছিলো তো।আর…

-ওকে ফাইন।চলো।আমারো রাউন্ড আছে।হাটতে হাটতেই কথা বলি।হুম?

মাথা নেড়ে হ্যাঁ বুঝালাম।মুনিয়ার দিকে আরেকবার তাকিয়ে ওর কেবিন থেকে বেরিয়ে এলাম।ইশিতা আপু বললো,

-শুনলাম বিয়ে হয়েছে তোমার?

মাথা নেড়েই হ্যাঁ বললাম।ইশিতা আপু জোড়ে হেসে দিয়ে বললো,

-ইশ্!যে বাচ্চা মেয়েটা বিয়ের কথা শুনেই লজ্জা পাচ্ছে,তার বিয়েটাই হয়ে গেলো?

-আসলে আপু…

-ছাড়ো তো আসলে নকলে।তুমি আমার খবর না রাখলেও আমি তোমাদের খবর ঠিকই নেই।কেমন কাটছে বিবাহিত জীবন?বর খুব ভালোবাসে তাইনা?অবশ্য এতো কিউট বউ!ভালো তো বাসতেই হবে!

চুপই রইলাম।আপুটা এভাবে কথা বলবে ভাবতেও পারি নি।ইশিতা আপু হঠাৎই বলে উঠলো,

-মুনিয়াকে কিভাবে চেনো?

আটকে গেলাম।তারপর নিজেকে আবারো স্বাভাবিক করে বললাম,

-আসলে প্রশ্নটা উল্টো আপু।প্রশ্নটা হলো ও আমাকে কিভাবে চেনে?

-মানে?

-মানে কিছুদিন আগে ও আমাকে দেখে অস্থির হয়ে উঠেছিলো,আবার আমি কাছে থাকাতেই শান্ত হয়ে গিয়েছিলো।এমনটা কেনো করেছিলো ও?আমি তো ওকে চিনি না।তাহলে?আজ হাতে সময় ছিলো,তাই ভাবলাম দেখে আসি একবার।এজন্যই আসা।

-ও।আসলে এটা অস্বাভাবিক কিছু নয় ইনসিয়া।তুমি যখনকার কথা বলছো,সময়টা ওর জন্য খুব টাফ ছিলো কোনো কারনে।শুনেছি ও নিজে থেকেই রিকভার করতে চাচ্ছিলো না,রেসপন্স করছিলো না।যেনো তিক্ত ছিলো নিজের লাইফ নিয়ে।আসলে এইসব কেসে পেশেন্টরা চায় ওর কাছে কেউ থাকুক যে ওকে বুঝবে।হয়তো কোনো কারনে ওর তোমাকে দেখে সেরকম মনে হয়েছিলো।সি!ও আমার সাথেও এখন যথেষ্ট ফ্রেন্ডলি।নিজেকে ঠিক করার চেষ্টা করছে ও এখন।অনেকটা স্ট্রং হয়ে গেছে।

-কি হয়েছিলো ওর?

-আমি কিছুদিন যাবত ওর চিকিৎসা করছি।এরআগে অন্যকেউ ছিলো।যতোদুর শুনেছি আর ওর রিপোর্ট দেখে যা বুঝেছি,ওর লাইফে ঘটে যাওয়া কোনো বাজে ঘটনার জন্য নার্ভাস সিস্টেমে প্রচন্ড আঘাত পায়।তিন তিনটে বছর হলো এই হসপিটালে।প্যারালাইজড্ ছিলো এতোদিন।এখনো।অনেকটাই।তবে আস্তে আস্তে রিকভার করছে।মেন্টালি অনেকটা উইক ছিলো বলে এতোদিন রেসপন্স করতো না একদমই।তবে ইদানিং খুব ভালো ইম্প্রুভ দেখছি ওর।হয় ভোকাল কর্ডে সমস্যা,নয়তো ট্রমা টা এতো বেশি গভীর ছিলো যে বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছে।কথা বলানোর শক্তিটা ফিরিয়ে আনার সর্বাত্নক চেষ্টা করেছি।লাভ হয়নি।এখন আর কিছুদিন গেলে থাইরয়েড অপারেশনের কথা ভাবছি আমরা।

-তিন বছরে যা হয় নি হঠাৎ করে এই কয়দিনে এভাবে…

-বলতেই পারো,ইটস্ আ মিরাকেল!মানুষের ভালোবাসায় সব সম্ভব।ওর নিজের ভাইয়ু অফিসিয়াল কাজে আটকে আসতে পারেননি কয়েকদিন।তবে আরেকজন আসে।ওনার সাথে বেশ ভালো সময় কাটায় মুনিয়া।

-নিজের ভাইয়ের জায়গায় অন্যকেউ?লাভার?

আপু জোরে হেসে দিয়ে বললো,

-নাহ্!ওটাও ওর ভাই।ওর ভাইয়ু থাকতে শুনেছি তার কথায় শুধু অস্থির হয়ে পরতো।সবাই নাকি বুঝাতো মানুষটাকে।ওকে উত্তেজিত না করতে,কিন্তু সে আসলে প্রতিবারই রেগে যেতো মুনিয়া।সুস্থ্য হবে কি!এই ভাইটা আসার পর থেকে মোটামুটি বাচ্চাদের মতো ডাক্তার,নার্স সবার সব কথা শুনতে শুরু করেছে মুনিয়া।এটাই বলা যায় ওর কুইক রিকভারির কারন।

-ওর এই নতুন ভাইয়া…

-এসব ছাড়ো।এটা শুনে ভালো লাগছে ইউ কেয়ার ফর হার।অচেনা একটা মেয়ের জন্য এভাবে…

-জানি না কেনো,বাট আমি চাই ও তাড়াতাড়ি সুস্থ্য হয়ে যাক।

একটা কেবিনের সামনে দাড়ালাম আমরা।ইশিতা আপু আবারো স্থেটোস্কোপ গলায় দিয়ে বললো,

-শোনো ইনসিয়া,যদি ও তোমাকে দেখে খুশি হয়,আমি পার্সোনালি রিকুয়েস্ট করবো তুমি ক্লাস শেষে কিছুক্ষনের জন্য হলেও ওর সাথে দেখা করে যাবে।এতে অনেকটাই ইজি হবে আমাদের জন্য।আশা করবো এ পেশাকে সম্মান দেখিয়ে এতোটুকো করার চেষ্টা করবে তুমি।

কিছু না ভেবেই বলে দিলাম,

-হ্যাঁ আপু।অবশ্যই কেনো নয়।কিন্তু ওর ফ্যামিলির লোকজন…

-ওসব আমি দেখে নেবো।আর হ্যাঁ,মুনিয়াকে ওর ফ্যামিলি অতীত এসব নিয়ে কিছু বলা যাবে না।দ্যাট মেকস্ হার হাইপার।

-জ্বি,মনে থাকবে।আজ তবে আসি?ভালো লাগলো আপু আপনার সাথে কথা বলে।

-আমারো।বাই দ্যা ওয়ে,পোস্ট উইডিং গিফট্ হিসেবে কিছু দিতে চাই তোমাকে।কি চাও বলো।

-আরে আরে,কিছুই লাগবে না আপু।দোয়া করবেন।

-হানিমুন কোথায় যাচ্ছো?

ঠিক তখনই ফোন বেজে উঠলো আমার।” বহুরুপী ” নামটা চকচক করছে।একপলক আপুর দিকে তাকালাম।ও একটু হেসে বললো,

-সময় করে এসো একদিন।

কথাটা বলে কেবিনে ঢুকে গেলো ও।ফোন রিসিভ করলাম,

-কই তুই?

-এইতো আসছি।

-আমিও আসছি।

-কোথায়?

-ভেতরে।

কান থেকে ফোন নামিয়ে একপলক ওটার দিকে তাকালাম।ভেতরে আসবেন মানে?ভেতরে এসে কোথায় খুজবেন আামেক উনি?না পেলে পাগল হয়ে যাবেন।ফোনটা আবারো কানে ধরে দৌড় লাগিয়ে বললাম,

-আমিই আসছি।আসতে হবে না আপনাকে ভেতরে।আমি তো…

কলটা কেটে গেছে।হাপাতে হাপাতে গেইটে এসে দেখি শুদ্ধ গাড়িতে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে মোবাইল দেখছেন।তারমানে শুধুশুধু প্যারা দিলো আমাকে।সাদা শার্ট পরেছেন শুদ্ধ।ঘেমে গেছে বগল।কপালেও ঘাম।আমাকে দেখেই সোজা হয়ে দাড়িয়ে ফোনটা পকেটে পুরতে পরতে বললেন,

-ক্লাস তো মেবি আগেই শেষ হয়েছে আজ।রজনীগন্ধার স্টিক হাতে তুই ছাড়া অন্য কোনো ফ্রেশারস্ দেখছি না ক্যাম্পাসে।

-আসলে সেদিনের ওই মেয়েটা যাকে আমি…

-থাক।বলতে হবে না।চল যাই।

-শুদ্ধ ওই মেয়েটা…

-বললাম তো সিয়া,এক্সপ্লেনেশন চাইনি তোর।প্লিজ এই টপিক ছাড় আর গাড়িতে ওঠ।

মনটা খারাপ হয়ে গেলো নিমিষেই।এভাবে কেনো বলছেন উনি?দেরি হয়েছে বলে রাগ করেছেন?আমি তো কারনটাও বলতে যাচ্ছিলাম।সেটা কেনো বলতে দিচ্ছেন না?অবিশ্বাস করছেন আমাকে?

-কিরে?মুর্তির মতো দাড়িয়ে কেনো এখনো তুই?কোলে নেবো?

চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসলাম।মুনিয়ার ব্যাপারটা নিয়ে খুশি ছিলাম।সবটা বলতে চাইলাম ওনাকে।আর উনি?বলতে দিলেন না আমাকে।নিচদিক তাকিয়ে আছি।কোনো কথা বলি নি।গাড়ি স্টার্ট দিয়ে শুদ্ধ বললেন,

-কেমন ছিলো প্রথম দিন?

…..

-কথা বলছিস না কেনো?

-আমার কথা যদি আপনার এক্সপ্লেনেশন মনে হয়,তবে কি লাভ সে কথা বলে?

শুদ্ধ গাড়ি থামিয়ে কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন।আমার দৃষ্টি সামনে স্থির।হুট করে সামনে ঝুকে সিটবেল্ট খুলে দিলেন আমার।মাথাটা টেনে নিয়ে তার বুকের সাথে লাগিয়ে বলতে লাগলেন,

-শুনতে পাচ্ছিস সিয়া?ভেতরটা কি বলে চলেছে?সিয়া নামক হৃদস্পন্দন কি বলছে?শুনতে পাচ্ছিস?আমি তো স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি।এই হৃদপিন্ড দামামা বাজিয়ে বলছে,যদি আমাকেই অবিশ্বাস করো,তবে বেচে থাকার কোনো অধিকার নেই তোমার।কিসের অবিশ্বাস?তবে তো আমি আপন নই তোমার।কিন্তু তুমি তো বলো,সিয়াই তোমার হৃদস্পন্দন।তবে তাকে কি করে অবিশ্বাস করবে?বাচতে পারবে?আর যাই হোক,নিজের হৃদস্পন্দনকে অবিশ্বাস করা যায় না।সেটা কল্পনাতেও ভেবো না তুমি।বেচে থাকতে পারবে না তুমি তাহলে।বেচে থাকতে পারবে না।

তুই যে আমার সেই প্রানের স্পন্দন সিয়া।বেচে থাকার অস্তিত্বের প্রমান।তোকে কি করে অবিশ্বাস করবো আমি?তবে তো শুদ্ধই থাকবে না।তোর কাছে ব্যাখা চাইনি এজন্য নয় যে আমার এতোটুকো অভিমান হয়েছে তোর ওইটুকো দেরী হওয়াতে।এজন্য যে নিজের চেয়ে তোকে বেশি বিশ্বাস করি আমি।কোনো দরকার নেই তোর আমাকে ব্যাখা দেওয়ার।এভাবে না বুঝে কষ্ট দিস না আমাকে সিয়া।পুরো পৃথিবীকে দেখে নেবো আমি,শুধু তোর এতোটুকো অবিশ্বাস সইবে না আমার।কখনো ভুল বুঝিস না আমাকে সিয়া।তোর শুদ্ধ কোনো ভুল করতে পারে না।বিশ্বাস কর,কোনো ভুল করতে পারে না।অবিশ্বাস করিস না আমাকে।কখনো ভুল বুঝিস না।প্লিজ সিয়া।ভুল বুঝিস না আমাকে!

একদমে কথাগুলো বলে শুদ্ধ ছেড়ে দিলেন আমার মাথা।চোখ তুলে তাকালাম তার দিকে।ওই দুই চোখে আজ শুধুই আকুতি।নিজের উপর ঘৃনা হচ্ছে আমার।এই মানুষটার এতো গভীর ভাবনাকে অসম্মান করেছি আমি।ধীর গলায় বললাম,

-আ’ম…আ’ম সরি শুদ্ধ।আমি…আমি আপনাকে ওভাবে…

শুদ্ধ একটু হেসে এগিয়ে কপালে ঠোট ছোয়ালেন আমার।চোখ বন্ধ করে নিলাম।উনি আবারো পিছিয়ে বললেন,

-সরি বলার মতো কিছুই করিস নি তুই।আর আমি জানি,আমার শ্যামাপাখি কোনোদিন সেরকম কিছু করবেও না আমার সাথে।তাই সরি শব্দটা আমাদের দুজনের জীবন থেকে ব্যান করে দেওয়া উচিত।কি বলিস?

এতো বিশ্বাস?কি করে সম্ভব? তার ভাষ্যমতে আমার নামের রোদ্দুরে তো সে শুধু পুড়েছেই।শান্তি দেইনি কখনও তাকে আমি।আজও আমার মুখ থেকে শুধু ভালোবাসি কথাটা শোনার জন্য মানুষটা তীর্থের কাকের মতো আশা করে আছে।আর তার বিনিময়ে?কি দিয়েছি তাকে আমি?মাথা নিচু করে বললাম,

-কিন্তু ভুল আর অভিমান তো জীবনের অনবদ্য অংশ শুদ্ধ।তাদেরকে তো কেনোভাবেই কেউ এড়াতে পারে না।কোনো এক কঠিন মুহুর্তে যদি…

-হুউউউম,ভুল!অভিমান!সেটাও হবে না তোর দ্বারা।অন্তত আমার সাথে তো নাইই।এটাই আমি জানি।তবুও!কখনো যদি তোর সরি বলার প্রয়োজন বলে মনে হয়,তার পরিবর্তে অন্য কিছুর ব্যবস্থা করে দিচ্ছি আমি।আমার অভিমান ভাঙানোর নিন্জা টেকনিক।সরির পরিবর্তে আই লাভ ইউ বলে দিস,কাজ হয়ে যাবো।এতোটুকো অভিমান থাকবে না আমার।ট্রাস্ট মি।

এটুক বলেই শুদ্ধ আবারো আমার সিটবেল্ট লাগিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলেন।আমি চোখ সরিয়ে জানালায় তাকালাম।এতো বিশ্বাস?এতো ভালোবাসা?এসব সইবে তো আমার?যোগ্য আমি এসবের?

#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here