দূর_হতে_আমি_তারে_সাধিব #পর্ব_০৮ #অনন্যা_অসমি

0
537

#দূর_হতে_আমি_তারে_সাধিব
#পর্ব_০৮
#অনন্যা_অসমি

পড়ন্ত বিকেল, পার্কের বেঞ্চে বসে প্রহর গুণছে সাফাইত। এরমাঝে তার নজরে এলো হন্তদন্ত হয়ে ইশরা তার দিকেই আসছে। দ্রুত পায়ে এসে মেয়েটা ধপ কর তার পাশে বসে পড়ল।

” এতো তাড়াহুড়ো করে আসছ কেন? আর সাথে এতো ব্যাগপত্র কেন? কি আছে এতে?”

” খাবার আছে এতে। কতদিন তোমাকে কিছু রান্না করে খাওয়ানো হয়নি। নাও নাও দ্রুত খেয়ে বলো তো কেমন হয়েছে? ঠান্ডা হয়ে যাবে বলে একপ্রকার দৌড়ে এসেছি।” কথার মাঝে ছোট বেঞ্চে বেশ কয়েকটা বাটি সাজিয়ে ফেলেছে ইশরা। একটা বাটি থেকে একটুখানি খাবার খেলো সে। ইশরা উৎসুক নয়নে তার দিকে তাকিয়ে রইল। কিছুসময় পর সাফাইত চোখ-মুখ বিকৃত করে বলল,

” ইশ…কি বাজে খেতে হয়েছে। এতো লবণ যে মুখে দেওয়া যাচ্ছে না।”

চমকে উঠল ইশরা। আতংক ছেয়ে গেল তার মুখশ্রীতে। দ্রুত নিজেকেও একটু খেয়ে দেখল। কিন্তু না লবণ তো একদম পরিমাণ মতোই আছে। তাহলে? কিছুসময় সে সাফাইতের দিকে তাকিয়ে রইল। কয়েক সেকেন্ড পর অনুধাবন করতে পারল মূল বিষয়টা। সাফাইত মজা করছে বুঝতে পেরে তার হাতে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিল।

” বাঁদর একটা। আমি কি ভয়ই না পেয়েছিলাম। আমি মশলার পরিমাণ ঠিকঠাক দিয়েছিলাম তাও লবণ কম হয়েছে শুনে তো আমার ঘাম ছুটে গিয়েছিল।”

আরেকটু বাটি তুলে খেতে খেতে সাফাইত বলল,

” তোমার রিয়েকশন দেখতে চেয়েছিলাম।”

” চুপ। এই তুমি না বলেছ লবণ কম হয়েছে তাহলে আবার খাচ্ছো কেন? দাও এদিকে দাও।”

সাফাইত অন্যদিকে ঘুরে বলল, ” আমি তো ওই বাটির কথা বলেছি, এই বাটিতে কোন সমস্যা নেই।”

ইশরা নিজের কপাল চাপড়ে বলল,

” এই বাঁদর ছেলের সাথে কোনদিনও কথায় পেরে উঠা যায় না। সবসময় এটা ওটা বলে নিজের কথা প্রমাণ করে দেয়।”

” ইয়েস, কখনোই এই সাফাইতকে তোমরা যুক্তিতে হারাতে পারবে না।” গর্ব করে বলল সে।

হাসি ঠাট্টা করে বেশ কিছুটা সময় একসঙ্গে কাটল তারা। এবার যাওয়ার পালা৷ ফিরে আসার আগে ইশরা আরেকটা ব্যাগ সাফাইতের হাতে ধরিয়ে দিল।
সাফাইত জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে রইল।

” এটা তুমি খুলবে না, তোমার জন্য না এটা।”

” তো কার জন্য? এতে কি আছে?” বলে সে খুলতে নিলেও ইশরা আটকে দিল। ধমকে বলল,

” বলেছি না খুলবে না। এতে খাবার আছে কিছু, এটা তুমি এখন তোহা আপুকে দিয়ে আসবে। যদিও বা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে তবে গরম করে খেলে সাধ ঠিক থাকবে।”

সাফাইত অবাক কন্ঠে বলল, ” এটা তুমি তোহার জন্য এনেছ!”

” এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? আনতে পারিনা আমি?”

” না তা নয়, তবে হঠাৎ এতো কিছু করলে তাই আরকি।”

” সেদিন আপু তোমাকে নিজের রক্ত দিল, তোমার কাছে শুনলাম ওনি সে সময় অসুস্থ ছিল। দেখাও করে যায়নি একবার। তাই ইচ্ছে হলো নিজ হাতে কিছু রান্না করে খাওয়াব। এখন যাও, আপুর হাতে দেবে। তুমি নিজে আবার যেতে যেতে শেষ করে ফেলো না। আমি কিন্তু পরে হিসাব নেব।”

সাফাইত যেতে যেতে বলল,

” না যেতে যেতে খাবো না কারণ এগুলো ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে৷ তবে ওর বাসায় গিয়ে ওকে গরম করে দিতে বলব। তারপর আরাম করে খাবো।”

” পাজি ছেলে। নিজেদেরটা খেয়ে এখন অন্যেরটাতেও ভাগ বসানোর চিন্তা করছে।”

” কি করব বলো? তোমার রান্না কি আর প্রতিদিন খাওয়ার সৌভাগ্য হয়৷ তার উপর বেস্টফ্রেন্ড হচ্ছে নিজের মানুষ, তাদের সাথে সম্পর্ক হয় ইঁদুর বিড়ালের মতো। তেমনি তোহার জিনিসে ভাগ না বসালে শান্তি লাগেনা।”

ইশরা মজা করে চোখ মুখ বিকৃত করে বলল,

” ইশ… কি লোভী মানুষ। দূরে থাকো আমার থেকে। এমন লোভী মানুষ আমার পছন্দ না।”

তার কথা শুনে সাফাইত খপ করে তার হাত ধরে বলল, ” এই নাও দূরে গিয়েছি। আরো যাবো?”

ইশরা হাসিমুখে সাফাইতের হাত জোড়া আঁকড়ে ধরে বলল, ” আরো দূরে যাও, এতো দূরে যেন তুমি দৃষ্টির বাইরে চলে যাও।”
.
.

সাফাইতের সাথে নিজের স্কুলে পড়াকালীন ছবি দেখছিল তোহা৷ ফোনের শব্দ তা থেকে নজর সরিয়ে নিল৷ আননোন নম্বর দেখে দ্বিধায় পড়ে গেল রিসিভ করবে না। পরে জরুরি কোন ফোন হতে পারে ভেবে রিসিভ করল। সালাম দিয়ে জানতে চাইল কে।

অপর পাশ থেকে বলল, ” কেমন আছো আপু?”

” জ্বি আমি ভালো আছি। কিন্তু আপনি কে বলছেন? আমি ঠিক চিনতে পারছিনা।”

” আমি ইশরা বলছি।”

” ও ইশরা। দুঃখিত নম্বর সেভ না থাকার কারণে চিনতে পারিনি৷ কেমন আছেন তুমি? এই সময়ে ফোন করেছ যে?”

” ভালো আছি আপু৷ ফোন করে বিরক্ত করেছি কি?”

” আরে না, কি যে বলো। তুমি আমি দূরের মানুষ নাকি? তবে আগে কখনো ফোন করোনি তাই আগ্রহ হলো জানার।”

” বুঝেছি, স্বাভাবিক ব্যপার এটা। সে যাইহোক সাফাইত তোমাকে ব্যাগটা দিয়েছিল?”

” ও হ্যাঁ, ও বিকেলের দিকে এসেছিল। তুমি কেন শুধু শুধু এতো ঝামেলা করতে গেলে বলো তো? তুমি ছোট মানুষ, এতো কেন করলে?”

” আমি তো ঝামেলা মনে করিনি। আমার মন তোমাকে নিজের হাতে তৈরি কি খাওয়ার জন্য কেন জানি অস্থির হয়েছিল। তাই নিজের মনের অস্থিরতা কমাতেই এই সামান্য আয়োজন। কেমন লেগেছে তোমার?”

” বেশ ভালো হয়েছে প্রতিটা পদ। মা’ও বেশ প্রশংসা করেছে। সাফাইত তো আজ মায়ের কাছে তোমার প্রশংসার ফুলঝুরি খুলে বসেছিল।”

” তাই নাকি!”

” তা নয়তো কি? সে যে কারো ব্যপারে এতো প্রশংসা করতে পারে আজকে নিজের চোখে না দেখলে জানতাম না। মায়ের কাছে ছোট থেকে আমার ব্যপারে নালিশই দিয়ে এসেছে শুধু আর সেই সাফাইত তোমার ব্যপারে অনেক প্রশংসা করেছে।”

ইশরা মনে মনে খুশি হলো৷

” সাফাইত তোমার সব খাবার খেয়ে ফেলেছে নাকি?”

” তা আর বলতে। অর্ধেকেরও বেশি তো সেই খেয়েছি আর তোতাপাখির মতো তোমার গুণগান গেয়েছে।”

” ইশরে… এই ছেলেটাকে বলেছিলাম ভাগ না বসাতে কিন্তু সে ঠিকই তাই করল৷ সমস্যা নেই আমি আবারো তোমার আর আন্টির জন্য রান্না করব। তখন আমি নিজে গিয়ে তোমার হাতে দিয়ে আসব।”

” আচ্ছা। এসো একবার বাড়িতে, মায়ের ইচ্ছে হয়েছে তোমার সাথে দেখা করবে।”
.
.

মাঠের এককোণে ঘাসের উপর বসে বই পড়ছিল তোহা। সেসময় কেউ তার সামনে একটা ফুল বাড়িয়ে দিয়ে বলল,

” ওগো প্রিয়তমা, তোমার ওই গভীর চোখে ডুবে গিয়েছি আমি। তোমার ওই ঘন কালো কেশের সুগন্ধে বিমোহিত হয়ে পড়েছি আমি। আমি আমার ভালোবাসায় তোমাকে রাঙাতে চাই। দেবে কি আমাকে সেই সুযোগ প্রিয়তমা।”

কন্ঠে শুনে পিলে চমকে উঠল তোহা। বই থেকে চোখ সরিয়ে দেখলে সাফাইত তার দিকে পিটপিট করে তাকিয়ে আছে। সে পলকহীনভাবে তাকে পরখ করতে লাগল৷ কিছুসময় চুপ করে বলল,

” আপনার ড্রামা শেষ হয়েছে সাফাইত সাহেব? দয়া করে এবার ফুলটা সরান। না হলে আপনার আসল প্রিয়তমা দেখলে আপনার আর তাকে প্রেমের রঙে রাঙাতে হবে না। সে আপনাকে মারের রঙে রাঙাবে।”

সাফাইত হতাশ হয়ে তোহার পাশে বসে পড়ল।

” আরে ধুর, কই ভেবেছিলাম তুই চমকে যাবি। অবাক হয়ে বলবি ‘এসব কি সাফু! তোর না প্রেমিকা আছে? তুই ইশরাকে ছেড়ে আমাকে প্রপোজ করছিস!’ কিন্তু তুই কি করলি। একটু অভিনয় তো করতে পারতি।”

” হ্যাঁ তারপর তোমার প্রিয়তমা এসে আমাকে পিটুনি দেবে।”

” তাও ঠিক। অবশ্য তোমাকে সত্যিকারের প্রপোজ করলেও কোন লাভ হতোনা। তুমি যে রিজেক্ট করতে তা আমি জানি।” অন্যদিকে তাকিয়ে বলল সাফাইত। চমকে উঠল তোহা, ঠান্ডা একটা শ্রোত বয়ে গেল পিঠ দিয়ে৷

” মানে!”

সাফাইত গালে হাত দিয়ে তোহার দিকে পূর্ণদৃষ্টি দিয়ে ফট করে বলে বসল,

” তুই কাউকে পছন্দ করিস তাই না তোহা?”

কয়েকটা হৃদস্পন্দন মিস হয়ে গেল তোহা। হার্টবিট বেড়ে গেল। ভীতদৃষ্টিতে সাফাইতের দিকে তাকাল সে। ভাবল,

” এসব কি বলছে ও! তবে কি সাফাইত কোনভাবে…..!”

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here