দূর_হতে_আমি_তারে_সাধিব #পর্ব_০৫,৬ #অনন্যা_অসমি

0
497

#দূর_হতে_আমি_তারে_সাধিব
#পর্ব_০৫,৬
#অনন্যা_অসমি

প্রিন্সিপালের সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে সাফাইত, সিয়াম এবং তাদের পেছনে দাঁড়িয়ে আছে তোহা। উনি যে বেশ রেগে আছেন তা ওনার মুখশ্রী দেখেই বোঝা যাচ্ছে।

” এসব কি সাফাইত? সিনিয়র হয়ে যদি তোমরা এরকম আচরণ করো তাহলে নতুনরা কি শিখবে? তোদের কার্যক্রম ইতোমধ্যে ভার্সিটি পেরিয়ে বাইরের মানুষের কানে পৌঁছে গিয়েছে। শখানেক জায়গায় তোমাদের মারামারি ভিডিও শেয়ার হয়েছে। পরিচিতরা আমাকে তাতে মেনশন দিচ্ছে। ভার্সিটি নিয়ে নিন্দা করছে সবাই।”

” সরি স্যার। রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে হয়ে গিয়েছে।” মাথা নিচু করে বলল সাফাইত।

রিফাত সাহেব হুংকার দিয়ে বললেন, ” সরি বললেই কি সবকিছুর সমাধান হয়ে যাবে? এটা তোমার রাগ দেখানোর জায়গা নয়। রাগ দেখাতে হলে, গুন্ডামী করতে হলে ভার্সিটির বাইরে গিয়ে দেখাবে তখন কেউ কৈফিয়ৎ চাইবেনা।”

সাফাইত পরবর্তীতে কিছু বলার সাহস পেল না। তোহা এতো সময় চুপ করে থাকলেও এবার মুখ খুলল।

” স্যার আমার কিছু বলার আছে।”

সরু চোখে তাকালেন রিফাত সাহেব।

” তুমি সেই মেয়েটা না যে ওকে চড় মেরেছিলে?”

” জ্বি স্যার, আমার নাম তোহা।”

” তুমি কেন এর মাঝে এসেছ? কোন অধিকারে ওর গায়ে হাত তুলেছিলে তুমি?”

সাফাইত কিছু বলবে তার আগে তোহা তাকে ইশারায় থামিয়ে নিজে বলল, ” আমি সাফাইতের বেস্টফ্রেন্ড। তাদের মাঝে আসার কারণ ঘটনা মূলত আমাকেই ঘিরে। আজ সকালে করিডোর দিয়ে আসার সময় সিয়াম নামক ছেলেটি আমার সাথে অসভ্যতা করেছিল, সবার সামনে আমার হাত ধরে টানাহেঁচড়া করেছিল৷ সাফাইত এটা শুনে নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারেনি। তাই রাগের বশে এসব করে ফেলেছে। ওর হয়ে আমি ক্ষমা চাইছি স্যার। কোন শাস্তি দিতে হলে আমাকে দিতে পারেন।”

সিয়াম ভেবেছিল সে ভিক্টিম কার্ড প্লে করে বেঁচে যাবে কিন্তু তোহার কথা শুনে প্রিন্সিপালের দিকে তাকিয়ে বুঝল আর তার রক্ষে নেয়।

” তুমি কি সিয়ামের কোন শাস্তি চাও?”

তোহা একদম সরাসরি বলে দিল, ” জ্বি স্যার। পড়াশোনার করার স্থানে এধরণের নিম্নমানের কাজ খুবই অসন্তোষজনক। আমি শাস্তির বিষয়টা আপনাদের উপর ছেড়ে দিসি। আশা করবো আপনারা এর যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন।”

” ঠিক আছে। তোমরা দু’জন এখন আসতে পারো তবে দ্বিতীয়বার যেন এরকম কিছু না হয়। কোন সমস্যা হলে আমাদের জানাবে, নিজে থেকে কিছু করতে যাবে না।”

” ঠিক আছে স্যার, ধন্যবাদ।”

রুম থেকে বেরিয়ে বড় একটা নিঃশ্বাস নিল তোহা। সাফাইতকে টেনে মেডিসিন রুমে নিয়ে এলো সে। হাত এবং মুখে আঘাত পাওয়া জায়গাগুলোতে মলম লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছে। তার এই নীরবতা সাফাইতের ভালো লাগছেনা।

” কিরে তোহারাণী কথা বলছিস না কেন? আচ্ছা বাবা সরি আমি আর কখনো এরকম করবো না। এবার তো কথা বল।”

তোহা কোনরূপ উওর দিল না৷ ব্যান্ডেজ করে নিজের ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে এলো তবে বেশিদূর যেতে পারল না। কয়েককদম যেতে পেছন থেকে সাফাইত তার ব্যাগ টেনে নিজের সামনে নিয়ে এলো।

” এরকম করছিস কেন? আমি কি ভূল করেছি বল? ওকে শিক্ষা না দিলে হতো না।”

” সাফাইত ব্যাগ ছাড় আমার।” ব্যাগ ছাড়িয়ে চলে যেতে নিলে এবার সাফাইত তার হাত টেনে ধরল। এবার খানিকটা রাগী স্বরে বলল, ” এবার কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে তোহা। এরকম করছিস কেন তুই? আমি তো ভূল কিছু করিনি? প্রিন্সিপালের রুমে যেতে হয়েছে বলে তুই মন খারাপ করেছিস? আরে উনি তো আমাদের বকা দেননি তাহলে কি হয়েছে?”

তোহা কোনপ্রকার উওর না দিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিল।

” এই তোহা তুই কি সিয়ামের ওইসব কথায় মন খারাপ করেছিস? আমার দিকে তাকা।” সাফাইত তার মুখ নিজের দিকে ফেরালো। তোহার চোখে জল দেখে সাফাইত অস্থির হয়ে উঠল। বুঝল সিয়ামের কথায় সে আঘাত পেয়েছে।

” আরে আরে তোহারাণী কান্না করছিস কেন? দেখ ও তো বাজে ছেলে, ওর চিন্তাভাবনাও বাজে। তুই কেন শুধু শুধু ওর কথা মাথায় নিয়ে বসে আছিস বলত? দেখ আমার দিকে, আমরা তো জানি আমরা স্বচ্ছ, আমাদের বন্ধুত্ব স্বচ্ছ। তাহলে বাইরের মানুষের কথা কেন গায়ে মাখব?”

তোহার কি হলো সে জানে না আচমকা হাউমাউ করে কান্না শুরু করে দিল। সাফাইত যত্নসহকারে তার কপালটা নিজের বুকে ঠেকাল। বেশ কিছুসময় পর নিজেই তা সরিয়ে যত্ন সহকারে চোখের জল মুছে দিল।

” হয়েছে এবার বাচ্চাদের মতো কান্না বন্ধ কর। আমার শার্টটা ভিজিয়ে দিয়েছিস। দেখ তোর নাকটা পুরো লাল টমেটো হয়ে গিয়েছে। ইশ… তুই নাক মুছেছিস নাকি শার্টে? ইউ….” বমির নাটক করে বলল সাফাইত। তোহা তার হাতে একটা চাপড় দিল, পরমুহূর্তে তার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলল।

” শান্তিতে একটু কান্নাও করতে দিবি না।”

” না দেবো না। তোমাকে শান্তিতে দেখলে আমার জ্বলে।”

” যা শয়তান আমার সাথে কথা বলবিনা।”

সাফাইত তোহার ব্যাগ টেনে নিয়ে যেতে যেতে বলল,

” আমার অনেক ক্ষিধে পেয়েছে। মন ভালো করার মতো কিছু খেয়েনি, খাওয়া শেষে বিলটা দেওয়ার পর আর কথা বলিস না।”

” সাফাইতের বাচ্চা, ছাড় আমার ব্যাগ। আমি যাবোনা তোর সাথে।”

কিন্তু কে শোনে কার কথা। সাফাইত ভাবলেশহীনভাবে তাকে টানতে টানতে নিয়ে গেল।
.
.
নিউজফিড স্ক্রল করছে ইশরা। তার পুরো নিউজফিড জুরে ক্যাম্পাসে হওয়া সকালের ঘটনার ভিডিও ছড়াছড়ি। কেউ রোমান্টিক ব্যাকগ্রাউন্ড দিয়ে তা এডিট করেছে তো কেউ ক্ষোভ প্রকাশ করে পোস্ট করেছে। পরিচিতরা সকলে তাকে মেসেজ দিয়ে জানতে চাইছে সাফাইতে চড় মেরেছে মেয়েটা কে৷ ইশরা তা দেখেও কোনরূপ জবাব দিল না। এবার ইশরার তোহার উপর খানিকটা রাগ হচ্ছে।

” কেন চড় মারতে গেল? ও কি বুঝতে পারেনি এতে সাফাইতের কথাটা সম্মানহানী হবে? এতোটা নির্বোধ মানুষ কি করে হয়? কি এমন হয়েছে যে সাফাইত এতোটা রেগে কাউকে আঘাত করেছে? আমাকে পর্যন্ত খেয়াল করেনি। কিন্তু তোহা আসতেই সে শান্ত হয়েছে গেল!”

ভাবনায় ছেদ পড়ল ফোনের রিংটোনে। স্ক্রিনে সাফাইত নামটা জ্বলজ্বল করছে। ফোন দেখে ইশরার সকালে ধাক্কা দেওয়ার কথা মনে পড়ে গেল। রাগ হলো তার, ফোনটা বিছানায় ছুঁড়ে ফেলে বালিশ দিয়ে কান চেপে শুয়ে রইল। অনবরত ফোনের রিংটোন সহ্য করতে না পেরে উঠে বসল সে। রিসিভ করে গমগম কন্ঠে বলল,

” কি সমস্যা তোমার? দেখছ ফোন রিসিভ করছিনা তাও বারবার কেন ফোন দিচ্ছো?”

রিসিভ করতেই এতো রাগী কন্ঠ শুনে হকচকিয়ে গেল সাফাইত। তোতলানো কন্ঠে বলল,

” আরে আরে ইশু কুল কুল। এতো রাগে আছো কেন? কেউ কিছু বলেছে?”

” তা জেনে তুমি কি করবে? আমাকে আর কল দিবেনা। পুরো দিন পেরিয়ে যাওয়ার পর উনি এসেছে ঢং দেখাতে৷ আরেকবার ফোন দিলে খবর আছে।”

” আরে ইশরা শোন তো। এতো রেগে আছো কেন? আচ্ছা বাবা সরি, তুমি তো দেখেছোই সকাল থেকে কি ঝামেলার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। তোহাটাও সারাদিন মন খারাপ করে ছিলো। এখন তুমিও যদি রাগ করে থাকো তাহলে আমি কোথায় যাবো?”

” আমার মাথার উপর যাও। থাকো তুমি তোমার তোহাকে নিয়ে। সেই তো সব, আমি কে? তাই তো সে আসতেই তুমি থেমে গেলে৷ আমি কতবার তোমাকে ডেকেছিলাম কিন্তু তুমি কি করলে? আর কখনোই আমার সাথে যোগাযোগ করবে না।” রাগে কষ্টে নিজের অজান্তে কথাগুলো বলে ফেলল ইশরা। সিয়ামের কথাগুলো সে শুনেছে, তখন থেকেই তার মাথায় হাজারখানেক বাজে চিন্তা এসে ভর করেছে। ফলে নিজের মেজাজ আর অনুভূতি ঠিক রাখতে পারছে না সে৷ বালিশে মুখ গুঁজে ডুকরে কেঁদে উঠল ইশরা। সাফাইতকে সে ভীষণ ভালোবাসে। সে হারিয়ে গেলে ইশরা একেবারে ভেঙে গুঁড়িয়ে যাবে।

ইশরার কথা শুনে সাফাইত সকালের ঘটনাটা আবারো মনে করতে লাগল। তখন সে বুঝতে পারলো ভুলবশত সে ইশরাকে ধাক্কা দিয়েছিল। সাফাইত নিজের কপাল চাপড়ালো।

” হায় হায়, এটা আমি কি করে বসলাম। এবার কি করে ইশরাকে মানাবো! আরে ইয়ার, ধুর।”

চলবে……

#দূর_হতে_আমি_তারে_সাধিব
#পর্ব_০৬
#অনন্যা_অসমি

সবকটা ফুল নাড়াচাড়া করে দেখছে তোহা। ঠোঁটের কোণে ঝুলে আছে বিষাদের হাসি। এই ফুল সে নিজের পছন্দের মানুষকে দেওয়ার জন্য কিনছে তবে এই ফুলের তোড়া তার পছন্দ পুরুষটা দেবে অন্য এক রমণীকে যার নাম ইশরা। বেশ কয়েকটা তোড়া দেখার পর একটা তোড়া পছন্দ করলো সে। সাফাইত বিনা বাক্যে সেটাই নিয়ে নিল।

পাশাপাশি নীরবে হাঁটছে তোহা এবং সাফাইত৷ নীরবতা ভেঙে সাফাইত অস্থির কন্ঠে ফুলগুলোর দিকে তাকিয়ে বলল,

” ইশরা মানবে তো?”

তোহা নির্লিপ্ত কন্ঠে বলল, ” চেষ্টা করে দেখ।”

” আমি সত্যি বলছি ওকে আমি খেয়াল করিনি। না-বুঝে ওভাবে সরিয়ে দিয়েছিলাম।” অনুশোচনা করে বলল সে।

” মেয়েরা স্বভাবগত একটু কোমল হয়। তোর হঠাৎ আচরণে তার মন খারাপ হয়েছে তবে তা ক্ষণস্থায়ী। দেখবি তুই ওর সাথে একটু ভালোবেসে ব্যবহার করলে ও স্বাভাবিক হয়ে যাবে।”

কথা বলতে বলতে দু’জনে ক্যান্টিনে চলে এসেছে। কোণার একটা টেবিলে দেখল ইশরা একা বসে বই পড়ছে। ফুলের তোড়াটা তোহার কাছে রেখে সাফাইত ছুটে তার পেছনে এসে দাঁড়াল এবং হুট করে হাত দিয়ে চোখজোড়া চেপে ধরল। ঘাবড়ে গেল ইশরা। চোখ থেকে হাত সরানোর চেষ্টা করতে লাগল।

” কে এটা? চোখ ছাড়ো বলছি।” বিরক্তি নিয়ে বলল সে। সাফাইত খানিকটা কন্ঠস্বর পাল্টে বলল,

” বাবু তুমি আমাকে চিন্তা পারছ না? আমি আকাশ, তোমার আকাশ।” বলে মুখ টিপে হাসল সে।

” কে আকাশ? কোন আকাশ? ছাড়ুন আমার চোখ তারপর যা বলার বলুন। কি হলো ছাড়ুন।”

সাফাইত ঘাড় গুঁড়িয়ে কিছু দূরে থাকা তোহার দিকে তাকাল। সে ইশরায় বলল ছেড়ে দিতে। এরই মাঝে ইশরা ঝাড়া দিয়ে হাতটা সরিয়ে দিয়ে ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল, ” এই কে আপনি? হুট করে…..” সাফাইতকে দেখে কথা বন্ধ হয়ে গেল তার। রাগের পরবর্তীতে মুখশ্রীতে গম্ভীরতা ছেঁয়ে গেল। চুপচাপ চলে আসতে যাবে কিন্তু সাফাইত দিল না। জোর করে তাকে চেয়ারে বসিয়ে নিজেও পাশে বসল। যেন উঠতে না পারে তাই হাতজোড়া চেপে ধরল।

” ইশরা আমি সত্যিই দুঃখিত, অনুতপ্ত আমি। ছেলেটা তোহার সাথে বাজে ব্যবহার করেছে জেনে আমার মেজাজ ঠিক ছিল না তখন। তাই না বুঝতে তোমাকে আঘাত করে বসেছি। প্লিজ ইশরা এবারের মতো ক্ষমা করে দাও। তুমি এভাবে কথা না বলে থাকলে যে আমার ভালো লাগছেনা, দমবন্ধ লাগছে। প্লিজ ইশু এবারের মতো ভুলটা ক্ষমা করে দাও।”

কথার মাঝে তোহার কাছ থেকে ইশরার অগোচরে তোড়াটা নিয়ে নিলো সাফাইত। সেটা ইশরার দিকে বাড়িয়ে ছোট বাচ্চাদের মতো বলল,

” যদি তুমি এটা নাও তাহলে বুঝব আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছ।”

বেশ কিছুসময় পরেও যখন ইশরা তা নিল না তখন সাফাইতের মন ভেঙে গেল। মাথা নিচু করে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল, ” কি ব্যর্থ প্রেমিক আমি। প্রেমিকার রাগ ভাঙাতে পারছিনা। প্রেমিক নামে কঙ্কল আমি। প্রেমিক সমাজ থেকে না আমাকে বিতারিত করে দেয়।”

এই সিরিয়াস মোমেন্টে সাফাইতের এধরণের হেয়ালিপনা দেখে ইশরা ফিক করে হেসে ফেলল। যা দেখে সাফাইতের খুশিতে লাফিয়ে উঠল।

” এই তুমি হেসেছ তাই না? তার মানে তুমি আর রেগে নেয়।”

” কই হেসেছি? আমি তো হাসিছি।” হাসি আটকে রেখে বলল সে। সাফাইত বুঝল ইশরা তার মজা নিচ্ছে। তাই সেও মজা নিতে বলল,

” ও… তাহলে হয়তো আমিই ভুল দেখেছি। থাক আর কি করার। এই ফুলের তোড়া দেখি কাকে দেওয়া যায়৷ সাথে প্রেমিক সমিতি থেকে নামটা কেটে দিতে হবে।”

ইশরা তোড়াটা কেড়ে নিয়ে বলল, ” কাকে দেবে শুনি? আমার জন্য আনা জিনিস অন্যকাউকে দিলে খবর আছে।”

সাফাইত চোখ ছোট করে তার দিকে তাকালে ইশরা না হেসে পারলনা। তাদের এই মান অভিমানের পালা শেষ হয়েছে দেখে তোহা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিল। এতোসময় পর সাফাইতে প্রাণ খুলে হাসতে দেখে তারও মন ভালো হয়ে গেল। নীরবে সেখান থেকে সরে এলো সে।
.
.

ভাসির্টির সময় তখন প্রায় শেষ। সেসময় কোন পূর্বাভাস ছাড়াই ঝুম করে বৃষ্টি নামল। তোহার কাছে সবসময় ছাতা থাকে বিধায় তার কোনরূপ চিন্তা ছিল না। একহাতে ছাতা অপর হাতে পায়জামা খানিকটা উঁচু করে ধরে সাবধানে মাঠ পেরিয়ে গেটের কাছে যাচ্ছিল তোহা। সেরকম কোথা থেকে দু’জন ছুটে এসে তার ছাতায় ঢুকে তাকে দু’পাশ থেকে চেপে ধরল। আচমকা এধরণের ঘটনায় চমকে উঠল সে। তবে নিজের পাশে সাফাইত এবং ইশরা দেখে ভীতি দূর হলো তার।

” উফ… তোরা! আমি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। কে না কে ধরেছে ভেবে।”

” তোকে আসলেই তুলে নিয়ে যাওয়া দরকার। তুই একা ছাতা নিয়ে বাড়ি চলে যাচ্ছিস৷ এদিকে যে আমাদের কাছে ছাতা নেয়, তুই তো একবারো আমাদের খোঁজ নিলি না।”

তোহা খানিকটা বিরক্তি নিয়ে বলল, ” তোমাদের কাছে যে ছাতা নেয় তা আমি কি করে জানব? আমি কি অন্তর্যামী? তুমি আমাকে না বলেই কোথায় উধাও হয়ে গিয়েছ। নিজেও তো একবার ফোন করোনি।”

” আরে বাবা কুল কুল। এতো রেগে যাচ্ছিস কেন? এই বৃষ্টির দিনে ঠান্ডা ঠান্ডা আবহাওয়ায় মাথা গরম করা ঠিক না। তোর বেশি মাথা গরম হলে যা কিছুক্ষণ বৃষ্টিতে ভিজে আয়।”

তোহা রাগী চোখে তার দিকে তাকাল। ইশরা পাশ থেকে বলল,

” উফ… তুমিও না। সারাদিন আপুর পেছনে লেগে থাকো। আর বিরক্ত করো নাতো। আপু রেগে গেলে ঠেলে তোমাকে ছাতা থেকে বের করে দেবে। তখন ভিজে ভিজে যেতে হবে।”

” আমি ওকে ভয় পাই নাকি? আমাকে ছাতা থেকে বের করে দিলে ওকে আমি ছেড়ে দেবো?”

তার কথার মাঝে তোহা ছাতাটা সাফাইতের হাত ধরিয়ে দিয়ে ছুটে একটা রিকশায় উঠে গেল। তার দিকে একবারো ফিরে তাকালো না সে, রিকশাচালকে দ্রুত রিকশা টানতে বলল। ঘটনা এতো তাড়াতাড়ি ঘটে গিয়েছে যে সাফাইত এবং ইশরার বিষয়টা বুঝতে কিছুটা সময় লাগল।

” এটা কি হলো?” অবাক কন্ঠে বলল সাফাইত।

” আমিও তাই ভাবছি। আপু কোন কথা না বলে এভাবে চলে গেল কেন?”
.
.

রিকশা থেকে নেমে একছুটে বাড়ির ছাদে চলে গেল তোহা। ছাদের দরজা বন্ধ করে বৃষ্টির মাঝে দাঁড়িয়ে চোখের জল বির্সজন দিতে লাগল সে। প্রথমে নীরবে কান্না করলেও একসময় নিজের অনুভূতিকে আর ধরে রাখতে পারল না। ধপ করে মাটিতে বসে পড়ল সে। চিৎকার করে কান্না করতে লাগল। বৃষ্টির শব্দে আশেপাশের কেউ শুনতে পাবেনা বলে সে প্রাণ খুলে কান্না করতে লাগাল।

” কেন, আমার সাথেই কেন এরকমটা হলো? কি ক্ষতি করেছি আমি? কেন আমি নিজের অনুভূতিকে আটকে রাখতে পারিনি? কেন আমি সাফাইতকে দেখলে দুর্বল হয়ে পড়ি? কেন তাদের দু’জনকে একসাথে দেখলে আমার কষ্ট হয়? সাফাইত ইশরার মাঝে কি এমন পেয়েছে যা আমার মধ্যে ছিল না? কোন গুণের কারণে সাফাইত ইশরাকে বেছে নিয়েছে? এতোবছর ধরে সে আমাকে দেখছে একটুও কি বুঝলো না আমার অনুভূতি?”

পরক্ষনেই সে চোখ মুছে ফেলল।

” না না এসব আমি কি বলছি। সাফাইত কিভাবে বুঝবে? সে যেন না বুঝতে পারে সেই চেষ্টাই তো আমি করছি। নিজের অনুভূতিকে নিজের মধ্যে দাফন করে রাখেছি। এতে সাফাইতের তো কোন দোষ নেই৷ ইশরা যথেষ্ট ভালো মেয়ে। সাফাইত এরও তো নিজস্ব অনুভূতি আছে। আমি তাকে জানাতে পারিনি এটা আমার ব্যর্থ।না না, এখন তাদের সুখের নজর দেওয়া উচিত হবেনা।”

এসব বলে নিজেকে বোঝাল তোহা। তবে তখনো তার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। নিজের সিদ্ধান্ত নিয়ে সে এখন দোটানায় ভুগছে। প্রতিনিয়ত পছন্দের মানুষকে অন্যজনের পাশে দেখে একপাক্ষিক প্রণয়ের অনলে দগ্ধ হয়ে যাচ্ছে সে।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here