” বাবার মৃত্যুর পর তোর সাথে আমার কোন রকমের সম্পর্ক থাকবে না পুতুল!
‘পরশ ভাই এসব করার কি খুব প্রয়োজন?
তোকে সারাজীবনের জন্য মেনে নিতে পারবো না।এই মূহুর্তে তোকে বিয়ে করা ছাড়া উপায় নেই। তাই চুপচাপ সাইন কর এগ্রিমেন্ট পেপারে।
‘আমাকে এতোই যখন ঘৃণা কর তাহলে বিয়ে কেন করছো? তুমি বরং জুলিয়াকে বিয়ে করো।জুলিয়া দেখতেও সুন্দরী।
আমি কাকে বিয়ে করবো সেটা নিয়ে তোকে ভাবতে হবেনা। তুই তোর কাজ কর।
পুতুল কাগজে সই করে দিলো। সবে ক্লাস টেনে উঠেছে পুতুল। পরশ তার আপন বড় চাচার ছেলে এবার অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে।
পুতুল আর এক মূহুর্ত দেরি না করে নিজের মায়ের রুমে চলে আসলো।
সুফিয়া বেগম নিজের গয়নার বাক্স বের করে পুতুলের জন্য গয়না দেখছে। পুতুল পেছন থেকে সুফিয়া বেগম কে জড়িয়ে ধরে বলে আম্মু আমি বিয়ে করবো না।
‘সে কি কথা পুতুল তোর বড় আব্বুর শেষ ইচ্ছে তোর আর পরশের বিয়ে দেখে যাবে।আর তোকে তো কোথাও নিয়ে যাচ্ছে না। তুই তো এখানেই থাকবি।তোর আটারো বছর হলে তখন আবার ধুমধাম করে বিয়ে দিয়ে পরশের ঘরে পাঠাবো।
‘আমি পরশ ভাইয়াকে বিয়ে করবো না। তুমি জুলিয়াকে বিয়ে দাও।
‘বালাই ষাট। আর এমন অলুক্ষুনে কথা মুখে আনবি না। পরশ হচ্ছে আমাদের হিরের টুকরো ছেলে।
পুতুল এবার কেঁদেই দিলো। পুতুল কি করে বোঝাবে পরশ তাকে পছন্দ করেনা। পরশ তো পুতুলকে দেখতেই পারেনা। সুফিয়া বেগমকে ছেড়ে দিয়ে দৌঁড় চলে আসলো দো তলায়। নিলুফা বেগম শুয়ে ছিলেন। পুতুল তার পাশে বসে তার হাত ধরে বলে,ও বড় মা বড় মা।আমি পরশ ভাইয়াকে বিয়ে করবো না।
নিলুফা বেগম ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলেন। এই বাড়িতে আসার পর থেকে পুতুলকে তার ভিষন পছন্দ।
কিরে সে কি কথা মা! তুই পরশকে বিয়ে কেন করবি না।
‘পরশ ভাইয়ার সাথে জুলিয়ার বিয়ে দাও খুব মানাবে।
‘,ওরে পাকা বুড়ি। তুই কি বুঝবি কি মানাবে আর কি মানাবে না। তোর সাথে পরশকে দারুণ মানাবে।
নীলুফা বেগমের রুমে আসতে চাইলে পুতুলের কথা শুনে দাঁড়িয়ে পরে পরশ। পুতুলের সব কথা শুনে নিজের হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নেয়।
পুতুল এবার নিলুফা বেগমকে জড়িয়ে ধরে বলে, আমি করবো না বিয়ে বড় আম্মু। পরশ ভাইয়াকে দেখলেই আমার ভয় করে। কেমন করে যেন আমার দিকে তাকায়!
– আগে ভয় পেতে কারন তখন তোর বড় ভাই ছিলো।এখন ভয় কেটে যাবে কারণ এখন সে তোর বর।
– আমি করবো না বিয়ে তুমি জানো একবার পরশ ভাইয়া আমাকে কি শাস্তি দিয়েছিলো!
– তোকে আবার কবে শাস্তি দিলো?
– তখন আমি ক্লাস থ্রিতে পড়ি। আমাদের ক্লাসের রাজু ছিলো। ও আমার গালে কিসি দিয়েছিলো। পরশ ভাইয়া এটা দেখে আমাকে বিলের মধ্যে এক দুপুর দাঁড় করিয়ে রেখেছিলো।
– সেসব তো ছোট বেলার কথা। বোকা বোকা কথা বাদ দে পুতুল। তুই এসব নিয়ে ভাবিসা না।
– ও বড় আম্মু আমি বিয়ে করবো না।
– এরকম কথা বলতে নেই মামুনি। দেখবি পরশ তোকে খুব ভালোবাসবে একদিন। আর পুরুষ মানুষ বাহিরে রাজা হলেও সংসারে রাজত্ব শুধু বউদের চলে!!
পুতুল এবার উঠে ছাদে চলে আসলো। তার দুঃখ কাউকে বোঝাতে পারছেনা। পরশ ভাই তাকে পছন্দ করে না। তাহলে পরশ ভাইকে কেন বিয়ে করবে সে?
পুতুল মোটেও বিয়ে করবে না। পুতুল এতো ভদ্র মেয়ে তো না! পুতুল বুদ্ধি আঁটতে থাকে কি করা যায় কি করলে বিয়েটা ভেঙে যাবে। অনেক চিন্তা ভাবনা করর কিছু না পেয়ে গেয়ে উঠলো ওরে নীল দড়িয়া আমায় নে রে নে ভাসাইয়া।
জুলিয়া পেছন থেকে এসে বলে,কিরে রঙ লেগেছে নাকি মনে।
‘রঙ তো লাগবেই বলো, আমি সুন্দরী কিনা তাইতো আমার বিয়ে হচ্ছে। পুতুল ইচ্ছে করে খোঁচা দিয়ে কথা বলছে।
‘তোর নামই তো পুতুল সুন্দরী বলেয় তো এই নাম।
‘তুমি সুন্দরী হলে আজ তোমার বিয়েটা আগে হত। থাক মন খারাপ করে না। বেশি করে ফেয়ার এন্ড লাভলী মাখো সুন্দরী হয়ে যাবা।
‘পুতুল কথাটা বলে নাচতে নাচতে সিঁড়ি বেয়ে নিচে চলে আসলো। আগুনে ঘি ঢালার কাজ শেষ। এবার আগুন দ্বিগুণ হারে জ্বলে ওঠার অপেক্ষা।
নিজের রুমে সাউন্ড বক্সে নাগিন গান ছেড়ে উড়াধুরা নাচ দিচ্ছে।
পরশ পুতুলের দরজার সামনে এসে পুতুল পুতুল করে ডাকতে লাগলো। পুতুল গান বন্ধ করে দরজা খুলে দিলে। পরশ ভেতরে এসে আরাম করে পুতুলের বেডের উপর পায়ের উপর পা তুলে বসে বলে, তোর বিয়েতে কি রঙের শাড়ী চাই?
‘আমাকে দেখে কি তোমার বুড়ি মনে হয়!আমি শাড়ী পরবো না বিয়েতে নায়ড়া ড্রেস পরবো।কালোর মধ্যে গাড়ো হলুদ তার মধ্যে গাড়ো সবুজ নায়ড়া ড্রেস আনবে ঠিক আছে।
‘এটাই ফাইনাল?
‘না না সাথে একটা সারারা আনবে। হালকা মেটে কালারের মধ্যে গাড়ো ইট কালারের জড়ি সুতোর কাজ আর একদম চকচকে জলপাই কালারের স্টোন বসানো। আর ছাই রঙের লিপস্টিক আর কমলা রঙের আইসেডো। সব ঠিকঠাক আনবে কিন্তু। বিয়ে তো একবারই হয় মনের মত সাজতে হবে তো নাকি।
পরশ উঠে চলে গেলো। পরশ চলে যেতেই পুতুল হাসতে হাসতে শেষ। ভালো জব্দ করেছি বেডাকে আসছে আমাকে বিয়ে করতে সখ কত হু!
পরশ চলে যেতেই পুতুল নাচ শুরু করলো, Angrezi chidiya ki khaatir
Dasi dil mere tod diya
Maine chhod diya
usey chhod diya
Uski kaali kartooton ne
Uska bhaanda phhod diya
Maine chhod diya
usey chhod diya
Dil pe phattar rakh ke..
Mooh pe makeup
Kar liya
Mere saiyyan ji se aaj maine
Breakup kar liya
Mere saiyyan ji se aaj maine
Breakup kar liya
পরশ আবার এসে বলে,নিজের বরবাদিতে কেউ এতো আনন্দিত হয়! তোকে না দেখলে জানতাম না। আর আজ বাদে কাল তোর বিয়ে তুই নাচবি মুঝে সাজান কি গাড় জানা হ্যা,।মেহেদী হ্যা রাচনে ওয়ালী। আর তুই নাচছিস, Breakup song!
‘বরবাদ আমি না, বরবাদ হবে তুমি। আর এই গান আমার এমনিতেই পছন্দ কেমন নাচিনাচি গান।আর আফসোস তো হচ্ছে তোমার জন্য, জুলিয়ার মত এতো সুন্দরী কাজিন থাকতে তোমাকে বিয়ে করতে হচ্ছে কাকে?আমার মত শ্যামলা এক মেয়েকে।
‘বিয়ে না এটা যাস্ট একটা এগ্রিমেন্ট। বাবার মৃত্যুর পর তুই তোর রাস্তায় আমি আমার রাস্তায়।
‘তারমানে তুমি বড় আম্মুর মৃত্যু কামনা করো?
‘দেবো ঠাটিয়ে এক চড়। আমি কখন বললাম।
‘ধরো বড় আম্মু অনেক অনেক বছর বেঁচে থাকলো, তখন কি করবে?
‘ভেরি সিম্পল। গোপনে আরেকটা বিয়ে করে নেবো৷ তুই বাসায় সবার বউমা৷ আর বাহিরে সে আমার প্রিয়তমা।
‘তোমার লজ্জা লাগে না আমার মত এক পিচ্চি মেয়েকে বিয়ে করছো?
‘তুই পিচ্চি! আজ বিয়ে হলে কাল পিচ্চির মা হয়ে যাবে, সে নাকি আবার পিচ্চি!
‘আমার আর তোমার বয়সের ডিফারেন্স কত?
‘সেসব তুই হিসেব কর আমার এসবে কোন ইন্টারেস্ট নেই। আমি তো বিয়ে করছি নিজের কুল পার্সোনালিটি ধরে রাখার জন্য।
‘তোমার আসল চরিত্র আমি জানি। বলেই নিজের দুই ঠোঁট হাত দিয়ে ঢেকে রাখলো৷
‘কি মুখ ঢাকলি কেন বল কি বলতে চাচ্ছিস।এখনো একান্ন-টা চুম্মু খাওয়া বাকি আমার।
পুতুলের মনে পরে গেলো পুরোনো কথা। ভয়ে দু’কদম পিছিয়ে গেলো।
পরশ দু’কদম এগিয়ে এসে বলে,কিরে বল কি বলছিলি। ঠোঁট কেন ঢাকছিস বলনা বল৷
‘পুতুল আরো কয়েক কদম পিছিয়ে যেতেই দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলো৷
‘পরশ আরো এগিয়ে এসে, দেয়ালের দু’পাশে হাত রেখে বলে, এবার কই পালাবি?
#তোর_পরশে_প্রেম
#নুসাইবা_ইভানা
সুচনা পর্ব
#চলবে