তোর_পরশে_প্রেম #নুসাইবা_ইভানা #পর্ব -৯

0
308

#তোর_পরশে_প্রেম
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৯

সবাই একত্রে বসে আছে, বর,বউ কে ঘিরে । কাজী সাহেব বিয়ে পরানো শুরু করলেন।
‘ পরাণ মনে মনে সয়তানি হাসি দিচ্ছে। শেষ পর্যন্ত বিয়েটা কেউ আটকাতে পারলো না।

কাজি সাহেব বললেন,বাবা কবুল বলো।
পরাণ কাল বিলম্ব না করে সাথে সাথে কবুল বলে দিলো।
‘পুতুলকে যখন বলা হলো, মা কবুল বলো।
পুতুল চুপ করে রইলো। বেশ কয়েকবার কবুল বলতে বলার পরেও পুতুল চুপ।
‘পলাশ সাহেব পুতুলের হাতের উপর হাত রেখে বলে,মা’আমি আছি তো নির্ভয়ে বলে,ফেলো৷
নিলুফা বেগম রাগী দৃষ্টিতে পরশের দিকে তাকাচ্ছে।

সুফিয়া বেগম বলে উঠলো,তোর মন না সায় দিলে,তোর কবুল বলতে হবে না পুতুল। বিয়ে তো কোন পুতুল খেলা নয় যে ইচ্ছের বিরুদ্ধে চাপিয়ে দিবে তোর ঘাড়ে। তোর কবুল বলতে হবে না চল আমরা এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো।
‘পরাণ নিজের রাগ কন্ট্রোল করে বসে আছে, বাড়িতে আরো আত্মীয় স্বজনরা আছে তারা কানা ঘুসা করছে।

পরাণ আর নিজের রাগ সংযত করতে পারলে না। পুতুলের হাত চেপে ধরে বলে,কবুল বল নয়তো তোকে আমি মে’রে ফেলবো।
‘পুতুল তবুল নির্বিকার।
পরাণ একটানে পুতুলের ঘোমটা সরিয়ে দিলো।ঘোমটার নিচের মানুষটাকে দেখে বলে,তুইইই! তোর সাহস কি করে হলো এসব করার।
‘উপস্থিত সবার চোখ কপালে,বউ সেজে যে বসে আছে সে আর কেউ নয় জুলিয়া।
জুলিয়া একবার পরশের দিকে তাকালো।
কিছুক্ষণ পূরবে……….
পরশ পুতুলের সাথে কথা বলতে যেয়ে দেখে পুতুল একটা চিঠি লিখে তার উপর মোবাইল রেখে গায়েব।
‘এসব কি করে হলো?পুতুল কই?
‘আমি জানিনা পরশ।
‘জানিস না মানে তুই ওকে সাজাচ্ছিলি তাহলে ও গেলে কোথায়?
‘আমাকে বলল, তোমার খুদা পায়নি? আমি বললাম, হ্যা তা একটু পেয়েছে।পুতুল বলল,আমার তো অনেকক খুদা লেগেছে। আমার জন্য কিচেন থেকে কিছু নিয়ে এসো প্লিজ।
আমি খাবার নিয়ে এসে দেখি ও রুমে নেই। প্রথমে ভাবলাম ওয়াশরুমে কিন্তু ওয়াশরুমের দরজা নক করতেই দেখি দরজা খুলে গেছে আর পুতুল নেই। বিশ্বাস কর পরশ আমি সত্যি জানিনা।
‘পুতুলকে আমি পরে দেখে নিচ্ছি। এখন তুই পুতুলের জায়গায় বউ সেজে সবার সামনে যাবি৷
‘কিন্তু আমি!
‘বিয়েটা হবে না শুধু আমার কাজটা হওয়া চাই। যা বলেছি তাড়াতাড়ি সেটা কর।
‘পরশ রুম থেকে বের হওয়ার আগে পুতুলের ফোন আর চিঠি পকেটে ঢুকিয়ে নিলো।
বর্তমানে….
পরাণ গর্জে উঠতেই, পরশ বলে,ভাইয়া তোর রাগ কন্ট্রোল কর।এতো রেগে যাওয়ার কি আছে! বিয়ে করতে চেয়েছিস কর। পুতুলকে না হোক জুলিয়াকেই কর সমস্যা কোথায়?
‘পরাণ পরশের কলার চেপে ধরে বলে,সব কিছুর পেছনে তোর হাত আছে। তুই সরিয়ে দিয়েছিস পুতুলকে। তোর সাথে ওর ক্লোজনেস দেখেই বুঝেছিলাম ওরকম একটা কচি মা’ল তুই হাতছাড়া করবি না। ভেবেছিলাম খেয়ে….
‘আর কিছু বলার আগেই সজোরে ঘুসি মারে পরশ।
পা দিয়ে পরপর কয়েকটা লাথি মারতেই ছিটকে পরে ফ্লোরে৷ গর্জে উঠে বলে,তোরমত একটা নোংরা মানুষের সাথে আমি হতে দিতাম আমার পুতুলের বিয়ে! তুই কি ভেবেছিস ডাক্তারের মুখোশ পরে মেয়ে পাচার করবি আর তা কেউ জানতে পারবে না?
গোয়েন্দা বিভাগের সহকারী অফিসার রেজওয়ান মাহমুদ পরশকে ফাঁকি দেয়া এতো সহজ!
‘তারমানে তুই নাটক সাজিয়েছিস?
‘মিস্টার পরাণ আপনি কতবার দেশে এসেছেন সব ইনফরমেশন আমার কাছে আছে। বেনাপোল দিয়ে পাচার করার সময় ছয় মাস আগে আপনার চালান আমাদের হাতে আটক হয়। এদের হেট খুঁজতে খুঁজতে আপনার ঠিকানাও সামনে আসে। প্ল্যানিং করে আপনাকে দেশে নিয়ে আসলাম।
আর আপনার সকল সোশাল সাইড হ্যাক করে নিলাম৷ পুতুলকে দেখিয়ে দরদাম হাকালেন৷ আমি দেখলাম। পরে বিয়ের প্রস্তাব দিলেন।কেউ রাজি হতো না, চাচ্চু কে আম্মুকে আমিই বুঝিয়ে রাজি করিয়েছি। আর আপনার বাকি ইনফরমেশন পেতে সহায়তা করেছে পিওলি।
‘পরাণ হা -হা করে হেসে বলে,তুই কি ভেবেছিস তোর আষাঢ়ে গল্প সবাই বিশ্বাস করবে? পরাণ নিলুফা বেগমের কাছে যেয়ে বলে,আম্মু ও মিথ্যে বলছে।
নিলুফা বেগম ঠাসসসসস করে চড় দিয়ে বলে,পরশ এমন অমানুষের ছায়াও যেনো এ বাড়িতে না পরে। আর সর্বোচ্চ কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করো।
‘পরাণ দ্রুত পলাশ সাহেবের কাছে যেয়ে বলে চাচ্চু তুমি তো জানো।
‘হ্য জানি আমি না জানলে কে জানবে,সাব্বির আহমেদ পলাশ। গোয়েন্দা ভিভাগের প্রধান।
পুলিশ এসে পরাণ কে গ্রেফতার করে নিয়ে গেলো। যাওয়ার সময় পারাণ বলে,এখনো আসল অপরাধী তোর আশেপাশে রয়ে গেছে। আর আমাকে কয়দিন আটকে রাখতে পারবি? আমার হাত আর আমার পাওয়ার কম নাকি! পুতুলকে তো নিলামে আমি তুলবোই।

‘আত্মীয় স্বজন সবই নিজেদের লোক বাহিরের কেউ ছিলো না। সবাই ভিষণ অবাক।
সুফিয়া বেগমও অবাক। তার হ্যাসবেন্ড তাকে কিছু বলেনি এরজন্য খানিকটা রেগেও রইলেন মনে, মনে।
নিলুফা বেগম ধপ করে সোফায় বসে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো। সন্তান যতই খারাপ হোক মায়ের মমতা তো সেসব বোঝে না৷
পরশ এসে নিজের মায়ের পাশে বসলো,নিলুফা বেগম বললেন,আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে আমার সন্তান এমন অমানুষ! ও কি করে এই পথে আসলো?
‘আম্মু আমার ধরনা এর পিছনে বড় মামাও যুক্ত আছে। নয়তো,ভাই এসবে জড়ালো,কি করে?
‘কত ফিরিয়ে নিয়ে আসতে চেয়েছি রাগ করে ছেলেটা ফেরেনি। সেই ক্লাস ফাইভে থাকতে এক ক্রাইম করেছে যার কারণে তোর বাবা ওকে ভাইয়ার কাছে পাঠিয়ে দিলো।
‘এভাবে ভেঙে পরলে চলবে না।অপরাধী যেইহোক তাকে শাস্তি পেতেই হবে।ভেবে দেখো কত নিস্পাপ মেয়েদের জীবন এভাবে নষ্ট করেছে। আম্মু আমাকে বেড় হতে হবে। তোমার বউ মা বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। দেখি কার বাসায় লুকিয়েছে বাঁদর টাকে ধরে নিয়ে আসতে হবে তো৷
‘পালিয়েছে মানে! আমার মেয়েটা ঠিক আছে তো? আমার পুতুলের কিছু হবে না তো?সুফিয়া বেগম কান্নাকাটি শুরু করলেন।
‘পরশ উঠে এসে বলে,ছোট আম্মু চিন্তা করতে হবে না। ওর আর কত দূরে যাবে?আমি ওকে খুঁজে নিয়ে আসছি, মিম অথবা শাওনদের বাসায় যাবে। আর নয়তো রিতু আপুর বাসায়। এর বেশি দূরে যাওয়ার সাহস ওর নেই। টেনশন নিও না৷

✨পুতুল দৌড়ে এসে একটা গাড়ীর সামনে দাঁড়াতেই একজন বলে,এতো দেরি কেন আরো আগে আসতে পারলেন না।
‘পুতুল গাড়ির পেছনে বসে বলে,কথা কম বলে দ্রুত ড্রাইভ করুন প্লেন মিস করা যাবে না।
‘এটা ঢাকা টু চট্রগ্রাম এয়ার লাইন একটা মিস হলে পরেরটায় চলে যাবেন। আর হ্যা আমি ড্রাইভার না তাই সামনে এসে বসুন।
‘আমি নিজের বিয়ে ছেড়ে পালিয়ে এসেছি।সবার কাছে জানাজানি হওয়ার আগে ঢাকা ছাড়তে হবে৷
‘সামনে আসুন নয়তো গাড়ি চলবে না। আর এমন পুটি মাছকে কে বিয়ে করতো। বলেই হাসা শুরু করলো।
‘এই আপনার নাম তো নীরব তাহলে এতো বকবক কেন করছেন নিরব থেকে ড্রাইভ করুন। আর আমি আপনার বিয়ে করা বউ না যে সামনে আপনার সাথে বসতেই হবে। না গেলে আমি অন্য ব্যবস্থা করে নিচ্ছি৷
‘এই ছোট মানুষের এতো তেজ কিসের? ভাগ্য ভালো ওই লোকের যার ঘাড় থেকে পালিয়ে এসেছেন
‘আপনি কি যাবেন নাকি আজাইরা খেজুরে আলাপ করবেন?
#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here