#দ্বিতীয়_সূচনা
#পর্ব_১৫
লেখা – আফরোজা আক্তার
(কোনোক্রমেই কপি করা যাবে না)
টাওয়ালে চুলের পানি নিতে নিতে ফোনে হাত রাখে অয়নন্দিতা। ফোন হাতে নিয়েই বেশ ভালো ধাক্কা খায় সে। ২৫ টা মিসডকল। তাও আবার ফারহানের ফোন থেকে। একবার ফোন ব্যাক করা উচিত কি না তাই ভাবছে অয়নন্দিতা। রীতিমতো ভয় পাচ্ছে তার। কারণ, এতবার ফোন করার পরেও সে রিসিভ করতে পারেনি। তবে এতে অয়নন্দিতারও দোষ নেই। সে শাওয়ার নিচ্ছিল। ফারহান তাকে ফোন করেছে প্রায় আধা ঘন্টা হয়ে গেছে। এখন ফোন দিলে যদি রাগ করে। অন্যদিকে তাকে একটু বেরও হতে হবে। শাম্মির সঙ্গে একবার দেখা করতে হবে। সকালে অবশ্য শাশুড়িকে বলেছিল। শাশুড়ি মা অনায়াসেই রাজি হয়েছে। ফারহানের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়াটাই বাকি ছিল। শাওয়ার নিয়ে ফোন করে জানাবে ভেবেছিল। কিন্তু এখন দেখছে সব উল্টো হয়ে গেল।
অয়নন্দিতা ভয়ে ভয়েই ফোন ব্যাক করে। দুইবাত রিং বেজে যেতেই ফোন রিসিভ হয়।
‘হ্যালো।’
ফারহানের হ্যালো শব্দটা বেশ স্পষ্ট ভাবেই কানে লাগে অয়নন্দিতার। ফোনে ফারহানের কন্ঠস্বর বেশ সুন্দর শোনায়। অয়নন্দিতার এমনিতেও ভারী কন্ঠের পুরুষ ভালো লাগত। তার বাবারও ভারী কন্ঠ ছিল৷ আল্লাহ পাক তাকে তার বাবার মতোই একজন মিলিয়ে দিয়েছিল।
অয়নন্দিতা হ্যালোর জবাবে সালাম দিলে ফারহান সেই সালামের জবাব নেয়। অয়নন্দিতা সাফাই দিতে যেতেই ফারহান বলে ওঠে,
‘তুমি ওয়াশরুমে ছিলে। তাই রিসিভ করতে পারোনি।’
অয়নন্দিতা একটু অবাকই হয়েছে। প্রশ্ন করে,
‘আপনি কী করে জানলেন?’
‘ফোন রিসিভ করছিলে না। তাই সাজিকে পাঠিয়েছিলাম ঘরে। ও-ই বলল তুমি ওয়াসরুমে। শাওয়ার নিচ্ছিলে।’
‘ওহ। আচ্ছা বলুন। জরুরী কিছু বলবেন?’
‘কেন, জরুরী না হলে কি ফোন দেয়া যায় না?’
‘নাহ। তা কেন হবে। এমনিই জিজ্ঞেস করলাম আর কি।’
‘পরশু শুক্রবার। আমরা রাঙামাটি যাচ্ছি। কেমন?’
‘আমি গেলে কোনো অসুবিধা হবে না তো?’
‘নাহ। তেমন কোনো অসুবিধা হবে না। তবে তোমার সমস্যা হতে পারে।’
‘যেমন?’
‘একাকী সময় পার করতে হবে।’
অয়নন্দিতাও হেসে সহমত পোষণ করে। ফারহান অয়নন্দিতার হাসির বিপরীতে বলে,
‘কী আর করা, হাসবেন্ড যদি বিজনেসম্যান হয় তাহলে এইটুকুন সেক্রিফাইজ করতেই হয়।’
‘সেক্রিফাইজে আমি ভয় পাই না।’
‘দেখা যাক তবে।’
‘একটা কথা বলার ছিল আমার।’
‘বলো।’
‘আমি একটু বাইরে যাব। এক ঘন্টার জন্য। শাম্মির সঙ্গে দেখা করব।’
‘শাম্মি, শাম্মি। ওহ হ্যাঁ, মনে পড়েছে তোনার বেস্ট ফ্রেন্ড।’
‘হ্যাঁ।’
‘আচ্ছা যাও। দেখা করে এসো। সাবধানে যেও। ড্রাইভারকে বলবে সাবধাবে ড্রাইভ করতে।’
‘আমি রিক্সা করে যেতে পারব। গাড়ি লাগবে না।’
‘নিচে গাড়ি রাখা আছে। গাড়িতেই যাও। কেমন?’
অয়নন্দিতা কথা বাড়াতে চায়নি তাই ফারহানের কথা মেনে নিয়েই কথোপকথনে ইতি টেনে দেয়।
রেস্টুরেন্টে মুখোমুখি অয়নন্দিতা আর শাম্মি। শাম্মি ভীষণ খুশি অয়নন্দিতাকে দেখে। শাম্মির বরাবরই এই বান্ধবীকে নিয়ে চিন্তা হতো। বাবা-মা ছাড়া এতিম মেয়েটা কোনোদিন যেন অবহেলায় না থাকে। অয়নন্দিতা তার মামা-মামীর সংসারে ভালো থাকলেও মনে যে তার অনেক কষ্ট ছিল তা বুঝত শাম্মি। তাই মনে প্রাণে চাইত সে ভালো থাকুক। আজ অয়নন্দিতাকে দেখে শাম্মিও বুঝতে পেরেছে সে ভালো আছে। বেশ ভালো আছে। সুখে আছে।
‘অয়নি, তোকে দেখতে মাশা-আল্লাহ খুব সুন্দর লাগছে।’
হালকা হেসে শাম্মির দিকে তাকায়। শাম্মি প্রশ্ন করে,
‘ভাইয়া কেমন রে অয়নি?’
‘হ্যাঁ ভালো।’
‘কেমন ভালো?’
‘কেমন ভালো মানে? মানুষ হিসেবে ভালো, স্বামী হিসেবে ভালো। সব দিক দিয়েই ভালো।’
‘যাক ভালো হলেই ভালো।’
অয়নন্দিতা ঘড়িতে নজর দিয়ে সময় দেখে নেয়। অনেকক্ষণ হয়ে গেছে সে বাইরে এসেছে। এবার চলে যাওয়া উচিত।
‘শাম্মি, চল বের হই। বাসায় বলে এসেছি অল্প কিছুক্ষণ থাকব৷ অনেকটা সময় পার হয়ে গেছে।’
‘এত তাড়া?’
‘ফারহান বাসায় এসে যদি না দেখে, মনে কষ্ট পাবে।’
‘বকাঝকা করবে নাকি?’
‘ধুর। নাহ। বকাঝকা করার মানুষ তিনি নন।’
‘ওকে। চল তবে।’
ওয়েটারকে ডেকে বিল মিটিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হওয়ার জন্য পা বাড়ায়। এমন সময়-ই কেউ একজন পেছন থেকে ডেকে ওঠে,
‘মিসেস শেখ।’
ডাকটা শুনে অয়নন্দিতা পেছনে তাকায়। অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে তার বিপরীতে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটার দিকে। মনে মনে বলে, ফারহান! এখানে?
চলবে…………………………
[বিঃদ্রঃ আজকে ছোটো করেই দিলাম। শরীর ভালো না। পরের পর্ব চেষ্টা করব বড়ো করে দেওয়ার জন্য]