#দ্বিতীয়_সূচনা
#পর্ব_১৭
লেখা – আফরোজা আক্তার
(কোনোক্রমেই কপি করা যাবে না)
রিসোর্টে পৌঁছে গেছে অয়নন্দিতা। ড্রাইভার দিয়ে অয়নন্দিতাকে রিসোর্টে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। আপাতত রুমে অয়নন্দিতা একা। একা থাকায় আফসোস হচ্ছে না। আপত্তিও করছে না সে। কারণ সে বোঝে তার বর কাজপ্রিয় মানুষ। আর বিশেষ করে সে এখানে কাজেই এসেছে। শ্বশুর মশাই জোর করে তাকে পাঠিয়েছে তার বরের সঙ্গে।
জানালা দিয়ে বাইরের ভিউটা বেশ সুন্দর লাগছে অয়নন্দিতার কাছে। রাঙামাটি শহরটা যে এত সুন্দর জানা ছিল না অয়নন্দিতার। লোকমুখেই কেবল শুনেছে যে, শহরটা ভীষণ সুন্দর। কিন্তু চোখে কখনও দেখার সুযোগ হয়নি। হয়তো সুযোগ কোনোদিন হতো যদি তার বাবা-মা বেঁচে থাকত তো। তবে সুযোগ এখনও হয়েছে। স্বামী দ্বারা।
শাওয়ার নিয়ে বের হতেই ফারহানেট ফোন পায় অয়নন্দিতা।
‘হ্যালো।’
‘হ্যাঁ, ঠিকঠাক আছো তো?’
‘হু।’
‘খেয়ে নিও। অপেক্ষা কোরো না। আমার ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হতে পারে।’
‘আচ্ছা।’
অয়নন্দিতার মুখ থেকে আচ্ছা শব্দটা শুনতে পেয়ে ফারহান কয়েক সেকেন্ড চুপ থাকে। কী ভাবছিল কে জানে। পরবর্তী প্রশ্ন করে,
‘একা থাকতে পারবে তো?’
অয়নন্দিতা হেসে জবাব দেয়,
‘পারব।’
‘আই এম সরি। ওকে?’
‘সরি কেন বলছেন?’
‘এইযে আমার সঙ্গে এসেও একা থাকতে হচ্ছে।’
‘প্রথমত, আপনি এখানে কাজেই এসেছেন। আমিই বাড়তি হয়ে এসেছি। আমার আসার ইচ্ছা ছিল না। আপনি না আনলেও সমস্যা ছিল না। বাবা বলায় আমি আর সেখানে দ্বিতীয় কোনো কথা বলিনি৷ এখন মনে হচ্ছে, আমার জন্য আপনার কাজে ক্ষতি হচ্ছে।’
‘এমন মনে করার কারণ?’
‘এইযে টেনশন নিচ্ছেন।’
এই মুহুর্তে কথা বলতে আর ইচ্ছা করছে না ফারহানের। বিশেষ কিছু না বলে ফোন রেখে দেয় ফারহান। অয়নন্দিতাও আর ফোন ব্যাক করেনি। সে এখন বের হবে। রিসোর্টে প্রবেশ করার সময় দেখেছে চারপাশের জায়গাটা। ভীষণ সুন্দর ছিল চারপাশের পরিবেশটা। অয়নন্দিতা এখন সেই পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে মেশাতে চাইছে এবং সে এটাই করবে।
কাজের ফাঁকে অয়নন্দিতার কথা মনে পড়ছে ফারহানের। এমনই একটা সময়ে বন্দনাকে নিয়ে সিলেট গিয়েছিল সে। মূলত সেখানে কাজের জন্যই যাওয়া হয়েছিল। আনফরচুনেটলি সেদিন তার কাজের প্রচুর চাপ ছিল। আর সে সময় মতো হোটেলে পৌঁছাতে সক্ষম হয়নি। বন্দনা সেদিন খুব রেগে গিয়েছিল। ফারহানকে প্রচুর হ্যাপা পোহাতে হয়েছিল বন্দনার রাগ ভাঙানোর জন্য।
ফারহান চুপচাপ বসে আছে। ভাবছে তার ব্যস্ততা নিয়ে অয়নন্দিতা কিছু মনে করবে না তো? সে রাগ করবে না তো? পরমুহূর্তেই ফোনে বলা অয়নন্দিতার কথাগুলো মনে পড়ে যায় তার। খুব পজিটিভ ওয়েতে অয়নন্দিতা কথাগুলো বলেছে তাকে।
মিজান নামের একজন এসে দরজায় নক করে। ফারহান মুখ তুলে তাকায় তার দিকে।
‘ইয়েস।’
‘স্যার, ওনারা চলে এসেছে।’
‘ওকে। আমি আসছি। যাস্ট টু মিনিট।’
পিওন চলে গেলে ফারহান টেবিলে থাকা গ্লাসটা হাতে তুলে নেয়। থেমে থেমে গ্লাসের পুরো পানি শেষ করে। দীর্ঘশ্বাস যেন আপনা-আপনিই বের হয়ে আসছে ভেতর থেকে। নিজেকে শান্ত রেখে মিটিং রুমে পা বাড়ায় ফারহান।
দুপুরের পর যখন বেলা পড়ে যায়। তখন প্রকৃতি অন্য রুপ ধারণ করে। পড়ন্ত বিকেলে একলা একা আপন মনে হাঁটার মজাই আলাদা। অয়নন্দিতা এই মজাটা নষ্ট করতে চায় না। তাই এই পড়ন্ত বিকেলেই বের হয়ে পড়ে রিসোর্ট থেকে। বের হওয়ার সময় রিসোর্ট ম্যানেজার বার বার করে তাকে বলে দিয়েছে, ম্যাডাম, বেশি দূরে যাবেন না প্লিজ। স্যারের নিষেধ আছে। অয়নন্দিতা মাথা নাড়িয়ে সায় দিয়ে গেছে। কারণ তখন মাথা নাড়ানো ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না।
আপন মনে হাঁটছে অয়নন্দিতা। মুক্ত বাতাস শরীর স্পর্শ করছে তার। এই মুহুর্তে তার পাশে ফারহানের অস্তিত্ব না থাকায় সে আহত। দুপাশে গাছের ছায়া। মাঝামাঝি পথ ধরে এগিয়ে যাচ্ছে অয়নন্দিতা।
কিছুদূর যেতেই হঠাৎ সে টের পায় কেউ তাকে ডাকছে। অয়নন্দিতা পেছনে তাকায়। কেউ একজন দ্রুত পায়ে হেঁটে তার দিকে এগিয়ে আসছে। স্পষ্টস্বরে বলছে,
এক্সকিউজ মি। এইযে শুনছেন। একটু দাঁড়িয়ে যান প্লিজ। অয়নন্দিতা দাঁড়িয়ে যায়। একজন নারী হাঁপাতে হাঁপাতে তার সামনে এসে দাঁড়ায়। অয়নন্দিতা তাকে চেনে না। কখনও দেখেওনি। কৌতূহলী চাহনি নিয়ে তাকিয়ে আছে নারীর দিকে। প্রশ্ন করে,
‘আপনি কি আমায় চেনেন?’
নারী মিষ্টি হেসে জবাব দেয়,
‘জি না। চিনি না৷ আপনিও আমায় চেনেন না। তবে আপনি যেই রিসোর্টে উঠেছেন আমিও সেই রিসোর্টে উঠেছি। অবশ্য আমি আর আমার হাসবেন্ড উঠেছি। আজ দু’দিন হলো আমরা এখানে। জানালা দিয়ে দেখলাম আপনি বের হয়েছেন। আসলে আমিও বোর হচ্ছিলাম একা একা রুমে। তাই আপনাকে দেখে আমিও বের হয়ে গেলাম। ভাবলাম একসাথে কিছুটা সময় কাটানো যাবে।’
অয়নন্দিতা তার কথায় বেশ খুশী হয়। ভাবছে, যাক তার একজন সঙ্গী হলো। পরিচয় পর্বটা সেড়ে নিলে মন্দ হয় না। অয়নন্দিতা হাসি মুখে নিজের পরিচয় দেয়।
‘আমি অয়নন্দিতা। ঢাকা থেকে এসেছি।’
‘আমি ইয়াসমিন। আমরা এসেছি খুলনা থেকে। বাই দ্যা ওয়ে, আপনি একা এসেছেন?’
‘জি না। আমার হাসবেন্ড আছে সাথে।’
‘কোথায়? দেখতে পাচ্ছি না যে।’
‘তিনি মিটিংয়ে।’
‘ওহ আচ্ছা।’
‘চলুন, সামনে যাওয়া যাক।’
‘হ্যাঁ চলুন। যাওয়া যাক।’
চলবে……………………….