দর্পহরন #পর্ব-৬৪

0
270

#দর্পহরন
#পর্ব-৬৪

আজকের দিনের ভাইরাল ভিডিও হলো, সুমনার সাথে সরকারি দলের একাধিক মন্ত্রীর গোপন বৈঠক। সেখানে পরিকল্পনা হচ্ছে, সুমনা সতন্ত্র থেকে নির্বাচিত হলে তাকে দলে টেনে নেওয়া হবে। যেহেতু সে মেয়র হবে তাই এলাকায় তার দাপট বাড়াতে সকলে তাকেই সাপোর্ট দেবে, দলের অলিখিত কান্ডারী সেই হবে এবং রণকে একঘরে করে দেওয়া হবে। কারণ প্রথমবার হিসেবে রণ খুব বেশি নেত্রীর এটেনশন সিক করে নিয়েছে। ফলে বাকীরা নেত্রীর কাছে পাত্তা পাচ্ছে না। বড় বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে রণর সাথে পরামর্শ করে যা বর্শীয়ানরা পছন্দ করছে না। এবং যা দলের ভারসাম্য নষ্ট করছে। কাজেই সময় এসেছে রণকে কোনঠাসা করার।

রণ হতভম্ব হয়ে গেলো। হুট করে কি হচ্ছে সে কিছুই বুঝতে পারছে না। সুমনা সতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনের আগ মুহূর্তে কেন গেলো সরকারি দলের কোন মন্ত্রীর বাসায় রণর বুঝে এলো না। সুমনার তো এমন করার কথা না? সে কি রণকে এভয়েড করতে চাইছে? লিয়াজো করে কি করতে চাইছে সুমনা? রণর মাথা গরম হয়ে গেলো। এই মুহূর্তে এমনিতেই তার এলোমেলো হাল এখন নতুন মাথাব্যথা হলো সুমনা। এ যেন হাতে ধরে বিপদ ডেকে আনা।

চারিদিকে তুমুল আলোচনা সমালোচনায় পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইর চলে যাচ্ছে বুঝতে পেরে সুমনা চলে এসেছে রণর আস্তানায়-“রণ, কিছু করো ভাই।”
রাগে দিগবিদিক শুন্য রণ নিজের মেজাজ সামাল দিতে দিতে বললো-“আমার কাছে কেন এসেছেন সুমনা আপা? যাদের সাথে বলো আলোচনা করে আমাকে কোনঠাসা করার পরিকল্পনা করছিলেন তাদের কাছে যান। তারা আপনাকে সাহায্য করবে।”
সুমনাকে অসহায় দেখালো-“কি বলবো রণ, আমি সত্যিই জানতাম না ওখানে তোমাকে নিয়ে আলোচনা হবে। ওনারা খুব ফোর্স করলেন আমাকে যাওয়ার জন্য। তারপর নিজেরাই এটা সেটা বললেন। আমি না বুঝে তাদের কথায় সায় দিয়েছি। তবে এতটুকু বিশ্বাস রাখতে পারো এই সুমনা আপা তোমার সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করবে না।”
“বিশ্বাস! আপনাকে? আর মনেহয় সম্ভব না আপা। আপনি জানেন ওরা সালিম সাহেবের লোক। ওরা ওনাকে সাপোর্ট দিচ্ছে। তারপরও কেন গেলেন আপা। ওখানে গেছেন মানে আমার উপর ভরসা নেই আপনার।”
“কিন্তু ওরা চায় আমি জিতি।”
সুমনা নিজেকে বাঁচাতে চাইলো। রণ অস্থির হয়ে চেচিয়ে উঠলো-“আর আপনি বিশ্বাস করলেন? হতে পারে এটা আপনাকে বিতর্কিত করতে কোন চাল।”
সুমনা কিছু বলতে যেয়েও থেমে যায়। কিছুক্ষণ থেমে ম্লান গলায় বললো-“তুমি বিশ্বাস করবেনা হয়তো তবুও বলি। আমি এ ধরনের কোন মানুষের কাছে যেতে চাইনি। বাধ্য হয়ে যেতে হয়েছে। কিভাবে বাধ্য হয়েছি সে বিষয়ে খোলামেলা বলতে পারছি না। তবে কেন যেন মনেহচ্ছে সবাই চায় সালিম সাহেব ক্ষমতায় আসুক।”
“আপা, উনি পুরনো মানুষ ওনার কিছু সাপোর্টার তো থাকবেই। সব দলেই দু’টো পক্ষ থাকে এটা কোন বড় ব্যাপার না। কে কাকে চায় না চায় এটা কি খুব চিন্তার ব্যাপার? আপনি এটা নিশ্চিত থাকুন নেত্রী তাকে চায় না। আর নেত্রী যাকে না চায় তার পক্ষে নির্বাচনে জেতা অসম্ভব ব্যাপার যদি জনগণ পাশে না থাকে। আপনার মোটেও উচিত হয় নাই ওনাদের সাথে দেখা করার। তাহলে আজকে ভিডিও লিক হইতো না। বোঝাই যাচ্ছে কাছের কেউ ইচ্ছা করে ভিডিও লিক করছে আপনাকে কালার করতে। আপনার সাথে আমার সম্পর্ক নষ্ট করতে। এতটুকু না বুঝলে তো আপা আপনার পক্ষে রাজনীতি করা সম্ভব হবে না। যেখানে আপনার প্রতিপক্ষ সালিম সাহেবের মতো কেউ।”
“না যেয়ে কি করতাম রণ? ওনাদের ক্ষমতা কিন্তু কম নয়। আমার তো রাস্ট্রের সব কর্মকর্তার সাপোর্ট লাগবে। কেউ বেঁকে বসলো তো পারবো না ভাই। তুমি একটা জিনিস ভাবো রণ সালিম সাহেব হুট করে এতোটা জ্বলে উঠলো কেন? নিশ্চিত উপর মহলের কেউ তাকে সাহস দিয়েছে। তা না হলে তার হুট করে এতোটা বাড়াবাড়ি করার কথা না। উনি দিলশাদকে কাল রাতে ভীষণ ভাবে মেরেছে জানো এটা? একজন পুলিশের গায়ে হাত তোলা যেনতেন কথা নয় রণ তাও আবার উনি যখন ক্ষমতায় নেই।”
রণ অবাক হলো-“দিলশাদকে? কখন হলো এসব? আমাকে কেউ জানায়নি কেন?”
“কাল রাতের ঘটনা রণ। গতদিন সালিম সাহেবের ছেলেদের সাথে আমার ছেলেদের বচসা হয়েছিল। দিলশাদ সালিম সাহেবের লোকদের গ্রেফতার করেছে। তারপর কাল রাতে এই অবস্থা। এখন বুঝে নাও কি হয়েছে।”
শুনতে শুনতে হুট করে রণ ব্যস্ত হয়ে গেলো। মনটা কেন যেন কু ডাকছে তার। সে সুমনাকে বিদায় দিলো-“আপা, আপনি আর কারে সাথে কোন ধরনের যোগাযোগ করবেন না। ভিডিও নিয়েও কোন স্টেটমেন্ট দেবেন না। আপনি শুধু নিজের মতো প্রচারনা করতে থাকেন। আমি আপনার পেছনে আছি। আপাতত আমার জরুরি কাজে যেতে হবে আপা। আমি আপনার সাথে পরে কথা বলে নেব। ঠিক আছে?”
সুমনা মাথা দুলিয়ে বিদায় নিলো। রণ চেচিয়ে মিহিরকে ডাকে-“দিলশাদের ঘটনা জানোস? ফাহিম কই?”
মিহির মাথা নিচু করলো-“জানি। ওর বাসায় ঘটছে এই ঘটনা। দিলশাদ ঠিক আছে আপাতত কয়েকদিন ছুটি নিয়ে রেস্টে আছে। ফাহিম তো ওইখানে যায়।”
“আমাকে জানাস নাই কেন মিহির?”
রণ চেচিয়ে উঠলো। মিহির ভয় পেলো রণর এমন রুপ দেখে-“আপনে এমনিতেই অনেক টেনশনে তাই আর জানাই নাই ভাই।”
“ফাহিমকে তাড়াতাড়ি ফোন দে। আমার কাছে আসতে বল এখনি।”
মিহির এবার বিস্মিত হয়ে বললো-“কেন? কি হইছে?”
“কথা বাড়াইস না। তাড়াতাড়ি কল দে ফাহিমকে।”
রণ তাড়া দিতেই মিহির দ্রুত হাতে ফাহিমের নাম্বারে কল দিলো। না ফোন ধরছে না ফাহিম। দুইবার তিনবার। রণ ধমকে উঠলো-“ধরছে ফোন?”
মিহির মাথা নাড়ে। রণ নিজের ফোন বেড় করলো দ্রুত হাতে। তার হাত কাঁপছে। কোন অঘটন না ঘটে যায়। কিছু হলে নিজেকে মাফ করতে পারবেনা রণ। তার কপাল বেয়ে ঘাম পড়ছে টপটপ করে। মাথার শিরা দপদপ করে। ফোনটা বেজে যাচ্ছে। ওপাশ থেকে কেউ ধরছে না কেন?

*****

সালিম সাহেব আজ ফাহিমকে সাথে নিয়ে খেতে বসেছেন। সচরাচর এমনটা করেন তিনি। দুপুরে বাসায় খাওয়া হয় না। আজ কি মনে করে খেলেন সাথে ফাহিমকে ডেকে নিলেন। তুলতুল ভাইকে দেখে খুশি হলো আবার হলো না। ফাহিমকে শশুরের ডোরায় দেখে খুব একটা খুশি হয় না সে। শশুর কেমন মানুষ তা সে আর তার পরিবার ভালো জানে। তবুও কেন ফাহিম আগ বাড়িয়ে এ বাড়িতে আসে সেটা সে বোঝে না। শশুরই বা কেন হুট করে তার ভাইয়ের সাথে ভাব করছে সেটাও বোঝে না তুলতুল। এতটুকু বোঝে এখানে হয়তো বিশাল স্বার্থ জড়িয়ে আছে। তা নয়তো ফাহিমকে কাছে টানবে কেন শশুর। সেই চিন্তা থেকেই সে ভাইকে বলেও ফেলেছিল-“ভাইয়া, কেন আসিস? ওনার মতো মানুষের সাথে তোর কিসের কাজ?”
ফাহিম স্বস্নেহে উত্তর দিয়েছে-“তোর জন্য আসি পাগলি। তোকে দেখতে পাই এটাও তো কম না।”
“আমাকে দেখতে হবে না ভাইয়া। তুই আসিস না এখানে। আমার ভালো লাগে না।”
“শরীফ ভাই মানুষটা ভালো তাই নারে বোন? লাগে ওনার সাথে তুই সুখে থাকবি।”
তুলতুল ভাইকে দেখলো কিছু সময় তারপর দীর্ঘ শ্বাস ফেলে জবাব দিলো-“আমাকে দেখছিস ভাই আর আসিস না। তুই বরং মায়ের খেয়াল রাখিস।”
ফাহিম তুলতুলের কথা কানে তোলেনি। সে বারবার আসছে সালিম সাহেবের কাজ করছে।

আজ খাওয়ার টেবিলে তুলতুলের ডাক পড়লো। ভারি পেট নিয়ে ভীষণ সংকোচে তুলতুলে ডাইনিং এ এলে সালিম সাহেব তাকে বলে-“বউমা, তোমার ভাই প্রথমবার আমাদের সাথে খাইতেছে তাই তোমারে ডাকলাম। ওকে একটু আপ্যায়ন করো। হাজার হোক তোমার শশুরের বাড়িতে প্রথমবার খাইতেছে।”
তুলতুল কথা না বাড়িয়ে ভাই আর শশুরের প্লেটে এটা সেটা তুলে দিলো। সালিম সাহেব আচমকা প্রশ্ন করলো-“বউমা তোমার ডেট যেন কবে?”
“বারো তারিখ।” তুলতুল নিস্প্রভ হয়ে জবাব দিলো।
“নির্বাচনের পরে। ভালোই হইছে। একলগে ডাবল খুশি সেলিব্রেট করবো। শোন ফাহিম, বাচ্চা হওয়ার পর চল্লিশ দিন পার হইলে বউমার লগে শরীরের বিয়া দিমু ধুমধাম কইরা। ঠিক আছে না? তুমি কি কও?”
ফাহিম হাসে-“ঠিক আছে।”
ওদের কথা শুনে খেতে আসা শরীফ খুকখুক কাশে আড়চোখে তুলতুলকে দেখে। মেয়েটা ভাবলেশহীন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে যেন কোন কিছুতে কিছু আসে যায় না তার।

শুভ্রা নিজের ঘরেই ছিলো। একবার কি কারনে যেন ডাইনিং এ এলো। ফাহিমকে দেখে এগুলো না। চুপচাপ ঘরে ফিরে গেলো। কিছুক্ষন পরে কি মনে করে ফিরে এলো। সালিম সাহেব তখন খাবার শেষ করে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। শুভ্রাকে দেখে জানতে চাইলো-“আম্মাজান, কি হইছে? কিছু কইবেন?”
“আপনি কি কোথাও যাচ্ছেন আব্বা?”
“হহহ। জরুরি কাজে যাইতেছি। কেন?”
শুভ্রাকে অস্থির দেখালো-“আমার কেমুন জানি লাগতাছে আব্বা। আজকে কোথাও যাইয়েন না আপনে।”
সালিম সাহেব চমকে উঠে মেয়ের দিকে তাকালেন। মুখ দেখে বোঝার চেষ্টা করলেন কিছু একটা। মেয়ে কি তার মনের কথা কিছু বুঝতে পারলো? তিনি হাসার চেষ্টা করে বললো-“ডাক্তার ডাকুম? কি হইছে আপনের? আচ্ছা শরীফকে কইতাছি ডাক্তার ডাকতে। আমি এই যামু আর আমু।”
শুভ্রা পাগলের মতো চেচিয়ে উঠলো-“নাহ আব্বা, আপনে যাইয়েন না। আমার মনে হইতেছে আমি বাঁচবো না। আব্বা, আব্বা।”
বলতে বলতে মেঝেতে লুটিয়ে পড়লো শুভ্রা। সালিম সাহেবকে হতবিহ্বল দেখায়। সে ‘আম্মাজান’ বলে চেচিয়ে উঠে মেয়েকে ধরার জন্য ছুটলো।

★প্রিয় পাঠক, বইমেলা শেষ। তবুও বই সংগ্রহ চলবে। আমার নতুন বইসহ তিনটে বই ঘরে বসে অর্ডার করতে পারবেন রকমারিসহ আপনার পছন্দের বুকশপে। আমার লেখা ছয়টি ই-বুক পড়তে পারবেন বইটই থেকে। বই পড়ুন বইয়ের কথা ছড়িয়ে দিন।★

চলবে—
©Farhana_Yesmin

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here