দর্পহরন #পর্ব-৬২

0
267

#দর্পহরন
#পর্ব-৬২

শুভ্রা দিনরাত কাঁদে। তার কান্নায় ঘি ঢাললো সংবাদমাধ্যম আর টিভি মিডিয়া। খবর কিভাবে বাইরে গেলো তা কেউ জানে না। তবে দু’দিনের মধ্যে মন্ত্রী আর তার স্ত্রীর বিচ্ছেদের খবর টক অফ দা কান্ট্রিতে পরিনত হলো। টিভি ছাড়লেই এই খবর। শুভ্রা নিজের মেজাজ ধরে রাখতে পারে না। রিমোট আছড়ে দেয় টিভিতে। রণ কি করে পারলো এসব করতে? বড় বড় আশ্বাস দিয়ে কিনা শেষে ধোঁকাবাজি! অথচ সবার উপরে সে রণকে স্হান দিয়েছিল। শুভ্রার নিজেকে পাগল পাগল লাগে। কারো কোন স্বান্তনা আদরই ওর গায়ে লাগছে না। উল্টো বিষের মতো লাগছে। ইচ্ছে করছে সব ধ্বংস করে দিতে। সালিম সাহেব জোর দিচ্ছেন ডিভোর্স পেপার সাইন করতে। শুভ্রা গাঁট হয়ে বসে থাকে। সেই নিয়ে বাপ মেয়েতে তুমুল অশান্তি। সালিম সাহেবকে তন্ময় আরও বেশি করে উস্কে দিচ্ছে। রিমা কার পক্ষ নেবে তাই বোঝে না। একদিকে মেয়ে আরেকদিকে স্বামী। ইব্রাহিম নিবাসের শান্তি যেন বিদায় নিয়েছে।

বাড়িতে তুলতুলই একমাত্র বিন্দাস। খাচ্ছে ঘুমাচ্ছে বই পড়ছে। শরীফ ওকে নিয়ম করে ডাক্তারের কাছে নিচ্ছে। তুলতুলের সময় ঘনিয়ে আসছে দ্রুত। শরীর ভারি হয়েছে। হাঁটাচলায় কষ্ট হয়। তবুও নিয়ম করে হাঁটতে হয় তাকে। শরীফের আদেশে মালা দায়িত্ব পালনে অনড়। সেদিন অসাবধানে হাঁটতে যেয়ে পড়ে যেতে নেয় তুলতুল৷ শরীফ এসে ওকে ধরে ফেলে। তুলতুল অবাক হলো-“আপনি কি সারাক্ষণ আমার পেছনে থাকেন নাকি?”
শরীফ গম্ভীর-“না থাকলে কি হতো তাই ভাবো।”
“আপনার কাজ নেই? আমার পেছনে পড়ে থাকলে কাজ করেন কখন?”
শরীফ হাসলো-‘”সেসব তোমার না ভাবলেও চলবে। শোন তুলতুল, আমি ভাবছি চল্লিশ দিন পার হলেই তোমার সাথে বিয়েটা করে ফেলবো। কি বলো তুমি?”
তুলতুলের হিঁচকি উঠে যায় শরীফের কথা শুনে। একজন ওয়েল এডুকেটেড ছেলে, ভালো চাকরি করতো। এই লোক কি জন্য তার মতো বিবাহিত মেয়েকে বিয়ে করতে চায় সেটাই বোঝে না তুলতুল। মনে মনে করুনা করে কি? নিজের ভাইয়ের অন্যায়ের দায় চুকাতে চায়? ভাবনাটা মাথায় আসতেই তুলতুলের শরীর ভেঙে আসতে চায়। একজনের ভোগের বস্তু আরেকজনার কাছে করুনার। আসলে সে কি কারো ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য না?
“কিছু বলছো না যে?”
“কি বলবো? সব সিদ্ধান্ত তো আপনারাই নিচ্ছেন তাহলে আমার বলা না বলায় কিছু আসে যায় কি?”
শরীফ হেসে দেয়-“সবসময় এতো নেগেটিভ ভাবো কেন বলোতো? আমি তো তোমার কথা ভেবে বিয়ে করতে চাইছি। নতুন মা হবে শরীরে হরমোনের হেরফের হবে। তোমার অনেক বেশি বিশ্রাম লাগবে। আমি থাকলে বাচ্চার খেয়াল রাখতে সুবিধা হবে তুমিও পর্যাপ্ত বিশ্রাম পাবে। এখানে অন্য কোন ইস্যু নাই তুলতুল।”
তুলতুল ভ্রুকুটি করলো-“আপনার এতএত ভালো চিন্তা আমার বোঝার কথা না। আর না এগুলো আমি বিশ্বাস করছি। বাচ্চাটা তো আসলে আপনাদেরই। আমি এর বাহক মাত্র। আমি জানি আপনারা যা করতে চাইছেন সবই বাচ্চার ভালোর জন্য।”
শরীফের মুখ মলিন হয়ে গেলো। হতাশা তার চোখেমুখে। কেন যেন সে যাই করে তাতেই তুলতুল ভুল খুঁজে পায়। মানছে সোহেল খারাপ ছিলো অনেক খারাপ আচরণ করেছে তুলতুলের সাথে। তাই বলে সেই দায় শরীফের ভাগ্যে কেন আসবো? শরীফ তো কখনো তুলতুলের সাথে বেয়াদবি করেনি। শরীফ মন খারাপ গলায় বললো-“তোমার কিছু লাগলে মালাকে বলো আমি আসছি।”
শরীফ আচমকা চলে গেলো দেখে তুলতুল অবাক হলো। সে ভেবেছিল আজ আবার নতুন কিছু বইয়ের লিষ্ট ধরিয়ে দেবে শরীফকে কিন্তু সেই সুযোগই পেলো না। তুলতুলের কোন আচরণে কি কষ্ট পেলো শরীফ? তুলতুল কাঁধ ঝাঁকাল। পেলেইবা, তার কি?”

****

“তুহিন, কি অবস্থা? সুমনার আপডেট দে।”
সালিম সাহেবের কথা শুনে তুহিন ঢোক গিললো-“চাচা, আপার কাজের রেসপন্স ভালো। সবাই পছন্দ করতাছে। যদিও ভোট কারে দিব তা বোঝার উপায় নেই।”
সালিম দাঁতে দাঁত চাপে-“বুদ্ধি তো হা*রা*ম*জা*দা জামাই দিতেছে। ওর বুদ্ধি নিয়া সুমনা উড়তাছে। ওর জামাই এর লগে কি হইছে কোন খবর বাইর করতে পারছোস?”
তুহিন মাথা নাড়ে-“সব কিছু ঠিকঠাক। কেমনে খবর বাইর করুম? কোন কিছু পাইতেছি না।”
“কিছু না থাকলে এইখানে পইড়া আছে কেন? বাইর কর খোঁজ। ভুল ছাড়া কোন মানুষ হয় না। অবশ্যই ওর কোন না কোন দূর্বলতা আছে। লোক লাগায়া রাখ কিছু না কিছু পাওয়া যাইবোই।”
তুহিন মাথা দুলায়। সালিম সাহেব খানিকটা সময় ভাবলেন-“শোন, এক কাজ কর। একটা খবর লিক কর।”
তুহিন উৎসাহের সাথে জানতে চাইলো-“কি খবর?”
সালিম সাহেব তুহিনকে কাছে ডাকলো। ফিসফিস করে যা বললো তা শুনে তুহিনের চোখ কপালে-“কিন্তু আপা!”
“আমি সামলায় নিমুনে তুই খালি ম্যাচের কাঠিতে আগুন জ্বালা।”
“আচ্ছা।”
তুহিন চলে গেলো। সালিম সাহেব চেয়ারে দোল খায়। ঠোঁটের কোনে ক্রুর হাসির রেখা। সালিমের মতো পাকা খেলোয়াড়ের সাথে টক্কর দেওয়ার সিদ্ধান্ত ভুল, শত্রু পক্ষ এবার হাড়ে হাড়ে টের পাবে সেটা।

*****

“মা, তুমি এতোটা নিচে নামবে ভাবিনি।”
রণর এমন কথায় জলি অবাক হলো-“কোন বিষয়ে মাকে দোষী ভাবছিস বাবাই?”
“এই যে শুভ্রার সাথে আমার ডিভোর্স নিউজ মিডিয়ায় ঘুরছে এটা নিশ্চয়ই তোমার কাজ। আমাকে বাধ্য করতে চাইছো যাতে বিয়েটা ভেঙে দেই।”
জলি হতবাক হয়ে ছেলেকে দেখলো। তারপর হেসে দিলো-“ছেলেরা বিয়ের পর সত্যিই পাল্টে যায় দেখছি। সবাই বলতো আমি ভাবতাম আমার বাবাই কখনো পাল্টাবে না। কিন্তু আমার ভাবনা ভুল প্রমান করে দিয়ে তুইও পাল্টে গেলি?”
রণ থতমত খায়৷ কি জবাব দেবে মাকে বুঝে পেলো না। তাহলে কি জলি এ কাজ করেনি? কে করেছে তবে? জলির মুখের হাসি বদলে গেছে। চেহারায় গম্ভীরতা-“আপার সাথে কথা হয়েছে আমার। মেয়েটা ডিভোর্স লেটার সই করে পাঠালে তোর আর চন্দ্রের বিয়ের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে আপা।”
রণর চোয়াল শক্ত হলো-“তুমি মিছে স্বপ্ন দেখছো মা। এরকমটা কখনোই সম্ভব হবে না।”
“অনেক বলেছ রণ আর না। ভাবো কি তুমি নিজেকে? তুমি যা করছো সব ঠিক আর আমি ভুল? চুল সব এমনিতেই পেকেছে বলে মনেহয় তোমার। প্রথমত তুমি একটা অন্যায় করেছিলে ওই খুনির মেয়েটাকে আঁটকে রেখে। তোমার ভুলের কারণে আমরা পস্তাচ্ছি সবাই। শত্রুর মেয়েকে ঘরে তুলতে হয়েছে। তবুও তোমার মধ্যে অনুশোচনা নেই। শোন, পরিস্কার বলে দিচ্ছি তোমাকে, এরপর তোমার এমন কোন ভুল আর মানবো না আমি। আমি চাই তুমি মায়ের কথা শুনবে বাধ্য ছেলের মতো। আপা যখন আগ্রহ দেখিয়েছেন তার সাথে আত্মীয়তা করতে চাই আমি। এতে তোমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে উন্নতির সাথে সাথে জীবনের নিশ্চয়তা পাবে। আমি নিশ্চিত ওই খুনিটা এবার তোমাকে টার্গেট করবে। তুমি ভুলে যেয় না ওর ছেলেটা মারা গেছে তোমার কারণে। ও নির্ঘাত প্রতিশোধ নিতে চাইবে। এখন তোমাকে একমাত্র আপাই বাঁচাতে পারে। আপার ছত্রছায়ায় থাকলে সালিম কখনো সাহস পাবে না তোমার কিছু করতে।”
“আমি নিজেকে বাঁচাতে পারি মা। অন্য কাউকে প্রয়োজন নেই।”
“তোর বাবাও এসব বলতো বাবাই। তারপর কি হয়েছে নিজের চোখে দেখেছিস। আমি চাই না হিস্ট্রি রিপিট হোক। আত্মবিশ্বাস ভালো তবে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস না।”
“তুমি খামোখাই ভয় পাও মা। বলছি তো কিছু হবে না।”
“আমি স্বামীকে হারিয়েছি বাবাই সন্তান হারানোর মতো মানসিক জোর নেই আমার। তোর জীবনের বিনিময়ে আপোষ করেছিলাম। বুকে পাথর রেখে মেয়েটাকে বউ বানিয়েছিলাম। কিন্তু আর পারছি না রণ। সত্যি বলতে আমার কষ্ট হয় ওকে দেখলে। আমার বৈধব্যের জীবন মনে পড়ে, তোর কষ্টের কথা মনে পড়ে। আর বেশি কিছু বলতে চাই না আমি। এরপরও তোর যদি এতই নিজের জেদ বজায় রাখতে মন চায় তাহলে বরং আমাকে মেরে ফেল তারপর যা খুশি তাই কর।”
“মা!”
আর্তনাদ করে উঠলো রণ-“মেয়েটাকে ভুল বুঝছো তুমি। ও ওর বাবার মতো নয় মা। শুধু শুধু ওকে সাজা দিয় না। তোমারও দু’টো মেয়ে আছে, তাদের কথা ভাবো মা।”
জলি অটল গলায় বললো-“কোন কিছুই ভাববো না আমি। ওদের তরফ থেকে ডিভোর্স লেটার এলে তোকে সবটা মেনে নিতে হবে রণ।”
“মানে কি মা? কি বলতে চাইছো তুমি?”
“মানে ডিভোর্স লেটার আমি পাঠাইনি। কিন্তু যদি ওই মেয়েটার সাইন করা লেটার আসে তাহলে তোকে মেনে নিতে হবে। জীবনে এগিয়ে যেতে হনে। বল, রাজি আছিস?”
রণকে দ্বিধান্বিত দেখায়। মা ডিভোর্স লেটার না পাঠালে কিসের ভিত্তিতে এতো নিউজ হচ্ছে? কে করছে এসব? কার কি লাভ এতে? আর শুভ্রা কি সত্যিই ডিভোর্স লেটারে সাইন করবে? নিশ্চয়ই না। যদি করে? রণ কি করবে তখন?

★প্রিয় পাঠক, বইমেলা শেষ। তবুও বই সংগ্রহ চলবে। আমার নতুন বইসহ তিনটে বই ঘরে বসে অর্ডার করতে পারবেন রকমারিসহ আপনার পছন্দের বুকশপে। আমার লেখা ছয়টি ই-বুক পড়তে পারবেন বইটই থেকে। বই পড়ুন বইয়ের কথা ছড়িয়ে দিন।★

চলবে—
©Farhana_Yesmin

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here