দ্বিতীয়_সূচনা পর্ব-১৬

0
2010

#দ্বিতীয়_সূচনা
#পর্ব_১৬
লেখা – আফরোজা আক্তার
(কোনোক্রমেই কপি করা যাবে না)

সংসদ ভবনের উল্টো পথে হাঁটছে ফারহান আর অয়নন্দিতা। পড়ন্ত বিকেলে এদিকটায় হাঁটতে বেশ ভালো লাগে। একরকম স্বস্তি অনুভব করা যায়। ফারহান তার গাড়িটা এক পাশে পার্ক করে অয়নন্দিতাকে বের হয়।
এমন নির্বাক চলচিত্র হয়ে হাঁটতে ভালো লাগছে না অয়নন্দিতার। এর থেকে তো ভালো ছিল সে বাসায় চলে যেত। কিন্তু রেস্টুরেন্টে ফারহান তাকে দেখে ফেলায় সেখান থেকে তাকে নিয়ে এসেছে এখানে।
চারপাশে বাতাস বইছে। সেই বাতাস এসে অয়নন্দিতার শরীর স্পর্শ করছে। বাতাসের খানিকটা ফারহানকেও ছুঁয়ে যাচ্ছে।
ফারহানের কিছু স্মৃতি মনে পড়ে যায়। এই রাস্তা ধরেই সে আর বন্দনা হেঁটেছিল একাধিক বার। কখনও পা ব্যথা হলে একটু বসে জিরিয়ে নিয়েছে। হাজারো স্মৃতি মিশে আছে এই জায়গায়। অনেকদিন পর ফারহান সংসদ ভবনের এই পাশে আসে সাথে অয়নন্দিতা। জায়গাটা সেই আগের মতোই আছে। চারপাশে থাকা গাছগুলোও আগের মতো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ঘড়ির সময় দেখে একটু ভড়কে যায় ফারহান। বন্দনার সঙ্গে প্রথম দেখা তার এখানেই হয়েছিল এবং একই সময় হয়েছিল। সবই আগের মতো শুধু আশে থাকা মানুষটা বদলেছে। এইটুকুই তো। এর বেশি তো কিছুই না। তবে ক্ষতিটা সব থেকে বেশি ফারহানেরই হলো।
অয়নন্দিতা ভাবছে তার কিছু বলা উচিত। যেই ভাবা সেই কাজ। অয়নন্দিতা প্রশ্ন করে,
‘শুক্রবার কখন যাচ্ছি আমরা?’
কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর ফারহান জবাব দেয়,
‘ভোরের দিকে।’
‘ওহ।’
এরপর আবারও নীরবতা। তবে অয়নন্দিতা এইবার নিশ্চিত যে, ফারহানের কিছু তো হয়েছে। কিন্তু কী হয়েছে জিজ্ঞেস করার সাহস পাচ্ছে না। তার আবার একটা অভ্যাস আছে, সে সহজেই কাউকে প্রশ্ন করতে পারে না। ফারহান অয়নন্দিতার দিকে একবার তাকায়। এরপর চোখ সরি নিয়ে বলা শুরু করে,
‘এই রাস্তায় অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে অয়নন্দিতা। অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। বহুদিন পর এই রাস্তায় পা পড়েছে আমার। আশ্চর্যজনক হলেও একটা দারুণ মিল আছে। সেদিনও সাথে এক নারী ছিল। আজও সাথে এক নারী আছে। তবে তাদের মুখশ্রীটা আলাদা।’
অয়নন্দিতা এবার বলে,
‘দু’জন নারী তাদের মুখশ্রী এবং পারিপার্শ্বিক দিক থেকে আলাদা।’
ফারহান অজান্তেই মুচকি হাসি দেয়।
‘তা ঠিক। দু’জন নারী সম্পূর্ণ আলাদা। কিন্তু এখানে ভালোবাসা কাজ করে একজনের জন্য। আই লাভ হার। ইয়েস অয়নন্দিতা। আই লাভ হার। এন্ড অ্যাট দ্যাট মোমেন্ট আই মিস হার।’
অয়নন্দিতার ভীষণ ভালো লাগছে। নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করায় ফারহানের প্রতি তার ভালো লাগা আরও বেশি কাজ করছে। বন্দনা ভীষণ লাকি ছিল যাকে এত ভালোবাসার মতো একজন মানুষ ছিল। সাধারণত অয়নন্দিতার জায়গায় অন্য কেউ হলে হয়তো হিংসা করত। কিন্তু অয়নন্দিতার ভালো লাগছে। নারীকে সত্যিকার অর্থে ভালোবাসতে পারে এমন পুরুষ কয়জন আছে এই দুনিয়ায়।
অয়নন্দিতার মুখে হাসি ফুটিয়ে জবাব দেয়,
‘সেও আপনাকে মিস করে। ভীষণ মিস করে।’
অয়নন্দিতার কথাটা শুনে তাচ্ছিল্যের হাসি দেয় ফারহান। এগিয়ে যায় সামনের দিকে।
‘অয়নন্দিতা, বসবে এখানে?’
‘আপনি বসতে চান?’
‘এই সময়ে এই জায়গাটায় বসলে এমনিতেও মন ভালো হয়ে যায়।’
‘তাহলে চলুন, বসি।’
‘এসো।’
সামনে সংসদ ভবন। আশেপাশে অনেককেই দেখা যাচ্ছে। সবাই ঘুরতে এসেছে। কেউ বা এসেছে ডেট করতে। ফারহান পাশে তাকাতেই এক মহিলাকে দেখতে পায়। মহিলা চুড়ি নিয়ে বসে আছে। একটা দীর্ঘশ্বাস এবং চাপা আর্তনাদ বের হয়ে আসে তার অন্তর থেকে। জরিনা নামে একজন বয়স্ক মহিলাও এখানে চুড়ি নিয়ে বসত। ফারহান তাকে খালা বলে সম্বোধন করত। কতবার যে বন্দনাকে সেই খালার কাছ চুড়ি কিনে দিয়েছিল। খালার সামনে গিয়ে দাঁড়ালেই খালা বলত, কিগো বাপজান, আইজকা চুড়ি কিনবা না? উত্তরে এক গাল হেসে তার পাশে বসে পড়ত বন্দনা। পছন্দ অনুযায়ী চুড়িগুলো নিয়ে সেখানেই পরে ফেলত৷ অতীতের স্মৃতিগুলো আজও জ্বল-জ্বল করে চোখের সামনে।
অয়নন্দিতার কাঁচের চুড়ির প্রতি দুর্বলতা সেই ছোটোবেলা থেকে। পুরোপুরি বুঝ হবার পর মায়ের কাছ থেকে শুনেছিল সে যদি বায়না কর‍ত তবে এই চুড়ির জন্যই বায়না করত। অন্যকিছু তার কাছে নাকি ভালো লাগে না। চুড়িগুলোর দিকে অয়নন্দিতাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ফারহান বলে,
‘চুড়ি পছন্দ তোমার?’
প্রশ্নের উত্তরে অয়নন্দিতাও বলে,
‘হ্যাঁ। ভীষণ লাগার একটা জিনিস হচ্ছে এই চুড়ি। আমার খুব পছন্দের।’
‘এসো। পছন্দ করো।’
কিছু কিছু মেয়ে মানুষ চুড়ির লোভ ছাড়তে পারে না। অয়নন্দিতা সেই মেয়ে মানুষের মধ্যে একজন। মহিলার সামনে হাটু গেড়ে বসে অয়নন্দিতা আর ফারহান।
অয়নন্দিতার পছন্দ আর সাথে নিজে পছন্দ করে ১০ ডজন চুড়ি কেনে ফারহান। অয়নন্দিতা কখনও এক সঙ্গে ২ ডজনের বেশি চুড়ি কিনেনি। এই প্রথম কেউ তাকে ১০ ডজন চুড়ি কিনে দিয়েছে।
এই ছোটো ছোটো খুশিগুলোই বা কয়জন পায়। অয়নন্দিতা পাচ্ছে। তবে খুশিগুলো ভাগাভাগি করে নিতে হচ্ছে তাকে। কারণ অয়নন্দিতা প্রথম রাতেই বুঝে নিয়েছে যে, সে ফারহানকে কখনও নিজের করে পাবে না। তাকে ভাগাভাগি করে নিতে হবে। কারণ বন্দনা না থেকেও তার প্রতিটি স্মৃতির মাধ্যমে এখনও রয়ে গেছে ফারহানের কল্পনায়। ফারহানের মনে তার বিচরণ সর্বক্ষণ। এতে অয়নন্দিতার কোনো কষ্ট নেই। তার সংবিধানে সে নিজেই একটা ধারা জারি করেছে। সেই জারি হলো, ভালোবাসার মানুষ যত দূরেই থাকুক না কেন মন থেকে কখনও সেই ভালোবাসার স্মৃতি দূরে যায় না। তবে ভালোবাসা সত্যিকারের হতে হয়।

চলবে………………………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here