#দ্বিতীয়_সূচনা
#পর্ব_৫৯
লেখা আফরোজা আক্তার
(কোনোক্রমেই কপি করা যাবে না)
সাজি ঘরে এসে ফোন করে হাসানকে। হাসান অপেক্ষাতেই ছিল। তাই ফোন রিসিভ করতে বেশি সময় লাগেনি তার। হাসানের হ্যালো বলার ঢংটা সাজির ভীষণ প্রিয়। অবশ্য হাসানের সব কিছুই তার ভালো লাগে। বলতে গেলে হাসান নামক গোটা মানুষটাকেই তার ভালো লাগে। সাজি কিছু বলবে তার আগেই হাসান বলে,
‘মেহেদী দেওয়া শেষ হয়েছে?’
‘হ্যাঁ। তোমার কন্ঠস্বরটা এমন লাগছে কেন? তুমি কি কিছু ভাবছিলে নাকি?’
হাসান যতই সাজিকে দেখে, জানে ততই অবাক হয়। ইদানীং তার ধারণা হয়েছে সাজির মাঝে অদৃশ্য কোনো শক্তি কাজ করে যার দ্বারা সে সব কিছু জানতে পারে। হাসান ভাবছে, সে যে কিছু নিয়ে ভাবছিল এটা সাজি জানল কীভাবে? নাকি শুধুই কন্ঠস্বর শুনে আন্দাজ করেছে। যদি আন্দাজ করে থাকে তাহলে মেয়েটার প্রখর বুদ্ধি আছে। সবকিছুই ক্যাচ করে ফেলে। হাসান ধীর কন্ঠে বলল,
‘তেমন কিছুই হয়নি। মিছে টেনশন নিও না।’
‘তোমার গলার স্বরটাই বলে দিচ্ছে হয়তো কিছু হয়েছে নয়তো তুমি কিছু ভাবছিলে। তুমি যদি আমায় কিছু বলতে চাও বলতে পারো।’
‘মেহেদী দিয়েছ, ডিজাইনটা তো দেখালে না?’
‘তুমি তো ফ
ভিডিও কল দাওনি।’
‘একবার বলতে তাহলে চলেই আসতাম।’
‘কথা ঘোরাচ্ছ কেন হাসান? কী বলতে চাও বলো।’
হাসান ভাবছে, বলবে কি বলবে না। চিন্তা না করে বলে দেওয়াই ভালো। আফটার অল সাজির মনে কী আছে সেটা অন্তত বোঝা যাবে। হাসান গলা ঝাড়া দেয়।
‘সাজি, তোমায় কিছু বলতে চাই।’
‘হ্যাঁ, বলো। আমি শুনছি।’
‘আমার ঘরে মিলির কিছু ছবি আছে। দেয়ালে আমার আর মিলির বড়ো একটা ছবি টাঙানো আছে। সাজি, এই ছবিটা আমি…’
হাসানের কথা শেষ না হতেই সাজি বলে,
‘সরাতে পারবে না, তাই তো?’
হাসান সম্মতি জানায়।
‘হ্যাঁ। সরাতে পারব না।’
‘সরাতে হবে না। ওটা ওইখানেই থাকবে এখন যেখানে আছে। আর শুধু ওই ছবিটা কেন, বাকি এইগুলো আছে কোনোটাই সরাতে হবে না। আমরা বরং আমাদের একটা ছবি ফ্রেম করে বিছানার কাছে বেড টেবিলের ওপর রাখব। কেমন?’
হাসান ভেবেছিল সাজি আপত্তি করবে। ও যে এত সহজেই মেনে যাবে, এটা ভাবতেও পারেনি হাসান। এইজন্যই একা একা ভাবে, সাজি আসলেই অন্যরকম। আরও কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রাখে হাসান। ঘুমোতে হবে তাকে। আগামীকাল হলুদ পোগ্রাম। অনেক রাত পর্যন্ত জেগে থাকতে হবে তাকে৷ রাতে ঠিকমতো ঘুম না হলে তার মাথায় পেইন হয়। আগে মাথায় পেইন হলে মিলি মাথা টিপে দিত। হাসান আপন মনে বলছে, কেন জানি প্রতিটা পদক্ষেপে মিলির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি আজ-কাল। প্রিয় মানুষটা চলে গেছে কিন্তু রেখে গেছে হাজারো স্মৃতি। যা ভোলার মতো না।
অয়নন্দিতার এমনিতেও মেহেদী দেওয়ার মতো ধৈর্য নেই। কোমর ভেঙে বসে থেকে মেহেদী দেওয়াটা শখ কম শাস্তি বেশি মনে হয় তার কাছে। শাশুড়ি আর ননদের কথা রাখতে গিয়ে মেহেদী দিতে বাধ্য হয়েছে সে। এখন ব্যাক পেইন উঠে গেছে। কোমর অতিমাত্রায় ব্যথা করছে। আজ দুই বউ দু’হাত ভরে মেহেদী দেওয়ায় কাউকে হাতে পানি লাগাতে দেননি রওশন বেগম। বড়ো একটা বোলে পোলাউ মাংস নিয়ে দুই বউ আর মেয়েকে খাইয়ে দিয়েছেন। রওশন বেগমের ছেলের বউদের প্রতি এমন ভালোবাসা দেখে সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকেন। কেউ আবার মনে মনে হিংসা করেন। কেউ বা এটাকে আস্কারা ভাবেন। যদিও রওশন বেগমের ভয়ে কেউ মুখ খুলেন না।
খাবার শেষ করে অয়নন্দিতা নিজের ঘরে আসে। ফারহান সেই যে বাবার সঙ্গে হিসাবে বসেছে এখনও আসেনি৷ ওইখানেই খাওয়া দাওয়া করেছে। এদিকে অয়নন্দিতার কোমরের বারোটা বেজে গেছে। ইচ্ছে করছে হাতের মেহেদীগুলো ধুয়ে ফেলতে। কিন্তু এত সুন্দর ডিজাইন করা, তুলতেও ইচ্ছা করছে না তার। বিছানায় বসতে গিয়েও পেইন টের পাচ্ছে সে। এমন সময় ফারহানের প্রবেশ ঘটে৷ ফারহানকে দেখে অয়নন্দিতা বলে ওঠে,
‘এখন এলে তুমি?’
‘কেন, ব্যস্ত ছিলাম তো। কাল হলুদের পোগ্রাম। সেই সব নিয়ে আলোচনা করতে হলো। বাবার কিছু বন্ধুরা তাদের ফ্যামিলি নিয়ে আসবেন। তাদের ওয়েলকাম করতে হবে। সবটাই তো আমায় সামলাতে হচ্ছে।’
‘ভালো করেছ। এখন একটু এখানে আসবা প্লিজ। আমার মাথা থেকে ফুলের গহনাটা খুলে দাও না। আর কানের দুলগুলোও খুলে দাও। কোমরের অবস্থা খারাপ। প্রচুর পেইন হচ্ছে৷’
ফারহান তাকিয়ে আছে তার বউয়ের দিকে। বউ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে এক নাগারে এতগুলো কথা বলে দিল। ফারহানের পরবর্তী নজর অয়নন্দিতার কোমরের দিকে। আজ যেন কীচক শাড়ি পরেছে সে, কোমরের অংশ দেখা যাচ্ছে। ফর্সা কোমরটা সরাসরি ফারহানের চোখে বসেছে। এদিকে ফারহানকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অয়নন্দিতা বলে,
‘এই, দাঁড়িয়েই থাকবে? এসো না প্লিজ। আমার মাথা থেকে ফুলের গহনাটা খুলে দাও। শাড়ি পরেই খুলব। হাতে মেহেদী। শুকিয়ে গেছে অলমোস্ট, আরেকটু রেখে তুলে ফেলব। জানো, ওরা এত সুন্দর ডিজাইন করে দিল। আমার তো হাতে পানি লাগাতে একদম ইচ্ছে করছে না।’
অয়নন্দিতা কী বলছে সেদিকে কান নেই ফারহানের। সে দরজায় খিল দিয়েছে। মুহুর্তের মধ্যেই অয়নন্দিতার খুব কাছে চলে আসে সে। আয়নায় ফারহানের রিফ্লেকশন দেখতে পায় অয়নন্দিতা। তার পিঠের পুরো অংশ ফারহানের বুকের সঙ্গে মিশে আছে। ফারহান অয়নন্দিতার ঘাড়ে মুখ গুজেছে। ঘ্রাণ নিচ্ছে সে। তার মতে, অয়নন্দিতার শরীর থেকে ঘ্রাণ আসছে। একটা মাতাল করা ঘ্রাণ। অয়নন্দিতাকে কিচ্ছু বলতে দিচ্ছে না ফারহান। সে কথা বলতে চেয়েছিল কিন্তু ফারহান আঙ্গুলের সাহায্যে তার মুখ বন্ধ করে দেয়। অয়নন্দিতার শরীর রি রি করছে। অদ্ভুত সুন্দর অনুভূতি জাগছে মনে। তবুও কম্পিত কণ্ঠে বলে,
‘ফারহান, খুলে দাও না প্লিজ।’
ফারহান নিজ হাতে অয়নন্দিতার মাথা থেকে ফুলের গহনা খুলে দেয়। কান থেকে দুল জোড়া খুলে দেয়। ফারহান তার দু’হাত অয়নন্দিতার কোমরে রাখে। শিহরণে অয়নন্দিতার চোখ বন্ধ হয়ে যায়।
‘ফারহান ছাড়ো। আমি শোবো। আমার ব্যাক পেইন হচ্ছে।’
ফারহান কোমরটা আরও চেপে ধরে বলে,
‘আমি ম্যাসাজ করে দিই। ভালো লাগবে তোমার।’
এই মুহুর্তে ফারহানের কন্ঠস্বর বলতে গেছে। মনে হচ্ছিল ফারহান নেশার ঘোরে আছে। অয়নন্দিতা আয়নায় দেখছে ফারহানের চোখ বন্ধ। সে চোখ বন্ধ করে অয়নন্দিতার ঘ্রাণ নিচ্ছে। অয়নন্দিতার দম বন্ধ লাগছে। সে চাপা স্বরে বলল,
‘উহু। লাগবে না। তুমি ছাড়ো, আমি বিছানায় যাব।’
‘আমি নিয়ে যাই।’
‘আমি হাঁটতে পারি। তুমি ছাড়ো।’
ফারহান অয়নন্দিতার কথা শোনেনি। সে অয়নন্দিতাকে কোলে তুলে নেয়। চোখ জোড়া তার লাল হয়ে আছে। অয়নন্দিতা বুঝতে পারছে না কী হচ্ছে। বিছানার পাশে দাঁড় করায় সে অয়নন্দিতাকে। কাঁধ থেকে শাড়ির আঁচল খুলে কোমর থেকে শাড়ির শেষ অংশ খুলে নেয়। অয়নন্দিতা চোখ বড়ো করে তাকায় ফারহানের দিকে। ফারহান তখন তাকে দেখছিল। আবারও কোলে তুলে বিছানায় শুইয়ে দেয়। উপুর করে শুইয়ে দেওয়ায় অয়নন্দিতা ঘাবড়ে যায়। কিছুক্ষণ পর সে স্পর্শ অনুভব করতে শুরু করে৷ ফারহান আলতো হাতে তার কোমর ম্যাসাজ করে দিচ্ছে৷ সেই অদ্ভুত অনুভূতি, অয়নন্দিতাকে আবারও চেপে ধরেছে। সহ্য করতে না পেরে বালিশ চেপে ধরে সে। দু’হাত ভর্তি মেহেদী তার। ফারহানের নাক অবধি মেহেদীর ঘ্রাণ পৌঁছে গেছে।
অয়নন্দিতা ফারহানের হাতকে বাধা দেয়। সোজা হয়ে শুয়ে ফারহানের দিকে তাকিয়ে আছে সে। ফারহান দেখছে, এক অপরুপা নারী অর্ধ নগ্ন অবস্থায় তার সামনে শুয়ে আছে। শ্বাস-প্রশ্বাস ওঠানামা করছে বলে বুকটা তার উঁচু-নিচু হচ্ছে। অয়নন্দিতাকে এর আগেও এমন বহুবার দেখেছে সে। তবে আজকের দেখাটা অন্যরকম। আজকের দেখাটা তার কাছে স্বর্গীয় সুখ। অয়নন্দিতা মেহেদী ভর্তি হাতেই ইশারা করে ফারহানকে। ইশারা পেয়ে ফারহান অয়নন্দিতার খুব কাছে চলে আসে। ফারহানের বুকে হাত রেখে অয়নন্দিতা ইশারা করে লাইটের দিকে। লাইট জ্বালানো। ফারহান লাইটের দিকে তাকিয়ে একটা ভঙ্গি করে। যা দেখে অয়নন্দিতা হেসে দেয়৷ ফারহান লাইটটাও বন্ধ করে। আবারও দু’জন দু’জনার কাছে চলে আসে। ফারহান-অয়নন্দিতা একে অপরকে দেখছে।
এক পর্যায়ে অয়নন্দিতা চোখ বন্ধ করে ফেলে। ফারহান অয়নন্দিতার গলায় ঠোঁট ডোবায়। অয়নন্দিতার সারা শরীরে শিহরণ জাগে অতিমাত্রায়। ফারহানের হাতের চাপে শুকনো মেহেদীগুলো গুড়িয়ে গুড়িয়ে পড়ছে চাদরে। অয়নন্দিতার আপাতত মেহেদীর দিকে মন নেই। তার মন এখন ফারহানের মধ্যে। নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে ফারহানকে আঁকড়ে ধরে সে।
হঠাৎই দরজায় কড়া পরে। দরজার ওপাশ থেকে সাজি ডাকছে।
‘ভাবী, একবার বাইরে এসো। একটু দরকার আছে।’
অয়নন্দিতার কানে সাজির কন্ঠস্বর লাগে৷ ফারহানও শুনতে পায় তার বোনের কন্ঠস্বর। কিন্তু তাদের একজনেরও উঠতে মন চাইছে না। নেশায় আসক্ত দু’জন পায়রা নিজেদের মিলনে ব্যস্ত। চারপাশের শব্দ কানে যাচ্ছে না। সাজি আরও কয়েকবার ডেকেছে। কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে সে চলে যায়। কিছুটা পথ হাঁটার পর সাজি পেছনে ফিরে তাকায়।আন্দাজ করতে পারে ঘটনা, যা ঘটে যাচ্ছে। হালকা হেসে নিজের ঘরে চলে যায় সাজি।
একের পর এক নিঃশ্বাস পড়ছে। গরম নিঃশ্বাস। অয়নন্দিতা জড়িয়ে আছে ফারহানকে। আর ফারহান জড়িতে আছে অয়নন্দিতাকে৷ আপাতত দুনিয়া যাক ভার ম্যায়। তারা দু’জন খানিকটা সময় সুখ বিনিময় করুক।
চলবে……………………………..