দর্পহরন #পর্ব-৪

0
384

#দর্পহরন
#পর্ব-৪

তুলতুল ঘুমের মধ্যে বারবার কেঁপে কেঁপে উঠছে। ঠোঁটের কোন ক্ষতবিক্ষত, মুখের কয়েক জায়গা কালচে হয়ে আছে। দুই হাতের কবজিতে পাঁচ আঙুলের ছাপ স্পষ্ট। ওর জামাকাপড়ের র/ক্তের দাগ শুকিয়ে গেছে। রিমার খুব মায়া হলো মেয়েটাকে দেখে। গায়ের রং ফর্সার দিকে, চেহারাটা পুরাই পুতুলের মতো। এই মেয়েটার কি হাল করেছে তার ছেলে? বুকের ভেতরটা মুচড়ে উঠলো। কোন মায়ের বুকের ধন তুলে এনেছে কে জানে।

মেয়েটাকে দেখে কেন যেন নিজের মেয়ে শারমিনের কথা মনে এলো। সকাল থেকে হাজার বার ফোন দিয়েছেন মেয়ের নাম্বারে কোন খবর নেই। এর আগে কোনদিন এমন হয়নি। শারমিন সবসময় ফোন ধরে, ধরতে না পারলে পরে ব্যাক করে। এবারের মতো কয়েকদিন কথা না বলে থাকেনি আগে। রুমার ভীষণ চিন্তা হচ্ছে মেয়ের জন্য। তার চিন্তার কথা কার সাথে শেয়ার করবেন সেটাই বুঝতে পারছেন না। মেয়ের বাবা এখন নিজের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার আর ছেলে নিয়ে চিন্তিত। রুমা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে মেয়েটার গায়ে হাত রাখলেন। সাথে সাথে মেয়েটা ধরমরিয়ে উঠে বসে দু’হাতে মুখ ঢেকে চিৎকার শুরু করলো-“না না না, প্লিজ কাছে আসবেন না। আমাকে মাফ করে দিন। আর কখনো এমন করবো না।”
রিমার বুকটা ধক করে উঠলো। সে বিচলিত হয়ে বললো-“মাগো, ভয় পাইয়ো না। আমি তোমাকে কিছু করুম না।”
তুলতুল মুখের উপর থেকে হাত সরিয়ে রিমাকে দেখলো। ভীত চাহুনি দিয়ে জানতে চাইলো-“আপনে কে? কি চান?”
রিনরিনে বাচ্চা বাচ্চা কন্ঠের কথাগুলো শুনে হাসলো রিমা-“কিছু চাই না। তোমারে তৈরী করতে আসছি। তোমার মা আসবে তোমাকে দেখতে।”
“মা! সত্যি মা আসবে? আমাকে নিয়ে যাবে? এখান থেকে নিয়ে যাবে আমাকে?”
বলতে বলতে কেঁদে দেয় তুলতুল। রিমার ইচ্ছে হলো মেয়েটাকে বুকে নিয়ে আদর করতে কিন্তু ইচ্ছেটা দমন করলো। বলতে চাইলো, এখানে কেউ একবার ঢুকলে খুব সৌভাগ্যবতী না হলে আর বেরুতে পারে না। কিন্তু বলতে পারলোনা। রিমা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে কোমল স্বরে বললেন-“এই যে এখানে কাপড় রাখা থাকলো। তুমি গোসল করে এগুলা পইরা তৈরি হও। আমি কিছুক্ষণ পর একজনকে পাঠাচ্ছি তোমাকে বাইর বাড়িতে নিয়ে যাবে। ঠিক আছে?”
তুলতুল জবাব দিলো না। রিমা দরজার দিকে যেতে গিয়ে আবার ফিরে এলো-“শোন মা, তুমি কিন্তু উল্টা পাল্টা কিছু কইরো না। এরা বাপ পোলা অনেক খারাপ। রাগ উঠলে কি থেকে কি করবে নিজেরাই জানে না। তুমি তৈরি হয়ে আসো। তোমার মায়ের আসার কথা আছে। দেখ কি করে।”
তুলতুল কঠিন মুখ করে বসে আছে। সে একবার কাপড়গুলোর দিকে দৃষ্টিপাত করে। এই কাপড় পাঠানোর মানে কি? গতকালকে তুলে এনে রে/প করলো এখন কি করতে চায়? আর মা কেন আসছে এখানে? কি চায় ওরা? বাবার মতো তাকেও কি…। মায়ের সাথে শেষ দেখা করাতে চায় নাকি? তুলতুল হু হু করে কেঁদে দেয়।

★★★

দেবরের মুখেপানে উৎকন্ঠিত দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে আছে তুলতুলের মা তহুরা। গোলাম রাব্বানী ফোনটা কান থেকে নামাতেই তহুরা জানতে চাইলো-“রাব্বি, কি বললো ইব্রাহিম সালিম? আমার মেয়ে কোথায়?”
“ইব্রাহিম সালিম আমাদের তার বাড়িতে ডাকে ভাবি।”
পাশ থেকে রাব্বাীর বউ মিতা আঁতকে উঠলো-“না না ওর বাড়িতে যাওয়া যাবে না। আমার খুব ভয় করছে।”
রাব্বি বিরক্ত হলো-“আহ মিতা, শুধু শুধু ভয় পেয় নাতো। সামনে নির্বাচন আসছে। মনেহয় না এই মুহূর্তে ইব্রাহিম সালিম উল্টো পাল্টা কিছু করবে।”
“না না রাব্বি মিতা ঠিকই বলেছে। ওদের উপর কোন ভরসা নেই। তোমার ভাইকে কিভাবে দিনদুপুরে শেষ করে দিল দেখনি? মেয়েটাকে এতো করে বোঝালাম তবুও আমার কথা কানে তোলেনি। না জানি মেয়েটা এখন কি অবস্থায় আছে।”
বলতে বলতে ঝরঝর করে কাঁদে তহুরা। মিতা জায়ের পিঠে হাত রেখে স্বান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করে। রাব্বি গুম হয়ে থাকলো কিছুক্ষণ তারপর বললো-“আমি বলি কি ডেকেছে যখন যেয়ে দেখি কি বলে। যদি তুলতুলের কোন খবর পাই।”
“না প্লিজ তুমি যেয় না। আমার ভয় করে। ওদের ওপর ভরসা করা যায় কিছুতেই।”
রাব্বি মাথা নাড়ে-“উহু, এই মুহূর্তে আমাদের কিছু বলবে না ইব্রাহিম সালিম। তুলতুলের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, সাংবাদিকরা সরব। শুনেছি এবার নমিনেশন পাচ্ছে না ব্যাটা। মনেহয় না কোন ভুল করবে এখন। ভাবি, তুলতুলের খবর পেতে ওর আস্তানায় যেতেই হবে। এভাবে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকলে কিছুই হবে না।”
তহুরা বললো-“ঠিক আছে তাহলে আমিও যাব তোমার সাথে।”
“মা, চাচ্চুর সাথে আমি যাবো। তোমার যেতে হবে না।”
তুলতুলের ভাই ফাহিম রুমে ঢুকলো। তহুরা আতঁকে উঠে বললো-“মাথা নস্ট হয়েছে তোর? ওই পাষন্ডদের কাছে তোকে কোনদিন যেতে দেব না। তোর বোন কথা না শুনে যা করেছে তাকি যথেষ্ট না? এখন তুইও ওর মতো বিপদ ডাকতে চাইছিস?”
ফাহিম বললো-“তুমি আর চাচ্চু যেতে চাচ্ছ, তোমাদের বিপদ হবে না?”
“হলে হবে। আমাদের বিপদ হলে তুই থাকবি সামাল দিতে। সবাই মিলে একসাথে বিপদে পড়ার কোন মানে নেই।”
“কিন্তু মা…”
তহুরা ফাহিমকে থামিয়ে দিলো-“আর কোন কিন্তু নয়। তুই যাবি না মানে যাবি না। কথা শেষ।”
রাব্বি মাথা দুলায়-“হ্যা ফাহিম মা যা বলছে শোন। তোর চাচী আর হিমি একা থাকবে, তুই ওদের সাথে থাক। আমি বরং হাফিজ ভাইকে ডেকে নেব আমাদের সাথে।”
মিতার কিছুতেই ইচ্ছে হচ্ছে না রাব্বিকে বাঘের গুহায় যেতে দেওয়ার কিন্তু মানা করবে সে উপায়ও নেই। তুলতুলে এ বাড়ির মেয়ে। তার বিপদে পাশে না থাকলে কি হবে? এমন বিপদ যদি হিমির হয় তাহলে? নিজের মেয়ের কথা ভেবে আরেকবার বুকটা ধ্বক করে উঠলো। তুলতুল বড্ড ভালোবাসে হিমিকে, হিমিও তুলতুলকে। কাল থেকে তুলতুলের কথা জানতে চেয়ে মুখে ফেনা তুলে ফেলেছে হিমি। তুলতুলটা ভালো আছে তো? প্রশ্নটা মাথায় আসতেই মিতার ভয়ে কম্পমান বুক থেকে দীর্ঘ শ্বাস বেরুলো কেবল।

★★★

জ্ঞান ফিরে গতদিনের মত হাত পা খোলা পেল শুভ্রা। তবে আজ নিজেকে মেঝেতে আবিষ্কার করে অবাক হলো। তাহলে কি গতকাল ওকে বেঁধে রেখে যায়নি? মেঝে থেকে উঠতে যেয়ে টের পেলো হাত পা প্রচন্ড ব্যাথা। কোনরকমে উঠে ওয়াশরুম গেল। বেরিয়ে আসতেই দেয়ালে সাঁটানো চিরকুটে নজর গেলো। কৌতুহলে এগিয়ে এসে চিরকুটটা মন দিয়ে পড়লো শুভ্রা। সুন্দর হস্তাক্ষরে লেখা আছে-“নিজেকে মুক্ত পেয়ে খুশিতে আটখানা হয়ে আবার পালানোর পথ খুঁজবেন না। আপনার জন্য কিছু কাজ আছে আজ সেইজন্যই নিজেকে মুক্ত পেয়েছেন। ধরে নিন এটা আপনার দ্বিতীয় পরীক্ষা। কালতো ফেল করলেন আজ যেন ফেল না হয়। আজ আপনার টাস্ক হলো বাড়ি পরিস্কার করা। পুরো বাড়ি ভীষণ ময়লা হয়ে আছে খুব সুন্দর করে পরিস্কার করবেন। রান্নাঘরে চালডাল সবজি ডিম রাখা আছে। দু’জনার আন্দাজে রান্না করবেন। নিজে খাবেন আমার জন্য রাখবেন। আমি এসে কাজ দেখে আপনাকে নাম্বার দেব। কাজ না করলে বা ভালো না হলে কি সাজা হবে সেটা না হয় তখনই দেখবেন।”
শুভ্রার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। একে তো তাকে কিডন্যাপ করেছে তারউপর আবার ঢং দেখো তাদের। শুভ্রাকে দিয়ে কাজ করাবে? এই শুভ্রাকে দিয়ে? এতোবছর ধরে বাইরে কখনোই এসব করতে হয়নি তার। আর সে কিনা ঘর মুছবে? অনেক হয়েছে ভদ্রতা দেখানো। এবার সে দেখাবে কার মেয়ে সে। তারা মনেহয় চেনে না কাকে তুলে এনেছে। আজ হাড়ে মজ্জায় বুঝিয়ে দেবে কি তার পরিচয়।

শুভ্রা মেজাজ খারাপ করে রুম থেকে বেরুল। টেবিলের উপর পাউরুটির প্যাকেট দেখলো। জেলির বয়ামও আছে। দেখে খিদে পেয়ে গেলো। গোগ্রাসে দুতিন পিস পাউরুটি খেয়ে নিলো শুভ্রা। তারপর পুরো বাড়ি ঘুরে দেখলো। অদ্ভুত ব্যাপার হলো এ বাড়িতে জানালা নেই কোন। পুরো বাড়িতে বাইরের কোন আলো আসে না। দু’টো শোবার ঘর আছে একটা বড় হলরুম যেখানে একপাশে সোফা আর আরেক পাশে ছোট্ট টেবিল রাখা যেখানে সে বসে ছিল কিছুক্ষণ আগে। রান্নাঘরের দরজাটা লোহার, সম্ভবত ওপাশ থেকে তালা দেওয়া। শুভ্রা অনেক চেষ্টা করেও কিছু করতে পারলোনা। হাল ছেড়ে দিয়ে হলরুমে ফেরত এলো শুভ্রা। টিভি ছাড়লো তবে সেখানে নিজেকে দেখে চমকে উঠলো। দাঁতে নখ কেটে ভাবছে কেসটা কি। পরক্ষনেই বুঝতে পেরে বোকার মতো হাসলো সে। আচ্ছা, এই ব্যাপার? বাড়িতে সিসিটিভি লাগানো আছে? শুভ্রার বেশি কষ্ট করতে হলো না। হলরুমের একেবারে সামনে মাথার উপরে ক্যামেরাটা জ্বলজ্বল করছে। শুভ্রার মুখের উপর স্থির হয়ে আছে ক্যামেরাটা। শুভ্রার মনে হঠাৎ দুষ্ট বুদ্ধি উদয় হলো। সে বার কয়েক ভেংটি কাটলো ক্যামেরা বরাবর তাকিয়ে। সোফায় শুয়ে বসে রইলো কিছুক্ষণ। নাহ, জমছে না। শয়তানী করার জন্য মনটা আকুপাকু করছে। বদমাশ লোকটা তাকে আঁটকে রেখে মজা নেবে এটা কিছুতেই হতে দেওয়া যাবে না। কি মনে করে শুভ্রা বেডরুমে গেল।

প্রত্যেকটা ঘরে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো আছে। শুভ্রা নিজের লাগেজটা খুঁজে বের করলো। ওখান থেকে বেছে বেছে সবচেয়ে আঁটোসাটো গেন্জি আর প্যান্ট বের করে ওয়াশরুমে ঢুকলো। পরে বেরিয়ে এসে ক্যামেরার তাকিয়ে মুচকি হাসলো।

ক্যামেরার মুখোমুখি সোফায় শুয়ে পড়লো। টল ফিঙ্গার দেখিয়ে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করলো ক্যামেরার দিয়ে তাকিয়ে। মুখ ভাঙচি কাটলো কিছুক্ষণ, একসময় ক্লান্ত হয়ে সোফায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লো শুভ্রা। কতোক্ষণ ঘুমিয়েছে জানে না, হঠাৎ গায়ে ঠান্ডা বরফের শীতল স্পর্শ পেতেই ধড়ফড়িয়ে উঠে দাঁড়ায় সে। হতচকিত হয়ে দেখলো সামনে দাঁড়িয়ে আছে ছেলেটা। শুভ্রা তাকানো মাত্র ওর গায়ে বরফ কুচি ছিটিয়ে দিলো। সে গা থেকে বরফ ঝেড়ে ফেলতে চাইলো-“এসবের মানে কি?”
ছেলেটা নিশ্চল দাঁড়িয়ে রইলো। শীতল দৃষ্টি হেনে বললো-“আপনার সাথে ভদ্র আচরণ করছি বলে মনেহয় পুরো ব্যাপারটাকে ফান হিসেবে নিয়েছেন। আপনি হয়তো ভাবছেন আমরা আপনাকে ভিআইপি ট্রিটমেন্ট দেব। তাইতো আমার কথাগুলোকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। ভাবছেন, আমাকে এরা আর কি করবে। তাই না?”
শুভ্রা কিছু বললো না। ছেলেটা হাসলো-“আপনার সব ভাবনার ট্রিটমেন্ট সাথে নিয়ে এসেছি আজ।”
“মমমমমানে?”
ছেলেটা হাসি গিলে নিলো-“মনে একটু পরেই বুঝবেন। আসেন টেবিলে বসুন।”
শুভ্রা ভয়ে পিছিয়ে গেল-“কেন টেবিলে বসবো কেন? আমি কিছু খাবো না।”
“আরেহ, ভয় পাচ্ছেন কেন? খাবার খেতেই বলছি।”
বলেই যে হাসিটা দিলো তাতে শুভ্রার পা দুটো দুলে উঠলো তুমুলভাবে। মন তীব্র ভাবে পালাতে চাইছে কিন্তু পা দু’টো মাটিতে আঁটকে আছে।
“বললাম তো খাব না। খিদে নেই আমার।”
রণ কঠিন চোখে তাকালো-“আমাকে কোন অশোভন কাজ করতে বাধ্য করবেন না মিস শুভ্রা। যদি বাধ্য করেন তাহলে খুব খারাপ হবে। নিজেকে কোথাও মুখ দেখানোর অবস্থায় খুঁজে পাবেন না।”
শুভ্রা চুপসে গেলো। এই ছেলেটাকে দেখলে মনেহয় সে সব পারবে। কথা না বাড়িয়ে রণর পিছু পিছু টেবিলে বসলো। রণ এক বাটি কাঁচামরিচ এগিয়ে দিলো-“এগুলো খেয়ে শেষ করুন।”
শুভ্রার গোল গোল চোখ দুটো যেন কোটর থেকে বেড়িয়ে আসবে-“কিহ! এতো মরিচ খাবো? পাগল পেয়েছেন আমাকে?”
“নাহ, সুস্থ মানুষ পেয়েছি তাই সুস্থ আবদার করেছি। কিন্তু আপনি তো সুস্থ না তাই আমার সব কথাকে পাগলামি মনেহয়। এখন ভদ্র মেয়ের মতো খেতে শুরু করুন।”
“খাব না আমি। আমার ঝাল সহ্য হয় না। আমি খেতে পারবোনা।”
রণ চুপচাপ নিজের মোবাইলটা বের করে শুভ্রার ভিডিও দেখালো-“ভাবছি আপনার বাবাকে ভিডিওটা পাঠাব। ইব্রাহিম সালিমের আদরের কন্যা কি করছে সে দেখুক।”
জবাব দিলো না শুভ্রা। মোবাইলের দিকে তাকিয়ে দেখলো, ওর পোশাক পরিবর্তনের ভিডিও আছে সেখানে। জিভ দাঁতে কাটে সে। ওই রুমে যে সিসিটিভি আছে ভুলে গেছিস তখন। উচিত ছিল ওয়াশরুমে যেয়ে কাপড় চেঞ্জ করা। কিন্তু তাই বলে ছেলেটা সেটার ভিডিও নেবে? লজ্জা করলো না একটা মেয়েকে এভাবে দেখতে? শুভ্রা রেগে গেলো-“লজ্জা নেই আপনার? একটা মেয়ের অজান্তে এভাবে ভিডিও করতে? দেখে তো ভদ্রলোক ভেবেছিলাম।”
রণ শান্ত দৃষ্টি হেনে মুচকি হেসে বললো-“আপনাকে কে বললো আমি আপনাকে দেখেছি? নিজেকে এতো বেশি ভাববার প্রয়োজন নেই। আর আমি ভদ্রলোকই কিন্তু আপনি ভদ্রমহিলা না। তা না হলে আমার কথা শুনতেন। আমাকে চ্যালেন্জ করতেন না।”
একটু থেমে রণ তাড়া দিলো-“তাড়াতাড়ি শুরু করুন। আমার দেরি হচ্ছে কিন্তু।”
শুভ্রা মাথা নাড়তেই রণ মোবাইল তুললো-“পাঠালাম তাহলে। ইউটিউবেও আপলোড করে দেই।”
শুভ্রাকে অসহায় দেখালো-“কেন এমন জরছেন বলুন তো? কি করেছি আমি?”
“কি করেছেন! আপনি জানেন না কি করেছেন? বারবার উল্টো পাল্টা আচরণ করে আমাকে রাগিয়ে দিচ্ছেন। আমি আপনাকে বলেছি, ভদ্র ভাবে থাকলে আপনাকে সুবিধা দেব, আপনি শুনছেন?”
রণ রেগে কথাগুলো বলে মরিচের বাটির দিকে ইঙ্গিত করলো-“এবার বুঝুন। আজ কোন মাফ হবে না। আশাকরি আজকের পর আর কখনো এমন কিছু করার চেষ্টা করবেন না।”
শুভ্রা এবার নরম হলো-“আমি ঝাল খেতে পারি না। এতগুলো মরিচ খেলে আমি মরে যাব। প্লিজ এমন করবেন না।”
রণ মোবাইল তুলে ভিডিও সেন্ড করতে গেলেই শুভ্রা মরিচ হাতে নিয়ে খেতে শুরু করলো। একটার পর একটা মরিচ খেয়ে যাচ্ছে। ঝালে মুখ পুড়ে যাচ্ছে তার কিন্তু থামলো না। রণ চেয়ারে হেলান দিয়ে আয়েস করে দেখছে তাকে। কিছুক্ষণ পর শুভ্রার চোখ দুটো থেকে জল গড়াতে শুরু করলো আপনাতেই। ক্রমান্বয়ে টকটকে লাল হয়ে যাচ্ছে চোখ দুটো। শুভ্রা পানি খেতে গেলো কিন্তু রণ ফট করে বোতল টেনে নিলো তার হাত থেকে। শুভ্রা হাসফাস করে উঠলো-“প্লিজ একটু পানি দিন।”
“তাড়াতাড়ি শেষ করুন।”
আদেশ করলো রণ। শুভ্রা হা করে নিশ্বাস নিচ্ছে। রনর নিষ্ঠুরতায় কান্না পাচ্ছে তার। তার নাক দিয়ে জল গড়াতে শুরু করেছে। অসহায় চাহুনি দিয়ে রণর দিকে তাকালো। রণ নির্বিকার। শুভ্রার কেন যেন জিদ চেপে গেল। সে আবারও মরিচ খেতে শুরু করেছে৷ তার মুখ, গলা, বুক, পেট সব জ্বলতে শুরু করেছে তবুও একের পর এক মরিচ খেয়ে যাচ্ছে। একসময় রণর মুখে হাসি ফুটে উঠলো। সে বোতল এগিয়ে দিলো-“এরপর বাঁদরামো করতে মন চাইলে আজকের কথা ভাববেন।”
শুভ্রা ভেবেছিল পানিই খাবে না কিন্তু বোতল পাওয়া মাত্রই টেনে নিয়ে ঢকঢক করে পানি পান করতে লাগলো। এরপর শুরু হলো বমি। শুভ্রার সমগ্র শরীর যেন জ্বলে যাচ্ছে। বমি করতে করতে কান চেপে ধরলো সে। তাকে এই অবস্থায় রেখে বেড়িয়ে এলো রণ।

চলবে—
©Farhana_Yesmin

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here