#দূর_হতে_আমি_তারে_সাধিব
#পর্ব_০৯
#অনন্যা_অসমি
” তুই কাউকে পছন্দ করিস তাই না তোহা?”
কয়েকটা হৃদস্পন্দন মিস হয়ে গেল তোহার। হার্টবিট বেড়ে গেল। ভীতদৃষ্টিতে সাফাইতের দিকে তাকাল সে। আমতাআমতা করে বলল,
” কিসব বলছিস তুই? এরকম কিছুই নেই। তুই ভূল বুঝছিস।”
” ও তাই বুঝি। তাহলে হয়তো কেউ ঘুমের ঘোরে নিজের খাতার পেছনে কবির মতো ভালোবাসার কবিতা লিখেছে।”
কথা বন্ধ হয়ে গেল তোহার। সাফাইত ঠোঁটে দুষ্টু হাসি ঝুলিয়ে ভ্রু নাচিয়ে জানতে চাইল, ” কি তোহারাণী ধরা পড়ে গেলে তো। তাই তো বলি ইদানীং তোমার মন কোথায় থাকে। আমার সাথে আগে যে পরিমাণ কথা বলতে এখন তো তার একাংশও বলো না। এবার চটপট বলে ফেলো তো কে সেই পুরুষ। যাকে আমার বেস্টু নিজের দিল দিয়ে বসে আছে।”
তোহা বুঝতে পারেনি সাফাইতের কাছে এভাবে ধরা পড়ে যাবে। বেশ অস্বস্তি হচ্ছে তার, তা দেখে সাফাইত বলল, ” এতো আমতাআমতা করছিস কেন বলতো? কই স্কুল লাইফে কোন ছেলেই পছন্দ হলে ফট করে আমাকে বলে বসতি আর এখন লজ্জাবতীর মতো চুপসে আছিস কেন?”
” ওটা স্কুল লাইফ ছিল এখন আমরা আর স্কুলে নেয়। আর তোর এসব জানতে হবেনা, নিজের কাজে মনোযোগ দে।” কথা এড়ানোর জন্য মিথ্যা রাগ দেখিয়ে বলল সে। তবে সাফাইতও ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয়৷
” তোকে বলতেই হবে ছেলেটা কে। না বলা পর্যন্ত তোকে আমি ছাড়ছিনা। যদি না বলিস তাহলে আমি আন্টিকে গিয়ে বলে দেবে, ৪/৫ লাইন বাড়িয়ে বলব।”
তোহা বুঝল এখন তাকে কিছু বলে শান্ত না করলে ব্যপারটা আরো ঘোলা হয়ে যাবে। কিছুটা সময় নিয়ে মাথায় কথা সাজিয়ে নিল সে।
” ছেলেটা আমাদের সিনিয়র ছিল, আগের বছরই বেরিয়ে গিয়েছে। ভার্সিটির প্রথম থেকেই তাকে আমি পছন্দ করতাম। কিন্তু যখন সাহস করে মনের কথা বলতে যাবো তখন জানলাম তার প্রেমিকা আছে এবং তাদের পরিকল্পনা বিয়ে পর্যন্ত। আমার সাথেই কেন এরকম হয় সাফু? আমি যেটাই পছন্দ করি তাই কেন অন্যের ভাগ্যে থাকে? কাকে দোষ দেবো? নিজেকে নাকি ভাগ্য কে? তুই যেটা পড়েছিস ওটা অনেক পুরোনো লেখা।”
” নাম বল ছেলের। বাড়ি কোথায় জানিস? কোন ডিপার্টমেন্ট বা দেখতে কেমন বল। পুরো নাম বল ফেসবুক খুঁজে দেখি।”
” সাফু শান্ত হ। এতো অস্থির হচ্ছিস কেন? এখন বলেও লাভ নেই। তার অলরেডি প্রেমিকা আছে। তারা দু’জন খুশি আছে, তাদের যদি নিজের সুখের কথা চিন্তা করে আলাদা করি তাহলে আমি কখনোই সুখী হতে পারব না।”
” আরে অন্তত ওনাকে বলে দেখতি। হয়তো উনি বিষয়টা ভেবেও দেখত।”
” না সাফাইত এটা ঠিক হবে না। ওনাকে এই মূহুর্তে নিজের অনুভূতির কথা বললে উনার মন, মস্তিষ্কে এই ব্যপারটা নিয়েই ঘুরপাক খাবে। তখন ওনাদের সম্পর্কে ফাটল সৃষ্টি হবে। উনি আমার প্রস্তাব মেনে নিলেও অন্যকারো দীর্ঘশ্বাস পড়বে তাতে। তাই জেনে বুঝতে কোন সুন্দর সম্পর্ক নষ্ট হোক আমি চাইনা। আমার অনুভূতি একান্ত আমার, কেন তার জন্য দু’টো মানুষকে আলাদা করব? সবারই নিজের পছন্দ আছে। আমি যেমন উনাকে পছন্দ করি তেমনি উনারও অধিকার আছে কাউকে ভালোবাসার। বাদে দে এসব, এখন আর কিছু পরিবর্তন হওয়ার নয়।”
” কিন্তু তুই যে কষ্ট পাচ্ছিস। আমার ভালো লাগছেনা। আমি কি ইশরাকে বলব মেয়েটার সাথে একবার কথা বলার জন্য? কিংবা আমি সেই ছেলের সাথে কথা বলব।”
” ভূলেও এসব কিছু করবি না সাফু। এই জন্যই আমি এতোদিন তোকে কিছু বলিনি। বলেছি এসব নিয়ে আর জল ঘোলা করিস না। ক্রাশ কত আসবে যাবে, এতো নিয়ে চিন্তা করার সময় আছে নাকি?”
” তাও ঠিক। তোর তো আবার ক্রাশ লিস্ট অনেক লম্বা।”
তোহা আজ প্রতিউত্তরে তেমন কিছু বলল না। কারণ এই মূহুর্তে বেশি কথা বললে সমস্যা। সে মনে মনে বলল, ” আমাকে ক্ষমা করে দিস সাফু। তোকে মিথ্যা কথা না বললে যে তুই একসময় খুঁটিয়ে বের করে ফেলতি। তখন আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্কেও ফাটল ধরে যেত। জীবনসঙ্গী হিসেবে তোকে না পাই কিন্তু প্রিয়বন্ধু হিসেবে তোকে আমি সারাজীবন চাই। তুই ইশরাকে যে কতটা ভালোবাসিস আমি জানি। ভালো থাক তোরা, আমার অনুভূতি একান্তই আমার কখনোই তোর সামনে প্রকাশ করবো না। নিজের অনুভূতি সারাজীবন নিজের মধ্যে গোপন করে রাখব।”
ইশরার কন্ঠে ভাবনার ইতি টানলো তোহা। সে তোহার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বলল,
” তোমাকে আমি সেই কখন থেকে খুঁজে চলেছি আর তুমি এখানে বসে আছো। আমার এই ক্লাসটা হবেনা, তুমি কি যাবে আমার সাথে? নাকি আমি বন্ধুদের সাথে যাবো?”
সাফাইত চটজলদি উঠে দাঁড়াল।
” আরে আগে বলবে না। চলো চলো, এই সুযোগ বারবার আসবে না।”
” তোমার ক্লাস নেই?”
” আরে এখন ক্লাসে গেলেও আমার মন বসবে না৷ ওই পরীক্ষার আগেই ম্যাডাম তোহারাণীর কাছে আমার যেতে হবে। তার থেকে বরং এখন একটু প্রেম করে আসি। তোহা ম্যাডাম একটু কষ্ট করে সব তুলে রাখবেন কারণ পরবর্তীতে আমাকে বোঝাতে হবে।”
তোহা মিথ্যা রাগ দেখিয়ে বলল,
” পারব না। নিজেরটা নিজে করে নাও। আমি কেন তোমার জন্য এতোসময় ধরে ক্লাস করব? বিনিময়ে আমাকে সেই একই বার্গার ছাড়া তো আর কিছু অফার করবে না।”
” তো এই কথা। বললেই তো হতো তুই আমার পকেট ফাঁকা করতে চাস। আচ্ছা ঠিক আছে তোকে আমি রেস্টুরেন্টে নিয়ে যাবো, তুই নিজের পছন্দ মতো নিস। এবার আমি আসি, বাই বাই।”
সাফাইতকে টেনে নিয়ে গেল ইশরা। তবে কিছুদূর গিয়ে সাফাইত দৌড়ে ফিরে এলো। একটা খাতা তোহার ব্যাগের উপর রেখে ভাব দেখিয়ে বলল,
” এতোদিন আসেননি যে তার নোট’স। দেখুন সব ঠিকঠাক লিখেছি। আমি আপনাকে এই কয়েকদিনের নোট’স দিয়েছি তার বিনিময়ে আপনি আমাকে আজকের নোট’স দিবেন। নোট’স নোট’স কাটা কাটি। মানে নো ট্রিট, বাই বাই।”
তোহা চোখ মুখ বিকৃত করে বলল,
” আমি জানতাম তুই একটা কিপ্টা। ইশরা আমাকে তো এই কিপ্টে জিনিসে ভালো কিছু দেয়নি দেখো তুমি পারো কিনা এর পকেট খালি করতে। স্কুল লাইফ থেকেই ওর পকেট থেকে টাকা বের করতে আমার ঘাম ছুটে গিয়েছে প্রতিবার।”
ইশরা এগিয়ে এসে হালকা হেসে বলল,
” এটাতো ভালো স্বভাব। এমনিতেও অঝোতা টাকা খরচ করা মোটেও উচিত হয়। হিসাব না করে টাকা খরচ করলে দেখা যাবে একদিন আমাদের অর্থভান্ডার শূণ্য হয়ে গিয়েছে। তখন আফসোস করা ছাড়া কোন পথ থাকবেনা।”
হাসি মিলিয়ে গেল তোহার মুখশ্রী হতে। সে সম্পূর্ণ মজা করেই কথাটা বলেছি, বিপরীতে এই শান্ত উওর সে আশা করেনি। ইশরা হেসে পুনরায় বলল,
” তবে হ্যাঁ এতোটাও হিসাবি হওয়া ঠিক হয় যাতে আপন মানুষরা কষ্ট পাই। লাখ টাকা হতে শখানেক টাকা নিজের কাছের মানুষদের জন্য খরচ করাই যাই। তুমি চিন্তা করো না, এর কিপ্টামি স্বভাব আমি লাইনে নিয়ে আসব। এখন আসি আপু।”
সাফাইতকে টেনে নিয়ে গেল ইশরা। তোহা পুনরায় পড়ায় মনোযোগ দিল। সাফাইতের রেখে যাওয়া খাতাটা উল্টেপাল্টে দেখল সে ভালোই নোট’স করেছে। যেটা অনেকাংশে তার নিজের থেকেও বেশি ভালো হয়েছে। তোহা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
” না জানি এই ছেলে কবে সিরিয়াস হবে। পড়াশোনায় এতো ভালো তাও সারাবছর পড়বে না, চিল করবে। পরীক্ষার দু’দিন আগে একটানা পড়ে খুশি মনে পরীক্ষা দিতে যাবে। আর এদিকে আমি, সারাবছর গাধার মতো খাটুনি করেও পরীক্ষায় দ্বিধায় থাকি উওর কোনটা হবে। হায়রে আমার ভাগ্য!”
চলবে…..