দ্বিতীয়_সূচনা পর্ব_৪৩

0
1812

#দ্বিতীয়_সূচনা
#পর্ব_৪৩
লেখা – আফরোজা আক্তার
(কোনোক্রমেই কপি করা যাবে না)

প্রথম দিকে কেউ মেনে না নিলেও আমার মুখের দিকে চেয়ে সবাই মেনে নেয় বন্দনাকে। সাজি, ফারাশ ওরাও বন্দনাকে মেনে নেয়। সাজি তখন আরেকটু ছোটো। আমাদের বাড়িটা তো বেশ বড়ো। তা তো জানোই। পুরো বাড়িতেই বন্দনার বিচরণ ছিল। সবার সঙ্গে হেসে খেলে থাকত। দিন বাড়তে থাকে বন্দনার প্রতি আমার ভালোবাসাও বাড়তে থাকে। সত্যি বলতে কি এখন আর আগের মতো ভালোবাসা নামক অনুভূতি মনের ভেতরে কাজ করে না। আমার ভালোবাসার সবটুকু অনুভূতি বন্দনা নিয়ে নিয়েছে। তাই চাইলেও সেই ভালোবাসার পুরোটা তোমায় দিতে পারছি না। আমি জানি, তুমি আমায় ভীষণ ভালোবাসো। আমিও তোমায় ভালোবাসি তবে অনুভূতিগুলো এখন আর নাড়াচাড়া দেয় না। কারণ, সব অনুভূতি তো বন্দনাতে ইনভেস্ট করে ফেলেছি।

অয়নন্দিতার চোখ জোড়া তখনও বন্ধ ছিল। মনে হচ্ছে আরেকটু পর হিচকি উঠে যাবে তার। বহুত কষ্টে নিজের কান্নাকে ধরে রেখেছে সে। ফারহান একটু বিরত নিয়েছে। এরপর আবারও বলা শুরু করে।

আমি তখনও জানতাম না বন্দনার মনে কী চলছে। বন্দনাকে আমি কখনই বাঁধা দিইনি। মুক্ত স্বাধীনচেতা মেয়ে ছিল বন্দনা। ঘরে বন্দী থাকার মতো মেয়ে সে ছিল না। আর আমিও তাকে তেমন শাসন করতাম না। তার মন যখন চাইত সে বের হতো। বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যেত। শপিংয়ে যেত। সে যেখানেই যেত আমায় বলে যেত। তাই তার প্রতি আমাত বিশ্বাসটা ছিল অগাধ। কিন্তু মাস দুয়েক পর বন্দনার মাঝে পরিবর্তন দেখতে পেলাম। কথায় কথায় উগ্র আচরণ করতে শুরু করত। কারো সঙ্গে সুন্দর মতো কথা বলত না। এমন কি একটা সময় ও আমার সঙ্গে এক বিছানায় শুতে পর্যন্ত চাইত না। আমার বন্দনার এত পরিবর্তন আমায় পোড়াত। প্রথম ধাক্কাটা লেগেছিল বুকে যেদিন বন্দনা বলল– তোমার সঙ্গে আমি আর থাকতে চাই না। ভেবেছিলাম আমার দ্বারা কোনো ভুলচুক হয়েছে বলেই ও এমন করছে। কিন্তু দ্বিতীয় ধাক্কাটা একেবারে কলিজায় গিয়ে লাগে যখন বন্দনা বলল– আমি ডিভোর্স চাই।
বার বার জিজ্ঞেস করেছিলাম। আমার ভুল কোথায়? উত্তরে বলল– তোমার ভুল হয়নি। ভুল আমার হয়েছে। আমি ডিভোর্স চাই। এ নিয়ে শুরু হয় তর্কবিতর্ক। তর্কবিতর্কের এক পর্যায়ে আমি রেগে গেলাম। হাত তুললাম বন্দনার গায়ে। এক সেকেন্ডও অপেক্ষা করেনি বন্দনা। বের হয়ে গেল আমার বাড়ি থেকে। কত রকমে মানানোর চেষ্টা করেছিলাম তাকে সে রাজি হয়নি। অন্যদিকে বলেওনি যে তার কী সমস্যা। কেন সে ডিভোর্স চায়। খুব রাগ হতো নিজের ওপর। তবুও নিজেকে কন্ট্রোল করে রাখতাম। বাবা বলেছিল– আমি জানতাম এই মেয়ে ভালো না। দেখছ তো, কী পরিণতি হচ্ছে। বাবার কথা সেদিন সত্যি মনে হচ্ছিল।
এক সপ্তাহ পর আমার বাসায় ডিভোর্স পিটিশন আসে। আমি অবাক হলাম বন্দনার সাহস দেখে। পিটিশন নিয়ে চলে গেলাম বন্দনার বাসায়। সেখানে গিয়ে দেখি বন্দনা নেই। বন্দনার মাকে জিজ্ঞেস করতেই তিনি বললেন বন্দনা নাকি চট্টগ্রাম গেছে রাজিবের সঙ্গে। রাজিব কে প্রশ্ন করলে বন্দনার বোন জবাব দেয় রাজিব বন্দনার বন্ধু। বন্ধুর সঙ্গে চট্টগ্রাম গেছে কথাটা শোনার পর আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যায়। মাথায় রক্ত উঠে গিয়েছিল আমার। ওই বাসায় অনেক চেঁচামেচি করি। শুনতে শুনতে শুনি রাজিব বন্দনার কলেজের বন্ধু। এবং ইদানীং সময় রাজিব আর বন্দনাকে বেশ মেলামেশা করতে দেখা গেছে। বন্দনার এক ঘনিষ্ঠ বান্ধবীই আমায় সব বলে। বন্দনা নাকি বলেছে সে রাজিবকে ভালোবাসে। আমার সঙ্গে তার হচ্ছে না। সে রাজিবকে না পেলে মরে যাবে।
আমি ভেঙে পড়েছিলাম এই ভেবে যে, হয়তো আমার ভালোবাসায় কমতি ছিল। আমিই বন্দনাকে ভালো রাখতে পারিনি। দুই বছরের সম্পর্কের পর এক বছরের সংসার করে যে পাখি থাকতে চায় না সেই পাখিকে খাঁচায় বন্দী করে রাখা যায় না। উড়িয়ে দিতে হয়। তাই বন্দনাকেও উড়িয়ে দিয়েছি ডিভোর্স পিটিশনে সাইন করে। আমার এখনও মনে আছে। যেদিন ডিভোর্সের তারিখ ছিল সেদিন বন্দনা এসেছিল ঠিকই কিন্তু আমার মুখের দিকে একটাবারের জন্যেও তাকায়নি। রাজিব নামের ভদ্রলোক ছিল তার সাথে। আমি হাসিমুখে বন্দনাকে যেতে দিয়েছি। ভালোবাসার প্রতি এখন আর আস্থা জন্মায় না। আমি তোমাকেও বিয়ে করতে চাইনি। কারণ আমি জানতাম তোমাকে আমি ভালোবাসতে পারব না। তবুও আমি বাধ্য হলাম বিয়ে করতে। বিয়ের পর আমার আচরণে তুমি নিশ্চয়ই দগ্ধে মরেছ। একটা কথাই ভেবেছ আমি কেন ভালোবাসি না তোমায়। যেদিন তুমি বললে তোমায় ভালোবেসে আমি ঠকব না। আমার ভালোবাসার খানিকটা অংশ তোমার পেছনে ইনভেস্ট করতে সেদিন থেকে আবারও মন চঞ্চল হয়ে গেল তোমায় ভালোবাসার জন্য। আমি ভালোবাসার কাঙাল অয়নন্দিতা। আমি ভালোবেসেই গেছি কিন্তু ভালোবাসা পাইনি। আমি ভালোবাসা পেতে চাই অয়নন্দিতা। আমি ভালোবাসা পেতে চাই।

অয়নন্দিতা দাঁড়িয়ে থাকার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। ঝড়ের বেগে দ্রুত কাছে চলে যায় ফারহানের৷ দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে ফারহানকে। কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বলে ওঠে,
‘ফারহান ভালোবাসি আমি তোমায়। ভীষণ ভালোবাসি। মৃত্যু পর্যন্ত ভালোবেসে যেতে চাই। হ্যাঁ ফারহান, মৃত্যু পর্যন্ত ভালোবেসে যেতে চাই আমি তোমায়। ভালোবাসি আমি তোমায়।’
ফারহান এতক্ষণ পর্যন্ত চোখের পানি আটকে রাখলেও এখন আর আটকাতে পারেনি। অয়নন্দিতাকে আঁকড়ে ধরে চোখের পানি ছেড়ে দেয় ফারহান।

চলবে………………………..

[আমার নতুন উপন্যাস রাজশ্রী তোমার জন্য বইটি ২৫% ছাড়ে অর্ডার করুন রকমারিতে। অর্ডার লিংক — https://www.rokomari.com/book/221852/rajosrre-tomar-jonno

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here