#তোর_পরশে_প্রেম
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৫
পরশ ভাই ছাড়ো আমার লাগছে।
‘লাগুক। তুই এতো রাতে আমার রুমে কেন এসেছিস?
‘হাতটা ছাড়ো বলছি,তুমি এতো কাছে থাকলে কি করে বলবো?
‘নে ছাড়লাম এবার বল।
‘তুমি কি সত্যি আমাকে বিয়ে করবে না?
‘কেন আমাকে বিয়ে করার জন্য বুঝি তুই উতলা হয়ে আছিস।
‘দূর কি যে বলো না। তোমাকে বিয়ে করবো নট।
‘যাহহহ রুম থেকে এখন বের হ।তোর হবু বর দেখলে বিয়ে ভেঙে যাবে।
‘আচ্ছা যার সাথে বিয়ে ঠিক হয় সেই তো হবু বর। তাহলে এই রাতে তোমার রুমে থাকলে তুমি বিয়ে ভেঙে দেবে?
‘পুতুল তুই যাবি!
‘উঁহু, বলেই ফট করে পরশের বেডে শুয়ে কাঁথা মুড়ি দিয়ে বলে,আজ আমি এই রুমেই ঘুমাবো।
‘পুতুল ওঠ বলছি, কেউ দেখে ফেলবে। তুই এই রাতে উপরে কেন এসেছিস।
‘আমি জানি তুমি এখন চেঁচামেচি ও করবে না। তাই আজ এখানেই ঘুমাবো।
‘পুতুল ওঠ আর ভালোয় ভালোয় চলে যা নিজের রুমে। বলতে আর একটু সামনে আসতেই বেখেয়ালি ভাবে খাটের কোণায় পা লেগে সোজা পুতুল উপর পরে গেলো। পুতুল চিৎকার করার আগেই একহাত দিয়ে কাঁথার উপর দিয়ে পুতুলের মুখ চেপে ধরলো৷ অন্য হাত দিয়ে নিজের শরীরের ভাড় ব্যালেন্স করছে।
‘পুতুল উমম, উমম করতে লাগলো।
‘আমি হাত সরাতে পারি, কিন্তু তুই চিৎকার করতে পারবি না৷
‘পুতুল মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো৷
পরশ হাত সড়িয়ে উঠে আসতে চাইলে,পুতুল কাথা সরিয়ে উঠতে চাইলে পরশ সহ দু’জনে নিচে পরে গেলো। পরশ নিচে পুতুল উপর৷
‘মাথায় ভালোই লেগেছে পরশের।
‘পুতুল হাসতে হাসতে বলে,তোমার শরীরে তো একটুও শক্তি নেই। তুমি কিসের জন্য জীম করো তাহলে?
‘আমার শীরের উপর থেকে নেমে কথা বল।আমি হাত দিয়ে নিজের ভাড় সংযত করছিলাম যাতে তুই চ্যাপ্টা না হয়ে যাস। এরজন্য সহজে পরে গেছি। মাঁতা মোটা সর এখন।
‘পুতুল পরশের শরীরের উপর থেকে উঠে বেডে বসে বলে,তোমার মাথায় তো চোট লেগেছে। এক কাজ করো তুমি বস আমি ফ্রীজ থেকে বরফ এনে দেই।
‘পরশ উঠে এসে বলে,তুই বের হবি কি না?
পুতুল বলে,বের হতেই পারি তবে আমার কথার উত্তর দাও৷
‘যা বলার দিনের বেলা বলবি। এখন মানে , মানে কেটে পর৷
পুতুল ফিসফিস করে বলে,এই ভালো এই খারাপ, প্রেম মানে মিষ্টি পাপ। চলো মানে মানে দিয়ে ফেলি ডুব তুমি আমি মিলে৷
‘এমন কাকের মত কন্ঠ নিয়ে রাতের বেলা আমাকে ভয় দেখানোর জন্য গান গাইছিস! দেখ পুতুল চলে যা ভালো ভাবে বলছি৷ নয়তো খারাপ কিছু হয়ে যাবে।
‘খারাপ কিছু করো।তাহলে সবাই বুঝবে তুমি কত খাবার আর বিয়ে টিয়ে দিবে না তোমার সাথে৷
‘পরশ পুতুলের উড়না দিয়ে মুখ বেঁধে কোলে তুলে নিলো। আস্তে করে দরজা দিয়ে বের হয়ে নিচে চলে আসলো। পুতুল বের হয়ে আসার সময় দরজা খোলাই ছিলো। ডুপ্লেক্স বাসা। নিচ তলায় পুতুলরা থাকে উপরে পরশরা। পুতুলকে নামিয়ে দিয়ে বলে,সোজা নিজের রুমে ঢুকবি। একটু এদিক সেদিক করলে, এভাবে নিয়ে ছাদ থেকে ফেলো দেবো।
‘পরশ চলে গেলো পুতুল ড্রয়িং রুমেই দাঁড়িয়ে নিজের মুখ থেকে ওড়না খুলে পরশকে মনে, মনে বকতে লাগলো৷ টেবিল থেকে পানি নিয়ে ঢকঢক করে গিলতে লাগলোে।
‘নিলুফা বেগম সবটা দেখেছেন।শেষে নিজেও যেয়ে শুয়ে পরলেন৷ আজ হয়তো ঘুম নামবে না চোখের পাতায়। নিজের পাশের জায়গায়টা খালি। ওদিকে তাকালেই বুকের ভেতর হা-হাকার করে উঠে। কাঁদতে কাঁদতে কখন চোখ লেগে গেছে।
✨সকালে সবাই নাস্তান টেবিলে, বসতেই পলাশ সাহেব বলল,আমার একটা কথা জানানোর ছিলো তোমাদের সবাইকে৷
‘পুতুল তখন স্কুল ড্রেস পরে টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,আম্মু আমি গেলাম।
‘পলাশ সাহেব বললেন,যাওয়ার আগে আমার কথা শুনে যাও৷
‘বাবা আমার তো দেরি হয়ে যাবে।
‘পরাণ তোমাকে দিয়ে আসবে গাড়ি দিয়ে। এখন কথা শুনো। তোমরা সবাই জানো পরশের সাথে পুতুলের বিয়ে। কিন্তু আমরা তিনজন ডিসাইড করেছি,পুতুলের বিয়েটা পরাণের সাথে হবে।
‘পুতুল আর কোন কথা না শুনে দুম করে বের হয়ে গেলো।
পরাণ উঠে পুতুলের পিছু পিছু যাওয়ার জন্য পা বাড়তেই, নিলুফা বেগম বলেন,ছোট ভাইয়ের বউয়ের দিকে পা বাড়াতে নেই। নিজের স্থানে থাকো। বিয়েটা পরশের সাথে ঠিক তাই এটাই হবে।আমি আর কোন কথা শুনতে চাইনা।
‘ভাবি পরশ,আর পরাণের মধ্যে পার্থক্য কি? একজনের সাথে হলেই তো হলো। ভাইয়ার ইচ্ছে ছিলো পুতুলকে তার পুত্রবধূ করবে সেটাতো পর্ণ বিয়ে করলেও হয়
‘তুমি ভুলে যাচ্ছো পলাশ,পুতুলের বয়স পনেরো আর আমাদের পরাণের বয়স আঠাশ। সব কিছুর একটা পার্ফেক্ট ম্যাচ আছে।
‘পরাণ নিজের রাগ সংযত করে বলে,আসলে সমস্যা বয়স না! সমস্যা হলাম আমি। তোমরা আমাকে নিজেদের ছেলে ভাবোই না। তাই তো পরশ আর আমার মধ্যে এতো ভেদাভেদ কেন?
‘পুতুলের বিয়ে যদি দিতেই হয়, তাহলে আমার সাথেই দিতে হবে। নয়তো না। হয়তো আমি নয়ত বাহিরের কেউ তবুও পরশ না।
‘পরশ বললো,আম্মু বিয়েটা ভাইয়ার সাথেই দাও। আর এটা নিয়ে আমিও কোন কথা শুনতে চাই না৷ বলেই বাসা থেকে বের হয়ে গেলো।
‘নিলুফা বেগম বললেন,পরাণ তুমি কয়েকদিনের জন্য বাংলাদেশে এসেছো। তাহলে এসব করার মানে কি?
‘বিয়েটা হলে, আর কখনো যাবো না।
✨
‘মিম,নোভা,শাওন,পুতুলকে দেখেই ছুটে আসে, কিরে পুতুল এই কয়েকদিন স্কুলে আসলি না কেন।
‘শাওন তোর ফুপির বাসা যেনো কোথায়?
‘রংপুর কিন্তু তার বাসা দিয়ে কি করবি।
‘তোর ফুপা-তো প্রিন্সিপাল তাইনা?
‘হ্যা তাই এবার বল এসব জেনে কি করবি?
‘শোন এক আধ বুড়ো কাজিনরে সাথে আমার বিয়ে ঠিক করছে,পরশ ভাই তাও চলতো কিন্তু এটা চলবেই না। তাই পালাবো ভাবছি৷
‘মিম অবাক হয়ে বলে,তোর বিয়ে ঠিক করেছে মানে?
‘আরেহহ জানিস তো বড় আব্বু অসুস্থ। তো তার ইচ্ছে আমাকে বউ বানাবে তার ছেলের।
‘কি বলছিস এরজন্য বাল্য বিবাহ।
‘এই আমি কি আমার পরিবারের নামে থানায় কেস করবো?
‘পরশ পেছন থেকে বলে,এই ভালোবাসিস বাবাকে?
আমি জানি তোর উল্টোপাল্টা কথা শুনেই বাবা অসুস্থ হয়েছে। তাই বিয়েটা তোকে করতেই হবে।
‘বললেই হলো বিয়ে করতে হবে! আর করলে তোমাকে করবো তবুও পরাণ ভাইয়াকে নয়। কই তাল গাছ আর কই ধান গাছ!
‘দেখ পুতুল তুই বিয়েতে রাজি হোস বা না হোস বিয়ে তোকে করতেই হবে।এই নে ব্যাগ, ব্যাগ রেখে স্কুলে এসেছিস রঙ্গ করতে?
‘রঙ্গ করতেই এসেছি তো?
‘তুই বেপারী বাড়ির মেয়ে আবার বেপারি বাড়ির বউ তাই এসব রঙ্গ করা চলবে না। পা’ ভেঙ্গে ঘরে বসিয়ে রাখবো।
‘পুতুল হুট করে দৌঁড়ে কিছুটা দূরে যেয়ে বলে,যাও যাও তোমাকে ভয় পাই নাকি?একবার তোমার কলেজে তোমাকে কিস করেছি, এবার কিন্তু এই আমার স্কুলের ভরা মাঠে করবো।এরপর তোমার আর কোন মানসম্মান থাকবে না। সমাজে মুখ দেখাতেও পারবে না। কেউ বিয়েও করবেনা।
‘তবে রে দাঁড়া তুই।
‘পুতুল ক্লাসে ঢুকে গেলো।
পরশ পুতুলের স্কুল থেকে ফিরে বাসায় ঢুকতেই নিলুফা বেগম বললেন, পরশ আমার রুমে আসো তো, তোমার সাথে কথা আছে।
‘পরাণ বললো,আম্মুর কথা শোনার আগে আমার কথা শুনে যা। হয়তো পুতুলের সাথে আমার বিয়ে, নয়তো সারাজীবনের জন্য এই পরিবারের সাথে আমার বিচ্ছেদ। এবার তুই যেটা চাস।
#চলবে