#দর্পহরন
#পর্ব-৩৩
ঘুম থেকে উঠেই শুভ্রা বাবাকে ফোন দিলো। মেয়ের ফোন পেয়ে সালিম সাহেবের চেহারায় হাসির আভা ফুটে উঠলো। সে উৎফুল্ল কন্ঠে ফোন ধরলো-“আম্মা, কি খবর দিবেন?”
শুভ্রা বললো-“আপনার জামাই গেছে এলাকায়। কালকের জনসভার প্রস্তুতি নিতে।”
সালিম সাহেব গম্ভীর হলেন-“আর?”
“কালকে আপনার আপা কি একটা প্রজেক্টের ঘোষণা দেবে। আর দলের বিষয়ে কিছু সিদ্ধান্ত নেবে। উনি খুলে বলেননি কিছু।”
“আচ্ছা। আপনার শরীর ভালো আছে আম্মা?”
হুট করে প্রসঙ্গ পাল্টে যাওয়াতে শুভ্রা খানিকটা অবাক হলো-“ভালো আছি আব্বা।”
“আপনি আপনের আব্বাকে ভালোবাসেন তো?”
শুভ্রা হতবাক গলায় বললো-“এইটা কেমন কথা আব্বা? ভালো না বাসলে এইসব বলতাম আপনাকে?”
সালিম সাহেব হাসলো-“আচ্ছা আচ্ছা রাগ করেন কেন? এমনি জানতে চাইলাম।”
শুভ্রা ম্লান কন্ঠে বললো-“একটা কথা বলি আব্বা। তন্ময় ভাই আসছে তো অনেকদিন হইলো। চাচাকে বইলেন তাকে এইবার একটা বিয়ে করায় যেন?”
সালিম সাহেবের ভ্রু কুঁচকে গেলো। সন্দিহান গলায় জানতে চাইলো-“কি হইছে আম্মা? তন্ময় কিছু করছে?”
বলবে কিনা দ্বিধায় পড়ে গেলো শুভ্রা। তার বাবা ব্যাপারটা কিভাবে নেবে সে জানে না। উল্টো রিয়্যাকশন হলে খুব বিপদে পড়ে যাবে সে। সালিন সাহেব উদ্বিগ্ন হয়ে আবারও প্রশ্ন করলো-“আম্মা, হইছেটা কি? কি করছে তন্ময়?”
“কিছু না আব্বা। বাদ দেন।” শুভ্রা ভীত কন্ঠে জবাব দিলো। সালিম সাহেব এবার জোর করলো-“আম্মা, কি হইছে তাড়াতাড়ি বলেন। নাইলে আমি এখনই তন্ময়কে ডেকে আনবো।”
শুভ্রা আঁতকে চেচিয়ে উঠলো-“না না আব্বা এমন কিছু কইরেন না। তন্ময় ভাই যেন কিছু না জানে আব্বা। সে আগে প্রায়ই আমার শশুরবাড়ি আসতো। আমার ননদকে নাকি পছন্দ। এইদিকে আপনের জামাই একদিন দেখে খুব রাগ হইছে। আব্বা তন্ময় ভাইকে আমি এখানে আসতে মানা করছি কিন্তু সে মানতেছে না।”
এবার সত্যি সত্যি সালিম সাহেবের কপালে ভাজ পড়লো। পরিস্থিতি এমনিতেই বিরুপ। সবদিক থেকে চাপে আছেন। এরমধ্যে যদি আবার তন্ময়ের কেস আসে তাহলে তো শেষ। কিছু একটা করতেই হবে। তন্ময়কে আঁটকাতে হবে কোনভাবে। মেয়েকে আশ্বাস দিলো-“ঠিক আছে আম্মা, আমি বিষয়টা দেখবো। আপনি চিন্তা কইরেন না।”
শুভ্রা হু বলে ফোন নামিয়ে রাখলো। বাবা আশ্বাস দিলেও শুভ্রা জানে তন্ময়কে ঠেকানো সহজ হবে না। সে আসলে চায় না ঘটনা রণর কান পর্যন্ত যাক। রণ জানলে খুব খারাপ হবে এতটুকু বোঝার জ্ঞান তার আছে। শুভ্রা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে ভাবলো, আর কিছু খারাপ না হোক। এতে খারাপ সহ্য হচ্ছে না।
*****
পুরো এলাকা জুড়ে সাজ সাজ রব। প্রধানমন্ত্রী আসবে বলে পুরো শহর সাজানো হয়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। রণ দফায় দফায় মিটিং করছে দলের লোকজনদের সাথে। কাল থেকে না ঘুমিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। আপাতত তৈরি হওয়ার জন্য রুমে ফিরেছে। মিহির জানালো দিলশাদ এসেছে। জরুরি কথা বলবে। রণ মিহিরকে বললো দিলশাদকে ভেতরে নিয়ে আসতে।
“দিলশাদ, কি হয়েছে? হঠাৎ জরুরি ভাবে চলে এলি?”
“ভাই, সালিম সাহেব অনেক লিয়াজো করার চেষ্টা করতেছে। আমার আশঙ্কা আপনাকে খারাপ বানানোর জন্য সে হয়তো প্রধানমন্ত্রীর উপর হামলা চালানোর চেষ্টা করতে পারে।”
রণ প্রথমে অবাক হলো তারপর হেসে দিলো-“এতোটা নিচে নামবে না মনেহয়। আফটারঅল হাজার হলেও আমি তার মেয়ের জামাই।”
দিলশাদ মোটেও হাসলোনা-“ভাই, আমি সিরিয়াসলি বলতেছি। উনার প্রতিপক্ষ হিসেবে যেই থাক কাউকে গোনায় ধরে না সে। তাছাড়া সোহেলের চলনবলন খুব সন্দেহজনক। সে নিজের গ্যাং নিয়ে আপনার সমর্থক কয়েকজনকে হুমকি দিয়েছে অলরেডি।”
রণ একটু ভাবলো। চেহারায় কয়েকটা রেখা উঠে মিলিয়ে গেলো। মিহিরের দিকে তাকিয়ে জানতে চাইলো-“খাদেমের বউ কই?”
“নিজের বাসায়। কেন ভাই?”
মিহির বিস্ময় নিয়ে জানতে চাইলে রণ বললো-“ওকে দূরে কোথাও সরায় নেওয়া যায় না? খাদেমের মামলাটা আবার ওপেন করতাম।”
দিলশাদ থামালো রণকে-“ভাই, একটা কথা বলি?”
রণ দিলশাদের দিকে তাকালো। দিলশাদ একবার মিহিরকে দেখে নিল-“খাদেমের বউকে দিয়ে হবে না। সত্যি বলতে কাউকে দিয়েই হবে না। ওরা কোন না কোনভাবে খুঁজে বের করে ফেলবে। তারপর মামলা ডিসমিস।”
রণ ভাবনায় ডুবে থেকে বললো-“তাহলে কি করবো বলে দে।”
দিলশাদ মাথা চুলকায়। যা মনে আছে তা বলে ফেলা ঠিক হবে কিনা বুঝতে পারছে না। শেষ মুহূর্তে নিজেকে সামলে নিলো। রণকে বললো-“ভাই, আজকের পর্ব শেষ হোক তারপর একটা সিদ্ধান্ত নেন কি করবেন৷ দেখেন সালিম সাহেব আজকে কি করে। আর একটু চোখ কান খোলা রাইখেন ভাই। মিহির আর রাজীব যেন সবসময় আপনের সাথে থাকে।”
রণ মাথা দোলায়-“ঠিক আছে।”
ফোন বেজে উঠতেই রণ ছুট লাগালো। প্রধানমন্ত্রী কাছাকাছি এসে গেছে।
রণ পৌঁছে দেখলো সালিম সাহেব উপস্থিত তার দলবল নিয়ে। রণকে দেখে হাসলো-“তুমি আমাকে না বললেও আমি উপস্থিত আছি জামাই। আপার সাথে আমার সম্পর্কটা তোমার বয়সের চাইতেও অনেক বেশি পুরনো। এইজন্যই সব জায়গায় পাঙ্গা লাগা ঠিক না।”
রণ হাসলো-“কে বললো আমি পাঙ্গা লেগেছি? আপনি দলের পুরনো মানুষ। যে কোন জায়গায় আপনার অটো দাওয়াত ইস্যু হয়ে যায়। তো অনুষ্ঠান করে দাওয়াত দিতে হবে কেন? সব জায়গায় তো বিনা দাওয়াতে হাজির হয়ে যান।”
সোহেল তেড়ে এলো মারতে। সালিম সাহেব ঠেকালো-“তোর বোন জামাই হয়। খবরদার অসন্মান করবি না। আর আপার সামনে কোন কাহিনি না।”
সোহেল পিছু হটে গেলো। রণ কিছু বলার আগেই নেত্রী এসে নামলো।
*****
জলি নামাজে বসেছে। কাল রণর সাথে যেতে চাইলেও রণ তাকে সাথে নেয়নি। বউকে বলেছে সেও নাকি যাবে না। রণ একা একা এলাকায় গেলেই জলির বুক ধকধক করে। অজানা আশঙ্কায় বুক কাঁপে। শুভ্রাকে সে কথা বলা যায় না। তাই নামাজে বসে আছে কাল থেকে। জায়নামাজে বসে থেকেই কলিংবেলের আওয়াজ শুনলো সে।
বিকেলের দিকে হাসিখুশির সাথে বসে গল্প করছিল শুভ্রা। সেই সময় কলিংবেল বাজলো। হাসিখুশি প্রস্তাব করেছে লুডু খেলার। শুভ্রা কলিংবেল শুনে উঠে দাঁড়ায়-“তোমরা লুডু বের করো আমি দেখে আসছি কে এসেছে?”
“আচ্ছা ভাবি।”
হাসি ঘাড় হেলায়। শুভ্রা ছুটে এসে দরজা খুলতেই চমকে উঠলো। তন্ময় দাঁড়িয়ে আছে মুখে হাসি নিয়ে। শুভ্রা ভয় পাওয়া গলায় বললো-“তুমি?”
“হ্যা আমি। আজ তো তোর বর নেই তাই এলাম।”
শুভ্রা মাথা নাড়ে-“তুমি চলে যাও ভাইয়া। প্লিজ চলে যাও। ও কোনভাবে জানলে খুব অশান্তি হবে।”
তন্ময় শুভ্রাকে ঠেলে ঘরের ভেতরে ঢুকলো-“কোনভাবেই জানবে না। তোর জামাই ভীষণ বিজি।”
এমন সময় খুশি উঁকি দিলো-“ভাবি, আসছো না কেন? লুডু সাজিয়েছি।”
তন্ময় চোখ নাচায়-“আরে বাহ! লুডু খেলা হবে নাকি? চল আমি খেলবো তোদের সাথে। টিম বানিয়ে খেলা যাবে।”
শুভ্রা খুশিকে ধমকে দিলো-“তুমি ভেতরে যাও খুশি আমি আসছি।”
খুশি ভয় পেয়ে ভেতর ঘরে দৌড়ে চলে গেলো। শুভ্রা তন্ময়কে দেখলো-“ভাইয়া প্লিজ। আমি কোন সিন করতে চাই না। তুমি চলে যাও প্লিজ। বারবার বলছি এখানে এসো না।”
তন্ময় কঠিন দৃষ্টিতে শুভ্রাকে দেখলো-“দেখ শুভ্রা, তোর চিন্তা দুলাভাইকে নিয়ে তো?”
শুভ্রা জবাব দিলো না। তন্ময় হাসলো-“এতো ভাবিস না শুভ্রা। আচ্ছা, ধর যদি তোর বর না থাকে, তাহলে?”
শুভ্রার ভ্রু কুঁচকে গেলো-“মানে? কি বলতে চাইছো?”
“তোর বর গেছে আমাদের এলাকায়। ও ছোট বাবার প্রতিপক্ষ। ছোট বাবা নিজের প্রতি পক্ষকে কোন ছাড় দেয় না এটা তুই ভালোমতোই জানিস। যদি তোর বর আজ বাসায় না ফেরে তাহলে কেমন হয়? কি করবি তুই?”
শুভ্রা বোকার মতো তাকিয়ে থাকে তন্ময়ের দিকে-“তুমি কি বলতে চাইছো আমি বুঝতে পারছি না ভাইয়া।”
“ছোট বাবা খুব রেগে আছে তোর বরের উপর। বড় কিছু করে ফেলতে পারে তাকে।”
শুভ্রার মাথার উপর দিয়ে গেলো তন্ময়ের কথা। তার বাবা তার স্বামীকে কিছু করবে এমনটা সে কল্পনাও করে না। হাজার হোক মেয়ে জামাই সে। হঠাৎ পেছনে জলির কন্ঠ-“আমার রণর কি হইছে? ও বউ কি হইছে? তোমার ভাই কি বলে এইসব? আমার বাবুন। ওহহহ।”
বুক খামচে ধরে সেকেন্ডের মধ্যে জলি মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। শুভ্রা চেচিয়ে উঠে দৌড়ে এসে জলিকে ধরে-“মা!”
আমার নতুন বই অন্ধকারে জলের কোলাহল প্রি অর্ডার করেছেন তো?
চলবে—
©Farhana_Yesmin





