তোর_পরশে_প্রেম #নুসাইবা_ইভানা #পর্ব-৬

0
378

#তোর_পরশে_প্রেম
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব-৬

নিলুফা বেগম আর পরশ মুখোমুখি বসে আছে।
নিলুফা বেগম বললেন, পরশ’তোমার বাবার ইচ্ছে পুতুলের বিয়েটা তোমার সাথে হবে। আর আমি জানি তুমি তার কথার মর্যাদা রাখবে।
‘কিন্তু ভাইয়া তো চলে যাবে আমাদের ছেড়ে।
‘যে কখনো ছিলোই না, তার থাকা না থাকা কোন ফ্যাক্ট না।
‘তুমি কি চাওনা ভাইয়া থেকে যাক।’কে থাকলো,কে চলে গেলো সেসব আমি জানতে চাই না৷ আমি জানি তোমার বিয়ে পুতুল সাথে হবে মানে তাই হবে।
‘আম্মু আমার কথাটা শোন……. বেশ খানিকক্ষণ দু’জনে কথা বললো।
পরশের সব কথা শুনে নিলুফা বেগম বলেন,তোমার যেটা ভালো মন হয় করো। তবে মনে রেখো….
‘চিন্তা করো না আম্মু আমার সব মনে থাকবে৷
পরশ বের হয়ে আসতেই পরাণ বলে,কিরে তোর ডিসিশন কি?
‘ডিসিশনের কি আছে? বলেই তো দিয়েছি তোর আর পুতুলের বিয়ে।
‘পরাণ, পরশকে জড়িয়ে ধরে বলে,ভাই আমি জানতাম তুই অন্তত বুঝবি আমাকে।
‘সুফিয়া বেগম, পলাশ সাহেবকে বললেন,আমার মেয়েটা সবে পুতুল খেলা ছেড়েছে। এখনি তোমরা ওর বিয়ে দেয়ার জন্য পাগল হয়ে গেছো! পরশের সাথে তাও মানা যায়। কিন্তু পরাণ তো ওর অর্ধেকের চেয়ে বড় বেশি। কই পনেরো কই একত্রিশ! আমার মেয়েটার সাথে এই অন্যায় করো না। আমার এইটুকু মেয়ে।কথাগুলো বলছেন আর অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছেন।
‘দেখো সুফিয়া, এসব বয়স কোন বিষয় না। দেখবে পরাণ ওকে খুভ ভালো রাখবে।
‘আমার মেয়েটাকে তোমাদের কি মনে হয়? কাঠের পুতুল? ভুলে যাচ্ছো কেন, ও জলজ্যান্ত একটা মানুষ, ওর ইচ্ছা অনিচ্ছা আছে। আর বিয়েটা কোন পুতুল খেলা না! এটা সারাজীবনের প্রশ্ন আর আমি আমার মেয়ের ইচ্ছের বিরুদ্ধে কিছু হতে দেবো না। হয়তো বিয়ে পরশের সাথে হবে,নয়তো আমার মেয়েকে নিয়ে আমি এবাড়ি ছেড়ে চলে যাবো।
‘মেয়টা তোমার একার না। আমারও। তাই বিশ্বাস রাখো আমার উপর দেখবে সব কিছু ভালোই হবে।

‘পুতুল ক্লাস শেষ করে, একটা প্রাণ চাটনি কিনে খেতে খেতে আসছিলো।পুতুলের সাথে মিম আর শাওন।
“হুট করে পরাণ পুতুলের সামনে এসে বলে,পুতুল চল আমার সাথে।
‘তোমার সাথে কেন যাবো! আমার পা’কি ভাঙ্গা নাকি আমি লুলা।
‘এভাবে বলছিস কেন?আজ বাদে কাল তুই আমার বউ হবি। তাহলে সমস্যা কি!
‘আজ বাদে কাল যখন বউ হবো তখন দেখা যাবে ভাইয়া। এখন তো আমি তোমার বউ না। তাই রাস্তা ছাড়ো। নয়তো আমি চিৎকার করে মানুষ জড়ো করবো।
‘কিরে পুতুল বেয়াদবি করছিস কেন?
‘আজ বাদে কাল আমার বর হবে,তোমার সাথে আদব আর বেয়াদবের কি আছে!
‘পরাণ পুতুলের হাত ধরতে চাইলে, পুতুল বলে,আমার হাতে তুমি যদি হালকা একটু টাচও করো, তাহলে রাস্তায় বসে কান্নাকাটি শুরু করবো।
‘পরাণ বলে,তোকে আমি পরে দেখে নিচ্ছি৷
‘আচ্ছা সময় নিয়ে ভালো করে দেইখো।
পরাণ চলে যেতেই, মিম বলে,এই লোকটার সাথে তোর বিয়ে ঠিক হচ্ছে?
‘আরে হ্যা তোরাই বল এর সাথে আমাকে মানায়?
‘মানিয়ে নিলেই মানাবে কারণ দেখতে হ্যান্ডসাম। তবে পরশ ভাইয়ার চেয়ে একটু কম।
‘শোন তুই আমার জায়গায় ওকে মানিয়ে নে।আমি এ বিয়ে করছি না। আমার এ’বি’সি তিনটা প্ল্যান আছে একটা কাজে লাগিয়ে বিয়ে থেকে মুক্ত হয়ে যাবোই।

পুতুল বাসায় এসে ব্যাগ রেখে, ড্রেস চেঞ্জ করে ফ্রীজ থেকে কোল্ডড্রিংক বের খেতে, খেতে বলে, আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে, লা, লা, লা, লা।
‘এই দুই গানের মধ্যে তো কোন কানেকশন নেই, তুই কি জগাখিচুরি গাইছিস।
‘উফফফ হানি লাভ ইউ। জগাখিচুড়ি মাই ফেবারিট, চালে,ডালে,সবজি,মাংসা সব মিলে একদম ফাটাফাটি।
‘এই তুই কি বললি আমাকে?
‘ডিয়ার হানি, ডিয়ার হানি, ডিয়ার হানি,,,,, আই লাভ ইউ।
‘তুই যে সারাদিন বলতে থাকিস আমি পিচ্চি আমার বিয়ে কেন দিচ্ছো আমি বাচ্চা আমি তো ভাজা মাছ উল্টে খেতে পারিনা সেসব কি?
‘আমার রাগী হানি… আমি ভাজা মাছ উল্টে খেতে না পারলে কি? আমি তো কাঁচা মাছ ভেজে না উল্টেই খেতে পারি।
‘তুই কি ভুলে যাচ্ছিস তুই কার সাথে কথা বলছিস!
‘উঁহু আমি জানি আমি বেপারি বাড়ির ছোট নবাব রেজওয়ান মাহমুদ পরশের সাথে কথা বলছি।
‘তাহলে আমাকে তুই ভয় পাস না?
‘নো হানি তোমাকে কেন ভয় পাবো কয়েকদিন পর তুমি আমার হাবি হবে তোমাকে ভয় পেলে চলবে নাকি। কথা বলতে,বলতে পুতুল খেয়াল করলো পরাণ আসছে। পুতুল নিজের হাত থেকে অল্প একটু কোল্ড ড্রিংক নিচে ফেলে দিলো।

‘পরশ আর একটু সামনে এগিয়ে এসে বলে,কি আবল তাবল বলছিস! তুই আমাকে ভয় পাস না।
‘পুতুল আর একটু এগিয়ে এসে পরে যেতে নিলে পরশ পুতুলকে ধরে ফেলে,পরশের এক হাত পুতুলের কোমড়ে আরেক হাত পুতুলের পিঠে। পুতুল চোখ বন্ধ করে পরশের শার্ট খামচে ধরেছে।
‘কিরে সোজ হ চোখে দেখিস না।
পুতুল সোজা হয়ে পরশের বুকে একটা হাত রাখলো।
দুজন একদম অনেক কাছাকাছি। হঠাৎ দু’জনের দৃষ্টি একে অপরের দৃষ্টিতে স্থীর হলো৷ চোখে, চোখে যেনো কত কথা বিনিময় হচ্ছে অথবা একজন অপরজনের চোখের ভাষা বোঝার চেষ্টা করছে৷
‘পরাণ হাত তালি দিয়ে বলে, বাহহহহহহ তোর সাথে বিয়ে না হোক বাসর সেরে তাকে ভাইয়ের হাতে তুলে দিবি? সা’পও মরলো না লাঠিও ভাঙ্গলো না।

পরশ পুতুলকে সরিয়ে দিয়ে বলে,সোজা নিজের রুমে যাবি। একটা কথাও আমি শুনতে চাই না যা বলেছি তাই।
‘ভাইয়া তুমি বাহিরের দেশে থাকো তাই বলে বাঙালিদের এতো নিচু ভাববে?তুমি যে বিষয়ে বলছো আমার কথা তো বাদ দিলাম পুতুলের সেই বিষয় কোন ধারনাও নেই। ওর মন হলো সদ্য ফোটা গোলাপের মত পবিত্র। আর পবিত্র জিনিস তুমি অযথা কলঙ্ক লেপন করো না।
‘বুঝলাম পুতুল একদম পবিত্রতার দেবী।কিন্তু তোর তো সব বিষয়ে ধারণা আছে তাহলে তুই কি করতে চাইছিলি। দেখ আমি কিন্তু দেখেছি তোর হাত কোথায় কোথায় ছিলো।
‘আমি শেষবারের মত বলছি, নিজের চিন্তা ভাবনা পরিবর্তন করো নয়তো আমরা আমাদের ডিসিশন পরিবর্তন করতে বাধ্য হবো। চোখে দেখলেই সব সত্যি হয় না। নিচে তাকিয়ে দেখো, ও পরে যেতে নিলে আমি যাস্ট ওকে সেভ করেছি। যেটা মানুষ হিসেবে আমার দ্বায়িত্ব সেখানে এতো নোংরা চিন্তা আনার মত মন মানসিকতা পরিবর্তন করো।
‘আচ্ছা সরি আমার বোঝার ভুল হয়েছে৷ কিন্তু আমার বিয়ের ডেটটা কবে ফিক্সড করছিস?
‘আগামী সপ্তাহে। আর এখন ঘরোয়া পরিবেশ নিজেদের আত্মীয় স্বজনরা মিলে বিয়ের অনুষ্ঠান হবে।পরবর্তীতে পুতুলের যখন আঠারো বছর পূর্ণ হবে তখন ধুমধাম করে অনুষ্ঠান হবে।
‘ধন্যবাদ ভাই আর সরি আমার এমনটা বলা উচিৎ হয়নি।
‘সরি বলে, সব শেষ করা যায় না। বুলেট একবার ছুড়লে যেমন আর ফেরত নেয়া যায় না। ঠিক কথা মুখ থেকে বের হওয়ার পর আর ফেরত নেয়া যায় না। তাই দু’টোই নিশানা বুঝে বের করতে হয়।
‘আচ্ছা তুই থাক আমি একটু বের হবো।
পরাণ চলে গেলে, পরশ পুতুলের রুমে আসে,পুতুল তখন মুখ গোমড়া করে বসে আছে।
পরশ একটু দূরে দাঁড়িয়ে বলে,গোমড়া মুখে পেঁচা বসে থাকে, তুই তো এই বাড়ির প্রিন্সেস তুই কেন গোমড়া মুখে বসে আছিস।
‘পুতুল পরশের বেশ খানিকটা কাছে এসে বলে, তুমি আমাকে কেন পছন্দ করো না পরশ ভাই! আমি কি দেখতে খুব বাজে?
‘কি বলছিস আমি কি কখনো তোকে বলেছি এ কথা!
‘আমার কথা টা রাখবে পরশ ভাই….. দেখো
“কিভাবে ভালোবাসতে হয়, আমার জানা নেই। শুধু
আমি জানি আমার কোনটা চাই আর কোনটা চাই না। তুমি আমাকে ভালো না বাসো, তোমার পরশে রাখো!! আমি না হয় কয়েক বছর পর জোড় গলায় বলবো, #তোর_পরশে_প্রেম।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here