#দ্বিতীয়_সূচনা
#পর্ব_৪২
লেখা – আফরোজা আক্তার
(কোনোক্রমেই কপি করা যাবে না)
আমার একটা বন্ধু আছে। যার নাম আসিফ। তোমার সঙ্গে দেখা হয়নি তার। সে অবশ্য এখন দেশের বাইরে থাকে।বন্ধুদের মধ্যে আসিফই সবার আগে বিয়ে করেছে। আসিফের হলুদ অনুষ্ঠান। আমায় ইনভাইট করেছিল। আমি ছোটোবেলা থেকেই বড়ো কোনো অনুষ্ঠান এড়িয়ে যেতাম। হই হল্লা আমার পছন্দ ছিল না কখনও। কিন্তু বন্ধুর বিয়ে। সবাই আসবে। তোমার স্যার শরীফ সাহেব, তিনিও ছিলেন সাথে। না চাইতেও যেতে হলো আমায়। ড্রেস কোড দিয়েছিল। মেরুন রঙের পাঞ্জাবি। সবার মন রাখার জন্য বাধ্য হলাম ড্রেস কোড অনুযায়ী পাঞ্জাবি পরতে৷ সময়টা আজও মনে আছে। আটটা বেজে পনেরো মিনিট। আমিই সবার শেষে গিয়েছিলাম। আসিফ খানিকটা রাগ করেছিল। তবে শেষ মুহুর্তে আমায় দেখে তার রাগটা কমে গিয়েছিল। শরীফ আমায় দেখে হেসে বলে,
‘হারামি, এখন আসার সময় হলো তোর?’
‘রাস্তায় কেমন জ্যাম থাকে, তা কি তুমি জানো না।’
যথারীতি অনুষ্ঠান শুরু হলো। আমি আসিফকে হলুদ মাখিয়ে পাশে থাকা সোফায় কিছুক্ষণের জন্য বসি। মোবাইল দেখছিলাম। এমন সময় খেয়াল করলাম কেউ একজন এসে আমার পাশে বসেছে। তার শরীর থেকে এত সুন্দর ঘ্রাণ আসছিল যা আমায় বার বার আকৃষ্ট করছিল।আমি তাকে আড়চোখে দেখছিলাম। সবুজ রঙের শাড়ি আর খোঁপায় গাদা ফুলের মালা পরেছিল। এক কথায় অপূর্ব লাগছিল তাকে। মানুষ বলে না লাভ এট ফার্স্ট সাইট। ওইটাই বার বার মনে হচ্ছিল তখন। প্রথম কোনো মেয়েকে আমার এত ভালো লেগেছিল। নিজের মধ্যে তখন ইগো কাজ করত। তাই আগ বাড়িয়ে কথা বলিনি। তবে ইচ্ছে হচ্ছিল কথা বলি। নাম জিজ্ঞেস করি। ফোন নাম্বারটা নিয়ে নেই৷ কিন্তু ওইযে ইগো, ইগোই বাধা দিচ্ছিল আমায়।
খাওয়া দাওয়ার পর্ব মিটিয়ে আমরা সবাই বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। হঠাৎ একটা বাচ্চা মেয়ে এসে আমায় একটা কাগজ দিয়ে বলল,
‘আংকেল, একটা আন্টি আপনাকে এই কাগজটা দিতে বলেছে।’
আমি কাগজের ভাজ খুলে দেখলাম সেখানে লেখা — আপনি বোধ হয় আমায় কিছু বলতে চান। আমায় বার বার দেখছিলেন। আমি খেয়াল করতেই আপনি অন্যদিকে চোখ সরিয়ে নিয়েছেন। কিছু বলতে চাইলে আমার নাম্বারে ফোন করতে পারেন। কাগজটার মধ্যে থাকা লেখাগুলো পড়ে আমি যেন মোহগ্রস্ত হয়ে পড়লাম। আমি যে তাকে আড়চোখে দেখছিলাম সেও খেয়াল করেছে। কাগজটা ভাজ করে রেখে দিলাম। চারপাশে নজর দিচ্ছিলাম এই ভেবে যে যদি একবার দেখতে পাই। খুঁজে পাচ্ছিলাম না তাকে। আমার মনটা খারাপ হয়ে যায়। বিষন্ন মনে চলে আসব এমন সময় হঠাৎই সে আমার সামনে এসে দাঁড়ায়। কাজল চোখে আমার দিকে তাকায়। ওই সময় চারপাশটা যেন তার রুপের আলোয় আলোকিত হয়ে গেছে। আমি কথা বলতে পারছিলাম না। চুপচাপ শুধু তাকেই দেখছিলাম। সেও আমার দিকে তাকিয়েছিল কিছুক্ষণ। এরপরই শব্দ করে হেসে আমায় বলেছিল — শুধু তাকিয়েই থাকবেন নাকি কিছু বলবেন। আমি তখনও চুপ। আমার নীরবতা তাকে বিরক্ত করছিল। তার চোখে মুখে হালকা বিরক্ত। সে বলল — চলে যাচ্ছি। কনে আমার বান্ধবী। কাগজে আমার নাম্বার দেওয়া আছে। কিছু বলতে চাইলে ফোন করতে পারেন। আমি আপনার কথা শোনার অপেক্ষায় থাকব।
বাসায় ফিরতে ফিরতে প্রায় দুটো। ফ্রেশ হয়ে তার কথা ভাবছিলাম। কাগজটা হাতে নিয়ে ভাবতে শুরু করলাম। মোবাইল হাতে নিলাম একবার ফোন করব বলে৷ এত রাতে ফোন দেওয়া ঠিক হবে কি না তাও বুঝতে পারছিলাম না। কিন্তু তখনই তার হাসিমাখা মুখটা আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে। আমি আর নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারিনি। নাম্বার ডায়াল করলাম। মনে মনে প্রার্থনা করছিলাম সে যেন ফোনটা রিসিভ করে। কিছুক্ষণ পর ফোন রিসিভ হলো। মিষ্টি একটা কন্ঠস্বর কানে লাগে আমার। সে বোধ হয় আমার ফোনের অপেক্ষাতেই ছিল। চিনে ফেলেছিল আমায়। আমি হ্যালো বলার পরেই সে বলল — আমি আপনার ফোনের অপেক্ষাতেই ছিলাম। এত দেরি করবেন তা বুঝতে পারিনি। আমাদের কথা শুরু হলো। নাম জিজ্ঞেস করতে উত্তর দিল — আমার নাম বন্দনা। নামটা শুনে আমি আরও জড়িয়ে গেলাম তার সঙ্গে। আমাদের পরবর্তী দেখা হয় বিয়েতে। মেরুন রঙের লেহেঙ্গায় তাকে অত্যন্ত বেশি সুন্দর লাগছিল। আমার সব থেকে বেশি লেগেছিল তার বডি ল্যাংগুয়েজটা। কী পরিমাণ মারাত্মক তার বডি ল্যাংগুয়েজ। বলার মতো না। আমি আরও আকৃষ্ট হলাম তার প্রতি। ধীরে ধীরে আমাদের কথা বাড়তে লাগল। এদিকে বাবা চাইত আমি অফিসে বসি। তাকে পাওয়ার নেশা আমায় এতটাই আঁকড়ে ধরল যে আমি তার জন্য সব কিছু করতে প্রস্তুত ছিলাম। রোজ রাতে আমাদের দীর্ঘ সময় ধরে কথা হতো। বাবার প্রেশারে অফিসে বসতে হলো। বাবা আমায় সব কিছু বুঝিয়ে দিতে শুরু করলেন। আমি নিজের মতো করে সব গোছাতে শুরু করি। বাবা মায়ের কাছে বন্দনার কথা বললাম। বাবা মা তখন কিছু বলেনি। কিন্তু কিছুদিন পর বাবা অমত করলেন। বাবার কথা ছিল — মেয়েটা ভালো না। তোমাকে পরে পস্তাতে হতে পারে। আমি মানতে পারিনি বাবার কথা। দু’বছরের সম্পর্ক। এতদিনে এমন কিছুই চোখে পড়েনি যা দ্বারা তাকে খারাপ বলা যায়। অন্যদিকে বন্দনা বলল তাকে বিয়ে করতে হবে। কিছুই যেন চোখে দেখছিলাম না। মস্তিষ্ক শুধু বলছিল আমার তাকেই চাই। ব্যাস, বিয়ে করে নিলাম। আমি আলাদা ফ্ল্যাট নিলাম। বিয়ের পর সেখানেই ছিলাম বন্দনাকে নিয়ে। এরপর কেটে যায় কিছু মাস। মা আমায় ছাড়া থাকতে পারে না বলে বাবাকে ম্যানেজ করে আমাদের বাড়ি নিয়ে যায়। ভালোই চলছিল সব কিছু। কিন্তু এরপর,,,,,,,,,,,
কথা বলতে গিয়ে থমকে যায় ফারহান। অয়নন্দিতা চোখের পানি মুছে আগ্রহ নিয়ে তাকায় ফারহানের দিকে। এরপরের কাহিনীটুকুন শোনার জন্য ব্যাকুল হয়ে তাকিয়ে আছে অয়নন্দিতা। ফারহান উপরের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি আড়ালের ব্যর্থ চেষ্টা করছে।
চলবে……..…..…………….