#তোর_পরশে_প্রেম
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -১৪
দীর্ঘ তিন বছর পর নিজের মানুষগুলোর মুখোমুখি হবে। সময় কত দ্রুত পাল্টে যায় আগের বেপারী ম্যানশন ছিলো ডুপ্লেক্স,সামনে মোটামুটি বড় একটা গার্ডেন এরিয়া। আর এখন এটা এপার্টমেন্ট। দশ তলার মধ্যে কোন ফ্লোরে নিজের মানুষগুলো রয়েছে তা অজানা।অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে উঁচু বিল্ডিংয়ের দিকে।
দারোয়ান এগিয়ে এসে বলে,আপনার নাম পুতুল?
‘জ্বি আপনি কিভাবে জানলেন?
‘ম্যাম লিফটের তিন এ ইউনিটে যাবেন৷ পরশ স্যার বলে রেখেছে আপনি আসবেন।
পুতুল যত সামনের দিকে পা’বাড়াচ্ছে তত হার্ট বিট ফাস্ট হচ্ছে। লিফেটের সামনে এসে জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিয়ে নিজেকে একটু শান্ত করার বৃথা চেষ্টা করলো। অবশেষে লিফটে উঠেই পরলো।
🌿পুতুলের ফিরে আসার সংবাদ শুনে সবচাইতে বেশি যে বিরক্ত হয়েছে সে হলো জুলিয়া। পরাণের সাথে তার বিয়েটা হয়েছে সপ্তাহ খানেক আগেই। রাগে ফেটে পরছে জুলিয়া না পারছো ক্ষোভ ঝাড়তে আর না পারছে সহ্য করতে।
পরাণ বলে,তোমার আবার কি হলো? হঠাৎ করে তোমার চেহারায় ঘনকালো মেঘ কেন জমলো?
‘একদম আদিখ্যেতা করবেন না আমার সাথে আপনাকে কতবার বলেছি আমাকে স্ত্রী ভাববেননা। আমি আপনাকে হ্যাসবেন্ড হিসেবে মানিনা আর মানবো না।
‘জীবনটা কি তোমার হিন্দি সিনেমা মনে হয়? হিন্দি সিনেমার মত ডায়লগ দিচ্ছো বিয়েটা মানোনা!
‘আপনার মত ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনালকে কে মানবে হ্যাসবেন্ড হিসেবে?আর এই হাত দিয়ে কত মেয়েকে স্পর্শ করেছেন?আমি জুলিয়া কারো,ব্যাবহারিত জিনিস ব্যাবহার তো দূরের করে ফিরেও তাকাই না৷
‘জুলিয়া আমি মানছি আমি অন্যায় করেছি। আমার সজ্জাসঙ্গী অনেক ছিলো। কিন্তু আমি সেই পরাণ নেই। আমি নিজেকে বদলে নিয়েছি। আর আমাকে বিয়ে করতে রাজি হলে কেন?,তোমাকে তো কেউ জোড় করেনি!
‘একদম ন্যাকামি করবেন না। কিছু জিনিস কখন ভোলা যায় না। আমি পরশকে ভালোবাসি তিন চার মাস পরে আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিবেন।
‘পরশ তো তোমাকে ভালোবাসে না।
‘ভালোবাসুক বা না বাসুক আমি বুঝে নেবো।
‘তাহলে বিয়েটা কেন করলে?
‘করেছি সবার বাধ্য মেয়ে তাই। যদি বিয়ের জন্য না করতাম তাহলে এই তকমাটা আমার কাছ থেকে চলে যেতো। জেনো রাখুন জুলিয়া নিজের স্বার্থে অনেক কিছু করতে পারে।
‘পরাণ জুলিয়ার হাত শক্ত করে ধরে নিজের দিকে টান দিয়ে বলে,তেজ দেখানোর আগে মনে রাখবে সামনে কে? আমাকে তেজ দেখানো!আমাকে ভদ্র থাকতে দাও যদি অভদ্র হতে হয় তবে এক বিন্দু শান্তি তোমার জীবনে অবশিষ্ট থাকবে না৷ বলে হাতটা ছেড়ে দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়।
হঠাৎ ছেড়ে দেওয়ায় জুলিয়া তাল সামলাতে না পেরে পরে যেয়ে কপালের কোনায় দেয়ালে বাড়ি খায়। নিজের ফুলে যাওয়া কপাল ঘসতে ঘসতে বলে,আমি তোদের শান্তি দেবো না৷ জুলিয়া সোজা পরশের রুমে চলে আসে।
‘জুলিয়াকে দেখে পরশ বলে,কিরে জুলি তুই?
‘তোর কি মনে হয় পুতুল এখনো ভার্জিন আছে?
‘হোয়াট?
‘তুই তো পুতুল বলতে পাগল তো দে উত্তর?মনে রাখিস একটা মেয়ে তিনটা বছর পরিবার ছাড়া বাহিরে ছিলো। সে সব রকম স্বাধীনতা পেয়েছে তারমানে তার কত ছেলেদের সাথে বেড শেয়ার হয়েছে। বুঝতে পারছিস আমি কি বলতে চাইছি?
‘তুই যদি আমার বড় ভাইয়ের বউ না হতি,তাহলে চড়িয়ে তোর গাল লাল করে দিতাম। একটা মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের ব্যাপারে এতো বাজে কথা বলতে তোর বাঁধলো না বিবেকে!যেই মেয়েটাকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করছিস সে তোর আপন বোনের মত। মনে রাখিস মানুষ নিজে যেমন তার ধারনাও তেমন হয়।
‘জুলিয়া রুম থেকে বের হয়ে আসলো। এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠলো।
জুলিয়া যে দরজা খুলতেই পুতুলকে দেখে তার মেজাজ বিগড়ে গেলো৷ পুতুল হাতের ব্যাগ রেখে জুলিয়াকে জড়িয়ে ধরতে চাইলে জুলিয়া সরে যেয়ে বলে,আমার শরীর নোংরা করবি না।
‘তুমি কি বলছো আমি তোমাদের পুতুল৷
‘তো তোকি কোলে তুলে নাচবো?
‘তুমি আমার সাথে এমন করছো কেন?
‘এমন ভাব করছিস যেনো অস্কার জয় করে এসেছি! শোন ঘরের মেয়ে যখন রাস্তার মেয়ে হয়ে যায় তখন তার দু’পয়সার মূল্য থাকে না।
‘জুলিয়া তুই কিন্তু তোর সাহসের সিমা ছাড়িয়ে যাচ্ছিস! পরশের কথা শুনে ভয়ে চুপসে গেলো জুলিয়া।
‘পরশ চিৎকার করে ডাকলো আম্মু, ছোট আম্মু তোমরা কোথায় দেখো তোমাদের জন্য কাকে নিয়ে এসেছি।
নিজের মা তিন বছর ধরে পরশের সাথে কথা বলে না! আজ সে ভিষণ পিপাসিত নিজের মায়ের মুখের কথা শোনার জন্য।
🌿
তুমি এসেছো সুফিয়া আমি ভেবেছিলাম এ জন্মে আমাদের আর এক ছাদের নিচে থাকা হবে না।
‘মেয়রদের নাড়ীর টান বড় টান আমি আমার মাতৃত্বের টানে ফিরে এসেছি। আমার মেয়েটা আসবে তাকে ছুয়ে দেখতে পারবো তার সাথে কথা বলতে পারবো!
‘আমি কি তোমার কাছে কিছুই না সুফিয়া?
‘তুমি সবই ছিলে, বিয়ের পর থেকে তুমি তোমার পরিবারকে আমার আগে প্রধান্য দিতে আমি মেনে নিয়েছি। কিন্তু আমার মেয়েটাকে না খুঁজে তার চিন্তা না করে তখনও তুমি তোমার পরিবারের কথা ভেবেছো। সেদিন আমি বুঝেছি আমাদের গুরুত্ব তোমার জীবনে শূন্য।
‘দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে নিলুফা বেগম বললেন আমি কি আসবো?
‘জ্বি ভাবি আসুন। নিলুফা বেগম ভিতরে এসে বলেন, ছোট যা হয়েছে তার জন্য আমি অনুতপ্ত। তবে তুমি চলে যাওয়ার পর ভাইয়ার দিন কেমন কেটেছে বুঝে নাও। আসলে দোষ আমাদের কারো ছিলো না, দোষ ছিলো পরিস্থিতির। আরো কথা বলার আগেই পরশের গলার আওয়াজ শুনে তিনজন প্রায় ছুটে চলে আসলো হল রুমে।
তিনজনই অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে পুতুলের দিকে, সেই ছোট পুতুলকে জেনো আজ পরিপূর্ণ ফুটন্ত গোলাপ মনে হচ্ছে। তিনজনের পা’ স্থীর।
সুফিয়া বেগম ছুটে এসে নিজের মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলেন৷
পুতুল মনে, মনে হেসে বলে, তোমরাই আমাকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলে অথচ এমন ভাব করছো যেনো আমাকে দেখার জন্য পাগল হয়ে আছো। পুতুলের চোখেও অশ্রুতে পরিপূর্ণ সব অভিমান ভুলে নিজের মাকে আকড়ে ধরেছে৷ পৃথিবীতে সব শান্তী যেনো মায়ের আঁচলের তলে,মায়ের শরীরের মিষ্টি ঘ্রাণে।
সুফিয়া বেগম চুমু দিচ্ছেন পরপর। মুখে হাত দিয়ে বলে,মুখটা একদম শুকিয়ে গেছে আয় আমার সাথে বস তোকে নিজের হাতে খাইয়ে দেই। নিজের আঁচলের এক কোনা নিয়ে পুতুলের হাত বেঁধে দিয়ে বলে,এবার আর পালাতে দেবো না। একদম বেঁধে রাখবো আঁচলে।
‘সবাই একজন মধ্য বয়স্ক মায়ের পাগলামি দেখছে। মনে হচ্ছে সাত, আট বছরের বাচ্চা নিজের প্রিয় খেলনা পেয়ে খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেছে।সেটা কোথায় লুকাবো বুঝে উঠতে পারছে না!
‘পলাশ সাহেব দু’কদম এগিয়ে যেয়ে বলে,এই বুড়ো বাবার বুকে একবার আসবি না মা?
‘পুতুল ঝাপিয়ে পরে তার বাবার বুকে। বেশ খানিক সময় কান্নাকাটি করে। নিলুফা বেগম বলে,এই মায়ের বুকে আসবি না?
পুতুল থমকে গেলো, কোন এক অজানা অভিমান পুতুলকে ঘিরে ধরেছে। চোখ থেকে টুপটুপ করে অশ্রুকণা গড়িয়ে পরতে লাগলো।
কান্নার আওয়াজ ছাড়া হল রুমে আর কোন শব্দ নেই, নিলুফা বেগমের চোখ থেকেও ঝড়ে পরছে অশ্রু। পুতুলকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নিলুফা বেগম নিজেই পুতুলকে জড়িয়ে ধরলেন। কেঁদে কেঁদে বলেন, বড় আম্মুর প্রতি বুঝি একটু বেশি অভিমান জমে আছে?
‘পুতুলের কান্নার গতি বেড়ে গেলো,আসলেও বড় আম্মুর প্রতি তার পাহাড় সমান অভিমান জমে আছে। হঠাৎ পুতুল চিৎকার করে বলে,আমার বড় আব্বু নেই কেন? তাকে নিয়ে এসো।
#চলবে