#দর্পহরন
#পর্ব-৫৩
মেয়র নির্বাচনের তোড়জোড় শুরু হয়েছে বেশ ভালো ভাবেই। তফসিল ঘোষণার সময় ঘনিয়ে আসছে। সালিম সাহেব নিজ থেকে বেশ তোরজোর শুরু করেছেন। কিছু সামাজিক কাজ শুরু করেছেন। মসজিদ মাদ্রাসায় ডোনেশন দেওয়া, স্কুলে ফান্ডিং করা ছাড়াও এলাকার পার্টি কর্মীদের সাথে সক্ষ্যতা বাড়াতে ছোট ছোট করে পার্টি দিচ্ছেন। আগে এসব কাজ সোহেলই করতো এখন সালিম সাহেব নিজে দেখছেন সাথে আছে তুহিন। সালিম সাহেব বুঝতে পারছেন পার্টির সবাই দ্বিধান্বিত। তার মুখের উপর কেউ মানা না করলেও পেছনে বোশ আলাপ হচ্ছে তাকে নিয়ে। সালিম
সাহেব পাত্তা দিচ্ছেন না। তিনি নিজের মতো করে প্রচারনা করে যাচ্ছেন। নিজের মধ্যে ভীষণ জেদ চেপে যাচ্ছে। এই ক্ষমতার দ্বন্দে নিজের ছেলেকে হারিয়েছেন, হারিয়েছেন সন্মান। সন্তান ফিরে পাবেন না কিন্তু পুরনো গৌরবটা ফিরিয়ে আনতে হবে। আর এইজন্য ক্ষমতা ফিরে পাওয়া ভীষণ জরুরি। হোক তা এলাকার মেয়র পদ। জানে মেয়র হলে সংসদে যাওয়া হবে না কিন্তু তবুও দীর্ঘ দিন ক্ষমতা থেকে দূরে থাকার চাইতে ভালো।
“স্যার, আসবো?”
চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বুঁজে ছিলো সালিম সাহেব। তুহিনের গলা পেয়ে উঠে বসলো-“আয়।”
তুহিন কাচুমাচু হয়ে বললো-“স্যার, একটা কথা বলতাম।”
“কি কথা?”
“বউমার ভাইটা নাকি দল করে। তলেতলে আপনের অপজিটে কাজ করে।”
সালিম সাহেবের ভ্রু কুঁচকে গেলো-“সত্যি জানোস নাকি কেউ ভাঙানি দিছে?”
তুহিন মাথা দুলায়-“না সত্য খবর। আমি অনেকদিন ধরে খোঁজ নিতেছিলাম। আজই শিওর হইলাম।”
“জামাইয়ের জন্য কাজ করে?”
তুহিন মাথা দুলায়। চিন্তায় ভ্রু কিঞ্চিৎ কুঁচকে গেলো সালিম সাহেবের। তুহিন দ্বিধা নিয়ে বলে-“ওকে কি অফিসে ডাকবো?”
“ওরে নিয়ে চিন্তার কিছু আছে? দুইদিনের পোলা রাজনীতির কি বোঝে?”
তুহিন চুপ করে রইলো। মনেহচ্ছে কিছু বলতে চান কিন্তু সাহসে কুলাচ্ছে না। সালিম সাহেব বললো-“কি বলতে চাস বল।”
“ও ভালো কাজ করে। অল্প বয়স কিন্তু কথা দিয়া মানুষরে বশ করতে পারে। এইজন্যই জামাই ওরে হাতে রাখছে।”
“তো? আর এমনেও ওয় আমাগো পছন্দ করে না এই তো জানোস।”
“জানি। তয় ওরে কাজ করাইতে রাজি করতে পারলে আপনের অনেক সুবিধা হইতো।”
আবারও চেয়ারে হেলান দিয়েন সালিম সাহেব। কিছুক্ষণ ভাবলেন বসে বসে তারপর বললেন-“আচ্ছা, ডাক ওরে। আলাপ কইরা দেখি কি কয়।”
তুহিনের মুখে হাসি ফুটলো। সে রুম থেকে বেরুবে এমন মুহূর্তে সালিম সাহেব ডাকে-“তুহিন।”
অবাক হয়ে পিছু ফেরে তুহিন-“জ্বি স্যার।”
সালিম সাহেব মৃদু হাসেন-“তুই আমাকে স্যার ডাকিস না। চাচা কবি আইজ থিকা। ঠিক আছে?”
তুহিন বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে থেকে হেসে দিলো। খুশিতে কান্না এলেও নিজেকে সামলে নিলো সে। মাথা নেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় তার চোখের কোলে জলের আভাস বেশ টের পেলো সালিম সাহেব।
*****
কয়দিন ধরে শুভ্রার সাথে কথা বলে না রণ। গভীর রাতে বাসায় ফিরে সরাসরি বিছানায়। শুভ্রা খাবার আনলে খায় না কথাও বলে না। আজ জেগে বসে ছিল শুভ্রা। ঠিক করে রেখেছে রণ আজ কথা না বললে সে ঝগড়া শুরু করবে। সেজেগুজে ঝগড়ার প্রস্তুতি নিয়ে বসে রইলো সে। রণ রুমে ঢুকেই থতমত খেলো। শুভ্রা সোফায় বসে আছে টুকটুকে লাল শাড়ি পরে। ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া রণ না দেখার ভান করে নিজের কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। ফিরে এসে দেখলো টি টেবিলের উপর খাবার রাখা। বরাবরের মতো না দেখার ভান করে রণ শুয়ে পড়তে চাইছিল কিন্তু শুভ্রা ডাকলো-“শুনুন। এখানে আসুন।”
রণ সে ডাক অগ্রায্য করে বিছানায় বসলো। শুভ্রা শান্ত হয়ে দেখছে তার কান্ড। সে শান্ত গলায় বললো-“মন্ত্রী মশায়, আজ যদি না আসেন খাবার না খান তাহলে আমি চেচামেচি শুরু করবো। আন্টি শুনে দৌড়ে আসবে। সে অবশ্য এসব দেখলে খুশি হবে। এমনিতেই সে চায় আমি আপনার জীবন থেকে বিদায় নেই। এখন আপনি কি চান আপনি বলুন।”
রণ ভ্রু কুঁচকে শুভ্রার দিকে তাকিয়ে আছে। চেহারায় গাম্ভীর্যের আড়ালে খানিকটা বিরক্তি। শুভ্রার হুমকি আমলে নিয়েছে বলে মনেহয় না। শুভ্রা হাসলো-“আপনি মনেহয় ভাবছেন আমি দুষ্টামি করছি। আমি যে ফান করছি না এটা কি প্রমান করতে হবে?”
রণ এবার চুপচাপ উঠে এলো। বসলো শুভ্রার সামনে। খাবারের প্লেটটা দেখলো একনজর। শুভ্রার চেহারায় চোরা হাসি ফুটে উঠে মিলিয়ে গেলো। রণ ওর দিকে তাকিয়ে চোখ নাচায়-“তুমি ভেবোনা তোমার হুমকিতে ভয় পেয়েছি। শুধু জানতে চাইছি এসব কি?”
শুভ্রা অবাক হওয়ার ভান করলো-“খাবার। প্রতিদিন না খেয়ে শুয়ে পড়েন সেটা ঠিক আছে। কিন্তু তারপর যা করেন তাতে আমার ঘুমের খুব সমস্যা হচ্ছে।”
“মানে?”
“মানে খুব সিম্পল। আপনি খিদের জ্বালায় সারারাত ছটফট করেন আমার ঘুম হয় না। তাছাড়া আপনি খান না বলে আমারও খাওয়া হয় না। রাতে আপনার হাতে খাওয়ার অভ্যেস হয়ে গেছে তো।”
রন খুকখুক করে কেশে মৃদুস্বরে বলে-“এবার কিন্তু অতিরিক্ত হচ্ছে। কে বলেছে তোমাকে না খেয়ে থাকতে?”
শুভ্রা চোখ পিটপিট করে-“ওমা! কে বলবে আবার? এটাই তো নিয়ম। বর না খেলে বুঝি বউ খেতে পারে?”
“মরলুম একেবারে।”
রণর ঢিমে গলায় বলা কথাটা শুভ্রা শুনলো-“কিছু বললেন?”
“না কিছু না।”
“নিন শুরু করুন। নিজে খান আমাকেও খাইয়ে দিন।”
“এহহহ, ঠেকা পড়েছে আমার। প্রেমে একেবারে গদগদ।”
“হ্যা, আপনারই ঠেকা মশাই। বউ যেহেতু আপনার তাই ঠেকাটাও আপনার। নিন তাড়াতাড়ি শুরু করুন। তিন রাত হলো ঘুম নেই। আজ যদি না ঘুমাতে দেন তবে সত্যি সত্যি খবর আছে আপনার। আপনার নামে অভিযোগ চলে যাবে নেত্রীর কাছে।”
রণ কৌতুহলে উত্তর জানতে চাইলো-“তা অভিযোগটা কি হবে?”
শুভ্রা ঝটপটো উত্তর দিলো-“রাতে ঘুমাতে দেন না একদমই- এটাই অভিযোগ। আপনার নেত্রী খুব বুঝবে আমার দুঃখ। দেখে নেবেন।”
এবার হেসে দিলো রণ-“এই অভিযোগ তুলতে লজ্জা লাগবে না আপনার?”
“লজ্জা কেন লাগবে? আপনি না খেয়ে ঘুমিয়ে যাচ্ছেন তারপর মাঝরাতে খিদের জ্বালায় জ্বলছেন। এতে লজ্জার কি আছে? অবশ্য আমিও জেগে যাচ্ছি। আসলে না খেয়ে থাকার অভ্যেস নেই তো।”
বলতে বলতে লাজুক হয় শুভ্রা। বউকে আরেকটু খোঁচানের সুযোগ মিস করে না রণ-“নেত্রী যদি অন্য কোন কিছু বোঝে। না মানে খিদের ব্যাপার তার উপর সারারাত তো তাই বলছিলাম। কিন্তু তুমি যখন বলবে তখন হয়তো ভুল বলবে না।”
এবার যেন শুভ্রার টনক নড়ে। রণ কথার ডাবল মিনিং অনুধাবন করে ভীষণ লজ্জা পেলো। কিন্তু এও বুঝলো লজ্জা পেলেই শেষ। রণ জ্বালানোর একটা সু্যোগও মিস করবে না। সে জোর দেখিয়ে বললো-“আপনি খুব খারাপ লোক। কোথাকার কথা কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে ভাত ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে, খিদেয় পেটে ছুঁচো দৌড়াচ্ছে ওনার কোন খবর নেই। নিষ্ঠুর মানব।”
রণ মুচকি হেসে ভাত মাখিয়ে প্রথম লোকমা শুভ্রার দিকে বাড়িয়ে দিলো-“নিন ম্যাডাম, খেয়ে আমাকে ধন্য করুক। আর হ্যা, দয়া করে উল্টো পাল্টা অভিযোগ দেবেন না আমার নামে। আমি নিরিহ জনগণ, আমাকে ভাতে মারবেন না। ক’দিন সত্যি খুব কষ্ট হয়েছে রাতে।”
ভাত চাবাতে চাবাতে শুভ্রা হেসে দেয়-“এরপর তাহলে সত্যি সত্যি ভাতের কষ্ট দেব।”
“দিয়ে দেখো। আমিও তাহলে…”
শুভ্রা রণর মুখ চেপে ধরে-“খাওয়ার সময় এতো কথা বলতে নেই। আগে খেয়ে নিন।”
এরপর কিছুক্ষণ চুপচাপ খাওয়া দাওয়া। খাওয়া শেষে শুভ্রা হুট করে বললো-“একটা প্রশ্ন করি রণ? ঠিক ঠিক জবাব দেবেন তো?”
“হুমম বলে কি জানতে চাও।”
পাতের ভাতটুকু শেষ করে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে রণ। শুভ্রা তাকিয়ে আছে রণর দিকে-“আপনি কি আমায় ভালোবাসেন?”
রণর হাত থামে, চোখ দুটো স্থির হয়ে থাকে শুভ্রাতে।
★অমর একুশে বইমেলা ২০২৪ উপলক্ষে আমার দু’টো বই এসেছে। একটা পলিটিকাল মার্ডার মিস্ট্রি থ্রিলার ‘অন্ধকারে জলের কোলাহল’ পাবেন ৩৫৬ নং স্টলে। অন্যটা সমকালীন রোমান্টিক জনরার ‘আমি ডুবতে রাজি আছি’ পাবেন উপকথার ৫৬৪ নং স্টলে। চমৎকার বইদুটো ঘরে বসে অর্ডার করতে পারবেন রকমারিসহ আপনার পছন্দের বুকশপেও। আমার লেখা ভালো লাগলে বইদুটো সংগ্রহ করুন। আশা করছি বই পড়ে নিরাশ হবেন না।★
চলবে—
©Farhana_Yesmin