### দাম্পত্য সুখ (১২ তম পর্ব)
###লাকি রশীদ
কাঁকন ফোন দিয়ে বলছে,”উইক এন্ডের দুই দিনের মধ্যে কোন দিন তোর আমার বাসায় আসতে সুবিধা হবে? ঔদিন আমরা সবাই মিলে,একটু সাহিত্য আলোচনা করবো। তোর
হাজব্যান্ড কে বলল,উইক এন্ডে একদিন যেন মা
কে দেখে। তুই জানালে আমি বাকিদের জানিয়ে
দিবো”।
ছেলেরা দুজন মেডিকেল কোচিং এ ভর্তি হয়েছে। বন্যা তার পড়ালেখার জীবন নিয়ে ব্যস্ত। শুধু এক
মাত্র আমি ই সবকাজ করেও অকাজের গোসাই।রাহি কে বললাম,”ছুটির দিনে বাসায় গিয়ে, বাবার
সাথে দুই দিন থেকে আয়। বাবার ভালো লাগবে”।
সে বলে,”না সেটা আমার ভালো লাগবে না”। আমি বলি,”স্বার্থপরের মতো শুধু নিজের ভালো লাগা নিয়ে চিন্তা করতে হয় না বাবা। তূই ভেবে দেখতো, তুই গেলে তোর বাবা কতো আনন্দ নিয়ে
দুদিন কাটাবেন। রাফি কে নিতে চাইলে, নিয়ে যা।
কিন্তু, যেতে তোকে হবেই”। গড়িমসি করে ফোন ই দেয় না দেখি। শেষে আমি ই ফোন দিয়ে বললাম,
“ভাই, রাহি ও রাফি আপনার সাথে দু’দিনের জন্য
থাকতে আসবে। ভদ্রলোক খুব খুশি হয়ে বললেন
“সত্যি ভাবী? কিভাবে রাজি করালেন ওকে”? আমি বলি,”এতো অবাক হবার কি আছে? ছেলে আপনার, আপনার সাথে গিয়ে থাকবে না? মাঝে মাঝে অধিকারও খাটাবেন। আপনি বাবা, আপনি
অধিকার না খাটালে কি চলবে”?
বৃহস্পতিবার রাতে গাড়ি পাঠিয়ে ওদেরকে বাসায় নেয়া হলো? শুক্রবার অর্ধেকের বেশি দিনটা শুধু ঘুমিয়ে ই কাটায় শাহীন। বিকেলে আমার শাশুড়ি ও ওকে চা দিয়ে, আমি চুপটি করে ব্যালকনি তে
বসে আছি। বিকেলের এই সময়টায় আমার মনটা
কেমন যেন একটা শুন্যতা দিয়ে ঘিরে থাকে। অদ্ভুত এক হাহাকারে,অপ্রাপ্তিতে, অবসাদে শরীর,
মন ডুবে যায়। পানি না পেলে যেমন মাছ ছটফট করতে থাকে, আমার অবস্থা অনেক টা সেই রকম
ই হয়। দমবন্ধ,শ্বাস না নিতে পারা সেই সময় থেকে পরিত্রাণের জন্য, অনেক নিস্ফল চেষ্টা অব্যাহত থাকে আমার।
শাহীন রুমে ঢুকে “নদী নদী”বলে ডাক দিচ্ছে। কিছু বলতে ইচ্ছে করছে না,তাই জবাব না দিয়ে
চুপচাপ জায়গায় বসে আছি। সে আমার পাশের চেয়ারে বসে বললো,”কি ব্যাপার নদী, তোমার কি
হয়েছে বলো তো? কথা বলো না,হাসো না….: কি
সমস্যা? সেদিন গল্প লিখতে না দেয়ায় এতো রাগ
করলে”? আমি শান্ত স্বরে বলি,”রাগ টাগ কিছু না
শাহীন, আমার তোমার সাথে কিছু কথা আছে”।
জিজ্ঞাসার দৃষ্টিতে তাকাতে ই বললাম,”সপ্তাহে ছুটির একটা নির্দিষ্ট দিন আমাকে বলো,যেদিন তুমি বাসায় থাকবে, তোমার মায়ের দেখাশোনা করবে”। সে এবার বলল,”কেন? কালকে কি তুমি তোমার বাবার বাসায় যেতে চাও”? আমি হেসে বলি,”চাইতেও পারি। কিন্তু, আমার প্রশ্নের জবাব সেটা না শাহীন। প্রতি সপ্তাহে কোনদিন তুমি বাসায় থাকবে, সেটা আমাকে বলো। আমি ঔদিন
বাবার বাসায়, সাহিত্য আড্ডায়, বান্ধবীর বাসায়…
যেতে পারি। সেদিন আমার “যেমন খূশি তেমন করা”র দিন হবে”।
শাহীন এবার হেসে বলে, “চাওয়াটা একটু বেশি হয়ে গেল না? মাসে ৪ দিন !!! ১দিন হলেই তো যথেষ্ট”। আমি বলি,”শোনো শাহীন এই সংসারে ১৮ বছর শ্রম দিয়ে , আমার যতো এনার্জি,আনন্দ,
সুখ… সবকিছু যেন নিংড়ে নিংড়ে শুষে নিয়েছে। এখন ছেলেরা একটা জায়গায় গেছে, মেয়ে নিজেই নিজেকে দেখতে পারে….. এবার আমি একটু নিজের জন্য বাঁচতে চাই। নিজের যা ভালো
লাগে তা করতে চাই। আমি সত্যিই বড় ক্লান্ত”।
এবার সে বলে,”তুমি কি একাই এসব করো না কি? দেশে আর কোনো মেয়ে কি সংসার দেখে রাখে না? যত্তোসব আদিখ্যেতা !!! আমি হেসে বলি,”দেখবে না কেন? দেশে কি আমার মতো কপাল পোড়া মেয়ের অভাব? কথা সেটা না, তুমি যেমন ৫ দিন অফিস করে,২ দিন ঘুমাও, মাছ ধরো, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দাও…. আমার ও ঠিক তেমনি ৬ দিন সংসার সামলানো আর ১ দিন
সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সারাদিন সংসার থেকে ছুটি চাই”।
শাহীন মুহূর্তে ই তার আগের অবস্থানে চলে গেল।
চিবিয়ে চিবিয়ে বললো,”অফিসে না গেলে খাবে কিভাবে”? আমি শান্ত স্বরে বলি,”খাবার খোটা দিবে না শাহীন। আমার বাবা যেদিন তোমার হাতে
তুলে দেন, সেদিন তুমি খাওয়া,পরা, বাসস্থান সবকিছু ঠিক মতো দিবে,এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে ই বিয়ে করেছিলে। সারা মাস এভাবে বন্দী থাকতে
থাকতে থাকতে আমার অসহ্য লাগছে”। শাহীন এবার দাঁত মুখ খিচিয়ে বললো,”তা বন্দী রানিকে উদ্ধারের জন্য, কোন রাজা এলেন শুনি? কার সাথে অবরে সবরে দেখা করে এতো কান্ড ঘটালে”?
আমি এবার হা হা করে হেসে বলি,”এটা
খুব ভালো বলেছো। শুধু শুধু এতো না দৌড়ে,বুড়ি
ছূয়ে দেয়াই ভালো। এসব বলে লাভ হবে না শাহীন। সপ্তাহে একদিন তুমি আমাকে সংসারে পাবে না,এটাই আমার সোজা কথা”। রেগে লাল হয়ে বলছে,”তোমাকে তাহলে সংসারে রাখাই যাবে না”? আমি এবার চেয়ার ছেড়ে উঠে বলি,
“সপ্তাহে একদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা রাখা যাবে না…. তো বললাম ই। দয়া করে আজ রাতে ই বলো, আমি আবার কাঁকন কে জানাতে হবে। বাকি সবাই এই দিনে ওর বাসায় যাবে”।
রাতে খেতে বসে বন্যাকে, ওর বাবা ও দাদুকে ডেকে নিয়ে আসতে বলি। ও এসে বললো,”বাবা খাবে না বলেছে। রেগে আছে মনে হয় মা”। আমার শাশুড়ি ঝট্ করে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,”শাহীনের কি হয়েছে বৌমা? ও রাগ করে
আছে কেন”? আমি বলি,”তার আমি কি জানি?
আপনি নিজে গিয়ে জিজ্ঞেস করে আসুন না”। উনি এবার বিরক্ত হয়ে পা বাড়ালেন। আমি বন্যা
কে বলি,”চল্ আমরা দুজন খেতে বসে পড়ি”।
ফাজিল বন্যা এবার বলছে,”নারী শক্তির জয় হোক। তোমাকে তো কখনো একা একা খেতে
দেখিনি, সেজন্য বলছি আর কি”। আমি হেসে বলি,”আগে দেখিস নি, এমন অনেক কিছুই এখন দেখবি”। খেতে খেতে ওর বাবার সাথে সন্ধ্যা বেলায় হওয়া কথোপকথন খুলে বললাম। মেয়ে সব শুনে এঁটো হাত দিয়ে ই জড়িয়ে ধরে বলছে,
“এতো দিনে একটা ঠিক কাজ করেছো মা, সো
প্রাউড অফ ইউ”।
আমার শাশুড়ি দেখি শাহীন কে নিয়ে টেবিলে এসে বসেছেন। ওর দিকে তাকিয়ে বলেন,”একটা
প্রবাদ আছে জানিস তো বাবা,”চোরের উপর রাগ করে মাটিতে বসে খাওয়া”। তোর হয়েছে ঠিক সেই অবস্থা। হাড় মাংস কালি করে রুজি রোজগার করে নিজের জীবন পাত করলি।এখন
ঘরের বৌ কি বললো, সেটা নিয়ে রাগ করে ভাত খাবি না…. এ আবার কেমনতরো কথা বাবা”?
একটু পর আবার গজগজ করছেন,”সংসার আমরাও করেছি। শশুর, শাশুড়ি, স্বামী, সন্তান নিয়ে, রান্নাবান্না করে খাইয়ে দাইয়ে সুন্দর মতো চলেছি। মেয়েদের প্রথম কর্তব্য তো এটাই। এটা তো সবাই ই করে,এ আবার নতুন কি বাপু, আমি তো সেটাই বূূঝতে পারছি না”।
আমার খাওয়া শেষ হয়ে গিয়েছিল,প্লেট হাতে নিয়ে দাড়িয়ে বন্যাকে বললাম,”খাবার পর সব তরকারির বাটি ফ্রীজে তুলে রাখবে। আমি ঘুমোতে গেলাম”। তারপর সিঙ্কে প্লেট রেখে, মা ও
ছেলের বিস্মিত দৃষ্টির সামনে আমি বেডরুমে পা বাড়ালাম। শুয়ে পড়ার কিছুক্ষণ পর শাহীন এসে ওয়াশরুমে ঢুকে। আমি আর বলতে পারি না, কখন যে ঘুমের অতলে হারিয়ে গেছি। সারা টা রাত আধাখেচড়া স্বপ্নে, দুঃস্বপ্নে কেটে গেছে।
ফজরের নামাজ আদায় করে দেখি, শাহীন গভীর ঘুমে। আমি আস্তে করে ব্যালকনির দরজা খুলে
চেয়ারে গিয়ে বসে পড়ি। ঠিক এই সময়টাতে যেন
বুকে একটা ধাক্কা লাগে। চারদিকের অন্ধকার কে
কোন সে ম্যাজিশিয়ান তার যাদুর পরশ দিয়ে,
আস্তে আস্তে আলোয় আলোয় উদ্ভাসিত করে দিচ্ছে…. যা দেখে অনেক কিছু শেখার আছে।
ফোন সাথে নিয়ে এসেছিলাম। রাহি ফোন দিয়েছে,
ধরে বললাম,”কি রে নামাজ পড়তে উঠেছিস না কি’? সে বললো,”হ্যা মামস, তুমি কি করো”? আমি বলি,”কিছু না বাবা, বসে আছি। বাবার সাথে সময় কেমন কাটলো বল্”। সে হেসে বলল,
“খুব ভালো কেটেছে মা। বাবা কাল রাতে আমাকে ধরে অনেকক্ষণ কেঁদেছে। আমার তখন মনে হলো, তুমি জোর করে পাঠিয়ে অনেক ভালো করেছো। তোমাকে এজন্যই মনে মনে থ্যাংকস
বলেছি”। আমি মৃদু স্বরে বলি,”দেখ সারাজীবন যেমন অন্যের কথা চিন্তা করে বাঁচা উচিত নয়, ঠিক তেমনি সারাজীবন শুধু নিজের ভালো লাগা
চিন্তা করা উচিত নয়। তাতে, শুধু কষ্টই বাড়ে”।
এবার বলল,”মাত্র দু’দিন দেখিনি তোমায়, মনে হচ্ছে কতো বছর যেন চলে যাচ্ছে। আজ সন্ধ্যায়
কিন্তু চলে আসবো মামস”। আমি হেসে বলি,”বেশ
তো আসিস। রাফি কই,ও উঠেনি”? রাহি হেসে বলছে,”ওকে উঠতে বলায় বলেছে, আমাকে আর একবার ডাকলে লাথি দিবো, সেজন্য ওকে আর
ডাকিনি”।
চারদিক অনেক টাই ফর্সা এখন, নিঃশব্দে কাগজ
কলম নিয়ে এসে গল্পের খসড়া লিখতে শুরু করি।
পরের দেড় ঘণ্টা আমি আসলেই আমার মাঝে ছিলাম না। গল্পের নায়িকার জীবনের সাথে মিলে
মিশে একাকার হয়ে গেছি বলা যায়। কিছুক্ষণ,
টাইপও করলাম। উঠতে ইচ্ছে করছে না, কিন্তু
এখনো চা না দিলে আমার শাশুড়ি আবার মাইন্ড
করে ফেলবেন। তাই,দুইকাপ বানিয়ে উনার টা উনাকে দিয়ে, চা খেলাম। রান্নাঘরে অনেক কাজ, কিন্তু কিছুই করতে ইচ্ছে না। থাক্, বুয়া এসে করবে না হয়, এতো বছর পাগল হয়ে হয়ে করে,
শেষে কোনো লাভ হলো? আবার টাইপ শুরু করে
দিলাম। আমার শাশুড়ির আজ পায়ে ব্যাথা,তাই
ডাইনিং স্পেসে আসেন নি এজন্য নিশ্চিন্ত মনে টাইপ করা যাচ্ছে। মধ্যে খানে একবার শুধু উঠৈছি , বুয়াকে দরজা খুলে দিতে। বিভোর হয়ে টাইপে মত্ত ছিলাম,তাই বুঝিনি শাহীন উঠে গেছে। তাকিয়ে দেখি,ওরে বাবা সাড়ে নয়টা বাজে। ও
টেবিলে বসেই বললো,”চা কি দেয়া যাবে? না কি
হোটেলে গিয়ে খেতে হবে”? আমি বলি,”দেয়া যাবে না কেন? তবে তুমি যদি হোটেলে খেতে চাও, যেতে পারো। আমার কোনো আপত্তি নেই”।
কটমট করে তাকিয়ে, চায়ের অপেক্ষায় সে বসে আছে।
শাহীন কে চা দিয়ে, পরোটা বানানোর ঝামেলায় আর যাইনি। রাইস কুকারে ভুনা খিচুড়ি ও সাথে
ডিমভাজা দিয়ে সর্টকাট নাস্তা দিলাম। আমার শাশুড়ি ঘ্যানঘ্যান করছেন,”ডিমভাজা কি আমি
খাই বৌমা”? আমি এবার কড়া স্বরে বলি, “ডিমভাজা আপনাকে কে দিলো? আপনার সামনে ই তো পটল ভাজি, মিষ্টি কুমড়া ভাজি আছে। ওগুলো খান”। মিষ্টি কুমড়া ভাজি প্লেটে
তুলে, আপনমনে গজগজ করছেন,”মিষ্টি কুমড়া আরো শক্ত থাকা উচিত ছিল”। আমি শাহীনের দিকে তাকিয়ে বলি,”একদিনও আমার রান্না মায়ের ঠিক মনমতো হয়না। হয় শক্ত,না হয় নরম
হয়। সখিনার মাকে আজ আনাবো, কথা বলে দেখি,ও ৩ বেলা রেঁধে দিয়ে যাবে, বেতন কত ঠিক
করে নিব,ওকে জিজ্ঞাসা করে তোমায় জানাবো”।
আমার শাশুড়ি এবার বলছেন,”তুমি ইদানীং বেশি
কথা বলছো বৌমা। আমি কি সখিনার মাকে রাখতে বলছি”? কথা একটা বললেই তোমার গায়ে যেন ফোস্কা পড়ে”। আমি রান্নাঘরে যেতে যেতে বললাম,”১৮ বছর শুনতে শুনতে একদম শক্ত গন্ডারের মতো চামড়া এখন মনে হয়, নরম হয়ে গেছে মা। তাই, খুব তাড়াতাড়ি ফোস্কা পড়ে
যায় এখন”। আমি শুনতে পাচ্ছি, শাহীন ওর মা কে বলছে, “তুমি কয়েকটি দিন একটু শান্ত থাকো তো মা। দেখছো ই তো,ও একটার পর একটা ঝামেলা করে ই যাচ্ছে। এরমধ্যে, তোমার আবার
নরম শক্তের কথা”। আমি মনে মনে বলি,”অনেক চেয়েছিলাম, কখনো বয়স্ক মানুষ এর সাথে কোনো বেয়াদবি করবো না। কিন্ত, সোজা আঙ্গুলে
তো ঘি আর উঠলো ই না”।
শাহীন নাস্তা খেয়ে রুমে গেছে। এখন মনে হয়, বাইরে চলে যাবে। অথচ আমার প্রশ্নটার জবাব দেবার প্রয়োজন ই মনে করছে না। গিয়ে দেখি,
মানিব্যাগ খুলে টাকা দেখছে। বললাম,”কি হলো?
বললে না তো কোন দিন তুমি বাসায় থাকবে? ওদের বলতে হবে তো”। শাহীন একবার তাকিয়ে
বললো,”রাতে এসে কথা হবে ইনশাআল্লাহ”।
ও চলে যাবার পর, আমি ও বুয়া নাস্তা করলাম। আগে হলে হয়তো,,”বুয়াকে এতোটা দিচ্ছ কেন”
বলে ক্যাচক্যাচ করতেন। আজ মনে হয় ছেলের কথা শুনে,আর এসব বললেন না। ছেলেরা সন্ধ্যায় আসছে, ওদের জন্যও রেঁধে রাখতে হবে।
বুয়া কে বুঝিয়ে দিয়ে বলি,”সবকিছু রেডি করে তারপর আমায় ডাকবে”। আমি বেডরুমে গিয়ে, গল্পের বাকি অংশ টাইপ করি। তারপর, পোস্ট করে বের হয়ে দেখি, আমার শাশুড়ি বসে বসে বুয়ার কাজ দেখছেন আর বকতেই আছেন। উনি আমাকে দেখে বললেন,”তোমার কি শরীর খারাপ নাকি বৌমা? বুয়াকে না কি সবকিছু রেডি করে তোমায় ডাকতে বলেছ” !!! আমি হেসে বলি,
“এখন থেকে এভাবেই রেডি করে আমাকে ডাকবে ও”।
তীক্ষ্ম স্বরে বললেন,”কেন তোমার আবার কি
হয়েছে”? হেসে বললাম,”কি আবার হবে? এক কাজ বছরের পর বছর করে হয়তো বিরক্তি ধরে গেছে।আর এসব ভালো লাগে না”। অবাক দৃষ্টিতে ঘায়েল করার বৃথা চেষ্টা করে,কি যেন বিড়বিড় করতে করতে তার রুমে চলে যেতে দেখি। বুয়ার
চোখে অপরিসীম কৌতুহল,”ভাবী আমি সিউর আফনের বাফে কইছুইন, ভেজাল লাগলে কুনু
চিন্তা নাই। আমার বুকে ফিইরা আবি…. এই জইন্যো আফনে কত্তো সাহস দেখাইতাছেন”। আমি এবার ওকে ধমক দিয়ে বলি,”কাজ করো তো, তোমার সমস্যা হলো এতো বেশি কথা বলো তুমি”। মনে মনে বলি, নিজের বাচ্চাদের জন্য ভাবতে গিয়ে ই বোকা নদীর এই হাল। প্রথম প্রথম
এতো কুটিলতা সামাল দেবার মতো বুদ্ধি ছিল না।
পরে বুদ্ধি তখন হলো, তখন আবার বাচ্চা কাচ্চা হয়ে, সংসার ডালপালা মেলতে শুরু করেছে। সব
সময় শান্তিতে থাকতে ইচ্ছুক নদী তখন, শামুকের মতো নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে। মা, ছেলে এটার ই সুযোগ নিয়েছেন।বিনা বেতনের সবদিক সামাল
দিতে পারা বুয়াকে,১৮ বছর শুধু শুষে ই নিয়েছেন
এতো বেশি বেশি সবার প্রিয় মজাদার খাবার খাইয়ে খাইয়ে এ অবস্থা আমার। চিকেন,ডাল ছাড়া এক ভাজি ও একটা মাছের তরকারি রাধি।
বুয়া কে বিকেলে এসে মাছ কেটে যেতে বলি। ওর
কথা হলো, সামান্য সময়ের জন্য আর যাব কেন?
থাকি একসাথে চলে যাব না হয়। গোসল করে নামাজ পড়ে মাত্র উঠেছি, দেখি আমার শাশুড়ি হাউমাউ চিৎকার জুড়ে দিয়েছেন। কি ব্যাপার?
বলতেই জানালেন,”উনার কাছে ফোন এসেছে,
উনার বোনঝি ঢাকা মেডিকেলে আছেন। উনি যেন তাড়াতাড়ি দেখতে যান। আমার দিকে চেয়ে করুণ স্বরে বলছেন,”আমাকে নিয়ে যাবে বৌমা”?
(চলবে)
### ১৩ তম পর্ব কালকে পাবেন ইনশাআল্লাহ।