#তোর_পরশে_প্রেম
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -১০
রাত বারোটা ছাড়িয়েছে এখন পর্যন্ত পুতুলের কোন খোঁজ পায়নি পরশ। পাগলের মত এই বাসা থেকে ওই বাসা এভাবে পুতুলের পরিচিত সব ফ্রেন্ডদের বাসায় খোঁজ করেছে। এখন রাত দুটো’ছুঁই ছুঁই তবুও কোন খোঁজ নেই। ল্যামপোস্টের আধো আলোতে নিজের ছায়া ছাড়া কিছুই দেখা যাচ্ছে না।ডিসেম্বরের শেষর দিকে শীতের রাত তবুও কোন হেলদোল নেই পরশের মধ্যে। পাতলা একটা শার্ট আর জিন্স পরে সারাক্ষণ পাগলের মত খুঁজে চলেছে পুতুলকে। গাড়ী থেকে নেমে পায়ে হেঁটে হেঁটে খুঁজেছে একে, ওকে জিজ্ঞেস করেছে পুতুলের কথা। রাস্তায় বসে চিৎকার করে বলে,পুতুল তুই কোথায়?তোকে ছাড়া আমি যে বড্ড অসহায়। তুই আমার প্রথম প্রেম, প্রথম অনূভুতি, প্রথম ভালোবাসা। তোকে জানানো হলো না। ফিরে আয় পাখি। বেশ কিছুক্ষণ রাস্তায় বসে থেকে হঠাৎ মনে পরলো, পুতুলের রেখে যাওয়া মোবাইল আর চিঠির কথা। চোখের কোনে জমে থাকা অশ্রুটুকু মুছে নিয়ে দ্রুত গাড়ীতে যেয়ে পকেট থেকে সে-সব বেড় করলো।
চিঠির শুরুতেই লেখা…….. প্রিয় বাবা তুমি তো আমার নাম পুতুল রেখে ভেবেছো,আমি হয়তো সত্যি কোন হাতে তৈরি কাঠের পুতুল বা কাপড়ের পুতুল। বাবা আমি রক্তে মাংসে গড়া জলজ্যান্ত মানুষ। আমার ভালো লাগা, খারাপ লাগা, পছন্দ, অপছন্দ আছে। আমি পরশ ভাইয়াকে পছন্দ করতাম। তার সাথে বিয়ে হলে তবুও মানিয়ে নিতাম। যদিও লোক সুবিধার না তবুও মেনে নিতাম৷ কিন্তু আধ বুড়ো পরাণ ভাইকে বিয়ে করা সম্ভব না। আমাকে ক্ষমা করলে করো না করলে না করো। শুধু আমার মায়ের খেয়াল রেখো। আর হ্যা তিন বছর পর আমি ফিরে আসবো।বাকি কথা তখন বলবো। ভালো থেকো তোমরা সবাই।
ইতি…… তোমাদের পুতুল
পরশ চিঠি বন্ধ করতেই সেদিনের কথা মনে পরে গেলো,
“কিভাবে ভালোবাসতে হয়, আমার জানা নেই।
আমি জানি আমার কোনটা চাই আর কোনটা চাই না। তুমি আমাকে ভালো না বাসো, তোমার পরশে রাখো!! আমি না হয় কয়েক বছর পর জোড় গলায় বলবো, #তোর_পরশে_প্রেম।
পরশ বিড়বিড় করে বলে,তুই থেকে গেলে আমি তোকে আগলে রাখতাম পাগলি। আমি তোকে আগে সবটা বললে,তুই এক্সাইটেড হয়ে জুলিয়া বা খালামনি কাউকে বলে দিতি,এই ভয়ে তোকে আমি কিছু বলিনি।কোথায় খুঁজবো তোকে?
চিঠি রেখে মোবাইলটা অন করলো। গ্যালারিতে যেয়ে ভিডিও অন করতেই পুতুলের কন্ঠ ভেসে এলো,আমি জানি মিস্টার হৃদয়হীন আপনি ছাড়া এটা কেউ আগে দেখবে না৷ তাই এই বার্তাটুকু আপনার জন্য। আজকের পর থেকে আর কেউ আপনাকে বিরক্ত করবেনা।আপনি বড্ড খারাপ আপনার ভালোবাসতে ইচ্ছে করছিলো আমাকে বললেই হতো বা আমাকে বুঝিয়ে ভালোবাসাতেন৷ আপনার ওই বয়স্ক মেয়েকে কেন ভালোবাসতে হলো? জানেন এমনিতে আগে আপনাকে আমি বিয়ে করতে চাইনি৷ কিন্তু সত্যি বলবো,ওই মেয়ের সাথে আপনাকে দেখে আমার কিশোরী মন কেমন কেঁপে উঠেছিল। ইচ্ছে করছিলো মেয়েটার চুল সব ছিড়ে ফেলি৷ মন বলছিল পরশ শুধু পুতুলের। কিন্তু আপনি নিষ্ঠুর মানবের মত ওই মেয়েকে বিয়ে করতে চাইলেন। এবার বিয়ে করুণ সুখে থাকুন। যা ইচ্ছে করুণ। আমি যখন ফিরবো তখন আমার পাশে এমন কেউ থাকবে যে শুধু আমার।
পরশ ভিডিওর দিকে তাকিয়ে বলে,পুতুল তুই শুধু আমার। তুই আরো কারো না আর কেউ তোর হতে পারবে না। কোথায় লুকিয়ে থাকবি তোকে আমি খুঁজে বের করবোই।
এরমধ্যেই ড্রাইভার বলে স্যার আপনার ফোন সেই কখন থেকে বেজে চলেছে।
পরশ ফোনটা নিয়ে রিসিভ করে কানে ধরতেই ওপাশ থেকে যে সংবাদটা শুনলো।মূহুর্তেই পরশের পৃথিবী অন্ধকার হয়ে গেলো। কোনমতে নিজেকে সামলে পরশ ড্রাইভারকে বলে,দ্রুত বাসায় চলো।
✨ এয়ারপোর্টে পৌঁছে পুতুল গাড়ী থেকে দ্রুত নেমে হাঁটা শুরু করলো।
পেছন থেকে ডাক আসলো,এই যে মিস চাঞ্চল্যবতী আমার কথাটা শুনুন।
‘আমার হাতে এতো সময় নেই যা বলার ফটাফট বলে ফেলুন।
‘আমিও চট্রগ্রাম যাবো আপনার সাথে। আপনি একা কি করে যাবেন বাসা চিনবেন নাকি?
‘ওয়েট আপনার ভার্সিটি নাই?
‘আপনি হয়তো জানেন না আমি চট্টগ্রাম ইউনিভার্সিটিতে পড়ি।
‘তাহলে ঢাকাতে কি করতে এসেছেন?
‘হাওয়া খেতে আর যাওয়ার সময় মিস চঞ্চল্যবতীকে সঙ্গে নিতে।
“বকবক বন্ধ করুণ। তাহলে গাড়ী কি করবেন?
‘এটা বন্ধুর গাড়ী ও সময় মত নিয়ে যাবে।আপনি দু’মিনিট ওয়েট করুণ আমি গাড়ী পার্কিং জোনে রেখে আসি।
‘দ্রুত আসুন। পুতুলের পরনে জিন্স আর টপস সাথে চিন্সের একটা জ্যকেট। চুলগুলো হেয়ার ব্যন্ড দিয়ে একটু উঁচু করে বাঁধা।
‘নিরব আসতেই দু’জনে দ্রুত সব কাজ সম্পন্ন করে প্লেনে উঠে বসলো।
দু’জনেই চুপ কারো মুখে কোন কথা নেই। নিরব নিজের ব্যাগ থেকে একটা কিটক্যাট বের করে পুতুলের সামনে ধরে বলে,চকলেট খাবেন?
‘নো আমি কিটক্যাট খাইনা৷
‘সিরিয়াসলি।
‘একদম আমার সাথে বকবক করবেন না৷ এমনিতেই টেনশনে আছি।
‘মিস চাঞ্চল্যবতী আপনার বয়স কত?
‘বিশ বছর বাইশ মাস।
‘হোয়াট?মজা করেন।
‘এই আপনার নাম নিরব কে রেখেছে?আপনার নাম বকবক রাখা দরকার ছিলো।
‘আপনি পালাচ্ছেন কেন?
‘পালাচ্ছি কি সখে?আমার ভালোবাসার টানে পালাচ্ছি। আসলে ক্লাস থ্রী থেকে একজনকে ভালোবাসি। ট্রু লাভ যাকে বলে আরকি,তাকে কি ছাড়তে পারি বলেন? তাই পালিয়ে তার কাছে যাচ্ছি।
‘বুঝলাম সোজা কথা আপনার ডিকশনারিতে নাই।
‘যখন বুঝেছেন তখন চুপ থাকুন।
‘আপনার বাবার নাম কি?
‘এসব জেনে কি করবেন? আমার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবেন?
‘আপনার যতটুকু বয়স তারচেয়ে হাজার গুন তেজ। মনে হচ্ছে নাগা মরিচ।
‘আপনার ফোন থেকে একটা কল করা যাবে?
‘যাবে তবে পঁয়তাল্লিশ মিনিট পর। কারণ প্লেনে তো নেটওয়ার্ক পাবেননা।
‘আমার আম্মুকে বলে পালাইনি, তাই টেনশন হচ্ছে। ইশশ বলার সুযোগ থাকলে বলে পালাতাম।
‘বললে আপনাকে পালাতে দিতো।
‘কেন দিবে না। আম্মুতো বলেছিল আমাকে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে আসবে। কিন্তু আমি একা পালিয়ে আসলাম আম্মু টেনশন করবে তো৷
‘পালানোর আগে মনে ছিলো না?
‘তখন মনে ট্রু লাভ ছিলো আর কিছু না। আচ্ছা যদি এখন প্লেন ক্রাশড হয়ে আমি মারা যাই তাহলে আমার পরিবার খোঁজ পাবে কিভাবে আমার?
‘চিন্তা নেই আপনি মরবেন না আমরা প্রায় চলে এসেছি। উল্টোপাল্টা কথা সাইডে রাখুন।
আপনার তো আর চার মাস পরিক্ষা সেটার কি করবেন?
‘সেটার ব্যাবস্থা আপনার বাবা করে দিবে। আপনার বাবার সাথে পরামর্শ করেই এসেছি৷
‘বাবা এসবে রাজি হলো!
‘হবে না কেন? আপনার বোনকে যে বাল্য বিবাহ দিয়েছিল পরে সে মারা যায় প্রেগন্যান্ট অবস্থা সেসব বলে ইমোশনাল করেছি সে রাজি হয়ে গেছে।
‘আপনার পরিবারকে বোঝানো উচিৎ ছিলো। এভাবে পালিয়ে আসা ঠিক হয়নি আপনার৷
‘সেটা আমারটা আমি বুঝে নেবো৷ স্বইচ্ছায় তো আর নিজের জীবন রসাতলে যেতে দিতে পারি না!
✨ পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজের সম্মুখীন পরশ। হয়তো সবার কাছেই এই দিনটি আসে। পৃথিবীতে আসলে ফিরে যেতে হবেই। তবুও এমন সত্যি মেনে নেয়া তো সহজ নয়। নিজের কাঁধে নিজের বাবার লাশ বহন করা বোধহয় পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজ। বাড়ির আঙিনায় সবাই পিয়াস সাহেবের খাটিয়া ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে । পৃথিবীতে ছেলে মানুষের কষ্ট বোধহয় সবচেয়ে অদ্ভুত! এই যে হৃদয় পুড়ছে তবুও চোখে কোন অশ্রু নেই। ইচ্ছে করছে হাউমাউ করে কাঁদতে কিন্তু সে যদি ভেঙে পরে তাহলে তার পরিবারকে কে সামলাবে?ছেলেদেরকে দ্বায়িত্ব শিখিয়ে দিতে হয় না। তাদের কষ্ট খুব সূক্ষ তাদের বুক ফাটে তবুও চোখে অশ্রু ঝড়ে না সহজে। অনেকেই বলে, ছেলে মানুষের মন শক্ত। আসলে তাদের মন শক্ত না হলে পরিস্থিতি সামলাবে কি করে?
#চলবে