দর্পহরন #পর্ব-৭১

0
585

#দর্পহরন
#পর্ব-৭১

তুলতুল আর শরীফের যাওয়ার খবর শুনে এই প্রথম রিমা আওয়াজ তোলে। সে বারবার অনুনয় বিনয় করে ওদের যাওয়ায় বাঁধা দিতে থাকে৷ সালিম সাহেব নাতি ছাড়া আরও ভেঙে পড়বেন এ কথা বলেও যাওয়া ঠেকানো গেলো না। শরীফ তুলতুলকে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে অনড়। শেষ মেষ রিমা হার মানে। তুলতুলের মানসিক অবস্থা ভালো হলে পাকাপাকিভাবে দেশে ফিরবে এই আশ্বাস দিয়ে শরীফ আর তুলতুল লন্ডনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। বিমানে উঠে তুলতুলের চোখে বিশ্বজয়ের আনন্দ। শরীফ মুগ্ধ হয়ে সে আনন্দ দেখে। ওর আশা একদিন ওই চোখে ওর জন্য ভালোবাসা দেখতে পাবে আর সেইদিন ওর বিবাহিত জীবন শুরু হবে। শরীফ সেই দিনের অপেক্ষায় প্রহর গুনে।

শরীফ আর তুলতুলের জন্য শুভ্রা মন থেকে খুশি। বিশেষ করে তুলতুলের জন্য। দীর্ঘ কষ্টের পর শরীফের সাথে ভীষণ সুখে থাকবে তুলতুল। এক সময় দু’জন শ্রেষ্ঠ জোড়া হবে এই বিশ্বাস আছে শুভ্রার।
“কি ভাবছিস?”
তাহের এসে বসেছে শুভ্রার পাশে। শুভ্রা প্রথমে চমকে গেলেও তাহেরকে দেখে নিজেকে সামলে নিলো-“ওহহহ, তুমি?”
“কি ভাবছিস?”
শুভ্রা মাথা নাড়ে-“কিছু না। তুমি হঠাৎ আমার কাছে? দরকার ছিল কোন?”
তাহের মাথা দুলায়-“বাসায় কাকে কি বলবো? ভাবির যে মানসিক অবস্থা তাতে তাকে কিছু বলা না বলা সমান কথা। তাই তোকেই বলতে এলাম।”
শুভ্রা প্রশ্নবোধক চাহনি দিয়ে তাকায়-“কি বলবে বলো?”
“কয়জন গেস্ট আসবে কাল রাতে। তাদের জন্য প্রপার এরেন্জমেন্ট করতে হবে। পারবি?”
“রাতে ডিনার করবে?”
তাহের মাথা দুলায়। শুভ্রা হাসলো-“পারবো।”
“ভেবে বলছিস? সব রান্না কিন্তু নিজ হাতে করতে হবে।”
শুভ্রা ঠোঁট টিপে ভেবে বললো-“পারবো। টুকটাক রান্না জানি আমি। তুমি ভেবনা।”
“বেশ। তুই কিছু ভেবেছিস?”
“কোন ব্যাপারে?”
“চাইলে অফিসে বসতে পারিস। বাসায় বসে বোর হওয়ার চাইতে অফিস ভালো৷ কাজে ব্যস্ত থাকতে পারলি। আমারও সঙ্গ হলো। আমি একদম একা পড়ে গেছি রে। হুট করে এতো চাপ নিতে পারছি না। বাড়িটাও কেমন নীরব হয়ে গেছে দেখেছিস? এক সময় মানুষের পদচারনায় গমগম করা বাড়িটা এখন ভুতবাড়ির মতো লাগে।”
চাচার মুখের দিকে তাকায় শুভ্রা। মানুষটাকে অসহায় দেখাচ্ছে। শুভ্রা খুব ধীরে উত্তর দিলো-“অফিসে বসবো কিনা ভেবে জানাব চাচ্চু।”
তাহের হুট করে এলো হুট করে চলে গেলো। শুভ্রা ওভাবেই বসে রইলো আরও কিছু সময়। উঠে বারান্দায় গেলো, গাছগুলোতে পানি দিতে হবে।

*****

সন্ধ্যায় সব খাবার রান্না করে টেবিলে গুছিয়ে দিয়ে শুভ্রা তাহের ডাকলো-“চাচ্চু, সব গুছিয়ে দিয়েছি। বাকি কিছু লাগলে কাজের মেয়েগুলোকে বললেই হবে। আমি একটু রুমে যাচ্ছি। প্লিজ আমাকে কারো সামনে ডেকনা।”
তাহের হেসে বললো-“কেনরে? তুই কি সন্যাসী হবি? লোকসমক্ষে আসবি না?”
শুভ্রা বিরক্ত হলেও জবাব দিলো না। চুপচাপ রুমে এসে শাওয়ার নিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো। এপাশ ওপাশ করছে প্রতিনিয়ত। অব্যক্ত কষ্ট প্রতিনিয়ত কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে তাকে। কাউকে কিছু বলবে সে উপায়ও নেই। এ বাড়ি এখন জনমানবহীন। মা নিজের মতো থাকে আর বাবা তো বিছানায়। প্রায়ই দম বন্ধ হয়ে আসে তার। এমন অবস্থায় কি তার থাকার কথা ছিলো? তার তো এখন রণর বাড়িতে থাকার কথা। স্বামী সংসারের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে হাসি আনন্দে দিন পার করার কথা। বাবার জেদ কিংবা তার কাজের জের যাইহোক তার জীবনটাই তো এলোমেলো হলো। কিন্তু উপর ওয়ালা তাকে অভিযোগ দেওয়ার পরিস্থিতিতেও রাখেনি। কার কাছে অভিযোগ দেবে? বাবাকে নাকি রণকে? কে শুনবে তার কথা? কার উপর অধিকার দেখাবে? আবার দেশের বাইরে চলে যেতে ইচ্ছে করছে কিন্তু বাবার এমন অবস্থায় সেটাও সম্ভব না। সব কিছু ভেবে শুভ্রা হাউমাউ করে ডুকরে উঠলো। কেন আল্লাহ কেন এমন হলো জীবনটা? কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত হয়ে একসময় ঘুমিয়ে গেল শুভ্রা।

ঘুমের মধ্যে নড়াচড়া করতে গিয়ে টের পেলো কেউ আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরেছে তাকে। খুব চেনা গন্ধটা তাকে ব্যাকুল করে তুললো। তার উপস্থিতি এখানে কি করে সম্ভব? শুভ্রা ধড়ফড়িয়ে উঠে বসতে চাইলো কিন্তু জাপ্টে ধরা মানুষটা তার বাঁধন দৃঢ় করলো। পরিচিত গম্ভীর গলায় সুধায়-“উফফ, এতো ছটফট করছো কেন? কতোদিন পরে একটু আরাম করে ঘুমাচ্ছিলাম দিলে তো ঘুমটা ভাঙিয়ে।”
শুভ্রা চমকে উঠে জোর করে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে হাত বাড়িয়ে বেড সুইচটা জ্বালায়। রণর শুয়ে মিষ্টি করে হাসছে। তার পরনে পাঞ্জাবি পাজামা আর কালো কোটি। শুভ্রা হা করে তাকিয়ে থেকে চেচিয়ে উঠলো-“রণ! আপনি!”
শুভ্রার দিকে তাকিয়ে স্বভাবসুলভ হাসি দিলো রণ-“আর কে আসবে তোমায় এতো গভীর ভাবে ছুঁয়ে দিতে?”
শুভ্রা তখনো বুঝতে পারছে না যেন। সে অবিশ্বাস নিয়ে জানতে চাইলো-“কিন্তু আপনি এখানে? আমাদের তো ডিভোর্স…”
শুভ্রা কথা শেষ করতে পারে না। রণ তাকে থামিয়ে দিলে ইশারায়। উঠে বসলো সে, হাতে একটা কাগজ ধরা। সে হাতে ঝাঁকিয়ে বললো-“সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছি এটা নিয়ে। তোমার বাবা পাঠিয়েছিল। আজ তোমার সামনে এটা ছিঁড়ে ফেলছি। একজনার ইচ্ছায় কিছু হয় না শুভ্রা, বিয়ে ভাঙা বা টিকিয়ে রাখা দুটোতেই দু’জনার ইচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ। আর আমাদের দু’জনার ইচ্ছে সংসার করার, তাই না?”
শুভ্রা জবাব দিলে না। রণ ডিভোর্স পেপারটা ছিড়ে কুঁচি কুঁচি করলো। শুভ্রা রণকে দেখছে একনজরে। কতদিন পরে জীবন্ত মানুষটাকে দেখছে। মন চাইছে জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা রাখতে। কিন্তু পারলো না। অজানা অভিমান তাকে রুদ্ধ করে দিচ্ছে। সে অভিমানী বালিকার মতো ঠোঁট ফুলিয়ে বললো-“এতোদিন পরে কেন এসেছেন রণ? না একবার ফোন দিয়েছেন না দেখা করেছেন। কিভাবে ছিলাম এতোদিন জানেন? মনে মনে কত কি ভেবেছি।”
রণ হাত বাড়িয়ে শুভ্রার কোমল হাত দু’টো ধরলো। শুভ্রা অভিমানে সে হাত ছাড়িয়ে নেন। রণ এবার শক্ত করে হাত ধরে-“তোমার প্রতিটা ক্ষণের খবর জানি আমি। এতোটা দায়িত্বহীন মনেহয় আমাকে যে বউয়ের খবর রাখবো না? এতোদিনে একটুও ভরসা আসেনি আমার উপর?”
শুভ্রা তবুও মুখ ফিরিয়ে রাখে-“বিশ্বাস করি না। প্রমান আছে কোন?”
রণ শুভ্রাকে কাছে টানে। শুভ্রার মাথাটা বুকের সাথে চেপে ধরে বললো-“তুলতুল ভাবিকে জিজ্ঞেস করো তাহলেই হবে।”
রণর বুকের ধুকপুকানি শুনতে শুনতে শুভ্রা চোখ বড় করে তাকায়-“মানে কি?”
রণ শুভ্রার মাথায় ঠোঁট ছুঁইয়ে বললো-“মানে কিছুই না। তুমি এখন তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও তো। ফিরতে হবে আমাদের। মন্ত্রীর বউ ঘরে ফিরবে কি এভাবে?”
“কিন্তু মা! মা মেনে নেবে না আমাকে।”
শুভ্রা মন খারাপ করে বলতেই রণ গম্ভীর হলো-“বউকে সন্মানের সাথে নিয়ে যাব বলে এতোদিন ধৈর্য্য ধরে চুপ করে ছিলাম শুভ্রা। মা ড্রয়িং রুমে বসে আছে। তুমি তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নাও। আমরা দু’জনে একসাথে তোমার বাবাকে দেখবো।”
শুভ্রা বিস্মিত হয়ে তাকায়-“সত্যি মা এসেছেন? আমাকে নিতে?”
রণ মাথা নাড়ে-“মা তোমায় ঘর ছাড়া করেছে তাই মাই তোমাকে সন্মান দিয়ে ঘরে তুলবে।”
শুভ্রা কেঁদে দিলো-“আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।”
রণ মিষ্টি করে হাসলো-“কাঁদে না বোকা মেয়ে। আমি সত্যি বলছি। যাও তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নাও। বাইরের ঘরে ওরা অপেক্ষা করছে।”

শুভ্রা আর রণ সালিম সাহেবের কাছে এসে বসলো। রণকে দেখেই সালিম সাহেব কিছু একটা বলার চেষ্টা করলো। রণ শুভ্রাকে তার বাবার কাছে বসায়-“তোমার বাবার সামনে আজ কিছু কথা তোমাকে বলতে চাই শুভ্রা। কারণ আমি চাই না নতুন করে কোন ভুল বোঝাবুঝি হোক আমাদের মাঝে। আচ্ছা বলোতো, তুমি কি কখনো তোমার প্রতি মায়ের রাগের কারণ জানতে চেয়েছ শুভ্রা?”
শুভ্রা মাতা নাড়ে। রণ বললো-“বলতে না চাইলেও আজ তোমার বাবার সামনেই কথাগুলো বলি। তোমার বাবা খুব ঘৃন্য ভাবে আমার বাবাকে মেরে ফেলেছেন। কারণ আমার বাবা তোমার বাবার বিপরীতে নির্বাচনের সাহস দেখিয়েছিলেন। ঠিক নির্বাচনের আগের দিন বাবা অপহরণ হয়, আজ পর্যন্ত তার কোন খোঁজ পাইনি। যাদের প্রতি খুব বেশি রাগ থাকে তাদের এসিডে গলিয়ে মৃত্যু দিত তোমার বাবা। আমার বাবার ভাগ্য হয়তো এমনটাই ঘটেছে। নিজের স্বামীর খুনির মেয়েকে ছেলের বউ বানানো খুব সহজ নয় শুভ্রা। আমার মা সেটাই করেছে হাসিমুখে। তারপরও তোমার পরিবার অনুতপ্ত হওয়ার বদলে নানা ঘটনা ঘটিয়েছে।
এখন তুমিই বলো, মায়ের তোমার প্রতি রাগটা কি ঠিক না ভুল? আমি জানি তোমাকে অপহরণ করে আমি অন্যায় করেছিলাম কিন্তু আমি নিরুপায় ছিলাম। আঠারোতে বাবা হারিয়ে কতটা কষ্ট করতে হয়েছে আমাকে সেসব আজ নতুন করে বলবো না। তবে দীর্ঘ বারো বছর ধরে এই দিন দেখার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেছিলাম শুভ্রা। তোমাকে অপহরণ না করলে আমার কখনোই নির্বাচন করা সম্ভব হতো না। তোমার বাবা সেই সুযোগ দিতেন না। হয়তো আমাকেও বাবার মতো মেরে ফেলতেন। সেই সুযোগ তাকে দিতে চাইনি। তোমার কথা ভেবে অন্তত সে চুপ ছিলো কিছুদিন। আমার জন্য ওই সময়টা খুব জরুরি ছিলো।”
রণ থামলো একটু দম নিলো তারপর আবার বলতে শুরু করলো-“বাবার মৃত্যুর শোধ নিতে আরেকটা মৃত্যু দেওয়ার কোন ইচ্ছে আমার ছিলো না কিন্তু অন্যায়কারীকে একটা শিক্ষা দেওয়ার ইচ্ছে অবশ্যই ছিলো। আমি চেয়েছি অন্যায়কারী যেন তার বাকী জীবন নিজের কৃতকর্মের জন্য আফসোস করে। আমি জানি না তোমার বাবা আফসোস করে কিনা। কিন্তু আফসোস করার পরিস্থিতিতে সে দাঁড়িয়ে আছে। হাজারো লোকের পদচারণায় মুখর থাকা বাড়িটায় আজ ঘুঘু চড়ে, একটা সন্তান মারা গেছে আরেকজন দূরদেশে। একা একা বিছানায় দিন কাটবে এর চেয়ে খারাপ আর কি হতে পারে। আশাকরি আমার আজকের কথাগুলোতে তুমি ভুল বুঝবে না।”
শুভ্রার চোখ থেকে জল গড়ায়, ভেজা গলায় বললো-“বাবার কাজের জন্য আমি লজ্জিত রণ। যা হয়ে গেছে তার কিছুই বদলাতে পারবোনা শুধু বলবো মায়ের দুঃখের কোন কারন না হওয়ার চেষ্টা করবো সবসময়। আর বাবার জন্য ক্ষমাও চাইবো না। সে যেন তার কর্মের সাজা পায়। বাবা আমাকে ক্ষমা করো। সন্তান হিসেবে তোমার জন্য দোয়া করবো কিন্তু অপরাধী হিসেবে তোমার সাজাও চাইবো বাবা।”
সালিম সাহেবের মুখ বেকে গেলো। কিছু বলার আপ্রান চেষ্টা করলো কিন্তু পারলোনা। চোখ থেকে জল আর মুখ থেকে লালা পড়ে বালিশ ভিজে যাচ্ছে। শুভ্রা বাবার মুখ মুছিয়ে দিয়ে ভেজা গলায় বললো-“আমি চলে যাচ্ছি বাবা। ভালো থেক। দোয়া করো যেন ওর সাথে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কাটাতে পারি।”

জলি শুভ্রার হাত ধরলো-“তোমার প্রতি অন্যায় করেছি বউমা। আমাকে ক্ষমা করো।”
“ছিহ মা। ক্ষমা চাইবেন না প্লিজ। আমি কিছু মনে রাখিনি। আপনি মা আদর আর শাসন দু’টো করার অধিকার আপনার আছে।”
জলি শুভ্রা মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। রণ ঠোঁটের কোনে হাসি লুকায়। রিমার চোখ ছলছল-“তুইও চলে যাবি শুভ্রা? এই শশ্বানে কেমনে থাকবো আমি?”
শুভ্রা ছুটে এসে মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদে। জলি সান্ত্বনা দিলো-“মেয়েকে দেখতে ইচ্ছে করলে চলে আসবেন আপা। মেয়ের কাছে থেকে আসবেন।”
ডলি মাথা দুলায়-“মেয়ে সুখে থাকলে আর কিছু চাই না আমার। শুভ্রা আমার ভালো মেয়ে। সারাজীবন বাইরে বাইরে থাকছে। মেয়েটা নিজের সংসারে থিতু হোক।”

গভীর রাতে নিজের চেনা রুমটাতে রণর বাহুডোরে বন্দী হয়ে শুভ্রা ছটফট করে। রণ দুষ্ট হেসে ফিসফিস করলো-“কি হলো? এতো ছটফট করছো কেন?”
শুভ্রা রণর বুকে মুখ ঘষে জবাব দিলো-“সত্যিই কি আমি আপনার বুকে আছি? বিশ্বাস হচ্ছে না।”
রণ আদর মাখা হাসি দিয়ে শুভ্রার কপালে গালে চুম্বন করলো। অধরে অধর ছুঁইয়ে দিয়ে বললো-“এবার বিশ্বাস হয়?”
শুভ্রা মাথা নাড়ে। রণ দুষ্ট হেসে শুভ্রার কানের লতিতে চুমু আঁকে, কন্ঠার নিচে নিজের পুরুষালী গাল ছুঁইয়ে দেয়, দাঁতে আঁচড় কাটে-“এবার বিশ্বাস হয়?”
শুভ্রার ঠোঁটের কোনে হাসির আভা। সে মাথা নাড়ে। রণ আরেকটু নিচে নামে। বুকের মাঝ বরাবর ঠোঁট ছুঁইয়ে দিতেই শুভ্রা রণর চুল খামচে ধরে-“কি করছেন?”
“তোমাকে বিশ্বাস করাচ্ছি।” রণর স্বর গাঢ় হলো।
“করেছি বিশ্বাস। এবার ছাড়ুন।”
“কিন্তু আমার যে এখনো বিশ্বাস হয়নি আমি তোমাকে আবার ফিরে পেলাম।”
“কি করলে বিশ্বাস হবে?”
শুভ্রার কন্ঠে মদিরার নেশা। রণ সে নেশায় চুর হতে হতে বললো-“আমার একটা মেয়ে চাই শুভ্রা। একটা গুলুমুলু মেয়ে পায়ে নুপুর পরে ঝনঝন শব্দে হেঁটে বেড়াবে। আমি মুগ্ধ চোখে চেয়ে দেখবো মেয়েকে।”
শুভ্রা একই সাথে লজ্জা পেলো আবার তীব্র ভালোলাগায় আচ্ছন্ন হলো। তুলতুলের ছেলেকে দেখার পর ঠিক এমন অনুভূতি তারও হয়েছিল। মা হবার আকুলতা মন প্রান জুড়ে ছেয়ে ছিলো। আজ রণর মুখে তার মনের ইচ্ছে শুনে হাজার প্রজাপ্রতি উঠছে হৃদয়ে। রণ শুভ্রার চোখের দিকে তাকায়-“দেবে একটা মেয়ে?”
শুভ্রার গালে লালিমা ছড়ালো। আঁধারে তা নজরে না এলেও শুভ্রার নিরবতায় অনেক কিছু বোঝা হয়ে যায় রণ। সে শুভ্রার কানে কানে ফিসফিস করলো-“ভালোবাসি শুভ্রা, আমার ভবিষ্যৎ বাচ্চাদের মাকে ভীষণ ভালোবাসি। আমার অর্ধাঙ্গীকে ভালোবাসি।”
“আমিও আপনাকে ভালোবাসি রণ, আমার ভবিষ্যৎ বাচ্চাদের বাবাকে ভীষণ ভালোবাসি।”

★প্রিয় পাঠক, দর্পহরনের দীর্ঘ যাত্রা শেষ হলো। নতুন কোন গল্প নিয়ে আবার ফিরবো। আমার লেখা যদি ভালোলাগে তাহলে আমার নতুন বইসহ তিনটে বই ঘরে বসে অর্ডার করতে পারবেন রকমারিসহ আপনার পছন্দের বুকশপে। আমার লেখা ছয়টি ই-বুক পড়তে পারবেন বইটই থেকে। বই পড়ুন বইয়ের কথা ছড়িয়ে দিন।★

সমাপ্ত।
©Farhana_Yesmin

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here