দাম্পত্য সুখ পর্ব-৩

0
2052

###দাম্পত্য সুখ(৩য় পর্ব)
###লাকি রশীদ

বন্যা হাত পায়ের নখ এতো লম্বা রাখে যা আমার দুচোখের বিষ। আগে তাও বললে কিছুটা ভয় পেয়ে কাটতো কিন্তু আমার শাশুড়ির বদান্যতায়,
এখন আর কাটেই না। আমি বলি,”ঈগল,চিল এদের নখ কে কেটে দিবে? এজন্য ই এদের এতো বড় বড় নখ। নিজেরাও কাটতে পারবে না। তোর কি সমস্যা? আয় আমি কেটে দেই”। “আসছি মা,
আসবো মা”…. এই করে করেই আর কাটে না।

দুপুরে কিচেনে সব তরকারি গরম করে, বাটিতে বাটিতে নিয়ে, তারপর আমি ওকে ডেকে বলেছি,
“বাটিগুলো টেবিলে রেখে আয় তো”। একটা রেখে আসার পর আরেক টা নিবে, এমন সময় আমার শাশুড়ি এসে ই বললেন,”বাচ্চা মেয়েটা কে দিয়ে কাজ করাচ্ছো যে বৌমা? গরম তরকারি
হাত থেকে ফেলে,কি ওকে জ্বালিয়ে দিতে চাও”? আমি আর কিছু বলি না। উনি নাতনি কে সাথে নিয়ে চলে যান। আমি সব ই বুঝি, মেয়ে আমাকে সাহায্য করলে, উনার তো সেটা ভালো লাগার কথা নয়। ভদ্রমহিলার জন্য আমার জীবনের একটি বড় অংশ অসার,শুন্য। কিন্তু, তিনি তো যেন আমার প্রকাশ্য শত্রু। এতো স্বার্থপর মানুষ হয় কি করে?

যে মাছধরা নিয়ে এতো নাটক, সেই মাছ দেখলে
পাগলেও হাসবে। একমাত্র রাহির বাবা আসার কারণে,আজ সকালে ২/১ টা কথা শাহীনের সাথে হয়েছিল। না হয় এই স্বার্থপর লোকটার সাথে কে কথা বলতে চায়? স্বার্থপর দাদি, বাবার ছত্রছায়ায় থেকে বাচ্চারা স্বার্থপর হওয়া ছাড়া আর কি ই বা শিখবে? শিখতে পারে?

টাকা সাশ্রয় এর কথা চিন্তা করতে করতে, আমার উপর সবকিছু এনে করেছি। এই যে বছরের পর বছর, শুধু সাশ্রয় করার জন্য নিজের শরীর টা কে কষ্ট দিলাম,মনটা কে কষ্ট দিলাম….. কি লাভ হলো তাতে? এপ্রিসিয়েট করা তো দূরের কথা, এটা মন থেকে ভালো মতো বুঝেছে কি কেউ? তাহলে, এতো এতো খেটে, কোন মোক্ষলাভ টা ই বা হলো নদী তোমার….. নিজের সাথে নিজেই জীবন কে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছি।

আজ ছুটাবুয়া কে বলে দিয়েছিলাম, সন্ধ্যার আগে আগে এসে, মাছগুলো যেন কেটে দিয়ে যায়। পরিমাণ দেখে কতো দিবো, তখন বলবো।ও এসেছে, মাছের পরিমাণ খুব ই কম। বললো,১০০
টাকা দিলেই হতো, কিন্তু তুমি আমারে ২০০/টাকা
দিবা ভাবী। আমার সোয়ামীর জুতা টা ছিইড়্যা গ্যাছে, একজোড়া জুতা কিইন্যা দিমু”। আমি এদের সাথে কখনো এতো ব্যাক্তিগত আলাপে যাই না। কিন্তু,আজ যে কি হলো, সুখী মানুষ দেখতে দেখতে হ্যাংলার মতো জিজ্ঞেস করলাম,
“তোর স্বামী তোকে ভালবাসে”? ঝর্ণার মতো খিলখিল করে হেসে উঠলো,”ম্যালা ভালবাসে গো ভাবী। তোমারে তো কওনই যায়,রোজ ফিরোনের সময় একটা পান বা দুইটা কলা আমার লাইগ্যা কিইন্যা নিয়া আইবই আইব”। মানুষের মনের কতো ফাঁকফোকর যে আছে।নইলে আমার মতো মহিলা ভাবছে, আমার থেকে অনেক গুণ সুখী সে। “স্বামীর ভালবাসা” নামে খ্যাত, অচিনপুরের স্বপ্নলোকের সেই চাবির মালিকানা ও পেয়ে গেছে।আর, আমি রিক্ত, নিঃস্ব
এক রমণী…. ওর থেকে অনেক নীচের স্তরে বসে
বুভুক্ষুর দৃষ্টিতে ওকে শুধু দেখছিলাম।

শাহীন যেদিন মাছ ধরতে যায়, বাইরে লাঞ্চ করে না।হালকা কোনো কিছু খেয়ে নেয়, বাসায় এসে ভাত খায়। মাঝারি একটা কাতলা মাছ, বুয়াকে দিয়ে কাটিয়ে,বড় বড় ৪ পিস ভেজে দেই। ছোট ছোট একমুঠো চ্যালাপাতা মাছ, মসলা দিয়ে হাতে মেখে, ফ্রীজে সিদ্ধ করে রাখা এক টুকরো সাতকরা এনে ছোট ছোট টুকরা করে দিয়ে বসিয়ে দেই। মাছধরা থেকে এসে,ও অনেকক্ষণ শাওয়ার নেয়। তাই, বের হতে হতে মাছের তরকারি হয়ে যাবে। আজকে আমাদের জন্য বাসায় বাইম মাছ ভুনা করেছি। শাহীনের খুব প্রিয় খাবার। ওটাও একটু গরম করি। শসা, টমেটো কাটা শুরু করতে
ই, টেবিলে বসে চেঁচাচ্ছে,” নদী যা আছে তা দিয়ে চারটি ভাত দিয়ে দাও প্লিজ। খিদেয় পেটে ছুচো ডন মারছে”।

ওর হাঁকাহাঁকি তে আমার শাশুড়িও ঘুম ভেঙ্গে চলে এসেছেন। তরকারির বাটি ও ভাত রাখতেই বলছেন,”তুমি তো জানো ই সারাদিন উপোস করে আসবে। এসব রেডি রাখলে কি হয়, বুঝি না বাপূ”। আমি সালাদে একফোঁটা সরিষার তেল দিয়ে মাখিয়ে দিয়ে বলি,”কি আর করবেন মা? আমি তো সারাদিন শুয়ে, বসে অবসর সময় কাটাই”। এবার রেগেমেগে তিনি ছেলেকে বলেন,
“দেখ শাহীন তোর বৌ কি বলছে? শুয়ে বসে থাকে… আমি কি বলছি না কি”? শাহীন হয়তো বা
কিছু বলতে যাচ্ছিল, আমার ঠান্ডা চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,”কি খাবো দাও”। আগে হলে ভাত বেড়ে দিতাম, এখন বলি,”তোমার সামনেই ভাত ও
এখনকার আনা মাছের টুকরা ভাজা আছে। নিয়ে খাও”। কিচেনে গিয়ে বাইম মাছ ভুনা ও ছোট মাছের চচ্চড়ি নিয়ে আসি। ততোক্ষণে সে মাছ ভাজা মুখে দিয়ে, আবেশে চোখ বুজে বলছে,
“ফ্রেশ মাছের মজা ই অন্যরকম। এতো স্বাদের মাছ”।

আমার শাশুড়িও ফ্রেশ মাছ ভাজা খেতে ভালো
বাসেন। কিছু না বলে একটা প্লেট সামনে দিয়ে বলি,”আপনিও মাছ ভাজা দিয়ে চারটা খেয়ে নিন
মা”। বলে কিচেনে চলে এসেছি। মনে মনে হাসছি,
ছোট মনের, সংকীর্ণ মনের মানুষদের সাথে আমি ও কেন ঠিক তেমনি হতে পারি না। এতোটা নিচে নিজেকে নামাতে কষ্ট হয় কেন? “নেও ভাবী,মাছ
কাইট্যা কুইট্যা,ধুইয়া দিছি তোমারে”। আমি বলি,
“এই ব্যাগে আটা, ময়দার খালি প্যাকেট আছে,
একেক টাতে একেক মাছ ঢুকাও”। ওকে প্যাকেট
সহ আনতে বলি ফ্রীজে ঢোকাবো বলে। আমার শাশুড়ি ঘুমে ছিলেন বলে, বুয়াকে দেখেননি। এখন দেখতে পেয়ে, অবাক হয়ে বলছেন,”তুই আবার কোথা থেকে এলি”? বুয়া বলছে,”ভাবী মাছ কুটার লাইগ্যা আইতে কইছিল”। এবার তিনি
ছেলেকে শুনিয়ে গুনগুন করছেন,”এই মাছের জন্য আবার বুয়াকে বলতে হয় না কি”?আমি মনে
মনে বলি,”এতো শক্ এখনি খাবেন না, সামনে আরো শক্ আছে”।

৪ পিস মাছ ভেজে মা ছেলেকে দিয়েছিলাম, এখন
আরো ৪ পিস ভেজেছি। একটা প্লেটে কিছু গরম ভাত নিয়ে,এক পিস মাছ ভাজা ও অন্যদিকে বাইম মাছ ভুনা দিয়ে বুয়াকে বলি,”আরাম করে বসে এটা খাও”। কিছুটা বিস্মিত হয়ে বলছে,”ও
আল্লাহ্, আফনে আমার লাইগ্যা বাড়ছেন” !!!
মায়া বড় অদ্ভুত এক জিনিস, এই মুহূর্তে বুয়ার চোখে মুখে ফুটে তা বের হচ্ছে।

বের হয়ে দেখি, শাহীনের খাওয়া শেষ। কুলি করছে সে। মার খাওয়াও প্রায় শেষ পর্যায়ে। শাহীন কে বলি,”এই আমাকে ২০০ টা টাকা দাও”। শাহীন তোয়ালে তে মুখ মুছে বলল,”কি করবে”? বলি,”বুয়াকে মাছ কুটার জন্য দিবো”। সাথে সাথে ই আমার শাশুড়ি বলছেন,”মাছ কুটার জন্য ওকে আনারই বা কাজ কি আর পয়সা দেবার ই বা দরকার কি”? আমি বলি,”তাহলে মাছ কুটবে কে? আমি এখন থেকে আর মাছ টাছ কুটতে পারবোনা। মাছ আনলে বুয়াকে টাকা দিয়ে কুটাবো”। মা, ছেলে দুজনেই নিশ্চুপ।

আমার শাশুড়ির তো আবার কোনো কিছুতেই শান্তি নেই। হেঁটে হেঁটে কিচেনে গিয়ে দেখছেন, বুয়া ভাত খাচ্ছে। শুরু হয়ে গেছে চেঁচামেচি,”এ
কি রে? এই সন্ধ্যা বেলা ভাত খাচ্ছিস যে”!!! বুয়াও
একটু ঠোঁটকাটা,”সইন্ধায় তো আফনেও ভাত খাইলেন, ভাবী আল্লাদ করে দিছে আমারে, এর
লাইগা ই খাইতাছি”। এখন শুরু হয়েছে ভাষণ,
“আমার ছেলে কে এই বৌ ফকির বানিয়ে ছাড়বে। সামান্য কটা মাছের জন্য কতো খরচ করছে দেখো”। আমি ডাইনিং স্পেইসৈ এসে, বসে থাকা
শাহীন কে বলি,”১৮ বছর সংসার করার পর যদি,
একজন মানুষ কে খাওয়ানোর রাইট না থাকে…..
তবে এ সংসারে ঝাড়ু মেরে চলে যাওয়া উচিত। এতো ছোট মনের মানুষ তোমরা ছিঃ”। আর কিছু না বলে, সোজা আমার বেডরুমে চলে গেলাম।

বেশিরভাগ রাতে ই খাওয়া দাওয়ার পর এসে দেখি, শাহীন ঘুমিয়ে পড়েছে। আজকে আমার রুমে আসতেও অনেক দেরি হয়েছে। দুধের সসপ্যান চুলায় বসিয়ে রেখে ভুলে গেছি, টেবিলে বসে রাহির সাথে ধুম গল্প করছি। পোড়া গন্ধ পেয়ে দেখি, দুধ পড়ে সমস্ত চুলা সয়লাব। এতোক্ষণে সবকিছু পরিষ্কার করে মাত্র গেছি। এখন মনে হচ্ছে,ডাক ছেড়ে কেঁদে উঠি। রাহি বললো,”মামস আমি সব পরিষ্কার করে দিচ্ছি,১০
মিনিটের মধ্যে”। আমি বলি,”খবরদার, হাত টাত কেটে গেলে পরীক্ষা দিবি কিভাবে”? সে হা হা করে হেসে বলে,”তুমি এমন কথা বলো,যেন আমি
একটা বাচ্চা”।

চেয়ার একটা এনে বসিয়ে রেখেছে আমাকে।
কি দিয়ে,কিভাবে পরিস্কার করি দেখাতে বলেছে।
আমি বসে বসে নির্দেশ দিচ্ছি, সত্যি ১৫ মিনিটের
মধ্যে আমার চুলা আগের মতো ই ঝকঝকে করে
দিয়েছে। কিন্তু, ছেলেটা ঘেমে অবস্থা শেষ। বললো,”সারা দিন কাজ করেছো, এখন লম্বা একটা ঘুম দাও মামস। ঘেমে গেছি বলে, এখন আর তোমাকে আদর দিচ্ছি না। এটা কালকে হবে ইনশাআল্লাহ”। ও চলে যাবার পর, আমার ননদের
উদ্দেশ্যে মনে মনে বলছি,”এতো ভালো একটা ছেলে জন্ম দিয়ে কোথায় গেলে”?

আজ এসে দেখি, শাহীন সজাগ, শুয়ে শুয়ে ফোন টিপছে। আমি কোনো দিকে না তাকিয়ে, সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ি। বের হয়ে চুল আচড়াচ্ছি,
দেখি আয়নায় দেখা যাচ্ছে, আমার দিকে সে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মতলব কি, ভালো মতোই বুঝতে পারছি। মনটা বড্ড তেতো হয়ে আছে। আমি আসলে ই ভেবে পাই না, মানুষ এতো টাও বেহায়া হয় কি করে? উল্টো দিকে ফিরে শুতেই মাথায় হাত বুলিয়ে বলছে,”এদিকে
ফিরো”। বললাম,” ভীষণ টায়ার্ড, এখন ফিরতে পারবো না। ঘুমাও”। আস্তে করে আমার শরীর টা কে ঘুরিয়ে, ওর বুকের একদম কাছে নিয়েছে। মুখ দিয়ে যেন মধু ঝরছে,”রাগ করেছো সোনা? শোনো আগামী পরশু সোমবার, সরকারি ছুটি। তুমি সেদিন ইচ্ছেমতো ঘুরতে যেয়ো। আমি বাসায় থাকবো, মা কে দেখবো,আর তুমি যে যে কাজ বলে যাবে সেগুলো করবো”। আমি বলি,”তুমি আবার কাজ জানো না কি”? সে বললো,”সমস্যা নেই, মাকে জিজ্ঞেস করে করে, ভালো মতো শেষ করে রাখবো”।

আমি ভাবি এই সুযোগ, বলি,”মা বন্যাকে একদম নষ্ট করে ফেলছেন। একটা সামান্য কাজের কথা বললেই, ‘ও পারবে না বলে’ নিয়ে যান। এতো বড় মেয়ে এককাপ চা বানাতে জানে না। রাফি ও রাহি
কে ভাত,ডাল,ডিমভাজি রান্না করা শিখেয়েছি। মেয়ে কে বলে বলেও ঐসময় কিচেনে নিতে পারি
নি। তাই,শিখেও নি। একদিন আমি অসুস্থ হলেও
তো, কিচ্ছু সাহায্য করতে পারবে না। হাত, পায়ের নখের দিকে একটু মনে করে তাকাইও। মনে হবে,
কোন জানোয়ারের বাচ্চার পা দেখছো মনে হয়”।

শাহীন খুব সায় দিচ্ছে আমার সব কথার। বারবার
বলছে,”মা যে কি করে? আমি দুজনকেই ভালো করে বুঝিয়ে দিবো। এবার একটু আদর করি”? আমি মনে মনে হাসি, এজন্যই তো তুমি আজ এতো প্রেমিক পুরুষ। সবকিছু বিলিয়ে দিয়ে,এখন আমি এমনিতেই নিঃস্ব। নতুন করে আর কি ঠকাবে আমাকে? জেনে শুনে জীবনের বাকি দিনগুলো তে, ইচ্ছে অনিচ্ছায় বিষ পান করতে ই
হবে।

আর ৬ দিন পরেই বাচ্চাদের পরীক্ষা। আমি এখন আর কোথ্থাও বের হতে দেই না। শুধু”প্রবেশপত্র’
আনতে গিয়েছিল। রবিবার সকালে শাহীন এসে ফোন হাতে দিয়ে বলছে,রাহির বাবা কথা বলতে চান। বললেন,”আজ রাতে লারা আপুর অনারে,
বাসায় একটা ছোট খাট পার্টি দিতে চাই। আপনারা সবাই কে পেতে চাই। আমি বলি,”ভাই
ছেলেদের পরীক্ষা, এখন তো আমি ওদের বাসায়
রাখতে চাই”। উনি নাছোড়বান্দা,”ভাবী বেশি ক্ষণ
লাগবে না। গাড়ি আপনাদের নিয়ে আসবে,আবার ডিনার শেষে পৌঁছে দিবে। রাহির নানুও আসবেন
বলেছেন”। কি আর করা,যাবো বললাম।

যথারীতি রাহি যেতে অনিচ্ছুক।আমি বলি,”এই
জিনিস টা আমি আসলেই বুঝিনা, তুই এখন যথেষ্ট বড় হয়েছিস, এখন তোকে কেউ ভয় দেখাতে সাহস ই করবে না। তারপরও,যেতে চাস না কেন বাবা”? কোনো উত্তর ই দেয় না। আমার শাশুড়ি কে দেখলাম,যেতে খুব ই ইচ্ছুক। মনে মনে ভাবছি, এভাবে যদি আমার সাথে অন্য সব
জায়গা গুলোতে যেতে রাজি থাকতেন, তবে তো বন্দীদশা টা কাটতো। বাবাকে ই যে কতোদিন ধরে দেখি না,আর ভালো লাগে না।

শাহীন দেখি খুব খেয়াল করে, সুন্দর শার্টপ্যান্ট
পরে সেন্টের শিশি প্রায় শেষ করে ফেলেছে। আমি বলি,”তোমার কি মনে হয় শাহীন, আজকে
পার্টিতে রাহির বাবা কি ড্যান্সেরও আয়োজন করেছেন? শাহীন বলে,”কি জানি, তোমার হঠাৎ
এসব মাথায় আসলো কি করে”? আমি হেসে বলি,”না কোথায় যেনো দেখেছিলাম, ছেলেটা হাত উপরে তুলে অনেকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে মেয়েকে নিয়ে
ড্যান্স করে। একদম শেষে বুকের কাছাকাছি মেয়ে
এসে দাড়ায়। তুমি তো অনেক লম্বা মানুষ আর লারা আপু চিকন মানুষ। এই ড্যান্সটায় তোমাদের
খুব মানাবে”।

শাহীন এবার চেঁচিয়ে বলে,”তুমি তো দেখছি নদী
হিংসায়, সন্দেহে পাগল হয়ে গেছো। কাকে দিয়ে কি উদাহরণ দিচ্ছো?: উনি আমার অনেক সিনিয়র বোন”। আমি বলি,”ছেলে মেয়ে নিয়ে যাচ্ছি আজ, দয়া করে উনি যে তোমার সিনিয়র বোন সেটা মনে রেখো। আচ্ছা তোমার হাত ধুয়েছ
তো ভালো করে? তাহলে আজকে উনার গালে হাত দিয়ে দেখতে পারো, পিছলে যায় কি না”। এতটুকু শুনেই শাহীন কোনো কিছু না বলে গটগট করে বাইরে চলে গেল।

একটু পরেই রাহির বাবার গাড়ি এলে, রওয়ানা দিলাম। এসে দেখি, এতো ছোটও না,পার্টি বেশ
বড়। আমার ননদও তার স্বামী, শাশুড়ি নিয়ে মজুত। আমার শাশুড়ি বেয়ানকে পেয়ে গল্প করতে লাগলেন। লারা আপু একটি টকটকে লাল জামদানি পরেছেন। এখানেও দেখি দুঃখ করছেন, তার মা বেশি বেশি খাইয়ে মোটা করে দিচ্ছেন। সবাই বলছে,আরে আপনি কোথায় মোটা? আমার মনে হয়, ভদ্রমহিলা একথা বলেন ই শুধু পুরুষের চোখ টানার জন্য। আকৃষ্ট করার কতো ধরনের পন্থা ই যে, এরা জানে !!! আমার ননদ এক ফাঁকে নীচু স্বরে আমাকে বললো,
“যাক আজ অন্তত ভাইয়া মাখনের মতো গলে গলে পড়ছে না। না হয় ওইদিনের মতো দেখতে বিশ্রী লাগতো”। আমি তো আর বলতে পারি না,
আসার সময় ঔষধ দেয়ায় এই সংযম।

প্রাসাদ সম এই বাড়িটা। কতো ধরনের লাইট ই যে, লাগানো আছে এখানে। হঠাৎ চোখ পড়ে, রাহি একটা গাছের পাশে দাঁড়িয়ে মাথা নিচু করে আছে। আমার বুকটা কেন যেন মোচড় দিয়ে ওঠে। একাকী এক রাজপুত্র যেন পথ ভুলে চলে এসেছে। কাছে গিয়ে বলি,”কি রে রাফি কই”? বলল, কাকে দেখে নাকি বন্ধু পাতাইছে। ওইদিকে গিয়ে হাঁটছে। বললাম,”তা তুই গেলি না কেন”?
বলল,”ভালো লাগছে না, চলো না মামস চলে যাই
বাসায়”।

আমি ওকে জড়িয়ে ধরে একটা বাঁধানো গাছের নিচে বসলাম। মৃদু স্বরে বলি,”এখানে এলে
কি তোর মায়ের কথা মনে পড়ে বাবা”? সে চোখ তুলে বলে,”আমার মা তো তুমি। মা বলে চোখ বুজলে তো তোমার চেহারা টাই চোখে ভাসে”। জিজ্ঞেস করলাম,”তাহলে এখানে আসলে এতো কষ্ট পাস কেন”? সে করুণ চোখে আমার দিকে চেয়ে বলে,”ভালো কোনো জায়গায় দুষ্টু নারীদের বাস দেখলে, আমার ভীষণ খারাপ লাগে । মনে হয়, সবকিছু লন্ডভন্ড করে দেই”।

আমি কখনো ওকে এভাবে কথা বলতে দেখিনি। বললাম,”ছেড়ে দে না। যার যার কর্মফল নিজেকে ভোগ করেই যেতে হবে। মনে রাখিস আল্লাহ তাআলা কোনো কিছুই আনপেইড রাখেন না”। সে চোখে টলমল জল নিয়ে বলে,”ধরো মামস তুমি যদি আমার মামা ও নানুর মতো স্বার্থপর হতে, ভাবতে “রাহির ঝামেলা রাহি বা ওর বাবা মেটাবে, আমি এতে কি করবো”? ভেবে দেখো এই ১২ বছর তাহলে আমার কি হতো? অসুস্থ একটা পরিবেশে,এত ছোট একটি বাচ্চা মানসিক চাপে থাকতে হতো”? আমি তোমাকে পেয়ে অনেক ব্লেসড মামস। আমি চাইলেও এগুলো ভুলতে পারি না। আর,এ বাসায় এলে আমার সত্যি ই ভীষণ সাফোকেশন হয়”।

আমি তো সবসময় ই এমন কি এখনো রাহি কে ছোট ই ভাবি। ও কখন এতো বড় হলো, ভাবনা চিন্তা এতো ম্যাচিউরড হলো, আমি তো মা হয়েও
বুঝিনি।

(চলবে)
###৪র্থ পর্ব কালকে পাবেন ইনশাআল্লাহ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here