তোর_নেশালো_শহরে Part: 04
#Eshika_Khanom
এই মেয়ে তোমার মায়ের নাম কি? এরোনের মা আমায় প্রশ্ন করল।
আমি বললাম, কেন আন্টি?
-আহ যেটা প্রশ্ন করেছি সেটার উত্তর দাও।
-আমার আম্মুর নাম দিয়ে আপনার কাজ কি?
-এই মেয়ে তুমি খুব বেশি কথা বল।
-ওকে সরি। আসলে কারণটা জানতে চাইছিলাম।
-সেটা নাহয় পরে জানবা, আগে বলো তো!
-আমার মায়ের নাম সায়মা পারভীন।
-আচ্ছা আচ্ছা তোমার সমস্যা না হলে তুমি একটু এরোনকে সোফাতে বসাবা, আমি একটু একটা জিনিস নিয়ে আসি।
-হুম আন্টি সমস্যা নাই।
-হুম একটু সময় দাও আমায় তোমরা আমি আসি।
এরোন তখন প্রশ্ন করল, মা তুমি এখন আবার কই যাও?
-আরে আমার রুমেই যাচ্ছি। বস না তোরা একটু।
এরোনের মা চলে গেল। আর আমি এরোনকে সোফাতে বসিয়ে দিয়ে কোম্রটা ধরে দাঁড়িয়ে রইলাম। এরোন তখন বিরক্তি নিয়ে বলল,
আল্লাহই জানে আম্মুর আবার কি হয়েছে?
-আমিও তো বুঝলাম না। কিন্তু আমার তাকে খুব উত্তেজিত মিনে হয়েছে।
-কি জানি, নিজের ব্যথায় বাচি না আর ঐদিকে আম্মুর কিছুই বুঝিনা। তুমি বসছ না কেন?
-বসব পরে আপনি একটু ঘাড়টা এলিয়ে বসুন।
-হুম।
-আচ্ছা আপনি আন্টিকে কি বলবেন জখন সে প্রশ্ন করবে আপনার এই অবস্থা কিভাবে হল?
-এই প্রশ্ন করলে আমি একটু রাগ দেখাব তাহলে আর প্রশ্ন করবেনা কখনও।
-তাই বুঝি?
-হুম।
-বাহ!
-এরোন আহমেদকে তুমি কি মনে কর? দেখলে হবে, খরচ আছে।
-আমি বিনা খরচেই আপনাকে ২দিন ধরে দেখছি।
-ধ্যাত খালি কিসের মধ্যে কি ঢুকাও? মুডটা নষ্ট করে দিলা।
-ভালো।
এরমধ্যে এরিক এসে সেখানে উপস্থিত হয়। আমি তো তাকে দেখে প্রথমে চিনতে পারিনি। আমি তো তার নামও তখন জানতাম না। সে আমার দিকে কিভাবে যেন তাকিয়ে ছিল। তার আমার দিকে তাকানো দেখে আমার কেমন যেন একটু অস্বস্তি লাগলো। এরিক এরোনকে প্রশ্ন করল,
এরোন ও এখানে কি করছে? আর তোরই বা এই অবস্থা কেন?
এরোন এরিকের দিকে তাকায়। তারপর মাথাটা হালকা ঝাকিয়ে বলে, আরে তুই যা মনে করছিস তা না। ও তো রাহি না। ও রাহির যমজ, ওর বড় বোন মিহি।
এরিক তখন বলল, ওহ তাই বল, আমিও তো ভাবলাম রাহি এখানে কি করছে। আচ্ছা তোর এই অবস্থা কিভাবে হল?
-ভাই তুই চুপ থাক, তোর সাথে এটা নিয়ে পরে মিটিং হবে।
-কিন্তু আমায় এটা বল, এটা কি তোর প্রেমে ছ্যাকা খাওয়ার কোনো চিহ্ন?
-তুই চুপ থাকবি?
-আচ্ছা যা চুপ থাকলাম।
আমক এতোক্ষণ চুপ করে এদের আলাপন শুনলাম। আমি এরোনের দিকে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। এরোন কিভাবে যেন আমার মনের কথা বুঝতে পারলো। এরোন আমাকে বলল,
আরে মিহি ও আমার ভাই। গতকাল তোমায় যার কথা বললাম। ও হল এরিক।
আমি তখন বললাম, আচ্ছা ঠিক আছে।
এরিক তখন আমায় বলল,
আচ্ছা আপনার সেই হাই ভোল্টেজ এর রাগী বোন এখন কই?
আমি যেন ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম এরিকের এমন প্রশ্ন। রাহিকে নিয়ে এটা কেমন কথা!? আমি বললাম,
ও মনে হয় এখন হোস্টেলে।
এরিক প্রশ্ন করল, আপনারা হোস্টেলে থাকেন?
আমি উত্তর দিলাম, হুম।
এরিক আবার প্রশ্ন করল, আপনার পরিবার?
এরোন এবার ঝাড়ি দিল এরিককে। আর বলল,
এই এরিক তুই কথা কম বল!
আমি তখন এরিককে বললাম, ভাইয়া আমার পরিবারে শুধু রাহি আর আমিই আছি। আমার মা বাবা নেই। আমি আর রাহি একসাথে একটা লেডিস হোস্টেলেই থাকি।
এরিক তখন অনুতপ্ত সুরে বলল, ওহ সরি। কেমন আছেন আপু?
-আলহামদুলিল্লাহ।
এরিক আবার এরোনকে প্রশ্ন করল, এরোন আমি যা চিন্তা করছি তা কি ঠিক? আমাদের আশা কি সত্যিই পূরন হতে চলেছে? আমরা কি সত্যিই দুই বোন…….
এরোন আবার রেগে বলল, এরিক তুই চুপ থাক প্লিজ। আমার এমনিতেই ভালো লাগছে না।
এরিকের কথাটা আমার মাথায় ঘুরছে। এরিক কি অসম্পূর্ণ কথাটা বলল সেটা আমার সম্পূর্ণভাবে জানতে ইচ্ছে করছে। এর মধ্যে আবার এরোনের মা একটা অ্যালবাম নিয়ে হাজির হল। তারপর সেটা নিয়ে সে সোফায় বসল এবং আমায় ডেকে তার পাশে বসতে বলল। আমিও চুও করে তার পাধে এসে বসলাম। তিনি এরিককেও একটা সোফায় বসতে বললেন। তারপর তিনি সেই অ্যালবামটি খুললেন এবং আমাদের সামনে ধরলেন। তারপর তিনি আমায় আমার মায়ের একটা পুরোনো ছবি দেখিয়ে বললেন,
দেখ তো মা, ইনিই কি তোমার মা?
আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক উত্তর দিলাম। সে তখন বললেন,
আলহামদুলিল্লাহ। মা তোমার কি কোনো যমজ বোন আছে?
এরিক তখন মাঝ দিয়ে বলে উঠল, আলবাদ আছে আম্মু। উনার বোন অনেক রাগী আর পুরো একটা টমেটো।
এরোন আবার ঝাড়ি দিয়ে বলল, এরিক আম্মু কথা বলছে তো।
আমি তখন আন্টিকে প্রশ্ন করলাম, আন্টি আপনি আমার আম্মুর ছবি কোথায় থেকে পেলেন।
তখন আমায় কোনো উত্তর না দিয়ে তিনি আমায় তার বুকে জড়িয়ে নিলেন। তারপর তিনি বললেন,
আরে মা আমি তোমার মায়ের বড় বোন হই। এখন থেকে আমায় খালামনি বলবা তুমি।
আমি, এরোন আর এরিক একসাথে তখন প্রশ্ন করলাম, কি?
খালামনি তখন বললেন, আরে তোদের বলতাম না আমার ছোট বোনটা আর নেই দুনিয়াতে। আবার তার দুই যমজ মেয়ে আছে যাদের কোনো খোঁজ আমার কাছে নাই। আল্লাহর কি কুদরত দেখেছিস? আজ আমার বোনের মেয়ে দুইটাকে আমি পেয়ে গিয়েছি। অবশ্য একটাকে। তা মা তুমি কে? মিহি নাকি রাহি?
এরিক বলল, এই মানুষটি হলো মিহি। রাহি তো পুরো এটম বোম।
খালামনি তখন তার এক ভ্রু কুচকে এরোন আর এরিককে প্রশ্ন করল,
তোরা মিহি আর রাহিকে চিনিস?
এরিক তখন দাঁত এলিয়ে বলল,
আরে মা রাহি আর আমি তো একই ব্যাডমিন্টন ক্লাবের মেম্বার। আর এরোন ভাইয়া মিহিকে চিনে। অবশ্য আমরা দুইজন আজই জানলাম যে এরা দুইজন আমাদের সেই খালাতো বোন।
খালামনি তখন বলল, আচ্ছা মিহি তাহলে আর তোমার যেয়ে কাজ নাই। তোমরা যেখানে থাক সেখানের ঠিকানা এরিককে দাও, এরিক গিয়ে রাহিকে নিয়ে আসবে আর সাথে তোমাদের প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস থাকলে তাও নিয়ে আসবে
আমি বললাম, আচ্ছা ঠিক আছে খালামনি।
এরিককে তখন খালামনি বলল,
আর শুনো এরিক আমি এরোনকেও পাঠাতাম, কিন্তু দেখছিস না এরোনের কি অবস্থা। তাই তুই একা যা গাড়ি নিয়ে।
এরিক তখন সোফা থেকে উঠে দাড়িয়ে বলল,
আর আম্মু আমি একা যেতেই বেশি খুশি। এতেই আমার অনেক সুবিধা। আর কাজটা তুমি আমায় দিয়েছ তার জন্যে ধন্যবাদ।
এরোন ভ্রু কুচকে তখন এরিকের দিকে তাকালো। খালামনি তখন প্রশ্ন করল, কেন?
এরিক তার মাথা চুলকে বলল, এমনিই আম্মু।
এরোন তখন বলল, তোর মধ্যে নিশ্চিত কোনো খিচুড়ি রান্না হচ্ছে তা আমি ঠিক বুঝতে পাচ্ছি এরিক।
এরিক বলল, আরে এরোন কি বলিস এসব? মাথায় আবার খিচুড়ি রান্না হয় কেমনে।
এরোন বলল, আমার থেকে লুকাতে পারবিনারে। আমি কিন্তু ঠিকই বুঝেছি।
এরিক বলল, বুঝল বুঝপাতা আর না বুঝলে তেজপাতা।
এরোনের মা বলল, তোরা কি বলছিস আমাদের একটু বুঝা? আমরাও বুঝি।
এরিক তখন বলল, নাহ মা তোমার বুঝে কাজ নাই। বেশি বুঝলে তুমি আবার পাকনা হয়ে যাবা তাই বলব না।
খালামনি তখন বলল, শয়তান ছেলে যা তুই তোকে যে কাজ দিয়েছি সেখানে। সবসময় পটপট করিস বেশি। আর মিহি তুমি একটি ওকে তোমাদের ঠিকানাটা দিয়ে দাও আর রাহিকে কল দিয়ে জানায় দাও।
আমি বললাম, ঠিক আছে খালামনি।
আমি এরিককে আমাদের লেডিস হোস্টেলের ঠিকানা দিয়ে দিলাম। সে তৎক্ষনাৎ সেখানে রওয়ানা দিল। আর আমি রাহিকে কল দিলাম আর রাহি রিসিভ করল। আমি রাহিকে সব বুঝিয়ে বললাম ঘটনা সম্পর্কে। আর রাহিকে বললাম সব গুছিয়ে রাখতে। রাহিও আমাদের হ্যাঁসূচক উত্তর দিল।
চলবে…..
(এরিক আর রাহি এবার একসাথে হচ্ছে। আপনারাই বলেন তাহলে এদের মধ্যে এবার কি ঘটতে পারে? আপনাদের ধারণা আমায় জানায়েন আর ছোট হওয়ার জন্যে দুঃখিত। আল্লাহ হাফিজ। )