#তোর_পরশে_প্রেম
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -১৭
ভর্তি পরিক্ষা দেয়ার ইচ্ছে আছে নাকি নেই?
“বাবা আমার মেডিক্যালে পড়ার ইচ্ছে বাকি তোমারা যা বলো৷
“তোমার এফোর্ড কতটুকু সেটা তুমিই ভালো জানবে। আমরা কি ভাবে বলবো?
” বাবা আমি রেটিনাতে কোচিং করবো।
“ভালো কথা। পরশের সাথে চলে যেও
” নাহহ বাবা আমি আম্মুর সাথে যাবো।
“তোমার আম্মু সব প্রসেস বুঝবে না পরশ সাথে গেলে কোন সমস্যা?
‘ না বাবা কোন সমস্যা না৷
‘পলাশ সাহেব টেবিল ছেড়ে উঠে যেতেই। জুলিয়া বলে,কি প্ল্যানিং তোর তাই না!ঘর ছেড়ে পালিয়ে গেলি তিন বছর ফুল ইন্জয় করলি,আবার বাড়ি ফিরে সেই পরশের গলায় ঝুলে পরলি। কি কপাল তোর!
‘জুলি নিজের লিমিটে থেকে কথা বল, ভুলে যাস না তুই বাড়ির মেয়ের সম্পর্কে কথা বলছিস।
‘পরশ’তোরমত ব্রিলিয়ান্ট একটা ছেলের কাছ থেকে এমন কিছু আশাকরি করিনি! না মানে যে মেয়ে তিন বছর পারিবারের শাসনের বাহিরে ছিলো সেই মেয়ের প্রতি এতো বিশ্বাস কোথা থেকে আসে?
” বিশ্বাস আসে বিশ্বাস যোগ্য মানুষের উপর। যার তার উপর তো আর বিশ্বাস আসে না৷ আর রইলো পুতুলের বাহিরে থাকার কথা,পুতুল সেখানে একটা পরিবারেই ছিলো ওনারা নিজের মেয়ের মত রেখেছেন পুতুলকে।
“পুতুল উঠে নিজের রুমে চলে আসলো।
” পরশ জুলিয়াকে বলল,এবার শান্তি হয়েছে তো?
এটাই তো চাইছিলি। তোর মধ্যে কি সুখে থাকার ইচ্ছেটা নেই?ভাইয়া যদি আবার দেশের বাহিরেই চলে যায় তাহলে তোকে এ বাড়িতে কেন রাখবো!
এ বাড়িতে থাকতে চাইলে নিজের হ্যাসবেন্ডকে ধরে রাখ৷
‘আশ্চর্য! তোমার ভাই কি কচি খোকা যে তাকে আমি ধরে রাখবো?
‘বউ যদি নিজের হ্যাসবেন্ডকে আঁচলেই না বাঁধতে পারে সেরকম বউ আমার ভাইয়ের জন্য রাখবো না।
‘বিয়েটা আমাকে তোমার ভাই করেছে তুমি না! তাই রাখা না রাখা সেটা সেই বুঝে নেবে।
‘আরেহহহ না থাকবে বাঁশ আর না বাঁজবে বাঁশুরি। ভাইয়া চলে গেলে তোকে রেখে কি করবে পুজা?
বলেই টিস্যু দিয়ে হাত মুছতে মুছতে চলে গেলো৷
‘জুলিয়া চিন্তায় পরে গেলো এখন কি করবে। শেষে কিনা ওই লোকটাকে মেনে নিতে হবে!
পরশ সোজা পুতুলের রুমে আসলো চেয়ার টেনে বসে বলে,তোর ঠোঁটটা কি শুধু আমার চুমু খাওয়ার জন্য?
‘পুতুল বড় বড় চোখ করে তাকালো।
‘না মানে আর কোন কাজে লাগাতে দেখি নাতো।যে যা বলে তোর কান সব শ্রবণ করে কিন্তু তোর ঠোঁট নড়েও না।
‘তোমার বাজে কথা বলা শেষ হলে নিজের কাজে যাও। তোমাকে কি ডিপার্টমেন্ট বসিয়ে বসিয়ে টাকা দেয়?
‘কি যে বলো বউ, বসিয়ে বসিয়ে টাকা দিলে তো সারাদিন রাত তোমাকে কোলে নিয়ে আদর করতাম। তবে আপাতত বউ ফিরে আসার আনন্দে ছুটি নিয়েছি।
‘কে তোমার বউ?
‘যে জিজ্ঞেস করছে সে?
‘আমি কবে কবুল বললাম?
‘এই যে মাত্র কবুল বললি।
‘পরশ ভাই এসব মজা একদম ভালো লাগছে না, যাও তো,নিজের কাজে।
‘বউকে এতোদিন পরে পেয়ে কে কাজে যায়? তাও আবার আমার কচি বউ।বলেই চোখ টিপ দিলো।
‘বাজে ছেলেরা রাস্তায় বসে ইভটিজিং করে আর তুমি ঘরে বসে নিজের বোনের সাথে ইভটিজিং করছো?
‘পরশ ধুম করে পুতুলের কোলে শুয়ে বলে,বারবার ভুল করিস তুই আমার বউ। ও বউ বউ মাথায় হাত বুলিয়ে দাও তো। স্বামীর সেবা কর।
পুতুল সরে যেতেই পরশের মাথা বেডে পরল,পরশ হাতের উপর মাথা রেখে বলে,নিব্বি বউ হলে যা হয় আরকি! থাক মাইন্ড করিনি যাহহ রেডি হ তোকে নিয়ে ঘুরে আসি।
‘তোমার সাথে আমি যাবো?
‘নাহহ আমার নিব্বি বউ যাবে। তাড়াতাড়ি রেডি হ নয়তো,পঞ্চাশটা চুমু দেবো।
‘পুতুল কাভার্ড থেকে ড্রেস নিয়ে দ্রুত চেঞ্জ করে নিলো। পরশ তখন পুতুলের বেডে। পুুতুল ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে বলে,
আমার মন খারাপ থাকলে একদম কারো সাথে কথা বলি না। আসলে তখন আমার কথা আসে না! আমাকে একটু একা থাকতে দাও। একা থাকতে থাকতে সবার মাঝে নিজেকে কেমন বেমানান লাগছে!! প্লিজ আমাকে দশ মিনিট একা থাকতে দাও। আমি আসছি।
পরশ উঠে পুতুলের একদম কাছে চলে আসলো,পুতুলের কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,অনেক একা থেকেছো আর তোমাকে একা ছাড়ছি না, এবার থেকে পুতুলের ছায়া হবে পরশ। তোমাকে এই কালারের ড্রেসে খুব মানিয়েছে। একদম নতুন বউয়ের মত।
‘পুতুল ঈষৎ কেঁপে উঠলো। সরে যেতে চাইলে পরশ পুতুলকে ঘুরিয়ে পুতুলের কাঁধে মাথা রেখে ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় তাকিয়ে বলে,তোমাকে একদম আমার হৃদয়ের রানী লাগছে। আজ তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে মেরিজান।তাড়াতাড়ি নিচে চলে এসো আমি গাড়ি বের করছি।পুতুলের চুলে আলতো চুমু দিয়ে বের হয়ে গেলো।
‘পুতুলের চেহারার কেমন লাজুকতা ছড়িয়ে পরলো।গল দুটো লাল হয়ে গেছে লজ্জায়।
পুতুল আয়নায় তাকিয়ে বলে,বেহায়া মন তুই এতোটুকুতে গলে যাচ্ছিস কেন!এই লোকটাকে ভালোবাসার বিনিময়ে কত, কত বিষাদ জড়িয়েছিস নিজের জীবনে। এর স্মৃতি ভাবতে, ভাবতে জীবনে দ্বিতীয় কোন ছেলে পছন্দ হয়নি প্রেমও হয়নি।এতো তাড়াতাড়ি ক্ষমা করে দিবি?একদম করবি না বেহায়া মন নিজেকে সামলা। পুতুল নিচে আসতেই পরশ নিজের পাশের সিটের দরজা খুলে দিলো।
পুতুল উঠে বসলো। পরশের দিকে বোকার মত তাকিয়ে আছে,পুতুল ব্লু আর বাসন্তী রংয়ের ড্রেস পরেছে। পরশ ব্লু ব্লেজার আর ভেতরে হালকা বাসন্তী রংয়ের টিশার্ট।
‘এভাবে দেখার কি আছে? সারাজীবন দেখতে পারবি তোরই তো জামাই।
‘আচ্ছা তুমি গিরগিটির চেয়ে দ্রুত রং বদলে ফেললা কি করে? আমার সাথে তো কত বাজে বিহেভিয়ার করলে কত কি বললে! তাহলে হুট করে কি হলো তোমার?
‘তোর সব প্রশ্নের উত্তর আজ পেয়ে যাবি। এবার বল আমাদের একদম পার্ফেক্ট কাপল লাগছে তাই না?
‘মোটেই না একদম ভাই বোন লাগছে।
পরশু সাথে সাথে পুতুলের মাথা ধরে পুতুলের ঠোঁটে ঠোঁট মিশিয়ে দিলো। সাথে সাথে ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে বলে,এবার বল কি বলছিলি?
‘অসভ্য লোক।
‘তোর জামাই অসভ্য। বলেই ড্রাইভ করা শুরু করলো।
জুলিয়া নিজের রুমের জানলায় দাঁড়িয়ে সবটা দেখলো।তারপর ভাবতে লাগলো,আমি জীবনে কি পেলাম?সবার আড়ালে এতো ছলচাতুরী করে কি পেলাম দিন শেষে? সেই একাকীত্ব, আর সবার ঘৃনা! আমি কি করবো? কি করা উচিৎ? আমার কি মেনে নেয়া উচিৎ পরাণ কে? কিন্তু ওই মানুষটাকে দেখলেই মনে পরে তার শরীরে কত নারীর স্পর্শ লেগে আছে। আমি কি করবো?
🌿মাহমুদ সাহেব মাথা নিচু করে বসে আছে, কিছুক্ষণ পর রাবেয়া বেগম তার পাশে বসে,হাতটা ধরে বলে,প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও। হঠাৎ করে কথাটা জানার পর নিজেকে সংযত করে রাখতে পারিনি৷ তোমার মত স্বামী পেয়ে আমি ধন্য আমি সত্যি ভাগ্যবতী তোমাকে পেয়েছি।আমার মনে ছিলো না তোমার বলা কথাটা, তুমি যে বলেছিল,শোন প্রথম জনকে হারিয়ে আমি বেঁচে আছি,তবে তোমাকে হারালে বেঁচে থাকা অসম্ভব। সে আমার অপূর্ণতার সাক্ষী আর তুমি আমার সকল পূর্ণতার সঙ্গী।
মাহমুদ সাহেব নিজের স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরে। রাবেয়া বেগমও পরম যত্নে নিজের বক্ষে স্বামীকে আগলে নেয়ে।মূহুর্তেই যেনো শত মান অভিমান সব গায়েব।
“স্বামী, স্ত্রীর সম্পর্ক হলো পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর আর মধুর সম্পর্ক।
#চলবে