#দ্বিতীয়_সূচনা
#পর্ব_৫০
লেখা – আফরোজা আক্তার
(কোনোক্রমেই কপি করা যাবে না)
অয়নন্দিতার মন ভালো করার জন্য ফারহানের ছোট্টো প্রয়াস। অয়নন্দিতাকে নিয়ে কফি ডেটে এসেছে ফারহান।কিন্তু কিছুতেই মন ভালো করতে পারছে না। মিলির ব্যাপারটা সত্যিই দুঃখজনক। আল্লাহ পাকের দুনিয়ায় মানুষের জীবনের সত্যিই কোনো মূল্য নেই। ফারহান হাতের কাজগুলো ফেলে অয়নন্দিতার মন ভালো করার জন্য এতকিছু করছে কিন্তু মেয়েটা অনবরত কেঁদেই যাচ্ছে। ফারহান ভাবছে, এইভাবে কাঁদলে শরীর খারাপ হবে। বোঝাতে হবে তাকে।
‘অয়নন্দিতা, কী হয়েছে তোমার। তুমি এখনও আপসেট?’
টিস্যু দিয়ে চোখের কোণে জমে থাকা পানিগুলো মুছে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করতে করতে অয়নন্দিতা বলে,
‘আমি চেষ্টা করছি কিন্তু পারছি না। মিলি ভাবীর অসুস্থতা আমায় কষ্ট দিচ্ছে। আমি মেনে নিতে পারছি না।’
‘কিন্তু আমাদের যে মেনে নিতে হবে। এছাড়া উপায় নেই তো।’
‘আল্লাহ পাক এটা কেমন কাজ করলেন। হাসান ভাইয়ার অবস্থা দেখলে তুমি বুঝতে। মানুষটা কেমন ছিল আর কেমন হয়ে গেছে।’
‘আমার কথা হয়েছে আজ হাসানের সঙ্গে। তবে সে যথেষ্ট শক্ত একজন মানুষ। সে বোঝে এতে তার কিংবা অন্য কারো হাত নেই। হ্যাঁ, এটা সত্যি যে, তার সব থেকে প্রিয় এবং কাছের মানুষটা হয়তো কিছুদিন পর হয়তো তার সঙ্গে থাকবে না। কিন্তু এটাই যে নিয়তি এটা তিনিও মেনেছেন।’
‘হাসান ভাইয়া বরাবরই এমন চুপচাপ থাকেন। ভেতরে কষ্ট হলেও চেপে রাখেন।’
‘কফি এসে গেছে অয়নন্দিতা। কফিটা খাও। আমি তোমাকে শত বুঝিয়েও তোমার মন ভালো করতে পারব না যদি না তুমি নিজেকে বোঝাতে সক্ষম হবে।’
অয়নন্দিতা ভাবছে হয়তো ফারহান ঠিকই বলেছে। সে কফির মগে হাত রাখে। চুমুক দিয়ে কফির স্বাদ গ্রহণ করে।
‘ফারহান, প্লিজ তুমি রাগ কোরো না। আসলে আমি জীবনে এতকিছু উপলব্ধি করেছি তো। বিশেষ করে প্রিয় মানুষগুলোর মৃত্যু। তাই মেনে নিতে পারি না৷’
‘আমি রাগ করিনি অয়নন্দিতা। রাগ করার কোনো প্রশ্নই আসে না। তবে, তুমি নিজের মনকে ঠিক করো প্লিজ।’
‘আই উইল ট্রাই।’
ফারহান হালকা হেসে অয়নন্দিতাকে দেখতে থাকে। আর অয়নন্দিতা পর পর কফির মগে চুমুক দিতে থাকে। মিনিট পাঁচেক পর ফারহান আর অয়নন্দিতা এমন কিছুর সম্মুখীন হয় যার জন্য তারা কেউই তৈরি ছিল না।
অত্যন্ত অবাক হয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় ফারহান। কয়েক সেকেন্ডের জন্য সে ব্ল্যাক আউট হয়ে যায়। এই কয়েক সেকেন্ডেই তার মস্তিষ্ক অতীতের সব কিছু রিভাইন করে নেয়। সামনে দাঁড়ানো মানুষটাকে দেখে অয়নন্দিতা আরও একবার হতবাক হয়ে যায়।
কিছু কিছু মানুষের নূন্যতম লজ্জাটাও থাকে না। এই মুহুর্তে সামনে থাকা মানুষটাকেও তেমন লাগছে ফারহানের কাছে। বন্দনা একবার ফারহানকে দেখছিল আবার অয়নন্দিতাকেও দেখছিল। কিছু সময়ের জন্য তার মস্তিষ্ক তাকে বলছিল অয়নন্দিতা তার খালি জায়গাটা দখল করে ফেলেছে। যেই ফারহানের সবটা জুড়ে একদিন সে ছিল এখন সেই ফারহানের সবটা জুড়ে আছে অয়নন্দিতা। অন্যদিকে, অয়নন্দিতা ভেতরে ভেতরে ভেঙে পড়েছিল তার উপর এখন বন্দনাকে আরও একবার নিজের চোখের সামনে দেখতে হচ্ছে বলে রাগ হচ্ছে। নির্লজ্জ বেহায়ার মতো বন্দনা ফারহানের দিকে তাকিয়ে আছে। আর ফারহান, সেও বন্দনাকে দেখছিল। গাঢ় নজরে দেখছিল যা অয়নন্দিতাকে ক্ষতবিক্ষত করছিল। নীরবতায় ইতি টেনে বন্দনা বলতে শুরু করে।
‘কেমন আছো তুমি?’
হয়তো এই প্রশ্নটা ফারহানের কাছে কমেডি বলে মনে হয়েছে। তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে ফারহান যা বন্দনাকে ভেতর থেকে রক্তাক্ত করছিল। ফারহান হাসি থামিয়ে জবাব দেয়,
‘এতক্ষণ যাবত ভীষণ ভালো ছিলাম। কিন্তু এই মুহুর্ত থেকে আমি ভালো নেই।’
‘মানে?’
‘মানেটা হচ্ছে, একজন নারী কতটা নির্লজ্জ আর বেহায়া হতে পারে তা তোমায় না দেখলে বুঝতে পারতাম না।’
‘এক্সকিউজ মি!’
‘কোন সাহসে আমার সামনে এসে দাঁড়িয়েছ?’
‘দাঁড়ানোর জন্য সাহস লাগে বুঝি?’
‘এটাও তো ঠিক। কিছু কিছু বেহায়ার জন্য সাহস লাগে না।’
‘ফারহান, মাইন্ড ইউর ল্যাংগুয়েজ।’
ফারহান আবারও হাসে।
‘মাইন্ডিং মাই ল্যাংগুয়েজ। বাট, তোমায় দেখার পর আমার একটা কথাই মস্তিষ্কে ঘুরঘুর করছে। আর তা হচ্ছে, তুমি একজন বেহায়া, নির্লজ্জ মেয়ে মানুষ। তোমার চেহারা যতটা সুন্দর ভেতরটা ততটাই কুৎসিত। অনেকটা মাকাল ফলের মতো।’
এবার বন্দনাও হাসে।
‘যাক স্বীকার তো করলে আমি দেখতে সুন্দর।’
‘হ্যাঁ। মাকাল ফল।’
অয়নন্দিতার রাগ হচ্ছে। মন চাইছে এক চড়ে বন্দনার দাঁতগুলো ফেলে দিতে। কিন্তু শত হোক, বন্দনা তার বরের এক্স ওয়াইফ। সেই হিসেবে কিছুটা সম্মানের পাত্রী সে নিজেও। অথচ ফারহান তার সম্মানের ছিঁটেফোঁটাও রাখছে না। অয়নন্দিতা চুপচাপ ততক্ষণে বসে পড়সছে। ভাবছে, দাঁড়িয়ে থাকার থেকে বসে কফি খেতে খেতে এদের কনভারসেশন শোনা উত্তম। এদিকে ফারহানকে বলতে শোনা যাচ্ছিল যে,
‘তোমার বর কী ভেবে যেন আমাদের রেগুলার ডিলারদের ধরে আমাদের কোম্পানির সঙ্গে কাজ করতে চাইছে। তোমার ওই গাধা বরকে বলে দিও সে যা চাইছে তা কখনও হবে না।’
‘ইনসাল্ট করছ তুমি আমায়।’
এবার আর অয়নন্দিতা কথা না বলে থাকতে পারল না।
‘ইনসাল্ট হওয়ার জন্য আপনিই এলেন। যেচে পড়ে এসে কেউ অপমানিত হলে অপরপক্ষের দোষ কোথায়?’
কথাটা শুনে বন্দনা অয়নন্দিতার দিকে তাকায়। সে দেখতে পায় অয়নন্দিতা বসে আছে। কফির মগে চুমুক দিচ্ছে। এবার ফারহানও বসে পড়ে। ফারহান মনে মনে বলছে, যাক, আমি বেঁচে গেছি। এবার আসল মানুষ কথা বলা শুরু করেছে। খেলা তাহলে ভালোই জমবে।
বন্দনা দাঁত মুখ খিটে বলতে শুরু করে,
‘হু আর ইউ? এন্ড হাউ ডেয়ার ইউ?’
অয়নন্দিতা মুচকি হাসে।
‘আই এম অয়নন্দিতা। ওয়াইফ অফ ফারহান শেখ। পড়ের উত্তরটা আমি দিতে বাধ্য নই। বাই দ্যা ওয়ে, আপনার স্বভাবটাই এমন, যেখানে সেখানে যখন তখন হুটহাট অপমানিত হতে চলে আসেন।’
অয়নন্দিতার কথা শোনার পর বন্দনার পুরো শরীরে যেন আগুন লেগে যায়৷ আগুন রাঙা চোখে সে অয়নন্দিতার দিকে তাকিয়ে থাকে। আর অয়নন্দিতা ততক্ষণে বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায়। চোখ মুখে কাঠিন্য ভাব এনে বলে,
‘গেট আউট অফ আওয়ার লাইফ।’
চলবে……………………………….