তোর_নেশালো_শহরে Part: 03
#Eshika_Khanom
দেখলেন আপনিই কাল বলেছিলেন যে আমার কোনো প্রয়োজনে আপনার কাছে আসতে। আর আজ আপনার প্রয়োজনেই আল্লাহ আমাকে আপনার কাছে পাঠিয়ে দিল। খোদার কি খেলা তাইনা! এরোনকে বললাম আমি।
এরোন তখন বলল, কি বলতে চাইছ তুমি?
-নাহ কিছুনা, শুধু নিজের মনের কথা ব্যক্ত করলাম।
-ওকে।
-আপনার কিছু বলার নাই?
-কিই বা বলার থাকবে আমার তোমাকে?
-আপনাকে তারা কেন মারছিলেন?
-তোমাকে বলতে বাধ্য নই।
-তা ঠিক কিন্তু আপনাকে সাহায্য করেছি আমি সেই সম্মানেও তো কিছু বলতে পারেন।
-তুমি না বাচালেও আমার কিছু যায় আসতো নাম বাচার ইচ্ছেটাই মরে গিয়েছে আমার। আর মনে রেখ তুমি কিন্তু খুব বড় উপকার করনি আমার। আর যা করেছ নাও তার জন্যে আমি তোমায় টাকা দিয়ে দিচ্ছি।
এটা বলে এরোন তার ওয়ালেট বের করে তার মধ্যে থেকে কিছু টাকা বের করে আমার সামনে ধরল এরোন। আমি হাত দিয়ে বাধা দিয়ে বললাম,
আমি কোনো অর্থপিপাসু মানুষ নই। আর আমার আপনার দেওয়া এই টাকার প্রয়োজন নাই।
-আমি যেহেতু এটা একবার বের করেছি আমার ওয়ালেট থেকে তাই এটা এখন তোমায় নিতেই হবে।
-ওহ এর মানে আপনার ওয়ালেট থেকে ভুল করে আপনার টাকা বা আইডি কার্ড বা অন্যকিছু বের হয়ে গেলে আপনি সেটাও এমন কাউকে দিয়ে দেন বুঝি?
-সবসময় এক বাক্য বেশি বুঝ কেন?
-আপনি এতো অহংকার দেখান কেন?
-তোমাকে উত্তর দিব নাকি আমি?
-আমিও কি আপনাকে উত্তর দিব?
-উফফ বিরক্তিকর।
-অসহ্যকর।
-এই মেয়ে তুমি যাও তো।
-আমাকে এই মেয়ে বলবেন না খালি। আমার নাম মিহি। আর এটা কি আপনার কেনা রাস্তা যে নিজের মনমর্জি করবেন? আমি যাবো না এখানে থেকে।
-ঠিক আছে আমিই যাচ্ছি।
এটা বলে এরোন সেখানে থেকে চলে যেতে লাগলো। কিনতি বেচারা যথেষ্ট ব্যথা পেয়েহে শরীরে আর মনে হয় সে অনেক দূর্বলও তাই সে পড়ে যেতে নিল। আমি তাকে ধরতে নেওয়ার আগেই সে নিজেকে সামলে নিল। আমি তখন তাকে বললাম,
এমনিতেই শরীর দুর্বল সে আবার তেজ দেখায়। থাকুন তো চুপচাপ বসে।
-তুমি যাব কখন?
-আপনাকে যখন নিতে আসবে তখন আমিও চলে যাব। আপনাকে এখানে একা ছাড়ছি না।
-কেন আমি ছোট বাচ্চা নাকি?
-আমি সেটা বলিনি।
-তবে আমাকে একা ছাড়া বা না ছাড়ার মানে কি?
-না আপনার অবস্থাটা ভালো না তাই বলেছি।
-এতো কেয়ার দেখানোর প্রয়োজন নেই আমায়। আমি কারো কেয়ারের যোগ্য না।
-আমি কেয়ার দেখাচ্ছি না। আপনি চুপটি করে বসুন আমাকেও চুপ থাকতে দিন।
এরপর আমাদের দুইজনের মধ্যে কিছুক্ষন নীরবতা ছেয়ে গেল। সময় অতিবাহিত হতে লাগলো। দুটো মানুষ দুই পাশে বসে আছে কিন্তু তাদের মধ্যে হচ্ছে না কোনো ভাবের আদান প্রদান। যে যার যার চিন্তা করতে ব্যস্ত। মাঝে মাঝে এরোনের দিকে তাকাচ্ছিলাম আমি। সে যেন কোন গভীর চিন্তায় মগ্ন। মুখটা দেখে মনে হচ্ছে ভিতরে দহন হচ্ছে তার। তাকে দেখে আমারও কষ্ট হতে লাগলো। তবুও কি আর করার! আমিও আছি আমার নিজের মতো। আসলে আল্লাহর এই দুনিয়াতে সুখী হয়তো কেউ নাই। একমাত্র কবরের মাটি বিহীন হয়তো আমাদের চাওয়া পাওয়ার পেট মনটা ভরবে না। কবরের মাটির মধ্যেই মানুষের সব চাওয়াগুলো মাটিচাপা পড়ে যায়। অনেক সময়ে পেরিয়ে গেল। কিন্তু এরোন যাকে কল দিয়ে আসতে বলেছিল সে এখনো আসলো না। ইতিমধ্যে আকাশ কালো মেঘে ঢেকে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে একটু পরই আকাশের বুক চিরে বৃষ্টি নামবে। এবার আমি নীরবতা ভেঙ্গে বললাম,
আপনি যাকে ডেকেছেন সে কখন আসবে?
এরোন উত্তর দিল, আমিও তো বুঝতে পারছিনা।
-তবে তাকে একটা কল দিয়ে দেখুন।
-হুম।
এরোন তার ফোন বের করে সেই লোকটিকে আবার কল দিল। কি কি কথা বলল আমি বুঝলাম না। এরোন গোমড়া মুখে ফোন রেখে দিল। আমি তাকে এরপর প্রশ্ন করলাম,
কি বলল?
– গাড়ি নষ্ট হিয়ে গিয়েছে। আসতে আরও সময় লাগবে।
– তাহলে আপনি তাকে কল করে বলে দিন আর আসতে হবেনা। গাড়ি ঠিক করে যেন একেবারে ফিরে যায়।
– কেন?
– দেখুন প্রথমত আজ আমার ইন্টারভিউ ছিল বিকেলে যার সময় পেরিয়ে গিয়েছে। আর আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখুন মনে হয় একটু পর বৃষ্টি নামবে।
– হুম তো?
– তাই বলছি বৃষ্টি পরার আগেই চলুন আমরা দুইজন ট্যাক্সি করে বাড়ি ফিরে যায়।
– হ্যাঁ তো যাও।
– আপনিও যাবেন।
– তোমার বাসায়?
– না আমি লেডিস হোস্টেলে থাকি, তাই সেখানে আপনার জায়গা হবেনা।
– আমি এমনিতেও তোমার বাসায় যেতাম না।
– তা যাবেন কেন? আপনি তো বড়লোক মানুষ।
– খোটা দিচ্ছ?
– না।
– ঠিক আছে।
– আমি বলছি কি চলুন আপনাকে আমি ট্যাক্সি করে বাড়ি দিয়ে আসি।
– কেন তোমার কি মনে হয় আমি হারিয়ে যাব?
– তা কেন? শুধু আমার মনের প্রশান্তির জন্যে বলছি।
– দরকার নাই এতো প্রশান্তির তোমার। চলে যাও।
– প্লিজ প্লিজ প্লিজ প্লিজ।( বাচ্চা কন্ঠে বললাম)
– আহ এতো ন্যাকামি কর কেন?
– মোটেও ন্যাকামি না। চলুন না নিয়ে যাই।
– ঠিক আছে চল।
– আচ্ছা আমি ট্যাক্সি ডাকছি।
– উবার ডাকলেই তো হয়।
– একটু চুপ করেন তো।
– ঠিক আছে আর কোনো কথা বলব না, একদম চুপই থাকব।
– ওই না ট্যাক্সি ড্রাইভারকে ঠিকানা বলবেন আপনার।
– ঠিক আছে।
এরপর আমি নেমে পড়লাম ট্যাক্স খুজতে। ভাগ্য ভালো একটা ট্যাক্সি পেয়েও গেলাম। কিন্তু ভাড়াটা একটু বেশি চেয়েছে সে, সমস্যা নাই আমি ম্যানেজ করে নিব। আমি এরোনকে ট্যাক্সিতে উঠতে সাহায্য করলাম। আমি এরপর এরোনের পাশে বসলাম। এরোন ড্রাইভারকে ঠিকানা বলল। এরপর ট্যাক্সি আমাদের নিয়ে যেতে লাগলো কাঙ্খিত গন্তব্যে। রাস্ত্য মাঝপথে বৃষ্টি পড়া শুরু করল। আমি এটা দেখে এরোনকে বললাম,
দেখুন সময়মতো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুফল কেমন। আজ ঠিক রাজি হয়েছেন দেখে আপনি, নাহলে এই বৃষ্টির পানিতে আপনার ক্ষতস্থানে করা ব্যান্ডেজ ভুজে যেত। আপনিও ভিজে যেতেন এরপর আপনাকে একদম কাকের মতো লাগতো।
এতোকিছু বললাম ওনাকে কিন্তু বিনিময়ে তিনি কোনো উত্তর দিলেন না আমায়। এমনকি তার মুখের ভাবেরও কোনো পরিবর্তন হল না। সে নির্বিকারভাবে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি আবার তাকে প্রশ্ন করলাম,
আচ্ছা আপনার বৃষ্টিতে ভিজতে কেমন লাগে? আম্র তো খুব ভালো লাগে। আমার বৃষ্টির ঘ্রাণও খুব ভালো লাগে।
এইবারও এরোন কোনো উত্তর দিল না। আমি এবার তাকে একটা খোচা দিয়ে বললাম,
এই আপনি বলেন না আপনার কেমন লাগে?
এইবার এরোন রেগে উত্তর দিল, এই মেয়ে তুমি চুপ থাকবে? সারাক্ষণ পটপট পটপট। বাচাল কোথাকার। একদম চুপ থাকো।
আমি খুব কষ্ট পেলাম এরোনের আচরণে। আসলে কারো সাথে ফ্রী হওয়াই উচিত না। সবাই শুধু সবাইকে কষ্ট দিতে জানে। সবার সাথে বাজে আচরণ করতে জানে। আচ্ছা আমিও কি এভাবে কাউকে কষ্ট দিয়েছি? আমি আবার এরোনকে কষ্ট দেইনি তো কোনোভাবে? না আমায় উনাকে জিজ্ঞেস করতে হবে। যদি কষ্ট দিয়ে থাকি তবে উনাকে সরি বলে দিব।
কিছু সময় পর আমরা পৌছে গেলাম তার বাড়িতে। আমি ট্যাক্সি ভাড়া দিতে গেলে সে আবার আমায় বকা দিয়ে ভাড়া মিটিয়ে দেন। আরে এতো বকার কি আছে? সারাক্ষণই খালি বকে। আমি উনাকে ধিরে ধরে তার বাড়ির ভিতরে নিয়ে গেলাম। এরপর উনি মা মা বলে ডাকতে লাগলেন। আমার খুব খারাপ লাগলো, ইসস আমার মা বাচা থাকলে হয়তো আমিও মাঝে মাঝে তাকে এভাবে ডাকতাম। একটু পর একজন মহিলা বেড়িয়ে আসে। সে এসে এরোনের এই অবস্থা দেখে চমকে উঠে। কিভাবে হয়েছে তা জানতে চাইলে আমি কথা ঘুরিয়ে বলি,
আন্টি একটু পরে নাহয় শুনবেন কিভাবে কি হয়েছে? আগে একটু এরোনকে বসতে দিন।
আমার কথা শুনে আন্টি আমার দিকে তাকান। কিন্তু আমাকে দেখে তিনি কেন যেন খুব চমকে গেলেন। তিনি সোজাসুজি আমায় প্রশ্ন করলেন,
এই মেয়ে তোমার মায়ের নাম কি?
চলবে……
(আর গঠনমূলক মন্তব্যের আশা করছি না আমি। কষ্ট পাইছি। আর ছোট বলিয়া লজ্জা দিবেন না। প্রতিদিন এর চেয়ে আমি বেশি লিখা সম্ভব না।)