দর্পহরন #পর্ব-৫৫

0
286

#দর্পহরন
#পর্ব-৫৫

সালিম সাহেবের ডাক পেয়ে ফাহিম যারপরনাই অবাক হলো। সবার আগে যে প্রশ্নটা মাথায় ঘুরপাক খেলো তা হচ্ছে, ওরা কি কোনভাবে জেনে গেছে যে সোহেলের ব্যাপারটায় ও জড়িত? মনে মনে ভয়ে ভীত হয়ে গেলো ফাহিম। খুব দ্বিধায় ছিলো যাবে কিনা সেটা ভেবে। পরে যখন বলা হলো তুলতুলের বিষয় নিয়ে কথা বলবে তখন ভয়টা একপাশে রেখে দেখা করার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো। বোনের বিষয়ে কি কথা বলবে সালিম সাহেব সেটা জানতে হবে। বোনটাকে কি ফিরিয়ে দেবে? তাহলে সানন্দে বোনকে নিয়ে আসবে ফাহিম। সালিম সাহেবের অফিস ঘরে বসে নানা ভাবনায় আচ্ছন্ন হয়ে থাকে ফাহিম। তখন তুহিন ভেতরে যেতে বললো। ফাহিম সালিম সাহেবের কামড়ায় ঢুকলো।
“আরে, আসছো তুমি? আসো বসো।”
ফাহিম ভ্যাবাচ্যাকা খায়। এই খাতিরের কোন অর্থ খুঁ’জে পেলো না। ফাহিম কিছুটা রুক্ষ স্বরে বললো-“কি বলতে ডেকেছেন আমাকে?”
সালিম সাহেব মোটেও রাগলেন না। হাসি হাসি মুখ করে বললো-“শুনলাম তুমি নাকি পার্টি করতেছ। আমরা একই পার্টির মানুষ তাই আলাপ পরিচয়ের জন্য ডাকলাম আরকি।”
ফাহিম জবাব দিলো না। সে বোঝার চেষ্টা করছে সালিম সাহেব কি বলতে চাইছেন। সালিম সাহেব হাসলো-“তুমি আমার আত্মীয় হয়ে আরেকজনের জন্য কাজ করবা এইটা কেমন জানি লাগে দেখতে।”
এবার যেন সালিম সাহেবকে খানিকটা বুঝতে পারছে ফাহিম। সে কঠিন গলায় বললো-“তো? আমি কার হয়ে কাজ করবো না করবো সেটা তো একান্তই আমার ইচ্ছে। তাতে আপনার বলার কিছু আছে বলে মনেহয় না।”
“না, তা ভুল কিছু বলো নাই। কিন্তু তবুও বিষয়টা বিবেচনা করা দরকার। আমি এবার মেয়র পদে ইলেকশন করবো। তুমি তরুণ প্রজন্মের মানুষ, আমার হয়ে যদি কাজ করতা খুব খুশি হইতাম। এলাকার সাংসদ আমার মেয়ের জামাই তুমি তার হয়ে কাজ করো তাতে আমার দুঃখ নাই বরং আমি খুশি। তুমি আমার বউমার ভাই। শেষ পর্যন্ত আমরা সবাই মিলে একটা পরিবারই তো। সবাই যদি সবার পাশে দাঁড়াই তাহলে আমাদেরই লাভ। বুঝলা না?”
“না বুঝি নাই। আপনে কোনদিন আমাদের পাশে দাঁড়াইছেন বলে মনে পড়ে না। তাছাড়া বিয়ের পর আমার বোনটা আপনাদের কাছে বন্দী বলা যায়। এখন আবার বাচ্চা দিয়ে বন্দী করছেন। আর আপনে আশা করেন আমি আপনের জন্য কাজ করবো।”
সালিম সাহেব চুপ করে গেলেন। নম্রস্বরে বললো-“তুমি যা বলছো তা একান্ত পারিবারিক বিষয়। তবুও যা বলছো ভুল বলো নাই। বউমাকে কিন্তু আমি মুক্তি দিয়ে দিছিলাম। বিশ্বাস না হইলে তোমার বোনকেই জিজ্ঞেস কইরো। তারপর জানলাম নাতি আসতেছে। আমার ছেলেটা নাই তার পরবর্তী বংশধর আসার খবর শুনে আমি আবেগী হয়ে গেছি। নিজের রক্তের জন্য অন্যরকম টান হয় বাবা সেটা তুমি আমার বয়সে না আসলে বুঝবা না। যাইহোক, এখন আমরা বউমার কথা ভেবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমার বড় ছেলে শরীফের সাথে বউমার বিয়ে দিব। তাতে নাতি আর বউমা দু’জনই আমাদের ঘরে থাকবে। শরীফ ভালো ছেলে, তোমার বোন ভালো থাকবে তার সাথে।”
“আমার বোন কি রাজি আপনার আরেক ছেলেকে বিয়ে করতে? নাকি এবারও জোর করে বিয়ে দিবেন?”
সালিম সাহেব চেয়ারে হেলান দিয়ে ফাহিমের দিকে তাকায়-“ধরো বোনকে নিয়ে গেলা। তারপর কি করবা? বাচ্চাসহ নতুন করে শুরু করতে পারবে তোমার বোন? কিংবা আমাদের কাছে বাচ্চা রেখে দিলাম তবুও কি সব আগের মতো হবে? তারচেয়ে এই কি ভালো না যে শরীফকো বিয়ে করে জামাই বাচ্চা নিয়ে সুখে সংসার করবে? যাইহোক, তুমি দেখো কি করবা? আমার কাজ করলে আমি খুশি হবো না করলেও কোন ক্ষতি নেই। সবার ব্যক্ স্বাধীনতা আছে। জোর করা ঠিক না। যাও তাহলে।”
ফাহিমকে পুরোপুরি দ্বিধায় ফেলে দিলো সালিম সাহেব। ফাহিম অনেকটা মোহগ্রস্তের মতই বাড়ি ফিরে এলো।

*****

মোর্শেদ বেশ চিন্তিত হয়ে গেছে। তন্ময় ঘুরে ফিরে খুশির কথা বলছে। সে খুশিকে বিয়ে করবে বলে জেদ ধরে বসে আছে। দু’দিন ধরে খাওয়া দাওয়া বাদ দিয়েছে। বারবার বুঝিয়ে বলার পরও তন্ময় গো ধরে আছে। বিরক্ত হচ্ছে মিনুও। ছেলের সাথে কয়েকদফা মিটিং করেও তাকে নিজের সিদ্ধান্ত থেকে একচুল নড়ানো গেল না। মোর্শেদ অসহায় চাহুনি দিয়ে মিনুকে দেখলো। দুজনই ছেলের উপর বিরক্ত। মোর্শেদ পড়েছে বিপদে। তার ভয় হচ্ছে পাছে তন্ময়ের জেদে পড়ে ভাইয়ের সাথে সম্পর্ক না খারাপ হয়। এখন বসে বসে ভাবছে কি করবে। মিনু ডাকলো-“আপনে না হয় সালিমের সাথে কথা বলে দেখেন একবার। রণর মায়ের সাথে কথা বলে দেখেন সে কি বলে। শুনছি সেই নাকি শুভ্রারে বিয়ে করাইছে। তাহলে তন্ময়ের সাথে তার সমস্যা হওয়ায় কথা না।”
“কিন্তু রণ তো শুনছি আগেই মানা করে দিছে। শুভ্রা কথা তুলছিল তো।”
“একবার মানা করছে এইবার হ্যা বলতেও পারে। একবার কথা বলতে দোষ কি?”
মিনুর কথা মোর্শেদের কাছে গ্রহনযোগ্য মনেহয়। সে কথাটা ভাইয়ের সাথে আলোচনার উদ্দেশ্যে রুম থেকে বের হয়।

“সালিম আছোস?”
“হুমমম, ভাইজান। আসেন ভিতরে আসেন।”
মোর্শেদ ঘরে ঢুকে বসলেন, ইতস্তত করতে করতে বারবার ঘরে নজর ঘুরিয়ে চলছেন। সালিম সাহেব বুঝলো ভাইজান কিছু বলতে চায় কিন্তু কোন কারন বশত দ্বিধায় ভুগছে।
“আপনি কি কিছু বলতে চান ভাইজান?”
“হহহ। তন্ময়টা খুব জ্বালাইতেছে। দুইদিন ধইরা খায় দায় না। তার এক কথা খুশিরে বিয়া করবো। বহুত বুঝাইছি কিন্তু মানে না। তোর ভাবিও বুঝাইছে অনেকবার, কোন কথাই শোনে না। এখন কি করি ক।”
সালিম সাহেব অবাক হলেন। এই পরিবারের সবার হইছেটা কি? যা করা যাবে না সবাই যেন তাই করার জন্য উঠে পড়ে লাগছে। এটা কি ধ্বংসের আগের পরিস্থিতি? হাসফাস লাগে সালিম সাহেবের। মোর্শেদ দোনোমোনো করে বলে-“তোর ভাবি কইতেছিল, একবার বেয়াইনকে বলতে। সেই তো শুভ্রারে বিয়া করাইছে, মন নরম মানুষ। তাই তারে কইলে হয়তো মাইনা নিতে পারে। একবার কথা কয়া দেখবি নাকি? জামাই তো অহন দেশে নাই। চল কাইলকা তুই আমি যাই শুভ্রার বাসায়। ওর শাশুড়ীর লগে কথা কইয়া আসি।”
সালিম সাহেব কিছুক্ষণ ভেবে রাজি হয়ে গেলেন-“ঠিক আছে ভাইজান তাইলে দেরি করুন যাইবো না। কাইলই যামু আমরা। দেখি বেয়াইন কি কয়।”

*****

বাবা আর চাচাকে একসাথে দেখে ভীষণ অবাক হলো শুভ্রা। তাদের দু’হাত ভরা মিষ্টির প্যাকেট। কিছু বুঝে পাচ্ছে না সে। হুট করে কিছু না জানিয়ে বাবা চাচা তার বাসায় কেন এলো? শুভ্রা সালাম জানিয়ে বলেই ফেললো-“আব্বা, আপনেরা হঠাৎ? কি হইছে আব্বা?”
সালিম সাহেব হাসলো-“তেমুন কিছু না আম্মাজান। আপনে তো বাড়ির রাস্তা ভুলছেন তাই আমরাই আইলাম আপনেরে দেখতে। ভিতরে যাইতে কইবেন না আব্বারে?”
শুভ্রা দরজা থেকে সরে দাঁড়ায়-“আসেন আব্বা।”
খাবারের প্যাকেটগুলো টেবিলে রেখে সোফায় বসলো। সালিম সাহেব বললো-“আপনে কেমুন আছেন আম্মাজান? কত্তদিন হইলো বাড়ি যান না।”
“উনি ব্যস্ত থাকেন আব্বা। আমারই সব দেখে রাখতে হয় তাই যাওয়া হয় না কোথাও।”
সালিম সাহেব মেয়েকে দেখলেন একনজর। শাড়ী পরে থাকা শুভ্রাকে কেমন অচেনা লাগে তার কাছে। তার মেয়ে কোনদিন শাড়ী পরেছে বলে মনে পড়ে না। ঈদ পার্বনে দুই একবার সালোয়ার কামিজ পরেছে হয়তো। সালিম সাহেব দীর্ঘ শ্বাস গোপন করলেন। মেয়েটা যেন ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে তার জীবন থেকে।

মোর্শেদ ভাইকে খোঁচা দিলে সালিম নিজেকে সামলে নিলো। মোর্শেদ জানতে চাইলো-“বাসায় আর কেউ নাই? আপনের শাশুড়ী মা কই শুভ্রা? তারে খবর দেন কথাটথা বলি।”
শুভ্রা মাথা নেড়ে ভেতরে গেল। কিছুক্ষণ পরই ফিরে এলো-“আসতেছে।”
বলে চুপচাপ বসলো। শুভ্রা মনটা খচখচ করছে কেন যেন। মনেহচ্ছে বাবা চাচা কোন উদ্দেশ্য নিয়ে এ বাড়িতে এসেছে। হুট করে কেন যেন ভয় লাগতে শুরু করলো তার। মনটা অকারণে ছটফট করতে লাগলো৷ কেন তার মনেহচ্ছে খুব খারাপ কিছু ঘটবে?

★অমর একুশে বইমেলা ২০২৪ উপলক্ষে আমার দু’টো বই এসেছে। একটা পলিটিকাল মার্ডার মিস্ট্রি থ্রিলার ‘অন্ধকারে জলের কোলাহল’ পাবেন ৩৫৬ নং স্টলে। অন্যটা সমকালীন রোমান্টিক জনরার ‘আমি ডুবতে রাজি আছি’ পাবেন উপকথার ৫৬৪ নং স্টলে। চমৎকার বইদুটো ঘরে বসে অর্ডার করতে পারবেন রকমারিসহ আপনার পছন্দের বুকশপেও। আমার লেখা ভালো লাগলে বইদুটো সংগ্রহ করুন। আশা করছি বই পড়ে নিরাশ হবেন না।★

চলবে—
©Farhana_Yesmin

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here